Thursday, October 27, 2016

মোড়ের মাথার চায়ের দোকানের রেডিও থেকে ভেসে আসছিল কিশোর কুমারের দরাজ কণ্ঠ। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। একটা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আমেজ গোটা টাউনটাকে ঢেকে রেখেছে। কালী পুজোর প্রস্তুতিতে সকলে ব্যস্ত। ঘরে ঘরে মাটির প্রদীপ আর মোমবাতির আলো একে একে জ্বলে উঠেছে। ছেলেটি অধীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে বাস স্টপে। দেখতে দেখতে ছ'টা বেজে গেছে কখন, খেয়ালই করেনি। চিরকুটে তো বিকেল সাড়ে পাঁচটা, ম্যানেজার কোয়ার্টার এর সামনে বাস স্টপ এর কথাই লিখেছিল সে। তাহলে কি তার সব প্ল্যান বাঞ্চাল? আরো প্রায় আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যখন এল না দীপালী, হেমন্ত একটু দুঃখ দুঃখ মুখ নিয়ে ফিরতে লাগল। দীপালীর জন্য আনা ছাতিম ফুলের তোড়াটা ছুঁড়ে ফেলে দিল কাল্ভারটের নীচে। চা-বাগানের কুলি বস্তির ওখানে খুব হইচই শুনতে পেল বটে, কিন্তু ওর আর ওদিকে যাওয়ার ইচ্ছেই হলনা। দীপালী কি তাহলে মোটেই ওর সাথে কথা বলতে চায় না? ও কি তাহলে ওর মনের কথা একেবারেই বোঝেনা?
সকালে উঠে খবরের কাগজের চারের পাতায় একটা ছোট্ট খবর দেখে আঁতকে উঠল হেমন্ত।
"গতকাল সন্ধ্যেয় ময়নাগুঁড়ির ডামডিম চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোর কাছে উদ্ধার হয়েছে এক বছর পঁচিশের যুবতীর রক্তাক্ত দেহ। মৃতা বিধবা, তার নাম দীপালী মুরমু। পুলিস সন্দেহ করছে ধর্ষণের পর তাকে মারা হয়েছে। মৃতার বাবা চা বাগানের কর্মচারী। ওর একটি চার বছরের মেয়ে আছে। স্থানীয় ইউনিয়ন নেতা শ্রী মাণিক ওঁরাও ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দীপালীর মৃত্যুর বিচার চেয়েছেন।"
হেমন্তর দুই পা অবশ হয়ে গিয়েছে। এক ঘণ্টা ধরে ও স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে শূন্যে। দীপালীর টানা টানা চোখ দুটি যেন ওকে এখনো টানছে।
শক্তির দেবীর আরাধনার দিনেও আরেক দেবীর জীবনদীপ নিভে গেল।

No comments:

Post a Comment