Wednesday, October 30, 2019

'আ মরি বাংলা ভাষা '

Scene 1


Knock

নিখিল: may I come in Raima di?

রাইমা : নিখিল? আয়! কিন্তু এটাই শেষবার।

নিখিল: মানে?

রাইমা: মানে এরপর থেকে আমার ঘরে ঢুকতে হলে আসবো কিনা জিজ্ঞেস করবি, মে আই কাম ইন বললে আর অনুমতি পাবিনা। বস।

নিখিল: কী? মানে??

রা: কীসের কী?

নি: আই মিন, কলকাতা শহরের ঝাঁ চকচকে প্রাইভেট এফ এম স্টেশনে বসে আমার কেন বলোতো  সুবালা দেবী বালিকা বিদ্যালয় ভাইবস আসছে?

রা: সুবালা দেবী বালিকা বিদ্যালয় ভাইবস? মানে কী?

নি: না মানে ওই বাংলা বাঁচাও টাইপ।

রা: প্রাইভেট এফ এম বলে কি ভাষার প্রতি একটা দায়িত্ব থাকে না নাকি?

নি: সে থাকে। বাট, তুমি এত সকাল সকাল রেগে কেন? পুরো বেগুন ইন অয়েল সিনড্রোম। কে ডুব দিলো, ছায়াদি? না বর চললো মায়ামি?

রা: চুপ কর নিখিল। খালি ফাজলামি, না?

নি: এই সরি সরি। বলো বলো। সিরিয়াস হয়ে শুনছি। কেসটা কী, বলো।

রাইমা: কেসটা শর্টে হলো, এই স্টেশনে টিকতে হলে তোকে বাঙলাতেই কথা বলতে হবে।

নিখিল : বাংলা??

রাইমা : কেন? মাতৃভাষা নয়? নাকি বাংলা টাংলা আসেনা?

নিক: ইয়ে মানে বাংলাই তো বলি।

রাইমা : না, বলছিস না। কি একটা জগাখিচুড়ী ভাষা আমদানি করেছিস তোরা কে জানে! পরিষ্কার ঝরঝরে বাংলায় কথা না বলতে পারলে আর আর জে গিরি করতে হবেনা।

নিক : কিন্তু রাইমাদি the last time I checked আমার শোটার ফিডব্যাক তো বেশ ভালই ছিল।

রা: আর ফেসবুক ইউটিউবের কমেন্টস?

নি: সে তো কিছু লোকজন অর্বাচিনের মতো কথা বলবেই। প্লাস, দেখো, এই টাইম স্লটে সব চ্যানেলের মধ্যে আমার শোতেই সবচেয়ে বেশি লিসনার্স। সেলস টিমকে দেখো জিজ্ঞেস করে, আমার শোতে ad এর রেট কত!

রাইমা : ব্যস! হয়ে গেলো তো? বাংলা শব্দভাণ্ডারে আর কুলালোনা? একটা অর্বাচীন বলেই শেষ? এই করে করে তোরা শো টার বারোটা বাজিয়েছিস। কি অখাদ্য বাক্য বলিস এক একটা। হে ফ্রেন্ডস, আমি নিক এন্ড ইউ ক্যান কাম হিয়ার এন্ড স্পিক।

নিক : বাহ রে, শোটার নামই তো স্পিক টু নিক। সেখানে একটু আধটু ইংলিশ না বললে

রাইমা : শো টার এরকম ভয়নক নাম যে অনুমোদন করেছিল, তোদের আগের প্রোডাকশন ম্যানেজার, তাকে সরিয়ে আমাকে কেনো এই চেয়ারে বসানো হয়েছে সেটা পরিষ্কার হলো তাহলে? বম্বে থেকে কড়া নির্দেশ আছে, ইয়োর শো নীডস আ ড্রাস্টিক মেক-ওভার। তার প্রথম ধাপই হলো, নাম পরিবর্তন। দ্বিতীয়, কন্টেন্ট।

নিক : অ্যা? নামটাই চেঞ্জ, মানে পরিবর্তন করে দেবে??

