Monday, February 27, 2017

ক্রাশ কাহিনী

সাতটা বেজে কুড়ি মিনিট। শুনছেন রেডিও মির্চি, ৯৮.৩ এফ এম। এরিজ টু ভার্গো শুনে নিন আপনার দিনটা আজ কেমন যাবে। 
Aries। কর্মক্ষেত্রে আজ সাময়িক বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। অনেকদিন ধরে যাকে মনের কথা বলবেন ভাবছিলেন, আজ বলেই ফেলুন। লাকি সংখ্যা ৩,৬,৯; লাকি রঙ হাল্কা বেগুনি, চকলেট ব্রাউন ও কালো।

বেশ, তাহলে পুজোয় কেনা ব্রাউন শার্টটা আজ পরলেই হয়। সাথে কালো জিন্স। কিন্তু বেগুনি? কিছু তো নেই। আগে জানলে গেঞ্জিটা একটু না হয় বেশী উজালা দিয়ে কাচলে হত। কি মুশকিল! এখন কী করা যায়?



বছর সাতাশের সুদীপ, সব সময় বড়ই দোনামনায় ভোগে। প্রতি মুহূর্তে কী করব, এটা না ওটা, এই করতে করতেই বেশিরভাগ সুযোগ হাতছাড়া হওয়াটা প্রায় গা সওয়া হয়েই গিয়েছে ওর। এর থেকে একটু সুরাহা পেতে, মাসতুতো বৌদির পরামর্শে এখন সুদীপের অন্যতম প্রিয় হবি রাশিফল দেখা বা শোনা। আনন্দবাজারের ভিতরের পাতায় আজ অবধি যত জ্যোতিষীর বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে, মনে হয় সকলের কাছে একবার অন্তত গিয়ে নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করালেও কোনদিনও সন্তোষজনক কিছু শোনেনি। দুই হাত মিলিয়ে কম পক্ষে আটখানা আংটি তো আছেই; এছাড়া গলায় তাবিজ, কোমরে মাদুলি, সব রয়েছে। সকাল সকাল উঠে রেডিওতে ও আনন্দবাজারের রাশিফল না শুনে অফিস যায়না। এবং এটা বেশ কিছু বছরের অভ্যেসই বটে। ওর বিশ্বাস, রেডিওতে শুনে হলুদ রুমাল পকেটে রেখেছিল বলেই এই চাকরিটা ওর হয়েছে, নইলে ইন্টারভ্যুতে যা ছড়ান ছড়িয়েছিল ও। চাকরিটা হওয়ার কোন চান্সই ছিল না।

সুদীপের ইদানীং জীবনে এক "সমস্যা" হয়েছে। না না। ঘাবড়ানোর মতো কিছু না। হৃদয়ঘটিতই। একটু বুকের বামদিকে চিনচিনে ব্যথা। তবে এটা যেহেতু ওর ক্রনিক অসুখ, এখুনি "ডাক্তার বদ্যি" করার তো প্রয়োজন নেই। অমৃতলাভ করতে পারলেই কেল্লাফতে। তা আমাদের সুদীপ বড়ই লাজুক ছেলে। বন্ধুবান্ধবদের সাথে মোটামুটি ভালোই কথাবার্তা বলতে পারলেও মেয়েদের সামনে গেলে রীতিমত তোতলায়। ইয়ে মানে ওই আর কী, এইসবের জ্বালায় বহু সুন্দরীর প্রতি হৃদয়ের গহিন গহ্বর থেকে প্রেম রসের উদ্রেক হলেও কোনটাই পরের স্টেজে পৌঁছতে পারেনি। 

সুদীপ আমাদের কর্মঠ ছেলে। অফিস কলিগ অমৃতার ওপর যবে থেকে ক্রাশ হয়েছে, তবে থেকে শুরু করেছে রিসার্চ। এবং প্রথমেই খেয়েছে ধাক্কা। HR এ থাকার সুবাদে খুব সহজেই অমৃতার পার্সোনাল ডিটেলস জানতে পেরেছে। দেখেছে ওর জন্মদিন ১০ই জানুয়ারী। এই রে! এ যে দেখি Capricorn, আর সুদীপ কিনা Aries। কেলেঙ্কারি কাণ্ড; বেজান দাড়িওয়ালা, গোঁফওয়ালা সব্বাই সারাক্ষণ বলে গেছে যে এই জুটি নাকি সবচেয়ে incompatible। যাহ। এবার কী হবে? জানা ইস্তক ও খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কাজে মন নেই, রাত্রে ঘুম আসেনা। বড়ই শোচনীয় ব্যাপারস্যাপার। প্রাণের বন্ধু, দেবেশকে শেষে একদিন বলেই ফেলল অনেক কিন্তু কিন্তু করতে করতে। দেবেশ তো শুনে হাহা হোহো করে প্রায় উড়িয়েই দিচ্ছিল। এই যুগে এসে কেউ এমন বিদঘুটে কারণে সাফার করে, এ তো কল্পনাতীত।  অনেক অট্টহাসির পর সে সুদীপের ক্যাবলা ভ্যাবলা অবস্থা দেখে দয়াপরবশ হয়ে সুচিন্তিত পরামর্শ হিসেবে অমৃতা কে মনের কথা খুলে বলতে বলল। 


