Monday, October 30, 2017

আজি দখিন দুয়ার খোলা ৪ঃ জীবন যেমন চলছে চলুক

আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, ছোট থেকেই বন্ধুবান্ধবদের মুখে তাদের ভাই বোন দাদা দিদিদের কথা শুনে মাঝে মাঝে মনে হত,আমার নিজের একখানা দাদা/দিদি/ভাই/বোন থাকলে তো বেশ হয়। তারপরে আই আই টিতে এসে যখন দেখলাম এই সিব্লিং পাতানোর স্যাম্পল সাইজটা বেশ বেশ ভালো এবং বড়, আমি আর বেশী দেরি করিনি। বোনের সংখ্যা একটু কম (সবচেয়ে বেশী যাদের নাম বলব, ভাস্বতী আর অনিন্দিতা। অমৃতার কথা আগের পর্বেই বলেছি।  এছাড়া সায়ন্তীর কথা না বললেই না। মেয়েটা আমায় এত ভালোবাসে, এত যত্ন করে আমার, খুব খেয়াল রাখে। গত শীতে আমি সাইকেল থেকে উল্টে চিতপটাং যখন, ও ছিল সাক্ষাৎ আমার সান্টা ক্লজ।), দাদা দিদি প্রায় নেইই বলা চলে (এর কারণ হল আমি নিজেই তো প্রায় প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ, এখানে আমার চেয়ে বয়সে বড় খুব বেশী লোকজন নেই, থাকলেও চেনা না।) । তবে ভাইয়ের সংখ্যা এত বেশীমাত্রায় অধিক যে আমার চারপাশে মাঝেমধ্যেই "দিদি দিদি" বলে হাঁকপাঁক শোনা যায়। এবং সেই ডাক এতটাই জোরে হয় যে দুই হাজার কিমি দূরে বসেও মানুষ কাজ করতে করতে একবার ভেবে ফেলেন, নিশি ডাকল নাকি।
ক্যাম্পাসে আমাদের একটি বাঙালি এসোসিয়েশন আছে, নাম দিগন্ত। দিগন্ততে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গিয়েই মূলত এদের সাথে আলাপ। অয়ন, চন্দন, ঋতেন্দু, শরণ্য এরা হচ্ছে যাকে বলে একদম প্রাণাধিক প্রিয়। এদের সাথে উঠতে বসতে যেমন ঝগড়া হয়, তেমনি এরা না থাকলে মনে হয় কিছু একটা মিসিং। আমার যত দাবী ওদেরই কাছে আর ওদেরও যত আবদার আমার কাছে। যেমন তেড়ে ঝগড়া করি, তেমনি আবার চোখ বন্ধ করে ভরসা করে মন খারাপ হলেই দুঃখর ঝাঁপি ওদের কাছেই পেশ করি। এছাড়া আরো আছে কয়েকজন, যেমন সৌরভ, নীলাঞ্জন, দেবজ্যোতি। একসাথে এদের অনেকের সাথেই  খুচখাচ বেড়াতে টেরাতে (ইয়েলাগিরি, কোল্লি হিলস, পন্ডিচেরি, মহাবলিপুরম) গিয়েওছি। ওদের সাথে এই হৃদ্যতা বাড়ে আরো বেশী করে বন্যার সময়ে।
২০১৫ সালে ডিসেম্বর মাস নাগাদ আমাদের এখানে ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। বেশ কিছুদিন ধরে  ভারী বৃষ্টি হয়ে রাস্তাঘাট জলমগ্ন, সাবস্টেশন জলে ডুবে বলে কম্পালসরি পাওয়ার কাট। বাহাত্তর ঘণ্টা আমরা বিনা বিদ্যুতে ছিলাম। আই আই টিতে হোস্টেলগুলির নাম সব নদীর নামে। যেমন কৃষ্ণা, কাবেরি, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু, তুঙ্গ-ভদ্রা, সরযূ, সবরমতি, অলকানন্দা, যমুনা, গঙ্গা (কখনো কোন দরকারে গঙ্গা জল লাগবে শুনলে প্রথম যে পিজেটা মাথায় আসে, গঙ্গা হোস্টেলের কলের জল আনলেই হয়!!) ইত্যাদি।  আমার হোস্টেল সবরমতি। পরিচিতা থাকত অন্য হোস্টেলে, সরযূতে। যেহেতু আমরা বাকি মেয়েরা থাকতাম সবরমতিতে, ও তাই আমাদের এখানে চলে এসেছিল। বাইরে যখন হোস্টেলগুলি নিজেদের নামের মহিমা অক্ষুণ্ণ রাখতে ব্যস্ত  (ভালোমতো স্রোতস্বিনী নদী বইত) , তখন আমরা হস্টেলের ভিতরে ব্যস্ত রাজ্যের গল্প নিয়ে। পি এন পি সি থেকে শুরু করে গভীর জীবনদর্শন কিচ্ছুটি বাদ যায়নি। কারেন্ট নেই, রাস্তাঘাটে জল থইথই, ওই অবস্থায় তো আর ল্যাবে যাওয়া যায়না। কাজেই হঠাৎ পাওয়া ছুটি। সকাল হতে হতেই আমরা কোনোমতে মেসে ব্রেকফাস্ট করে বেরোতাম