(এক তরফা ফোনের সংলাপ)
মিসেস সেনঃ নমস্কার, আমি আজকের আনন্দবাজার পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে ফোন করছিলাম।
ঃ
মিসেস সেনঃ হ্যাঁ, আমি মিসেস শ্রুতি সেন। মেয়ের মা। মানে...
ঃ
মিসেস সেনঃ হ্যাঁ। বলছি। আমার মেয়ের নাম রোহিণী সেন। বর্তমানে আই আই টি মাদ্রাসে পি এইচ ডি করে। আপাতত কিছুদিন ছুটি কাটাতে এসেছে কলকাতা।
ঃ
মিসেস সেনঃ বায়োটেক
ঃ (দীর্ঘ)
মিসেস সেনঃ আচ্ছা। ঠিক আছে। পাঠাবো। একটু জিজ্ঞাস্য ছিল।
ঃ
মিসেস সেনঃ বলছি, আপনার ছেলের ডিটেলস...
ঃ (নাতিদীর্ঘ)
মিসেস সেনঃ আপনাদের বাড়িটা কোথায়?
ঃ
মিসেস সেনঃ ও আচ্ছা। ব্যারাকপুর। বেশ। তা ছেলে কোথায় পড়ায়?
ঃ
ঃ ও, আই আই টি? তা কোনটি?
ঃ
মিসেস সেনঃ ও (একটু থমকে/ ভেবলে গিয়ে)। আচ্ছা। বেশ।
ঃ
মিসেস সেনঃ হ্যাঁ বলুন।
ঃ
মিসেস সেনঃ ম্যাট্রিমনি৪২০ অ্যাট ইয়াহু... হুম।
ঃ
মিসেস সেনঃ ও, ম্যাট্রিমনিতে এন ওয়াই না?
ঃ
মিসেস সেনঃ আচ্ছা। এম এ টি আর আই এম ও ডাবল এন আই ই। আচ্ছা, এইটা এরকম বানান কেন?
ঃ
মিসেস সেনঃ ও আচ্ছা। আমি ভাবলাম হয়তো আইডি খুঁজে পান নি। ঠিক আছে। আমি মেয়েকে বলে সব পাঠাচ্ছি।
ঃ
মিসেস সেনঃ হ্যাঁ নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই। বুঝি। তাড়াতাড়ি পাঠাচ্ছি।
ঃ
ঃ হ্যাঁ, অনেক ধন্যবাদ। রাখছি তাহলে?
ঃ
মিসেস সেনঃ নমস্কার।
(ফোন রাখার শব্দ)
(পাশ থেকে ভদ্রলোক, মানে মিস্টার সেন, খবরের কাগজটি ভাঁজ করে রেখে আগ্রহভরে তাকালেন স্ত্রীর দিকে)
মিসেস সেনঃ বাবুউউউ, এই বাবুউউউ
(দূর থেকে) রোহিণীঃ কীইইইইই?
মিসেস সেনঃ এদিকে শোন
রোহিণীঃ কী হয়েছে বলো না।
মিসেস সেনঃ আঃ, এখানে ডাকছি তো। শুনে যা।
রোহিণীঃ উফ। আসছি।
(রোহিণীর প্রবেশ)
রোহিণীঃ বলো?
মিসেস সেন: কী করছিলি রে?
রোহিণী: আরে সামনেই দিগন্তর আনুয়াল ফাংশান না? তা তাতে একটা শ্রুতিনাটক নামাতে হবে। সেইটার স্ক্রিপ্ট নিয়েই ভাবছিলাম। বিকেলে তো আবার বেরোনো আছে। তাই এখন সেরে ফেলবো ভাবছিলাম যতটা পারি।
মিসেস সেন: বিকেলে কোথায় যাবি আবার?
রোহিণী: সাউথ সিটি। পরে বলছি।
মিসেস সেন: ও। তা কী নিয়ে লিখবি?
রোহিণী: জানি না। মাথায় আসছে না কিছু। ওই জন্যই তো চুপচাপ বসে ভাবছিলাম। তার মধ্যে তুমি এমন হাঁকডাক শুরু করে দিলে। তা বলো, কী হয়েছে?
মিসেস সেনঃ বলছি শোন না, তোর অ্যাটলাসটা এখনও আছে?
রোহিণীঃ অ্যাটলাস? কী করবে?
মিসেস সেনঃ আঃ, যা জিজ্ঞেস করছি, সেইটা বলবি তো।
রোহিণীঃ খুঁজলে হয়তো পাওয়া যাবে। কেন বলোতো?