সুদীপ রোজই রাত্রে ভাবে, হ্যাঁ, কাল অমৃতাকে বলবেই বলবে। এমন কী, ঠিক কীভাবে কথা শুরু করবে, সেইসবেরও প্ল্যান এ বি সি বানিয়ে ফেলে। কিন্তু ওর কপাল ভালো না। প্রতিদিনই আর জে বলছে যে রোম্যান্সের পক্ষে এখন সময় ভালো যাচ্ছেনা। বেটার লেট ড্যাং সরি। পাছে আবার এইটাও ফেল করে, সেই নিয়ে বেশ চিন্তিত। অমৃতাকে বলবে কি বলবে না, এই করতে করতে ইতিমধ্যে আরো এক সপ্তাহ কেটে গেল প্রায়। তবুও শেষমেশ মনে জোর এনে একদিন ভাবল যে নাহ, আজ বলবেই বলবে। সেইদিন নানান অছিলায় ওর সাথে কথা বলতে এগোলও। তবে চিরকালের লাজুক ছেলে সে, তার ওপর আবার বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা করা, বয়েজ স্কুলে। অমৃতার মত নামী ইংরেজী মিডিয়ামের স্মার্ট মেয়েটির সাথে কথা বলতে গেলেই কিরকম জিভ জড়িয়ে যায়। 

আবার গত দুই তিনদিন ধরে যা দেখছে, আর রিস্ক নিতে সাহস হচ্ছে না। আইটির নতুন ছোঁড়া, রজত, তার সাথে খুব হেসে হেসে গল্প করতে দেখা যাচ্ছে অমৃতাকে। কানাঘুষোয় শুনেছে রজত নাকি আবার বসের কোন দূর সম্পর্কের আত্মীয়। বলা যায়না, অমৃতাকে সেই সুবাদে পটিয়ে ফেলল হয়ত। তবে সুদীপ এখনও হাল ছাড়েনি। 

রোজ রাশিফল দেখে শুনে শুভক্ষণ খোঁজে মন হাল্কা করার; কিন্তু কপাল ভালো না। তবে অনেক কষ্টে আজ মীরের মুখে এইরকম বচন শুনে যারপরনাই খুশী হয়েছে। ঠিক করেছে, যে করেই হোক, অমৃতার কাছে আজ নিজের মনের ভাব প্রকাশ করবেই, যে করেই হোক। লাকি রঙের জামা কাপড় পরে, ভালো করে দাড়ি কামিয়ে, অনেকটা আফটারশেভ ঢেলে রীতিমত প্রচুর মাঞ্জা দিয়ে তাই সে আজ অফিস গেল। 



পৌনে নটায় অফিসে ঢুকে প্রথমেই নিজের কম্পিউটার অন করল। অটোতে আসতে আসতে প্ল্যান ছকে ফেলেছে। লাকি নম্বর অনুযায়ী ঠিক ৯টায় অমৃতাকে একটা ইমেল করবে। বাংলায় বরাবর ভালো সে, তাই ঝটপট একটা প্রেমপত্র লিখে ফেলতে বিশেষ অসুবিধে হলনা। তাছাড়া বয়ান তো এতদিনের প্ল্যানিং পর্বে বহুবার রিভাইসড হয়ে এখন মুখস্থ। নিজের ভালোবাসার কথা বলে চিঠিটা শেষ করল এই বলে যে অমৃতা যেন ওকে শীগগিরই নিজের মনোভাব জানায়।


দশটার একটু আগে অমৃতা ঢুকল। আজ পরেছে একটা সাদা রঙের চিকন কাজের চুড়িদার কুর্তা। আর একটা হাল্কা বেগুনি রঙের ওড়না। ঠিক যেন ডানাকাটা পরী। সুদীপের ডেস্ক থেকে তেড়ছা করে তাকালে অমৃতার টেবিলটা দিব্যি দেখা যায়। হাঁ করে তাকালে অবশ্য ব্যাপারটা বেশ বাজে হয়ে যাবে, তাই মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখে নিচ্ছিল ওদিকে। আজ যেন একবারও অমৃতা পেপারওয়ার্ক থেকে মুক্তি পাচ্ছেনা। কম্পিউটার খুলবার সময়ই পায়নি। একগাদা ফাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে চলেছে। মাঝে এক দুইবার চোখাচোখি হতে অদ্ভুত বিরক্ত মুখে তাকালো অমৃতা।

