Wednesday, September 25, 2019

অষ্টমীর অঞ্জলি চলছে দফায় দফায়। পাড়ার কাকীমারা ভিড় সামলে সকলকে পুজোর ফুল দিতে ব্যস্ত। রুমুনও সাধ্যমতো ওদের সাহায্য করছে। হাতে হাতে ফুল এগিয়ে দেওয়া, এক রাউন্ড অঞ্জলি হয়ে গেলে পুজোর ফুল ফেরত নেওয়ার জন্য ঝুড়ি এগিয়ে দেওয়া, এইসব। ছোট থেকেই ও ওদের এই কমপ্লেক্সের পুজোতে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করে গিয়েছে, তাই এটা নতুন কিছু না। আশেপাশে আরো কিছু বাড়ি আছে, ওখানে পুজো হয় না। তাই ভিড়টা বরাবরই লেগেই থাকে ওদের পুজোয়, বিশেষ করে অষ্টমীর সকালে।
সক্কাল সক্কাল স্নান সেরে সাদা আর গোলাপি রঙা লিনেনের শাড়ি পরে মণ্ডপে চলে এসেছে ও। মায়ের তাড়া খেয়ে বিশেষ সাজগোজ করা হয়ে ওঠেনি। ছোট্ট একটা টিপ, লিপগ্লস আর আলতো করে একটু কাজল। ভিজে চুল দিয়ে এখনো টপটপ করে জল পড়ছে। তবুও, দেখতে যে ওকে বেশ ভালো লাগছে, এ কথা রুমুন ভালোভাবেই বুঝেছে। অনেক্ষণ ধরেই মণ্ডপের এক কোণায় সাদা চেয়ারে বসে থাকা সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরা এক সুদর্শন যুবকের মুগ্ধ দৃষ্টি ওকে অনুসরণ করে চলেছে। চোখাচুখি হতেই আলতো হেসে ঈষৎ রক্তিমবর্ণ গন্ডদেশকে উপেক্ষা করেই মাঝেমাঝেই চোখাচুখিটা দিব্যি বজায় রয়েছে। বেশ একটা রোমাঞ্চ লাগছে রুমুনের।
আর ঠিক এমনই সময় বিলিতি পাখির মিষ্টি টুইট টুইট শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল রুমুনের। অন্যান্যদিন এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙলে বড্ড বিরক্ত লাগে। কিন্তু আজ যে তার ভালোই ব্যতিক্রম, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ঠোঁটের কোণে এখনো হালকা হাসি ছুঁয়ে আছে। রুমুন একবার এলার্মটা স্নুজ করলো। আলতো করে পর্দা সরিয়ে দেখলো, বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। উঁহু। এই ওয়েদারে কম্বলের তলা থেকে বেরোনো মহা পাপ। আজ স্টিভও ডে অফ নিয়েছে। পেন্ডিং কাজও তেমন নেই। একটু আলসেমি করাই যায়। তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি। প্যান্ডেলের কোণে বসে মুগ্ধ এক জোড়া চোখ যে ব্যাকুল হয়ে খুঁজে চলেছে সাদা গোলাপি লিনেনকে। মনে মনেই হেসে রুমুন আবার ঢুকে গেলো কম্বলের ওমে। হোকই না স্বপ্ন। মনটা ভালো তো হবে। তা ছাড়া, ভোরের স্বপ্ন। সত্যি না হয়ে যায় কোথায়...
পুজোয় তো সেও আছে এবারে।
"যা দেবী সর্বভূতেষু নিদ্রারূপেণ সংস্থিতা"

No comments:

Post a Comment