মিসেস সেনঃ দরকার আছে। একটু দেখ না রে।
রোহিণীঃ কী দরকার বলো? এখন যাবতীয় যা ইনফরমেশন চাই, সবই ইজিলি গুগলে পেয়ে যাবো। বরং ইট ইস মোর কনভিনিএন্ট।
মিসেস সেনঃ তা ঠিক। তা শোন না, বলছি যে, ইন্ডিয়াতে মেট্রো সিটিজ কোনগুলো?
রোহিণীঃ দাঁড়াও, নেট দেখে বলি। আপাতত যা মনে হচ্ছে, দিল্লী বম্বে কলকাতা ম্যাড্রাস ব্যাঙ্গালোর হায়দ্রাবাদ। পুণে কি? বা আর কোন? এক মিনিট। লেট মি চেক।
(মোবাইলে খানিক খুটখাট)
রোহিণীঃ হুম, যা বলেছি, ঠিক। সাথে অ্যাড পুণে অ্যান্ড আহমেদাবাদ।
মিসেস সেনঃ আচ্ছা, এঁর মধ্যে আই আই টি কোনগুলোতে আছে?
রোহিণী (একটু অবাক হয়েই)ঃ দিল্লী বম্বে মাড্রাস হায়দ্রাবাদ। গান্ধীনগরেও আছে। কিন্তু অটাকে কি আহমেদাবাদ হিসেবে ধরবে? না ধরাই উচিত।
মিসেস সেনঃ হুম। আচ্ছা, এদের সমস্ত ফ্যাকাল্টিদের লিস্ট কোথায় পাবো?
রোহিণীঃ নেটে। কিন্তু ওয়াট ইস দিস মা? কী হয়েছে?
মিসেস সেনঃ সম্বন্ধ।
রোহিণীঃ মা তুমি আবার শুরু করেছ?
মিসেস সেনঃ সে কী, আবার শুরু করেছ আবার কী কথা? তোর বিয়ে দিতে হবে না?
রোহিণীঃ উফ বাবা। তুমি প্লিজ বলো মা কে। কতবার বলেছি তো। এখন এই বিয়ে বিয়ে বিয়ে না করতে। আমি মরছি রিসার্চের জ্বালায়। এদিকে তুমি পিছনে পড়ে আছো। জানো পেপারটা কবে থেকে আন্ডার রিভিউ পড়ে আছে। ওটা যতক্ষণ না হচ্ছে, আমি থিসিস সাবমিট করতে পারবো না। ওই নিয়ে টেনশনে মরে যাচ্ছি। এদিকে তুমি ওই ফাটা রেকর্ডের মতো এক গান গেয়েই চলেছো। ডিসগাস্টিং।
মিস্টার সেনঃ আরে বাবু, শোন না। শুনেই তো দেখ।
রোহিণীঃ বাবা তুমিও এর মধ্যে?
মিস্টার সেনঃ আরে না রে বাবা। আমি এঁর মধ্যে নেই। কিন্তু এতক্ষণ তোর মায়ের এক তরফা যা কনভারসেশন শুনলাম রে। উফ, আই অ্যাম সো কিউরিয়াস, শুনেই নিই। তুইও চুপচাপ বসে শোনই না।
রোহিণী (খুব বিরক্ত হয়ে)ঃ ওকে। তুমি বলছো বলে। বাট লেট মি মেক ওয়ান থিং ভেরি ক্লিয়ার। আই ডোন্ট ওয়ান্ট আ রিপিট অফ দিস বিয়ে বিয়ে ননসেন্স এনিমোর নাউ। এটাই লাস্ট শুনছি। এর পরে ফারদার এই নিয়ে আলোচনা শুনলে আমি বাড়ি আসা বন্ধ করে দেবো।
মিসেস সেন (করুণ স্বরে): দেখলে তুমি? দেখলে মেয়ের কান্ডকারখানা?
মিস্টার সেন: আহা, অত অধৈর্য্য হও কেন। পরের কথা পরে দেখা যাবে। যাক গে, তুমি বলো দেখি।
মিসেস সেন: হুম। তা আজকের আনন্দবাজারে একটা ভালো সম্বন্ধ দেখলাম বুঝলে। পাত্র এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। ঘোষ। বয়স চৌত্রিশ।
মিস্টার সেন: এই রে। তুমি এদের ফোন করলে শ্রুতি?
মিসেস সেন: এদের মানে? কী সমস্যা?
মিস্টার সেন: না মানে জ্বলজ্যান্ত এরকম রেড ফ্ল্যাগ দেখেও তুমি ফোন করতে পারলে?
(পাশ থেকে রোহিণীর খ্যাকখ্যাকে হাসির শব্দ।)
রোহিণী: বাবা, মা বোঝেনি।
মিস্টার সেন: থাক। আর বুঝতে হবে না।
মিসেস সেন: বলো না রে বাবা।
মিস্টার সেন: একটা চৌত্রিশ বছর বয়সী ছেলের সাথে তুমি বাবুর বিয়ের চেষ্টা করছো কী করে।
মিসেস সেন: তা তোমার মেয়েরও তো বয়স ঊনত্রিশ। সে কথা মাথায় আছে? খুকি খুকি সেজে ঘুরলেই হলো?