এই সেরেছে, মুড অফ নাকি? চিঠির এই প্রতিক্রিয়া? কেস করেছে। এটাও ফেলিওর? ধিক্কার সুদীপ, ধিক্কার। এইসব ভাবতে ভাবতে মাঝে এক সময় সুদীপ দেখল অমৃতা ক্যান্টিন যাচ্ছে। সুযোগ বুঝে সুুদীপও পিছু নিল। লাইনে একদম পরপর হয়ে যাবে ভেবে ইচ্ছে করেই একটু আসতে আসতে গেল। যতক্ষণে স্যান্ডউইচ নিয়ে টেবিলের দিকে যাবে সুদীপ, কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আর কী, অমৃতা ততক্ষণে সখী পরিবৃত হয়ে অন্য টেবিলে হাসির কলতান শুরু করে দিয়েছে। সুদীপেকে দেখে মুচকি হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিল। 

লাঞ্চের পর ডেস্কে ফিরল সকলেই, কিন্তু অমৃতার রুটিন একই রয়ে গেল। ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে তিনটে পেরিয়ে চারটে, চারটে পেরিয়ে পাঁচটার দিকে যেতে গেল বলে। সুদীপদের অফিস ঠিক সাড়ে পাঁচটা বাজলেই খালি হয়ে যায়। যাহ। এটাও তবে আনসাকসেসফুল। সামনাসামনি উত্তর না পেলেও অন্তত ভেবেছিল চিঠিটা পেয়ে অমৃতার কী রিএকশন হয়, নিদেনপক্ষে সেইটুকু দেখবে। কিন্তু তাও কপালে নেই। নির্ঘাত ওই হাল্কা বেগুনি কিছু সাথে নেয়নি বলে এমনটা হল। আচ্ছা বিচার তো ওপরওয়ালার! ও যে ব্রাউন আর কালোটা মেন্টেন করল, সেইবেলা? উনিও কি কর্পোরেট অফিসের মতোই নাকি? ভালোটা চোখে পড়েনা, কেবলমাত্র একটু পান থেকে চুন খসল কি, সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টি। ধুর। ভাল্লাগেনা।
এই শেষ, আর প্রেমে পড়বেনা। আর ক্রাশ টাশ হবেনা। মা এবার বিয়ে নিয়ে কথা পাড়লেই আর কাটিয়ে দেবেনা, বরং মা কেই বলবে পাত্রী জোগাড় করতে। ওর দ্বারা তো আর এ জন্মে প্রেম করা হলনা একটাও, এদিকে ওর কিছু বন্ধু বান্ধবরা তো প্রায় তিন চারটে প্রেম করে ফেলল। হতাশ হয়ে সাড়ে পাঁচটা বাজতে নিজের ব্যাগ গুছিয়ে লিফটের দিকে মাথা নিচু করে এগোল সুদীপ। আর কপালও এমন, ঠিক একটুর জন্য মিসও করল। পরেরটা ওদের এই তেরোতলা পৌঁছতে দেরি আছে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ব্যাঙ্কের পাঠানো এক গাদা এস এম এস ডিলিট করতে লাগল।  তখনই কাঁধে একটা হাল্কা টোকা টের পেল। ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখে, আরে অমৃতা! ঠিকঠাক দেখছে তো?
"কী হল? উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে যাচ্ছ যে? কৌতূহল নেই নাকি?"
(এ যে মেঘ না চাইতেই জল)
"তু-আপনি চিঠিটা পড়েছেন?"
"হ্যাঁ! না পড়লে কি করে বলছি?"
"না মানে আপনাকে সারাদিন তো একবারও কম্পিউটার খুলতে দেখলাম না, তাই ভাবছিলাম বুঝি আপনি ইমেলটা দেখেননি।"
"হুম, আজ খুব কাজের চাপ ছিল, তবে তোমার মেলটা আমি বাসে আসতে আসতে ফোনে পড়েছি।"
"ও আচ্ছা। আমার আসলে সাধারণ ফোন তো, তাই খেয়াল থাকেনা।"
"বেশ।"

ইতিমধ্যে লিফট এসে গিয়েছিল। দুজনেই ঢুকল ভিতরে। সুদীপ তো বরাবরের ক্যাবলা, ক্যাবলাই রয়ে গেল। মনে মনে খুব উসখুস করছিল অমৃতার উত্তর জানবার, কিন্তু মুখ ফুটে জিজ্ঞাসা আর করতেই পারছেনা। এটা যদি সিনেমা হত, পাক্কা ব্যাকগ্রাউন্ডে এখন প্রাণ চায় চক্ষু না চায় বাজত। মেন গেট অবধি একসাথে হাঁটলও দুজনে। "বেশ, কাল তাহলে দেখা হবে, আজ আসি।" এই বলে অল্প হেসে সুদীপ অটো স্ট্যান্ডের দিকে চলতে শুরু করতেই, পিছন থেকে অমৃতা ডেকে উঠল। "আচ্ছা, উত্তরটা তো শুনলেইনা। চল অন্তত একটা আইস্ক্রিম খাওয়া যাক। "
(বেটা মন মে লড্ডু ফুটা!)
"আইস্ক্রিম? আসলে আমার না টন্সিলের প্রব্লেম আছে, ঠান্ডা খাওয়া বারণ। আপনি বরং যান। একা খান।"
"আরে ধুর ছাই, তোমার মত ক্যাবলা ছেলে জীবনে দেখলাম না আমি। ডেটে ডাকছে ক্রাশ, আর উনি নাকি টন্সিলের ছুঁতো করছেন। উফফ। চল। তুমি নাহয় কফি খাবে। আর হ্যাঁ, প্লীজ আপনি বলাটা থামাবে?"