রাইমা : হ্যাঁ, দেখ, সামনেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ওইদিন থেকেই এই পরিবর্তনটা করা হবে। এবং অনুষ্ঠানের নাম এমন রাখা হবে যাতে তুই আর একটিও খিচুড়ি বাক্য বললেই তোকে সরিয়ে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যায়। স্পিক টু নিক! হাঃ!

নিক: এটা কিন্তু... মানে এই তো তুমিই বললে প্রোডাকশন ম্যানেজার, ইংরেজি শব্দ, সে বেলা ...

রাইমা : উৎপাদন ব্যবস্থাপক বলতেই পারতাম আমি, কিন্তু তোর নিরেট মাথায় সেটা ঢুকতো কি?

নিক : সেটাই তো....

রাইমা : আর একটাও কথা নয় নিখিল, বাংলা ভাষার পিঠ দেওয়ালে থেকে গেছে। যে বাংলার ওপরে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, তাকে রক্ষা আমাদেরই করতে হবে। করতেই হবে।

নিক : আচ্ছা, বুঝলাম। আসি।

রাইমা : আয়, (গলা উঁচু করে) আর আজ থেকে মোনালি ঠাকুর নয়, চন্দ্রিল ভটচাজ এর ভিডিও গুলো দেখবি।।

নিঃ হু। 



Scene 2


নিঃ নমস্কার আমি নিক, আই মিন, আমি নিখিল। আর আপনারা শুনছেন ১০৮.৩ রেডিও মস্তি।

রাঃ অ্যাই অ্যাই অ্যাই। থাম থাম (রাগতস্বরে)

নিঃ what? কী হল রাইমাদি? Why are you looking like Mount Vesuvius, about to explode?

রাঃ নিখিল, আর ঠিক দশ মিনিটে তুই লাইভ যাবি। অন-এয়ার। আর এখনও ওপেনিং সেন্টেন্স বলতে গিয়ে ছড়াচ্ছিস?

নিঃ রাইমাদি, চিল। এই যে প্র্যাকটিস করে নিচ্ছি, থুড়ি, ঝালিয়ে নিচ্ছি, এতেই দেখবে। এক্কেবারে কেল্লা ফতে। আমি তো জাস্ট তোমার লেগ পুল করছি। দেখো না শুধু, অন-এয়ার যাই, সব ঠিক হয়ে যাবে।

রাঃ ও গড, আই অ্যাম ফিলিং সো নার্ভাস। তুই এখনও গোটা একটা বাক্য ইংরেজি শব্দ না ব্যবহার করে বলতে পারলি না, এই তুই নাকি শুদ্ধ বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান করবি?

নিঃ আহ দি, তুমি বড্ড টেনশন করো। চেষ্টা করলে এবং চাইলে এই শর্মা যে অসাধ্য সাধন করতে পারবে না, তা কী করে হয়? তুমি শুধু আমার ক্যাপা, ইয়ে, মানে কী জানি বলে?

রাঃ নিখিল?

নিঃ হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার ক্ষমতা দেখো।

রাঃ ঠিক আছে। নে এবার হেডফোনটা কানে নে। এই জিঙ্গলটা শেষ হলেই লাইভ যাবি।

নিঃ (ব্যাঙও করে সুরে করে) পাঁচতলা মল, সবই শাড়ি

ভাষা নিয়ে এদের ঢং দেখে, আমি হেসেই গড়িয়ে পড়ি।

 