রোহিণী: আই অবজেক্ট। বয়স নিয়ে আমায় খোঁটা দেবে না। এখনও টিন্ডারে যত ম্যাচ আসে, সব কিন্তু বয়সে ছোট। সো...
মিসেস সেন: ওই নিয়েই থাক। শোনো, সম্বন্ধ করে বিয়ে করলে ওই পাঁচ ছয় বছরের এজ গ্যাপটা নরমাল।
রোহিণী: আরে ধুর। কিছুই বুঝছো না। লিভ ইট।
মিস্টার সেন: হ্যাঁ সেই। রেড ফ্ল্যাগ, চৌত্রিশ। কিছুই যখন বোঝোনি, ফাইন। ঐতিহাসিক ভুল আবার হবে। হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেলফ। যাক গে। কন্টিনিউ।
মিসেস সেন: হ্যাঁ, তা যা বলছিলাম। তো সেই নম্বরে ফোন করলাম। পাত্রের মা রিসিভ করেছিলেন। বললেন ছেলে আই আই টি তে পড়ায়। কিন্তু কোন আই আই টি, সেটা জিজ্ঞেস করলাম। বলেননি। বললেন, কোন এক মেট্রো সিটিতে। ঠিক সময়ময়ত জানিয়ে দেবেন।
রোহিণী: এ আবার কি অদ্ভুত ব্যাপার। কোন আই আই টি বলতে এত লজ্জা কীসের? আদৌ আই আই টি তো মা? নাকি আই টি আই? নির্ঘাত তাই। বসে বসে সব আই আই টির ওয়েব সাইট চেক করবে নাকি?
মিসেস সেন: হয়তো।
রোহিণী: পাগল নাকি। আর তুমি নিশ্চয়ই বলেছো আমি আই আই টি এমে আছি?
মিস্টার সেন: হ্যাঁ, বলে তো ছে। ইভেন ডিপার্টমেন্ট ও বলেছে।
মিসেস সেন: জিজ্ঞেস করলো তোর ডিটেল। তাই বলেছি।
রোহিণী: এ কে রে ভাই। আমার ডিটেল জেনে নেবে। এদিকে নিজেদের বেসিক জিনিসই বলবে না। লোকেশন। দ্যাট ইস সো ইম্পরট্যান্ট। নাম কী লোকটার? দেখে হচ্ছে স্যাম্পল টা কে।
মিসেস সেন: নাম বলেনি।
রোহিণী: এক মিনিট এক মিনিট। নাম বলেনি মানে?
মিসেস সেন: হ্যাঁ মানে সারনেম জানি। ঘোষ। ব্যারাকপুরে বাড়ি। ব্যস। ইমেল আই ডি দিয়েছে। বলেছে তোর সিভি আর ছবি পাঠাতে। ওঁদের ছেলের পছন্দ হলে যোগাযোগ করে নেবেন।
রোহিণী: মগের মুলুক পেয়েছে নাকি? এহ? ইয়ার্কি? নাম বলবে না। লোকেশন জানাবে না। এদিকে আমাদের সব ডিটেল জেনে নেবে। আবার সিভি ছবি সব চাই।
মিসেস সেন: আরে রাগ করছিস কেন? নিশ্চয়ই পরে জানা যাবে।
মিস্টার সেন: আর শোন রে। ইমেল আইডি খানা যা এক পিস।
রোহিণী: নিশ্চয়ই ফালতু কিছু হবে। ইনস্টিটিউট আইডি নিশ্চয়ই দেয়নি।
মিসেস সেন: আমি তোকে ইমেল এড্রেসটা দেব বাবু। তুই লক্ষ্মী মেয়ের মতো সিভি আর ছবি পাঠিয়ে দিস।
রোহিণী: ফার্স্ট অফ অল, সিভি ছবি চায় কোন সাহসে যখন নিজেদের বেসিক ইনফো দিতে রাজি নয়? তুমি কী করে শিয়র হচ্ছ যে এটা কোনো পারভার্টের নম্বর নয়? হয়তো আমার ডিটেলস, ছবি সব নিয়ে মিসইউজ করবে। বিসাইডস, হু আসকস ফর সিভি? চাকরি দিচ্ছে নাকি? উইয়ার্ড।
মিসেস সেন: হয় রে বাবা। সিভি চায়। আমি শুনেছি।
রোহিণী: চায় আমিও জানি। মৃন্ময়ীর কাছে শুনেছি। ওর বোনের জন্য বানিয়েছিল। বাট ওরা তেলুগু। বাঙালিদের মধ্যে শুনিনি কখনো।
মিসেস সেন: আরে বাবা। হয়। আমি তোকে বলছি শোন না। এই যে, ম্যাট্রিমনি৪২০@ইয়াহু.কো। ম্যাট্রিমনি স্পেলিংটা আলাদা। দেখে নিস।
মিস্টার সেন: নিউমেরলজি। সব নিউমেরলজি। সায়েন্সের প্রফেসর ছেলে, এদিকে দেখো। সুপার্সটিশনের আখড়া।
রোহিণী: বাবা দেখো, এড্রেসে নম্বরটা আবার ৪২০। ভাবতে পারছো?