এই প্রথম অনেকদিন বাদে সুদীপের মুখে চওড়া হাসি ফুটলো। তাহলে ব্রাউন শার্টের এফেক্টে বেগুনির না থাকাটা পুষিয়ে গেল।

Sunday, February 26, 2017

Teethy nightmare

হ্যালো টুমা পিসি, তোমার দাঁতের ব্যাথা কি অবস্থা?
ওই আজ একটু কম। রুট ক্যানালের প্রথম সিটিং হয়ে গেল। 
যাক ভালো, এরপরে দেখবে আর ব্যথা হবেনা। আমি এক্সপিরিয়েন্সড। 
হুম।
আমার আবার আজ কে জানে কেন একটা দাঁত খুব নড়ছে।
দাঁত নড়ছে? সে কি রে? 
হ্যাঁ। এই তো এক্ষুনি দেখলাম। ওরে বাবা, লুড়লুড় লুড়লুড় করছে।
নাড়াস না। আপনে আপ আবার টাইট হয়ে যাবে।
এই যা! খুলে এল!
এহ?
হ্যাঁ! দিব্যি হাতে চলে এল দাঁতটা। কোন রক্তপাত ছাড়াই!
কোন দাঁত?
সেকেন্ড ক্যনাইন।
সেকেন্ড ক্যনাইন আবার কি? মানুষের তো ক্যানাইন একটাই থাকে এক একেকটা কোয়ার্টারে।
দাঁড়াও, জিভ ঠেকিয়ে দেখি।
হুম, এটা ফার্স্ট প্রি-মোলার দেখছি। রাইট। এই রে, এর পরেরটাও দেখছি নড়ছে।
জিভ দিসনা। 
সাঙ্ঘাতিক নড়ছে। উপ্স, এটাও খুলে গেল। কী হচ্ছে এসব টুমা পিসি?
তোকে বারণ করছি না দাঁতে জিভ ঠেকাস না।
আরে অটোমেটিকালি হয়ে যাচ্ছে।
চেষ্টা কর না করতে। অন্য কথা বল, বাবা মা কেমন ঘুরছে?
হ্যাঁ ভালোই। ফোনের সিগ্নাল ভালো পাচ্ছেনা। আজ দারজিলিং যাচ্ছে। ওখান থেকে কথা বলবে বলল। রন্টুকাকার জিও সিম দিয়ে ভিডিও কলের চেষ্টা করবে।
গুড।
এ বাবা। জল খেতে গিয়ে দেখছি পরপর সব দাঁত টুকটুক করে খুলে গেল। কি ভয়ানক। একটা হাফ ওপর দিকের পুরো ফোকলা। আমি ফোন রাখছি। দেখি বাবাকে ফোন পাই কিনা।
এই সুচেতনাদি শোনো না। জয় দা এসছে। লোকজনকে ডেকে গান করাচ্ছে। সোমদ্যুতি, তপোদা সবাই গাইবে। তুমিও এসো।
না আমি পারছিনা। ম্যাক্সি পরে এসেছি, স্টেজে ওঠা জাস্ট ইম্পসিবেল।
তুমি ম্যাক্সি চেঞ্জ করে এসো।
না, নট পসিবেল। আমার সব দাঁত পড়ে গেছে, উচ্চারণ অত্যন্ত খারাপ হবে। একেই এখন সুর তাল ভুল হয়, এর পর উচ্চারণ দিয়ে ঝোলাতে চাইনা। প্লীজ এক্সকিউজ।
প্লীজ এসো না।
উফ এতো ইন্সেন্সিটিভ কেন, আমি রাখছি। বাবাকে কল করি।
হ্যালো বাবা, আমার সব দাঁত পড়ে গেছে। আমি কি করি? দাঁত বাধাতে হবে। কোথায় যাব?
যাও, তোমার চেন্নাইয়ে করাও।
চেন্নাই যেতে তিন দিন বাকি। বিসাইডস আমি ফ্লাইটে এরকম ভাবে কি করে যাব? তুমি রায়চৌধুরীর সাথে কথা বলে রাখো। আমি যাব।
আরে ওখানে কি হবে গিয়ে? ও থোড়িই তিনদিনে দাঁত বাধিয়ে দেবে।
কি হবে?
বি পেশেন্ট।
ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠলাম এর পরে। সত্যি বলছি, একটুও জল মেশাইনি। সকাল সাতটা থেকে সাড়ে নটার ঘুমের স্পেলে ঠিক এমন ভয়াবহ স্বপ্ন দেখলাম। আগেও স্বপ্নে দাঁত পড়েছে, কিন্তু এক্কেবারে এক সাথে ৫-৬টা, এই প্রথম। সিরিয়াস ব্যাপার স্যাপার।