নিঃ নমস্কার বন্ধুরা, সূর্য অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, পাখিরা ফিরে চলেছে যে যার বাসায়, জানি তোমরাও ফিরছো ঘরমুখো যেখানে অপেক্ষা করে আছে তোমার প্রিয়জন, আর আমি নিখিল, তোমার বেতার বন্ধু, রয়েছি এই ফিরতি পথে তোমায় সঙ্গ দিতে। কি হলো? হিসেব মিলছেনা? ভাবছো এখন তো আর জে নিক এর  স্পিক টু নিক নিয়ে আসার কথা? কনফিউশন মানে দ্বিধা দূর করে দিচ্ছি ছু মন্তরে, কিন্তু তার আগে বলোতো আজ কি দিন? হ্যাঁ, ঠিক তাই, আজ ইন্টারন্যাশনাল মানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আর তাই আমি প্রতিজ্ঞা করেছি আজ থেকে বাংরেজি তে কথা এক্কেবারে বন্ধ! আর আমিও তাই আর নিক নই, নিখিল। আরে বাবা, বাংলার মত একটা tradi... থুড়ি ঐতিহ্যবাহী ভাষার কদর না করে ঝুড়ি ঝুড়ি ইংরেজি শব্দে বাক্য বোঝাই করাতে কোনো পারদর্শিতা নেই। স্মার্টনেস তো নয়ই। এই রে, আবার স্মার্টনেস বলে ফেললাম। আসলে কিছু কিছু শব্দের বুঝলে তো, বাংলা যে কি, অনভ্যাসে ভুলতে বসেছি। দেখো তো, তোমরা মনে করতে পারো কিনা! আর একবার বলি, স্মার্টনেস এর বাংলা খুঁজে পেলেই ফোন করো ৯৮৩০০১০৮৩০ এই নম্বরে, ততক্ষণে আমি বরং তোমাদের শোনাই ভীষণ মিষ্টি একটা বাংলা গান।





অন্বেষা : হেলো।

নিখিল : হেলো, হ্যাঁ বলো। নিকের সাথে মনের কথা ভাগ করে নিতে কে আছো অপর প্রান্তে?

অন্বেষা: হাই, আমি অন্বেষা (বিতিকিচ্ছিরি উচ্চারণে)।

নিখিল : অন্বেষা? মানে অন্বেষা। আমাদের প্রথম কলার মানে কলার খোসায় পা পিছলে পড়লে যে জিনিসটা নেই বলে ধরে নেওয়া যায়, সেই স্মার্টনেস এর বাংলা খুঁজে দিতে এসেছে আমাদের প্রথম বন্ধু। স্বাগতম অন্বেষা।

অন্বেষা : ইসস, কি হয়েছে তোমার? All okay?  Ki clown er Moto bokcho ?

নিখিল : ইয়ে মানে আজ আমাদের অনুষ্ঠানটার একটা বিশেষত্ব হলো আমরা আজ খাঁটি বাংলায় কথা বলছি। আমি যে শব্দগুলোর বাংলা জানিনা সেগুলোতে সাহায্য করবে তোমরা, মানে আমার শ্রোতা বন্ধুরা। তো অন্বেষা, স্মার্টনেস এর বাংলা তুমি তো জানোই, আমাদের সাথে ভাগ করে নাও এবার।


অন্বেষা: ওহ প্লিজ! ওসব শব্দের বাংলা টাঙলা আমি জানিনা। অনেকদিন ধরে তোমাকে ফোন করতে চেষ্টা করি, জাস্ট বিকজ আই লাভ ইউর ভয়েস and I am a regular listener of your show. আজকে কল কানেক্ট হয়ে গেল। ব্যস।

Nik : আচ্ছা, মানে বলতে চাইছো, আমার অনুষ্ঠান তোমার খুব ভালো লাগে। সেটা খুব ভালো কথা। শুনতে থাকো। তবে কথা ছিল স্মার্টনেস এর বাংলা জানাতে ফোন করার। তো একটু ভেবে বলো দেখি মাথায় আসছে কিনা?

