Friday, May 5, 2017

হোস্টেলের রোজনামচা

আমি যেই হোস্টেলে থাকি, সেটির একটি গুগুল মেলিং লিস্ট আছে। তা সেই মেলিং লিস্টের উদ্দেশ্য হল হোস্টেল সঙ্ক্রান্ত যাবতীয় যা যা খবরাখবর সরবরাহ করা যায়, সমস্ত কিছু সম্পর্কে হোস্টেল বাসিন্দাদের জানানো। সে মেসের ফীজ দেওয়ার শেষ দিন থেকে শুরু করে বাঁদরের উৎপাত থেকে বাঁচতে সর্বক্ষণ ঘরের দরজা আটকে রাখা,  ইত্যাদি আরো নানান রকমের তথ্য। তা কিছু লোকজন আছে, সেই ফোরামটাকে পুরো এক খানা নালিশ বাক্স বানিয়ে দিয়েছে। আরে বাবা হ্যাঁ ঠিক আছে, হোস্টেলে কি সমস্যা হচ্ছে, সেটা লেখা ভালো যাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানতে পারে এবং প্রয়োজন মত তার ব্যাবস্থা নিতে পারে, কিন্তু তা বলে এই রকম??? উদাহরণ দিই।

কেন লোকে কাচা জামার থেকে  জল পুরোপুরি নিংড়ে মেলবে না, এটা একটা দাবী হল? ওরে বাবা রে, মানুষগুলো তো তোর আমার মতই তেইশ জোড়া ক্রোমোজোমেরই মানুষ! তারা হুঠ করে রাতারাতি তো আর সুপারম্যান হয়ে যাবে না! ওই নরম নরম হাতে যতটা পারে, জল নিংড়োয় , তাতে বাপু তোমার শুকনো  জামা ভিজে যাক, তা কি আসে যায়! তোমায় কে বলেছিল হে শুকনো জামাকাপড় দড়িতে মেলে রেখে দিতে? কি এমন বিরাট কাজ করছ যে সময় করে দড়ি থেকে কাপড় সরাওনি? নিজের কাজ টাইমে করবে না, আর যত দোষ ওপরতলার মেয়েদের। ক্লাসিস্ট কোথাকার।

আরেক খানা বলি। বাঁদর এসে সকাল সকাল করিডর জুড়ে নোংরা করে রাখবে, বাথরুম থেকে ডাস্টবিন ঘেঁটে কলার খোসা থেকে শুরু করে বিরিয়ানির কৌটো নিয়ে ফেলে ছড়িয়ে লাট করবে; সেই থেকে মুক্তি পেতে অ্যাডমিন থেকে দরজায় এক ধরণের বিশেষ তালা লাগিয়ে দিল। বাঁদরের হাতের নাগালের বাইরে। দিব্যি চলছিল। উৎপাত কমে গেল। হঠাত একদিন কয়েকজনের মেল এলো। কিছু মেয়ে নাকি দরজায় আংটা লাগাচ্ছেনা, যার ফলে আবার আমাদের পূর্বপুরুষেরা আক্রমণ করছে। কেন মেয়েরা এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করবে, এতে হোস্টেলের শান্তি শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। ওরে বাবা, তোরা বুঝিসনা বলে এমন কড়া কড়া চিঠি লিখিস গ্রুপে। ওদের কথাটাও তো ভাবতে হবে নাকি? ওদের যদি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজার সময় পাশে পূর্বপুরুষের লম্বা লেজের দরশন না হয়, কি করে নিজের ক্রমশ কম হতে থাকা চুলের কথা মনে পড়বে? বাঁদরের ওই লম্বা লেজ দেখে বলুন, আপনার রাপুঞ্জেলের বিনুনির কথা মনে হয়না? আজকালকার যুগরে বাবা। এত কাজে কম্মে এসব কি আর মনে থাকে? তাই জন্যই তো এইসব রিমাইন্ডার দেখে মনে হয় যে নাহ, আজ চুলে ভালো করে তেল মাখতে হবে। তারপর শ্যাম্পু করতে হবে। বাথরুমের ড্রেনে এক গাদা চুলের দলা পড়ে থাকতে দেখে এত মনে কষ্ট হবে যে টাক পড়ে যাছে অথচ টাকার আমদানি হচ্ছেনা। সেই দুঃখে বাথরুমটা পরিষ্কারের কথা মনে পড়ে বলুন? আপনার পড়ত? পরে যে স্নান করতে আসে আসুক, জল দাঁড়িয়ে গেলে বাথরুমে, তার হেডেক, আমার আপনার কি! বরং ওদের এত চুল ঝরছে, সেই জন্য মিনিমাম সহানুভূতি না জানিয়ে কিনা মেয়েরা লম্বা মেল করবে কেন এরা বাথরুম নোংরা করে। আরে বাপু, তোদের এত দাবী দাওয়া কিসের? এটা তো হোস্টেল নাকি? নিজের বাড়ি পাওনি যে সর্বক্ষণ দাসীবাঁদী পাবে মা কে যে তুমি বেরিয়ে গেলে তোমার পরে দুনিয়া ঠিক করে দেবে।

এইটুকু শুনেই ভাবতে বসবেননা যে এ আর এমন কি, পৃথিবীতে এর চেয়ে ঢের বেশী সমস্যা আছে। হ্যাঁ তা আছে বইকি, এর চেয়ে অনেক বেশী ঘোরপ্যাঁচের লোকের সাথে সর্বক্ষণ আপনাকে ডিল করতে হয়, মানলাম। কিন্তু আপনি ভাবুন। আমার দিদি কিনা স্বাবলম্বী হতে চেয়ে গয়নার ব্যাবসা শুরু করেছে, না হয় দিনে দশটা করে মেল পাঠাচ্ছিলাম ওই ব্যাপারে, পোড়ারমুখীগুলোর সইলনা। এক প্রস্থ লম্বা মেল থ্রেড শুরু করল যে নাকি এসব করে তাদের মেলবক্স স্প্যাম হচ্ছে। আর নিজেরা যে এই বিষয়টা নিয়ে এত মেল করছিস, সেই বেলা? বাবা ঘরে এসে সামনাসামনি মুখে বলে গেলেই পারতি। টেকনোলজি ইন্সটিটিউটে পড়লেই যে উঠতে বসতে শুতে খেতে ইমেল করতে হবে... রক্ষে করো বাপু! আমি আর নিতে পারলুম না। তোমাদের মেল লিস্ট থেকে আমার নামটি বের করে দাও শুধু। তবে হ্যাঁ, যাওয়ার আগে শেষ অভিযোগটা করে দিই? তোমরা বাপু আমিষ নিরামিষ ডাইনিং ফেসিলিটি নিয়ে এত তর্কাতর্কি করছ, তা এমন এক খানা মেস দাও না যাতে একটু আলু ভাতে আর বিউলির ডাল পাই? সাথে একটু আলু পোস্ত দিলে কিন্তু কাঁচা লঙ্কাটি দিতে ভুলোনা হে। ভগবান মঙ্গল করুন। রাধা মাধব, রাধা মাধব।

No comments:

Post a Comment