Tuesday, April 3, 2018

অণুগল্প। বিষয়ঃ বৃষ্টি

১ নাইট আনলিমিটেড

ঘড়ির কাঁটায় যখন ঠিক রাত এগারোটা, শহরের বুকে আকাশ ভেঙ্গে নামলো হঠাৎ বৃষ্টি। গোটা বাড়ি নিশ্চুপ, নিঃঝুম, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শুধুমাত্র দোতলার বারান্দার এক কোণে তখন সবে শুরু -  সারারাত  টুপটাপ টিপটিপ আর তোর আমার জমে থাকা এক পাহাড় গল্প।



২। কালবৈশাখী

এই নিয়ে ছয় মাস হয়ে গেল শুভদীপের চাকরিটা নেই। ই এম আই আর ক্রেডিট কার্ডের বিলের চোখ রাঙানিতে বাড়ির পরিবেশ থমথমে, তটস্থ। এরই মধ্যে এক বৈশাখী বিকেলের ডাকে সুনয়নার সরকারী চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা আসায় এক লহমায় যেন গুমোট কেটে নামল স্বস্তির বৃষ্টি।


৩। বৃষ্টি, এ কী অনাসৃষ্টি

"আর কত সহ্য করতে হবে বল তো তোর জন্য আমাকে বাবু? একটু শান্তি দিবি না?" পি টি এম শেষে স্কুল থেকে ফেরার পথে মায়ের বকুনি খেয়ে বর্ষার কালো মেঘের মতোই মুখ ভার হয়েছিল বছর বারোর সমবুদ্ধর।
"বাড়ি চল, হচ্ছে তোর আজ। তাড়াতাড়ি পা চালা। বৃষ্টি আসছে।"
এ যে কী ভয়াবহ বৃষ্টি এসে লণ্ডভণ্ড করে দিতে চলেছে ওর জীবন, বনানীর বুঝতে লেগেছিল শুধু একটা দৃশ্য - ছোট এক জোড়া পা, ঝুলন্ত।


৪। প্রাক্তন

সুপ্রতীকের ফোনে জানতে পারলাম বিকাশের অ্যাকসিডেন্টের কথা, অবস্থা ক্রিটিকাল। কোনোমতে উবার ডেকে ছুটলাম নার্সিং হোম। ও তখন ওটিতে। চলছে জীবন মরণ লড়াই। আর ওটির বাইরে ওর পুরো পরিবার। ওর স্ত্রী রঞ্জনা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে, ওকে সামলানোর চেষ্টা করছে বিকাশের দাদা বৌদি। আমার বুকের ভিতর তখন প্রবল ঝড় উঠেছে, কী হয়, কী হয়, উথালপাতাল। ধীর পায়ে বেরিয়ে ওখান থেকে গেলাম বাইরে সংকটমোচনের মন্দিরে। ওইটুকু পথ যেতে ভিজলাম বটে, কিন্তু ওটা বুঝি দরকার ছিল। নইলে আমার মত "প্রাক্তন"কে কাঁদতে দেখলে, লোকে কী বলবে?


৫। কাগজের ছোটবেলা

"এই যে, তুই এই লাল কাগজটা নে। ভাইকে নীলটা দে। এবার আমি ঠিক যেমন যেমন করে ভাঁজ করছি, তেমন করে দেখে দেখে কর।"
"এই তো, খুব সুন্দর হয়েছে। এইবার এতে ফুল দিয়ে সাজাতে হবে। যা তিতলি, টবে নয়নতারা ফুটেছে। নিয়ে আয়।"
"চল, এবার আমরা এগুলোকে ভাসিয়ে দেবো নীচে গিয়ে। আয়।"
ছেলেমেয়েদুটোকে কাগজের নৌকো বানাতে শেখাতে গিয়ে কখন যে সুরমা পৌঁছে গিয়েছিল ছোটবেলার মামারবাড়ির গ্রামে, খেয়াল নেই।  ওদের "চল মাম্মাম, শিগগির চলো" ডাকে সম্বিৎ ফেরে ওর।

দিন বদলায়। কুশীলবরা পালটে যায়। কিন্তু বছরের পর বছর, প্রজন্মের পর প্রজন্ম একই বিস্ময়ভরে ভাসিয়ে দিয়ে যায় স্বপ্নভরা তরী, উজান গাঙ্গে।

No comments:

Post a Comment