অন্বেষা: স্মার্টনেস? চালাক চতুর? নট কনভিনসিং। এনিওয়ে, ওসব কে ভাবতে বসবে এখন? এমনিতেই লাইফে এত চাপ, last ek mas ধরে কিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া। ক্যান ইউ বিলিভ আই failed the exam (ফুঁপিয়ে ওঠে)। নেক্সট টু উইকস আমার পরপর রিটেন আর প্র্যাকটিক্যাল সাপ্লি একজ্যামস। গড নোজ আমি কী করে ক্লিয়ার করবো। সেসব না ভেবে ইউ এক্সপেক্ট মি টু প্লে ডিকশনারি গেম নিক? নো ডিয়ার, নট টুডে।

নিক : ওকে (একটু টেনে সুর করে)।  আই অ্যাম সো সরি !

অন্বেষা:  তার ওপর ক্যাম্পাসিং, ক্যাট। এই সব কিছুর প্রেপ নেওয়া। আই ডোন্ট নো। আই ফিল সো লো অল দ্য টাইম। সো লস্ট। বাবা মাকে বলে বোঝাতে পারিনা। ওরা এক তো আমার স্ট্রেসের কথা বোঝেই না। উল্টে এমনিই বকে বকে লাইফ টা হেল করে দিয়েছে! সবকিছুর মাঝে ইউ আর the only source of fresh air নিক, মানে তুমি আমার extended family e hoye gecho. মানে বুঝতে পারছো?

নিক : হ্যাঁ অন্বেষা, আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু তুমি কি বুঝতে পারলে যে গত তিন মিনিটে তুমি ২৪ টা ইংরেজি শব্দ বললে?

অন্বেষা: হ্যাঁ, বলেছি, তো?

নিক: না মানে basically আমাদের তো বলার কথা ছিল শুধু বাংলায়। আমরা না ঠিক করেছিলাম আজ থেকে জগা খিচুড়ি ভাষায় কথা বলবো না?

অন্বেষা : তুমিও তো বললে , basically?

নিক : আহা, সে তো পার্ট of the line।

অন্বেষা : হ্যাঁ, কিন্তু পার্ট of the line ' কথাটা তো আর পার্ট of the line noy, tahole?

নিক : হ্যাঁ , ঠিক এটাই আমি বলতে চাইছি যে ভাষার অন্তর্গত হলে

অন্বেষা : আই নো নিক, সকাল থেকে লোকজনের ফেসবুক আর ইন্সটাতে ওই বাংলা ভাষা, মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ এটসেটরা দেখে দেখে আই এম বোর্ড। আমি সব জ্ঞানের কথা জানি। অল এবাউট হাউ উই, আওয়ার জেনেরশন ইস spoiling দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড অল দ্যাট crap।

নি: হ্যাঁ কিন্তু ভেবে দেখো...

 অ(থামিয়ে দিয়ে): নিক, ভাষার আসল কাজ হলো মনের ভাব প্রকাশ করা। সেটা হয়ে গিয়ে থাকলেই I am more than happy. ভাভনাও কো সমঝো। বুঝে গেছো তো কী বলতে চাইছি? তাহলেই হলো।

নিক : হ্যাঁ কিন্তু -

অন্বেষা: আর শোনো না, যা বলতে তোমায় কল করলাম। ইউ আর টু গুড। তুমি বড্ড ভালো, সেনসিটিভ। আই থিংক আই হ্যাভ এ ক্রাশ অন ইউ।

নি: আচ্ছা.. তাই?

অ: হ্যাঁ। ইয়া, আই মিন, নো, নট ক্রাশ। আই থিংক আই লাভ ইউ নিক। একদিন মিট করবে প্লিজ?

নি: অনেক ধন্যবাদ অন্বেষা, তোমার সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগলো। কিন্তু এভাবে দেখা তো করা যায়না, তুমি বরং শুনতে থেকো আমার অনুষ্ঠান

অন্বেষা: yes!
নিঃ কী হলো?
অন্বেষা : আমার ক্রাশ ফোন করছে। ফর the first time he is calling me up! ওহ নিক ইউ আর সো লাকি ফর মী। Muah! Gotta go। U take care। Bye bye


( ফোন রাখার শব্দ)




নিক : এই দেখো, অন্বেষা, তোমার ভালো সময় শুরু হয়েই গেলো। তবে বন্ধুরা, স্মার্টনেস এর বাংলার খোঁজ কিন্তু এখনও পাওয়া গেলো না। ফোন লাইন খোলা আছে, চটপট চলে এসো সেই চেনা নম্বরে। আর শুনতে থাকো এক্কেবারে আনকোরা বাংলা গান ১০৮ দশমিক তিন এফ এমে।

(বাংলা গান background a)


রাইমা: এই নিখিল এই! কি হচ্ছে এটা?