Thursday, February 16, 2017

Everyday is Valentine's Day

- হ্যালো, বল।
- তুমি কি অফিস থেকে বেরিয়ে গেছ?
- এই just parking থেকে বেরচ্ছি। কেন?
- বেশ, আমি Traders' এর উল্টো footpathএ দাঁড়াচ্ছি, pick up করে নিও।
- আবার গড়িয়াহাট? আসছি। ১৫ মিনিটে।

- চল, লেক গারডেন্স ফ্লাইওভার ধর।
- কোনও প্রশ্ন নয়! বেশ বেশ। তাই চলি।
- ব্রিজের মাঝামাঝি গাড়ীটা পার্ক করবে।
- জো হুকুম।
- আহ! কতদিন পরে এমন সুন্দর একটা sunset দেখছি। I wish I had my camera with me now.
- এই নাও। তোমার camera, বয়ে নিয়ে এসেছি। আর এইটা নাও। তোমার জন্য gift।
- Wow! Tokina 11-16!! তুমি কি করে জানলে এটা আমার খুব শখ ছিল?
- বলি, তুমি কি সব বুদ্ধিসুদ্ধি অফিসেই ফেলে রেখে আসো নাকি? Amazon Wishlist বলেও তো কিছু আছে, নাকি?
- Oops! তা gift কেন পেলাম, জানতে পারি?
- হ্যাঁ নিশ্চয়ই পার! This is to celebrate our love. Let everyday be a celebration of love
- তথাস্তু!

Wednesday, February 15, 2017

Extended Prem Dibos

- কাল কিন্তু খাওয়া দাওয়াটা জম্পেশ হল, কি বল?
- হ্যাঁ, তা হল বটে। আজকে কি প্ল্যান বলতো?
- আজ? আবার কিসের কি প্ল্যান?
- কেন প্রেম দিবস একদিন এ পালন করলে চলবে নাকি?
- ওমা, দিবস তো নামেই আছে। একদিনই তো পালন হবে!
- ধ্যাত, ওরকম করলে চলবেনা। চল, আজ একটা সিনেমা দেখে আসি। ম্যাটিনি শো তে।
- বলি তোমায় কি অফিস থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে নাকি গো? এমন রোজ রোজ ছুটি পাচ্ছ কি করে হে?
- তুমি এত সন্দেহবাতিক কেন গো?
- না মানে ভূতের মুখে রামনাম শুনলে এরকম মনে হতেই পারে।
- ঠিক আছে, মনে থাকবে। আর বলো কোনদিনও, যে আমি কেন একটু রোম্যান্টিক হলাম না। আমিও দেখে নেব তখন।
- অনেক হয়েছে, দাঁড়াও, আজ একটা সিক লিভ নিয়ে নিই, তারপরে জমিয়ে এনজয় করা যাবে। সামনে তো আর কোন ছুটিছাটাও নেই। হতচ্ছাড়া দোলটাও এবারে উইকেন্ডে।


Tuesday, February 14, 2017

Happy Valentine's Day



- বলছি সকাল থেকে এত খুটুর খুটুর করে কী করছ বল তো রান্নাঘরে?

- চা বানাচ্ছি, আবার কি!

- ও। কিন্তু রোজই তো কর, কই এত আওয়াজ তো হয় না?

- তুমি এত পুলিশের মত প্রশ্ন কর কেন বল তো? হাত মুখ ধুয়ে বারান্দায় এস।

- বাবা! বেডটি জুটল না আজ? আসছি।


ওরে বাবা! এ যে দেখি এক্কেবারে elaborate English breakfast!!! হঠাৎ??

আবার সসেজ দিয়ে হার্ট বানিয়েছ!

- Happy Valentine's Day dear wife দুপুরে চিতল মাছের মুইঠ্যা বানাচ্ছি, শাশুড়িমাকে ফোন করে রেসিপি জানতে হবে!

- অফিস যাচ্ছনা বুঝি?

- নাহ! আজ ডুব।


দুই খাদ্যরসিক মিলে আজ চুটিয়ে প্রেম দিবস পালন করব চল! প্ল্যান কেমন, বল?

- দিব্য!

Sunday, February 12, 2017

ওং ভ্রিং বৃহস্পতায়েঃ নমহঃ


টুপুর ওঠ। কত বেলা হয়ে গেল,স্কুলে যেতে হবে তো। ওঠ বাবা ওঠ।”

