Thursday, April 26, 2018

আমি ও সেই মেয়েটি

আমার হোস্টেলে একটি মেয়ে আছে। আমার উইঙেই থাকে। কিন্তু পিজি হোস্টেল, সবার সাথে সবার তেমন আলাপ নেই। তাছাড়া মেয়েটি সদ্য এসছে এই উইঙে। ওর নাম জানিনা। কোথাকার মেয়ে, কোন ডিপার্টমেন্ট, কী কোর্স, কিচ্ছুটি জানিনা। শুধু জানি, মেয়েটি অপয়া। না মানে, মেয়েটাকে অপয়া বলছিনা, কিন্তু ওর মুখটা দেখলেই কেন জানিনা মনে হয়, দিন খারাপ যাবে। সকাল সকাল স্নান সেরে জামাকাপড় শুকোতে দিতে যাই ওর ঘরের সামনে দিয়ে। জোর করে তখন নিজের চোখদুটোকে ওর ঘরের দিকে না ফেরানর চেষ্টা করতে থাকি। আমার কপাল ভালো হলে ওর জানলা বন্ধ থাকে। আর ভুল করেও যদি ওর মুখোমুখি হয়ে যাই, তো সারাদিন তটস্থ থাকি। এই বুঝি কারুর সাথে অকারণে ঝগড়া হবে বা কারুর কাছে বকা খাবো। নিদেনপক্ষে সাইকেলের চাকায় অন্তত পাঙ্কচার হবে। কাপড় মেলতে গিয়ে ওর মেলা ম্যাক্সি ঝুলছে দেখলেও গা ঘিনঘিন করে ওঠে। এতটাই অসহ্য লাগে ওকে। কোন মানুষকে যে বিনা কারণে এত অপছন্দ করতে পারি, সেটা এই মেয়েটিকে না দেখলে জানতে পারতাম না। এমনিতে আমি বাইরের রূপ নিয়ে তেমনভাবে গা করিনা। কিন্তু এই মেয়েটি কালো, মাথার চুল অনেক কম, টেনে চুল বেঁধে রাখে যখন, মাথার তেলো দেখা যায়। অনেক সময় দেখেছি সাজগোজ করেছে। কিন্তু তাও কেমন হাসি পায় ওকে দেখলে তখন, যেন কাক হয়ে ময়ূর সাজতে গিয়েছে। মাঝে মাঝে তো ইচ্ছে করে, ঘর পাল্টে নেবো হোস্টেলের। যতই ঝঞ্ঝাট হোক না কেন।
কাল সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম বাইরে। ফিরতে অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছিল। ততক্ষণে আমাদের বাস সার্ভিস বন্ধ। আমি একা হেঁটে ফিরছিলাম। একদম নির্জন রাস্তা। লোকজন নেই। মাঝে মাঝে একটা দুটো গাড়ি আলোর বেগে পাশ দিয়ে হুশ করে চলে যাচ্ছিল। চারিদিকে এত রকম ঘটনা পড়ি, একটু একটু ভয় করছিলো বটে। তার ওপর বেরোনোর আগে মেয়েটিকে দেখেছিলাম। না জানি, কী অঘটন না ঘটে আজ, এইসব ভাবতে ভাবতে দ্রুত পা চালিয়ে আসছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে একটা বাইকে দুটো চ্যাংড়া ছেলে এসে আমার ওড়না ধরে এক হ্যাঁচকা টান দিলো। দুর্বোধ্য ভাষায় কিছু একটা বলছিল, মুখ দিয়ে ভক করে সস্তা মদের গন্ধ। ভাষা না বুঝলেও, আমার যে চরম বিপদ, তা বেশ বুঝতে পারছিলাম। ভয়ে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছিল। এদিকে কুলকুল করে ঘামছিলামও। কী করবো, কোথায় যাব, কার সাহায্য পাবো, ভাবছি আর সাথে ঈশ্বরকে স্মরণ করছি। এমন সময়ে হঠাৎ দেখি উল্টোদিক থেকে স্কুটি চালিয়ে আসছে কেউ। হেডলাইটের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছে আমার চোখ, আরোহীকে দেখতে পারছিনা। শুধু শুনতে পাচ্ছি, তামিল ভাষায় কোন মেয়ের গলা। সে চিৎকার করছে, স্কুটি থেকে নেমে ক্যারাটের পাঞ্চ মারছে। আমি ততক্ষণে প্রায় বেহুঁশ। আবছা দেখতে পেলাম ছেলেদুটো বাইকে উঠে দে চম্পট। এক জোড়া পরম মায়াময় দুই চোখ আমার দিকে তাকিয়ে, সযত্নে আমায় উঠিয়ে পাশের এক বেঞ্চে বসাচ্ছে। অজ্ঞান হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে বুঝলাম, এ যে সেই মুখ, সেই অপয়া মুখটি।

 

No comments:

Post a Comment