নিক : কেনো? আমি তো বাঙলাতেই...

রাইমা: বাঙলাতেই?? ' ওহ আই এম সো সরি ' টা বাংলা??? আর কারা কারা ফোন করে তোকে? দেখছিস তো কি অডিয়েন্স বানিয়েছিস!

নিক : আরে যে ফোন করছে তার ভাষা আমি কি করে কন্ট্রোল করবো!

রাইমা : আজ যেটা পাচ্ছিস সেটা গতকালের কর্মের ফল তো। এতদিন ধরে শো টা এইভাবে চালিয়েছিস বলেই তো এরা ফোন করার সাহস পেয়েছে!

নিক : রাইমা দি, শো টা যে এত মানুষ শুনছে আর ভালোবাসছে, সেটার কি কোনো দাম নেই?

রাইমা: বাংলায় ভালোলাগা নিখিল। গোটা কথোপকথন বাংলায় বলতে না পারাটা কুল নয় নিখিল। এন্ড ইট ইজ নট ইম্পসিবল আইদার। সরকারি বেতার কেন্দ্রে শুনিস না? বাংলাকে ভালোবাস। বাংলায় কথা বল। লোককে বাংলায় কথা বলা। না পারলে, দায়িত্ব থেকে সরে যা।

নিঃ আমি চেষ্টা করছি রাইমাদি।

রাঃ দেখ নিখিল, আই নো, তুই পারবি। একটু এফরট দে। টেক স্মল স্টেপস। সারাক্ষণ কনশাসলি বাংলাতেই কথা বলে যা, ঠিক পারবি। আমি এলাম রে। ক্লায়েন্ট মিটিং আছে।

নিঃ হুম। (চাপা গলায়) নিজে বাংরেজিতে কথা বলবে, এদিকে আমি বললেই দোষ। আরে বাবা, ভাষা কি আর এখন সেই বিশ বছর আগের মতো আছে? ধুস।


জুঁই: কীরে নিখিল, মুখ ব্যাজার করে কেন?

নি: লম্বা গল্প।

জু: ভাষা বিভ্রাট?

নি: হুম।

জু: এই প্রসঙ্গে একটা মজার কথা মনে পড়লো। দাঁড়া ট্র্যাফিক আপডেটটা দিয়ে নিই। গানটা চালিয়ে বলছি।



নমস্কার কলকাতা। শুনছো ১০৮.৩। আর তোমার সাথে এসে গিয়েছি, তোমার বন্ধু, জুঁই। বাইরে ঝিরঝির করে বৃষ্টি। এইমুহুর্তে কোত্থাও কোনো যানজটের খবর নেই। রাস্তাঘাট এক্কেবারে মসৃণ। গাড়ি নিয়ে একটা লম্বা সফরে বেরোলে জমে যাবে কিন্তু, বলো? শুধু একটাই কথা, গাড়িটা কিন্তু সাবধানে চালিও। সঙ্গে রইলো তোমাদের জন্য একটা টাটকা গান।

(গান বাজবে)

নি: ইশ, কি ভালো বাংলা বলিস রে তুই!।

জু: বাংলা দিয়েই তো মন আর পেট দুইই ভরাচ্ছি রে। যাকগে, মজার কথাটা শোন।  বাজারে যে নতুন ফোন টা এসেছে, রাস্তার ধারে বড় বড় করে তার হোরডিং ভরা বিজ্ঞাপন দেখেছিস? বলে নাকি BSI ক্যামেরা দেওয়া।
নিক: BSI, ব্যাকসাইড ইলুমিনেটেড?
জুঁই :  তুই বল, ব্যাকসাইড মানে তো পশ্চাৎদেশ! পশ্চাৎদেশ আলোকিত। কোনো মানে হয়?