মিস্টার সেন (হাসতে হাসতে): চৌত্রিশ, ৪২০... তাও তোর মা রেড ফ্ল্যাগ দেখছে না রে বাবু।
রোহিণী: সেই।
মিসেস সেন: এরকম করে তোরা বাপ মেয়েতে মিলে আমায় শেষ করে দিলি। একটা রিক্যুয়েস্ট করলাম। সেটাও রাখলি না।
রোহিণী: মা প্লিজ। তুমি আমায় আর একবারও বলবে না এদের মেল করতে। যদি বলো, আমি করবো। কিন্তু এট ইয়োর ওন রিস্ক। কারণ মেলে আমি যে কী না কী লিখে দেবো, তার গ্যারান্টি কিন্তু আমি নিচ্ছি না। বুঝেছো? যতসব ফালতু ব্যাপার।
মিসেস সেন: তুই সব ব্যাপারে ওরকম করিস কেন রে? এইটুকু এডজাস্ট করতে হয়। আমরা মেয়ের বাড়ি। তাছাড়া ওরা তো বলেছে, পরে বলবে।
রোহিণী: পরে বলবে মানে? ওয়াট ডু ইউ মিন বাই দ্যাট? এখন বললে কী প্রব্লেম? গুগল সার্চ করলে কী ভয়ানক কিছু বেরোবে? তা সেটা তো পরে জানলেও আমরা জানবো। অদ্ভুত।
মিসেস সেন: ওরকম রেগে যাস না। মেয়ের বাড়ি। সম্বন্ধ করে বিয়ে। এগুলো হয়।
রোহিণী: চেঞ্জ ইয়োর থট। হয়তো আগে হতো। এখনো হয়। ভুল হয়। মেন্টালিটি পাল্টাও।
মিস্টার সেন: হ্যাঁ শ্রুতি, এটা কিন্তু বড্ড বাড়াবাড়ি।
মিসেস সেন: আমি আর কী বলি। তোমরাই যখন সব সময় ঠিক, আমি সব সময় ভুল। আমারই দোষ।
মিস্টার সেন: এই ক্ষেত্রে, হ্যাঁ।
রোহিণী: মা প্লিজ স্টপ মেকিং মি ফিল লাইক ইয়োর বার্ডেন। যা ইচ্ছে যার তার উইমসেস এন্ড ফ্যান্সিসের দায় নিয়ো না। প্লিজ মা।
মিস্টার সেন: তুমি বরং যাও গিয়ে একটু শোও। রেস্ট নাও। সারাদিন খাটুনি যায়। রেস্ট নাও। দরকার।
রোহিণী: আমি যাই লেখালিখির চেষ্টা করি। কিছু না পেলে এই পুরোটাই স্ক্রিপ্ট করে দেবো। লোকে অন্তত হাসবে এরকম অদ্ভুত সব দাবি দেখে।
মিস্টার সেন: বিকেলে তোর কোথায় বেরোনো রে?
রোহিণী: ওই যে বললাম, সাউথ সিটি।
মিস্টার সেন: কার সাথে?
রোহিণী: সৌকর্য।
মিস্টার সেন: সে আবার কে?
রোহিণী: ওই হিউম্যানিটিজের সুদেষ্ণা আছে না? ওর ক্লাসমেট ছিল জে ইউ তে। ওই সুদেষ্ণার জন্য কিছু পাঠাবে বলেছে। আমি কালেক্ট করে নেব। কফিও খাবো। শুনেছি ছেলেটা সত্যজিৎ টু স্মরণজিৎ সবেতেই কম্ফোর্টেবল। তাই আশা করছি, আড্ডাটা জমবে ভালো।
মিস্টার সেন: যা। ঘুরে আয়। দেখিস বাবা, হিস্ট্রি জিওগ্রাফি সবদিকটা দেখেশুনে নিস।
রোহিণী: বাবা, তুমি না... (হাসি)
(বাবা মেয়ে হেসে প্রস্থান করে। মা গজগজ করতে থাকে।)
No comments:
Post a Comment