মায়ের ডাকে চোখ খুলে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল সিলিং ফ্যানের দিকে। মা ইতিমধ্যে আলমারি থেকে জামাকাপড় বের করতে শুরু করে দিয়েছে। আজ স্কুলে রেজাল্ট। অ্যানুয়াল এক্সামের পর লম্বা ছুটি পড়েছিল। আজ আবার রেজাল্ট আনতে যেতে হবে। বছরের এই একটি দিন টুপুর ভারী ভয় পায়। সকাল থেকেই বুক ধড়ফড়, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার জোগাড়। যত না বেশী ভয় হেডস্যার অমল বাবুর কড়া চাহনির, তার চেয়ে বেশী বরং ভয় লাগে বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে বকুনি খেতে। কয়েক ঘা উত্তম মধ্যম তো লেগেই আছে। এই তো গেলবারের আগের বছর, পরিষ্কার মনে আছে ওই সময়ের ঘটনাগুলি, একদম সিনেমার মত পরপর বলেও দিতে পারে টুপুর, ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে ওঠার পরীক্ষায় যেবার ও অঙ্কে ১০০’র মধ্যে ২৩ পেল, সেইবারে মায়ের হাতে এমন মার খেয়েছিল যে চোখ ফেটে জল এসে গিয়েছিল। এমনিতে যাকে বলে হাতে-পায়ে দুষ্টু টুপুর। তাই ছোট থেকেই স্কেল, গরম খুন্তি থেকে শুরু করে বেলন চাকি দিয়েও মার খেয়ে অভ্যস্ত। আজকাল তাই চড়চাপড় খেলেও টুপুর কাঁদেনা। তবে সেবার ঠাকুমা এসে মাকে সরালো বলে, নইলে দুই গাল বেয়ে চোখের জল বেরিয়ে গিয়েছিল; ওই পরীক্ষায় আবার ইতিহাসে একটুর জন্য ফেল করতে করতে বেঁচে গিয়েছিল। কপাল জোরে বাকি সব সাবজেক্টে পাস মার্কস পাওয়ায় ক্লাসে প্রোমোশন পেলেও রেজাল্টের পরেরদিন পেরেন্টস কল হয়েছিল।

সেই মিটিং থেকে বেরোতেই এক অদ্ভুত দেখতে ভদ্রলোক সেদিন টুপুর আর ওর মা বাবাকে একটি লিফ্লেট ধরিয়ে দিয়ে যান। অভ্যেসবশত হাতে সেটা রেখে ওরা তিনজনেই অটো ধরে বাড়ির পথে। গড়িয়াহাট মোড়ে অটোটা বেশ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। টুপুরের মা হাতের কাগজটা অন্যমনস্কভাবে খুলেই ফেলল। বেশ একটা এ-ফোর সাইজের সাদা কাগজের ওপর বড় করে লেখা “জুপিটার রেমেডিয়াল ক্লাসেস। প্রপ্রাইটর শ্রী রত্নদীপ ভট্ট।” দুই বছরের ক্র্যাশ কোর্স সহ আরও কত কি লেখা। পছন্দসই রেজাল্ট না হলে সমস্ত টাকা ফেরত। ভাল রেজাল্টের গ্যারান্টিসহ যত্নসহকারে অত্যাধুনিক গ্যাজেটের সাহায্যে অঙ্ক বিজ্ঞান ইতিহাস ভূগোল ইংরাজি বাংলা শেখানোর প্রতিশ্রুতি।

রাত্রে বাবা অফিস থেকে ফেরার পর টুপুর দেখল মা-বাবা অনেকক্ষণ বেশ গম্ভীরভাবে কিসব আলোচনা করল। তারপরের দিন দুপুরবেলা মা কোথাও একটা বেরোল। সাথে অ্যানুয়ালের মার্কশীট নিতে ভুলল না। রেজাল্টে আরেকবার চোখ পড়তেই টুপুরের আরেকপ্রস্থ কানমলা জুটে গেল। রাত্রে খাবারের সময়ে বোমাটা ফেলল বাবা। দাদু ঠাকুমার সামনেই বাবা বলে উঠল, “আমি আর টুপুরের মা ঠিক করেছি পরের সপ্তাহ থেকে ওকে একটা টিউশন ক্লাসে ভর্তি করাবো। শুক্রবার বিকেলে ওকে ওখানে রেখে আসতে হবে, আর ফেরত আসবে রবিবার রাত্রে। গোটা উইকেন্ডটা ওখানে পড়াশোনা করবে। দুই বছরের কড়া রুটিনে থেকে যদি গোবরের জায়গায় কিছু জ্ঞান ঢোকে মাথায়। বছরে কেবলমাত্র মহালয়া থেকে লক্ষ্মীপুজো ছুটি। টুপুর এইটাই কিন্তু তোমার শেষ সুযোগ। এইটার সদ্ব্যবহার না করতে পারলে কিন্তু তোমার স্কুল ছাড়িয়ে দেব, তারপরে গলির চায়ের দোকানে কাজে লাগিয়ে দেব। এই বলে রাখলাম।” টুপুর তো বাবার কথা শুনে হতভম্ব। এ আবার কেমন টিউটোরিয়াল ক্লাস রে বাবা, কই মাণিক, বিল্টু ওরা যে স্যার ম্যাডামের কাছে পড়তে যায়, সেখানে তো এরকম কিছু নেই। তারস্বরে কান্নাকাটি লাগিয়ে দিল। ঠাকুমা আদর করে শান্ত করার চেষ্টা করল বটে, তবে ওর কান্না কিছুতেই থামেনা। এবং যথারীতি বাবা-মা ও তাদের সিদ্ধান্তে অনড়।