(দুজনেই হেসে ওঠে)


Scene 3


(মা মনের সুখে গুনগুন করে গান গাইছে কোন)


নিঃ মাতেঃ, আপনার সুপুত্রের ক্ষুধা পাইয়াছে। অনুগ্রহ করিয়া উহার ক্ষুধার অগ্নি নির্বাপণ করুন।

(মা গান গেয়েই চলেছে)

নিঃ (উচ্চ স্বরে) মাতেঃ? আপনি কি শুনিতে পাইতেছেন?

মাঃ ( গান থামিয়ে) কি? কি বলছিস? চিৎকার করছিস কেনো? এটা ভদ্রলোকের পাড়া তো, নাকি?

নিঃ বলিতেছিলাম মাতেঃ, আপনার সুপুত্র ক্ষুধায় একান্তই কাতর। উহাকে খাদ্য দাও। তুমি পুণ্যবতী হইবে।


(কোন কমিক গান/লাইন )


মাঃ সোজাসুজি বল না, খিদে পেয়েছে।  পুরো যাত্রাদলের পাঁচ টাকা পাই এর মত ডায়লগ বলছিস কেন?

নিঃ মাতেঃ, আপনার পুত্রের জীবনে চরম সঙ্কট উপস্থিত। উহার দপ্তরে নির্দেশিকা এসেছে উপরমহল থেকে, অনুষ্ঠান সঞ্চালনার সময় বিশুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলতে হবে। অগত্যা...

মাঃ অগত্যা?

নিঃ অগত্যা আমি সঙ্কল্প লইয়াছি, শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলিব। সম্ভব হইলে একটি দুইটি সংস্কৃত শব্দও ব্যবহার করিব।

মাঃ (হেসে) তাই বুঝি?

নিঃ নিশ্চয়! ইয়ে, অদ্য সকালে আপনার অলাবু সহযোগে চিঙ্গোরি মৎস্যের তরিকারী রন্ধন করিবার কথা ছিল। পাকশালে আপনি এমনটাই বলিতেছিলেন কৃষ্ণা মৎসীকে। উহা কি হইয়াছে?

মাঃ চিঙ্গোরী? তরিকারী? মতসী? কীসব আবোল তাবোল বলে যাচ্ছিস রে। হ্যাঁ রে বাবু, অদ্য টদ্য কী বলছিস রে? আদা বেটে দিবি? ও মা, আমার সোনা ছেলেটার আজ দেখছি মতিগতি শুধরে গিয়েছে। বাহ, দাঁড়া, ফ্রিজে আদা আছে। বের করে আনি। বেটে দে না মিক্সিতে। ছেলের আমার সুমতি হয়েছে দেখছি। শরৎ বাবু বেঁচে থাকলে আজ নতুন করে লিখতেন, নিখিলের সুমতি। আহা, ভাবলেও মন ভালো হয়ে যায়।

নিঃ দূর ছাই, তখন থেকে বলছি খিদে পেয়েছে, খেতে দাও। তুমি সমানে অকারণে অন্য টপিকে কীসব ভুলভাল বকেই চলেছ।

মাঃ অ্যাই, একদম বাজে কথা বলবি না বলে দিলাম। মায়ের ওপর চিৎকার করা হচ্ছে? রোজের ওই তিড়িং বিরিং ছাইপাঁশ বকবকের পর একদিন একটু ভালো করে কথা বলছিস দেখে আমি অবাক হবো না বল? বললাম বলেই ওমনি মেজাজ দেখানো আমাকে? একটা বাড়ির কাজ করিস না। জানিস আমি একা হাতে এই বাড়ি সংসার সব সামলাই। তুই আর তোর বাবা, কেউ কুটোটি পর্যন্ত নেড়ে দিস না। ভালো লাগে না আমার। বাবু, একদম ভালো লাগে না।

নিঃ উফ, মা, নট আগেন। সারাদিন বসে বসে ও মাগো গিলবে আর আমার ওপরে সেই ডায়লগ ঝাড়বে! প্লিজ খ্যামা দাও! শোনো না যা বলছিলাম, সকালে লাউ চিংড়ি করবে বলেছিলে না?

