Wednesday, October 19, 2016

কপোত কপোতী

- আচ্ছা রক্তিম, কবে শেষ হবে বলতো তোর? বাড়ি থেকে খুব তাড়া দিচ্ছে। আমি আর কতদিন ঠেকিয়ে রাখব বলবি?
- আরে সুমি তুই তো সবই জানিস। এই পেপারটা বসের টেবিল ছেড়েই যায়নি এখনো। এই পেপার ছাড়া থিসিসটা কেউ পুঁছবেইনা।
- আমার আর ভালো লাগছেনা। পারছিনা আমি। গত পাঁচ বছর ধরে তোর পড়া আর শেষ হয়না। এদিকে একটার পর একটা আমার জন্য ভালো ভালো সম্বন্ধ আসছে। কাটানোর কোনো অজুহাতই পাচ্ছিনা যে।
- মানেটা কি সুমি? তুই তো পুরো ব্যাপারটা জানিস। বুঝতিসও। তুই আমার চাকরী ছেড়ে PhDতে আসাটাকে এত support দিলি তখন আর আজ এ কি বলছিস? অজুহাত আবার কি? কবে থেকে তো তোকে বলছি কাকুকে বলে দে আমাদের কথা। তা না। মেয়ের জেদ। চাকরী ছাড়া কথা বলা যাবেনা। অদ্ভুত!
- আমি জানি তুই কম খাটছিসনা। কিন্তু বাবাকে বোঝাই কিভাবে।প্রত্যেক মা বাবার মতই আমার মা বাবাও চায় আমি জীবনটা স্বাচ্ছন্দে কাটাই। কোনো অভাব যেন না হয়। আমার জন্য যেখানে লাখ টাকা মাইনে পাওয়া MBA পাস ছেলের সম্বন্ধ আসছে, বাবা কেন তোর আঠাশ হাজারে রাজি হবে। তাছাড়া এর পরে কি করবি, কোন guarantee আছে?
- সুমি এরপরে আমার কিছু বলবার নেই। হাজার কি আর লাখের সাথে পারে? দূরত্বটা অনেকটাই।



মাস ছয়েক পরঃ


রক্তিম একটি ইমেল ছাড়ল সুমিকে।
সুমি আমার এতদিনের পরিশ্রম আজ সার্থক। টপ জার্নালে আমার পেপারটা accept হল আজ। ওদের মেলটা দেখ forward করি।
সাথে সাথে সুমির ফোন।
- রক্তিম, কংগ্রাচুলেশনস।
- Thanks! কেমন আছিস বল।
- ভালো। তুই?
- হ্যাঁ, ভালোই। তুই নেমন্তন্ন করবি কবে?
- কিসের?
- কেন তোর বিয়ের? সেই লাখ টাকার ছেলের সাথে কবে বিয়ের ডেট ঠিক করলি?
- হুম, নেমন্তন্ন করব। আজ একবার বিকেলে দেখা করতে পারবি?
- আজকেই? বেশ, যাব।
- হ্যাঁ, শুভস্য শীঘ্রম।
- আনন্দমেলার সামনে চলে আসিস সাড়ে পাঁচটায়।


যথা সময়ে রক্তিম ও সুমির দেখা হলআনন্দমেলার সামনে।
- বাব্বাহ! বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে এক্কেবারে শাড়ি? তবে যাই বল, ভারী সুন্দর লাগছে তোকে এই সবুজ চিকনে। I always knew, green is your colour, আমার কথা তো কানে দিতিস না। নিশ্চয়ইওই  লাখ টাকা বলেছে! কি নাম ওর?
- অগ্নি। চল দাস কেবিনে, কাটলেট খাওয়াতে হবে।
- অবশ্যই। পেপার হয়েছে, খাওয়াব না মানে?
- অন্য কারণও আছে।
- কি কারণ?
- SSCটা লাগিয়ে ফেলেছি আমি। সেই আনন্দে খাওয়াবি!
- ওরে শালা! এ তো বিশাল খবর। Congratulations রে।
- Thanks, আচ্ছা শোন, ভালো কথা। আমার বাবা মা তোকে একবার যেতে বলেছে। রবিবার ফ্রী আছিস?
- সে আছি, কিন্তু কেন, হঠাৎ?
- সে কি? হবু জামাই কে নিজেদের মুখে মেয়ের চাকরীর খবর দেবে না?
- লাখ টাকা আসবে তাতে আমায় ডাকার কি আছে? সেই যেচে অপমান করবি?
- ইডিয়ট। তুই ভাবলি কি করে যে আমি লাখ টাকা দেখে মত পালটাবো? যাত্রাপালা মার্কা শোনালেও, ভালো যখন বেসেইছি, ছিনে জোঁকের মত লেগে থাকব। অত সহজে ছাড় পাবি না! আর হ্যাঁ, ওই মেলোড্রামাটিক কবিতাগুলো এবারে লেখা বন্ধ করিস প্লীজ ফেসবুকে। জাস্ট নেওয়া যায় না। কেন যে তোকে কেউ বারণ করেনি।
- চলো, ইস বাত পে এক স্কুপ আইস্ক্রীম হো যায়ে! মোগাম্বো খুশ হুয়া!



No comments:

Post a Comment