অবশেষে টিউশন ক্লাসে যাওয়ার দিন এল। শুক্রবার বাবা ছুটি নিয়েছিল, দুপুর তিনটে বাজতেই বই-খাতা-কলমসহ দুদিনের জামা ইত্যাদি একটা ছোট্ট পিঠের ব্যাগে ভরে ওরা তিনজনে বাড়ির থেকে বেরল। রত্নদীপ বাবুর অফিসে যেতে টুপুর দেখল ওর বয়সী বেশ অনেক ছেলেমেয়ে রয়েছে। লাইন দিয়ে ওদের দাঁড় করিয়ে গেল এক ব্যাক্তি। সবাইকে একটা করে আইডেন্টিটি কার্ডও ধরিয়ে দিয়ে গেলেন, বললেন ক্লাসে যতক্ষণ থাকবে, সবসময় যেন গলায় ঝোলে ওটা। এরপর ওদেরকে একটা বিরাট বড় ঘরে নিয়ে যাওয়া হল। মা-বাবাদের সাথে আর কোনরকম যোগাযোগ রইলনা। ইতিমধ্যে টুপুর বন্ধুত্ব করে নিয়েছে ঝুলনের সাথে। ঝুলনও ওরই বয়সী, ও পড়াশোনায় বেশ কাঁচা, টুপুরের মতোই অঙ্ক আর ইতিহাসে অবস্থা খুবই শোচনীয়। পাঁচ দশ মিনিটে প্রায় ২০০ ছেলেমেয়ে ঘরে বসে পড়ল। তারপরে স্টেজে এলেন এক ভদ্রলোক। পিছনে স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করে একটি সোলার সিস্টেমের ছবিসহ নাম ভেসে উঠলো, “শ্রী রত্নদীপ ভট্ট”। বেঁটে খাটো, মোটাসোটা এক ফর্সা লোক। পরনে সিল্কের ধুতি-পাঞ্জাবি। মাইকে দুইবার টোকা দিয়ে শুরু করলেন।

“স্বাগতম। জুপিটার রেমেডিয়াল ক্লাসে তোমাদের সকলকে আমি আনন্দ সহকারে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আগামী দুই বছরে তোমরা বিশিষ্ট কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে সিলেবাসের অনেক কিছু শিখবে। দেখবে আমরা এখানে কত মজার ছলে কত কিছু শেখাব। আমাদের ব্যবহার করা পদ্ধতি যুগ যুগ ধরে ঋষি-মুনিরা রেকমেন্ড করে গিয়েছেন। বৃহস্পতি ঋষি খুব পণ্ডিত ব্যাক্তি ছিলেন, তিনি নিজে বৈদিক ম্যাথেমেটিক্স নামে এক অতি সহজ উপায় বের করেছিলেন। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওই জ্ঞানের সাথে আরও এক্সটেন্সিভ রিসার্চ করে অত্যাধুনিক গ্যাজেটসের সাহায্যে তোমাদের কাছে পড়াশোনাটা অনেকটাই সহজ করে দেবেন।” ভট্টবাবু আরও কত কী এইরকম বলে চলেছিলেন। সোলার সিস্টেম, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত মণি-মুক্ত আরও কত কিছু। টুপুর স্ক্রীনের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল, খেয়ালই করেনি। ঘুম ভাঙল ঝুলনের ধাক্কায়।

এই টুপুর ওঠ। দেখ স্যার একটা কী অ্যাপ নিয়ে বলছেন। দেখ দেখ। কোনমতে চোখ কচলে শুনল রত্নদীপ বাবু বলছেন, “প্রত্যেকে দেখ নিজেদের সীটের নীচে রাখা ওয়েলকাম কিট আছে, ওর ভিতরে একটা ট্যাব পাবে। সবাই বের করে ফেল।” টুপুর নিজের ট্যাবটা বের করে দেখল। অনেকটা বাবার ট্যাবের মতই। ক্যান্ডি ক্রাশ, টেম্পেল রান সব গেমস আছে। ভালোই হল, পড়ার একঘেয়েমি কাটানো যাবে। ওদের এরপরে ক্লাস অনুযায়ী ডরমিটরিতে নিয়ে গেল প্রথম ভদ্রলোক। পরে জেনেছিল যে উনি টুপুরদের ওয়ার্ডেন স্যার।

পরদিন সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট করার পর ওরা ক্লাস্রুম গেল। রত্নদীপ স্যার ইতিমধ্যেই চলে এসছেন। “সবাই ট্যাবটা খুলে হোম স্ক্রীন দেখ। আমরা এখানে একটা অ্যাপ ব্যবহার করব, যাতে বেশ একটা সিমুলেটেড এনভাইরনমেন্ট পাব। মনে করবে আমরা যেন বৃহস্পতি গ্রহে বসে পড়ছি। প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে কথিত আছে যে বৃহস্পতি বিদ্যার সাথে যুক্ত। ওই পরিবেশে গেলে দেখবে কত সহজেই শিখতে পারবে। স্ক্রীনে দেখ জুপিটার প্ল্যানেটের আইকন আছে, ওটা ট্যাপ কর। এবার ডেস্টিনেশন লেভেলে পাঁচ টিপবে। ভুলেও কিন্তু অন্যকিছু টিপবেনা। ১-৯ বাকিগুলি সমস্ত অন্যান্য ধাপের। সেখানে গেলে ঘোর বিপদ।”