মাঃ হ্যাঁ, করা আছে তো।

নিঃ (জিভ দিয়ে একটু লোভ লোভ গোছের শব্দ করে) তাহা হইলে উহাই দাও মাতেঃ। সাথে একটু গোধূমচূর্ণ এবং সলিলের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তাহাকে ভালো করিয়া দলিয়া ও মলিয়া আমাকে রোট্টিকা বেলিয়া দাও।

মাঃ গোধূমচূর্ণ, রোট্টিকা? কৃষ্ণাকে বলছি, ফ্রিজে আটা মাখা আছে। কয়েকটা রুটি বেলে দেবে। লাউ চিংড়ি দিয়ে খাও। আর আমায় উদ্ধার করো।

নিঃ মাতেঃ, তাইই তো বলছি তোমায় তখন থেকে। তুমি আমার আকুলি বিকুলি কাকুতি মিনতি কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছ না।

মাঃ ভুলভাল বাংলা বললে আমি কী করে বুঝব? চিঙ্গোরি? রোট্টিকা? মতসী? যা ইচ্ছে তাই?

নিঃ এই মা, গোধূমচূর্ণ indeed is a word... শরদিন্দু ঐতিহাসিক উপন্যাসে আছে। বের করো, তৃতীয় খণ্ড।

মাঃ শরদিন্দু আবার কী? শরদিন্দু? বলো শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোমায়? এত কষ্ট করে ছোট থেকে ভালো স্কুলে ভালো টিচারের কাছে পড়িয়েছি, এই তার ফল? শোনো, কত রাত জেগে থেকেছি আমি, যাতে অন্ধকার থাকতে থাকতেই বেরিয়ে এডমিশনের ফর্মের লাইনে দাঁড়াতে পারি। তোমার বাবা কিচ্ছুটি করেনি। কিচ্ছু না। উল্টে আমায় বারবার কথা শুনিয়েছে, টাকা খরচের জন্য। আটকাতে চেয়েছে। শিক্ষার মূল্য কেউ দিতে জানে এ বাড়িতে? মাকে বলেছিলাম, এই বাড়িতে আমার বিয়ে দিয়ো না। শুনলো না। জীবনটা আমার শেষ হয়ে গেলো।

নিঃ আরে আবার শুরু হলো! কোথায় ভাবলাম পেটের জ্বালা জলদি মিটিয়ে তোমার সাথে একটু আলোচনা করবো। তুমি আফটার অল, সাহিত্যে এম এ। তা না...

মাঃ (গলা নামিয়ে সহানুভূতির সুরে) কিসের আলোচনা? কি হয়েছে বলবি খুলে? এত তখন থেকে বাংলা শুদ্ধ শব্দের পিছনে পড়েছিস?
নিখিল : (হতাশ গলায়) ধুর, চাকরি টা মনে হচ্ছে থাকবেনা বুঝলে?
মা : সেকি? কেনো রে?
নিক : আরে আর বলোনা, নতুন প্রোডাকশন ম্যানেজার এসেছেন না, রাইমা দি? তাঁর দাবি হলো, গোটা শো টা শুদ্ধ বাংলায় করতে হবে। আরে তুমি বলো, এখন সবাই ইংলিশ মেদিয়াম স্কুলে পড়ে। হলিউড এর সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখে, সেখানে শুধু বাংলা বলতেই হবে বলে uncommon Kichu Bangla শব্দ ঢোকাতে হবে? এটাই কি আরো অবাস্তব করে দেবে না শো টা কে?
মা : হুম, তুই বলতে মনে পড়লো, দেখছিলাম বটে আজকাল খুব লেখালেখি হচ্ছে যে বেতার মাধ্যমের সঞ্চালোকেরা  খিচুড়ি বাংলা বলেছেন। বাংলা ভাষার অস্তিত্ব এমনিতেই বিপন্ন, তার মধ্যে..
নিক: ধুস! আজ try করেছিলাম। ধেরিয়েছি প্রোগ্রাম টা। ভালো লাগছেনা কিসসু।

