Thursday, November 2, 2017

নাম তো সুনা হোগা

পুজোর ছুটির পর স্কুল খুলেছে আজ প্রায় এক মাস পরে। এইট বির ক্লাসরুমে আজ এক নতুন মুখ। লাস্ট বেঞ্চের একটা কোণে চুপ করে বসে আছে ছেলেটা। মিষ্টি দেখতে, চোখে চশমা না থাকলে অনেকটা রাহুলের মতো দেখতে। আরে রাহুল, কুচ কুচ হোতা হ্যায়? সেই রাহুল।  ফার্স্ট পিরিয়ডে ক্লাস টিচার মহুয়া মিস রোল কলের সময় ছেলেটির সাথে সারা ক্লাসের পরিচয় করিয়েছিলেন বটে, কিন্তু রূপসা তখন চকপিস আনতে অফিসে গিয়েছিল, তাই নামটা জানা হয়নি। রূপসার তো কী বিশাল ক্রাশ এস আর কের উপর। প্রথম তিন পিরিয়ড ধরে ক্লাস চলাকালীন তাই বারবার চোখ গেছে ছেলেটির দিকে। বেশ একটা অগোছালো ভাব চেহারার মধ্যে, শার্টের কলারটা একদিকে উঠে আছে, টাইটাও ল্যুজ। নেহাত হেডস্যার এখনো এইদিকে আসেননি, নইলে ঠিক প্রথমদিনেই ছেলেটা পানিশমেন্ট পেত। রূপসা ঠিক করল, টিফিন ব্রেকের সময় একবার গিয়ে আলাপ করবে আর তখন ওকে স্কুলের আদবকায়দা নিয়ে বলবে। এই সবে সরখেল স্যার ম্যাথস ক্লাস নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। টাইম এন্ড ডিস্টেন্সের কিছু বাঁশ বাঁশ অঙ্ক করতে করতে আজ সারা ক্লাস বিদ্ধ্বস্ত, সবাই প্রায় যে যার মত চুপচাপ টিফিন বক্স বের করছে। নতুন ছেলেটি ছাড়া আর কেউই তেমন সপ্রতিভ নেই আর। ছেলেটিই বরং প্রত্যেকটা অঙ্ক স্যারের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে করে যাচ্ছিল। রূপসা ভাবল, এই সুযোগ। অঙ্ক বোঝাও হবে, সাথে সাথে আলাপটাও ঝালিয়ে আসবে। নইলে ওর মতো গুডি গুডি মেয়ে হঠাৎ যেচে যেচে নতুন ছেলের সাথে আলাপ করতে যাচ্ছে, ইমেজের সাথে যায়না। বন্ধুরাও আওয়াজ দেবে।
"হাই, আমি রূপসা। লাস্ট যে অঙ্কটা স্যার আদ্ধেক হিন্টস দিয়ে চলে গেলেন না, ডু ইয়ু মাইন্ড এক্সপ্লেইনিং ইট টু মি?"
" শিয়োর! এই দেখো, এইখানে রিলেটিভ ভেলোসিটি ধর এক্স, প্ল্যাটফর্মের লেন্থ তো বলেই দিয়েছে ... "

মিনিট দশেক ধরে অঙ্কটা ভালো করে বুঝেটুঝে বহুবার থ্যাঙ্ক ইউ বলে রূপসা এবার নিজের ডেস্কের দিকে যেতে গেলো। হঠাৎ মনে পড়ল, আরে এত কাণ্ডের মধ্যে, ওর নামটাই তো জানা হয়নি।
" হ্যাঁরে। তোর নাম কী রে? সেটাই তো জানলাম না। "
উত্তর এলো, " রাহুল, নাম তো সুনা হোগা! "
ঠোঁটের কোণের এক কুচি হাসিটা...

No comments:

Post a Comment