সেই শুরু। এরপর থেকে প্রত্যেক ক্লাসের শুরুতেই ওরা এই অ্যাপে লেভেল ৫এ গিয়ে একটা পূর্বনির্ধারিত সিমুলাটেড এনভাইরনমেন্টে পৌঁছোয়। টুপুর লক্ষ্য করেছে ওখানে কত সহজেই পড়াগুলো মাথায় ঢুকে যায়। অঙ্কের ফর্মুলাগুলি আগে যেমন পড়লেও মাথার বাইরে টুক করে উড়ে যেত, আজকাল যেন ক্লাসে মনে হয় এতটাই ভারী যে মাথার বাইরে বেরোচ্ছেইনা, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বুঝি হঠাত বেড়ে গিয়েছে আর লেসনগুলো মাথায় দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। যে ল সা গু - গ সা গু নিয়ে স্কুলে হিমসিম খেত, কি সহজেই আর কি চটপট সেগুলি কষে ফেলছে। ইতিহাসের সন-তারিখ, কোন সম্রাট কার সাথে কোন ঘোটক চেপে কোথায় যুদ্ধ জয় করেছিলেন – সমস্ত যেন চোখ বুজলেই দেখতে পারে। যার ফলে ক্লাস-টেস্টে দারুণ ফল করতে লাগল জুপিটারের ক্লাসে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে স্কুলের পরীক্ষাগুলিতে টুপুর একটুও ভালো করছিলনা।

মা-বাবা তো হাফ-ইয়ারলির পর রত্নদীপ স্যারের সাথে দেখা করতে গেল বেশ চিন্তিত হয়ে। কে জানে স্যার কী বললেন, মায়ের টেনশন আর কাটেনা। টুপুরের স্কুলের পরীক্ষার রেজাল্ট আর যাই হোক না কেন, টিউটোরিয়ালে ক্লাস করতে কিন্তু বেশ ভালো লাগে। পড়াশোনায় যেন ভয়টা অনেকটাই কেটেছে আস্তে আস্তে এই দুই বছরে। এমনকি এইবারে ক্লাস সেভেন থেকে এইটে ওঠার পরীক্ষা নিয়ে টুপুর বেশ সন্তুষ্ট। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় এই যে রেজাল্টের ভয়টা যেন প্রায় নেই বললেই চলে। মায়ের ডাকে তাই ঘুম ভাঙতে ও আজ অনেকটাই স্বাভাবিক বোধ করছে। যথাসময়ে স্কুলেও গেল মায়ের সাথে। হেডস্যার যখন ওকে ডেকে রেজাল্ট দিলেন, খুব হাসিমুখে টুপুরের পিঠ চাপড়ে বললেন, “ বাঃ, তোমার রেজাল্টে খুব উন্নতি হয়েছে। এই চিঠিটা গার্জেনকে দিয়ো।“

পরীক্ষায় প্রথম পাঁচে না এলেও, টুপুর সমস্ত সাব্জেক্টে ৭৫এর উপর নম্বর পেয়ে পাস করেছে। অঙ্কে তো ১০০তে ৮৫ আর ইতিহাসে ৭৮। দাদু ঠাকুমার আদর খেতে যখন টুপুর ব্যাস্ত, ওর মা চিঠিটা খুলে পড়তে লাগল।

“মিঃ ও মিসেস মৈত্র,

আমরা খুবই আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে শ্রীমান দীপ্যমান মৈত্র পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করেছে। ওর পড়াশোনায় অনেক উন্নতি আমরা লক্ষ্য করেছি। এই উন্নতির জন্য আপনারা অনেক পরিশ্রম করেছেন। আপনাদের তাই অনেক অভিবাদন জানাই।

ইতি

স্কুল কর্তৃপক্ষ”

টুপুরের মা হেসে চিঠিটা ভাজ করে আলমারিতে তুলে রাখতে রাখতে বলল, “যার তুঙ্গে বৃহস্পতি, তাকে আটকায় কে! রত্নদীপ স্যার তো বলেইছিলেন, সিমুলেটেড এনভাইরনমেন্টে যত তাড়াতাড়ি ফল পাবে টুপুর, বাস্তব পরিবেশে একটু সময় লাগবেই। তবে ফল মিলবেই মিলবে। এ তো শত শত বছরের এক পবিত্র শাস্ত্রেরই বর্তমান যুগের ইমপ্লিমেন্টেশন। ভাগ্যিস স্যারের কথায় ভরসা রেখে দুটো বছর অপেক্ষা করেছিলেন ওরা। তাই তো আজ টুপুরের লেখাপড়ায় এত অভাবনীয় উন্নতি হল।


http://www.dakkhinerbaranda.com/?content=58443d18bd966f5f1ef1c957