মা: অ। তা শুদ্ধ বাংলা মানে? সমস্যাটা   শুধুই ইংরেজি শব্দ নিয়ে নাকি যে কোনো অবাঙলা শব্দ?

নি: কি ডিফারেন্স?

মা: আছে আছে। বাংলায় এমন অনেক শব্দই আছে যার অরিজিন কিন্তু বিদেশি ভাষা। তবে ইংলিশ না।

নি: যেমন?

মা: যেমন ধর, বাবা বা দাদা। দুটোই তুর্কি শব্দ।

নি: ইন্টারেস্টিং

মা: ইভেন কমনস্য কমন শব্দ, যেমন ধর, খবর, এলাকা। এগুলো আরবি।

নি: দাঁড়াও, আমি নোট করে নিই। আরো কিছু বলো। কাল রাইমাদিকে বলবো। এগুলোই হবে আমার তুরুপের তাস।

মা: তুরুপ বললি, ওটাও ওলন্দাজ শব্দ জানিস তো।

নি: বাবাঃ!

মা: তোর রাইমাদিকে বলবি, ওইসব শুদ্ধ ভাষা চাইলে নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপপুঞ্জে যেতে। ওখানে ছাড়া দুনিয়ায় আর কোথাও uninfluenced pure ভাষা কিচ্ছু পাবে না।

নি: ওহ মা! তুমিই জগৎ জননী, তুমিই বিপত্তারিনি মা আমার!

মা: এই শোনো, তা বলে ভেবোনা পার পাবে। মা বা রাইমাদি সহ্য করে নিলেও তোমার এই ওঁচা ভাষা বউ কিন্তু সহ্য করবেনা! 
নিক : হেঁ হেঁ বউ তো ( ও মা গো -র মত ভঙ্গিতে)... এই দাঁড়াও, বউ? কে বউ?
 মা : (মৃদু হেসে) কেনো জুঁই? ওর সব প্রোগ্রাম শুনি তো আমি, কি ভালো বাংলা বলে মেয়েটা! আমি কিছু বুঝিনা ভেবেছো?
নিক : এই যাহ, কি যে তুমি.... আচ্ছা শোনো না, বলছি যে সত্যিই আমাকে একটু বাংলাটা পড়াবে? মানে জুঁই না সত্যিই বাংলাটা এত admire kore...
মাঃ এই রুটি দিয়ে লাউ চিংড়ি খেয়ে আমায় উদ্ধার করো এখন, তারপর বামনদেবের বইটা নামাস, আমার আলমারির তিন নম্বর তাকে আছে। আর কাল থেকে রোজ পাঁচটা করে বাংলা শব্দ মুখস্থ করবি।

( কিছুক্ষণের পজ। )
হালকা ' মোদের গরব মোদের আশা ' বাজে, সাথে শোনা যায় নিখিল মুখস্থ করছে :

নিক :  ক্রকচ মানে করাত, রিরংসা মানে  অদম্য হিংসে, অন্বীক্ষা মানে অনুসন্ধান করিবার ইচ্ছে, ফ্রিকুয়ান্সি র বাংলা কম্পাঙ্ক, মডুলেশন এর বাংলা সামঞ্জস্য বিধান, মেগাহার্টজ এর বাংলা.... (আটকে যায়)
ও মা মেগাহার্টজ এর বাংলা কি??? (গলা উঁচিয়ে) মাআআ?


( গানের ভলিউম ধীরে ধীরে বাড়ে)

সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment