১।
"যে জন আছেন মাঝখানে"
গ্রীষ্মের শান্ত দুপুর। বাইরে শুনশান, শুধু একটা বিশ্রী কাক সমানে ডেকে চলেছে, একটানা, একঘেয়ে। স্বাতী বসে আছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে, এক দৃষ্টিতে ঠায় তাকিয়ে আয়নায় লেগে থাকা একটা লাল টিপের দিকে। ধুলো পড়া, রঙ ফিকে হওয়া, কিন্তু আঠা এখনো গাঢ়।
প্রতি রাতে বিছানায় শুয়ে যখন পাঁচ মাস পুরনো স্বামীর সোহাগের অপেক্ষায় থাকে ও, দেওয়ালে টাঙ্গানো স্বামীর স্বর্গীয়া স্ত্রীর ছবিতে ওই একই টিপ বড্ড জ্বলজ্বল করে।
২।
"ওরা এ মন কেমন বোঝেনা"
এমেরিকায় সুচাকুরে, কুলীন ব্রাহ্মণ, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, বয়স তিরিশ। রূপুর জন্য একদম পালটিঘর। তাই বাড়ির বড়দের কাছে ওর না টিকলো না। এক ফাল্গুনী সন্ধ্যায় চার হাত এক হয়ে ওরা চলে গেল সুদূর বিদেশে। সংসার করে সুখে শান্তিতে থাকতে।
বিয়েতে পাওয়া কিছু উপহার আর নিত্যনৈমিত্তিক দরকারি জিনিসে ঠাসা সুইটকেসটা আজ বড্ড ভারি। এক কোণে সযত্নে ওতে চলেছে কিছু সুগন্ধী কাগজ, যার প্রতিটি আঁচড়ে মাখা দুটি প্রেমময় হৃদয়ের কিছু অপূর্ণ স্বপ্নরাজি।
৩।
"বেলাশেষে"
পৌষ সংক্রান্তির আগে গোটা বাড়ি তকতকে পরিষ্কার করাটা মীরার বহু বছরের অভ্যেস। এবারে নাতি নাতনি নিয়ে ছেলেমেয়েরা আসছে বিলেত থেকে, তাই আগেভাগেই এইসব করে রাখছেন। বহু কাজ বাকি। আলমারিটা গোছাতে গিয়ে একটা কোণা থেকে বেরিয়ে এলো একটি আধ খোলা ছাইরঙা উলের গোলা আর তাতে গাঁথা দুটি আট নম্বরের কাঁটা। প্রতি শীতে স্বামীর জন্য বুনতেন, সেই বছরও শুরু করেছিলেন। আদ্ধেকটা বোনার পর আর দরকার লাগেনি।
উলের গোলাটা গোছাতে গোছাতে মীরা ভাবলেন, বাড়ি খালি হলে আবার বসবেন বোনা নিয়ে, চৌকিদার ছেলেটি এই শীতেও একখানা পাতলা সোয়েটার পরে ঘোরে।
No comments:
Post a Comment