এডমিন বিল্ডিং। সারা ক্যাম্পাসে তখন শুধুই ওখানে এমারজেন্সি পাওয়ার থাকত, উদ্দেশ্য ফোনটা একটু চার্জ দেওয়া। এবং কষ্টেসৃষ্টে যদি একটু ফোনের টাওয়ার পাওয়া যায়, তাহলে বাড়িতে কথা বলা। মোবাইলে সিগন্যাল পাওয়া ভারী দুষ্কর ছিল, ল্যান্ডফোন ওই কটাদিন দারুণ সার্ভিস দিয়েছিল। সারা বছর হোস্টেলের ল্যান্ডলাইনে কোন রিং শোনা যায়না, আর ওই কদিন একের পর এক শুধু ফোন এসে যাচ্ছে। কখনো ৪৩২, কখনো ৪৪০। যেই ধরছে, যার জন্য ফোন তাকে ডেকে দিচ্ছে। ভাগ্যক্রমে আমার বি এস এন এল কানেকশন থেকে এস এম এস যাচ্ছিল, বাড়িতে ওইভাবেই যোগাযোগ রেখেছিলাম। অন্যান্যদিনে মেসে যেই উপমা দেখলে নাক সিটকে চলে যাই, বন্যার সময় ওই কটাদিন সেই খাবারই সোনামুখ করে খেতাম। প্রতিটা মিল খেতে যাওয়ার সময় ভাবতাম, কে জানে এরপরেরটা পাবো কি না। একেই তো বৃষ্টি থামার কোন সিন নেই, তার উপর দোকান বাজার বন্ধ, মেসেই বা কোথা থেকে খাবার আসবে। ওই ডাল ভাত আর আঁচার পেলেই তখন কী খুশী। পাওয়ার নেই, পাম্পে জল উঠবে না, তাই স্নান করা নিয়েও প্রায় রেস্ট্রিকশন, এর মধ্যেও দেখতাম কিছু লোকজন কোমরছাপানো লম্বা চুল শ্যাম্পু করছে, বালতি বালতি জামাকাপড় কাচছে, সত্যি বাবা, কত বিভিন্ন ধরণের মানুষ যে হতে পারে, হোস্টেল লাইফ না হলে বোঝা যায় না।
তো যাই হোক, যা বলছিলাম, আমি এত এক কথা বলতে অন্য কথায় চলে যাই, কি বলি। ক্ষমা করে দেবেন মাঝে মাঝে। হ্যাঁ, এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে একদিন হয়েছে কি, আমার ভারী চিন্তা শুরু হয়েছে, আমার ভাইগুলো সব ঠিক আছে তো? কোন খবর পাচ্ছিনা, ফোনে কথা হচ্ছেনা, হোস্টেলের নাম জানি, কিন্তু রুম নম্বর জানিনা, অগত্যা ওই চত্বরে ঘুরে ফিরে এলাম, বাই চান্স যদি দেখা পাই আর খবর পাই। কপাল খারাপ, কারুর সাথেই দেখা হলো না। পরেরদিন কিভাবে, এখন আর মনে নেই, যোগাযোগ হল। তারপর ঠিক হল, অমুক জায়গায় অমুক সময়ে সকলের জমায়েত হবে। আর হলও তাই। তারপর গান গল্প এই করেই কাটত সন্ধ্যেগুলো। অন্ধকার হয়ে এলে টর্চ হাতে করে ওরা আমাদের হোস্টেল অবধি পৌঁছে যেত, আমার ভাইগুলো খুব শিভাল্রাস কিন্তু! ইতিমধ্যে একদিন খুব হিড়িক পড়ল লোকের, দল বেঁধে সব ভাইজাগ ব্যাঙ্গালোর চলে যাবে, বড় বড় বাসে ক্যাম্পাস ভরে গেল, নাকি দুদিনের ওপর কারেন্ট নেই, আর রিস্ক নেওয়া যায়না। বাইরে অবস্থা খুব খারাপ। সকলের বাড়ি থেকে খবর আসছে, টিভিতে ভয়াবহ সব চিত্র দেখাচ্ছে, আমরা তো ক্যাম্পাসে অনেকটাই নিরাপদে ছিলাম। ওই কারেন্ট ছিল না আর জল ভেঙ্গে এদিক ওদিক করছিলাম আর মেসের (অমৃত) খাবার খাচ্ছিলাম। আমরা তাই ঘটনার ভয়াবহতা অতটা আন্দাজ করতে পারিনি, কিন্তু যখন একটা মাস এক্সোডাস শুরু হল, আমরা তখন যেন একটু হলেও চিন্তা করতে শুরু করলাম, উৎকণ্ঠা হতে লাগল। যে যার বন্ধুবান্ধবরা আছে ব্যাঙ্গালরে, খবর নেওয়া শুরু করলাম, একটু আশ্রয় পাওয়া যাবে কি না গেলে। বাড়ির থেকে অবশ্যই বারবার বলছিল যে ক্যাম্পাসের মত সেফ আর কোত্থাও না, যেয়ো না হ্যানাত্যানা। এদিকে আমাদের তখন হঠাৎ করেই যেন ভয় বেড়ে গিয়েছে, ক্যাম্পাস খালি হয়ে যাচ্ছে, ঘুটঘুট্টি অন্ধকার, এক বন্ধুর তখন জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে, সব মিলিয়ে সকলেই টেন্সড। এমনিতেই আমাদের ক্যাম্পাস যেহেতু জঙ্গলের মধ্যে, হাজার একটা পোকামাকড় আছে, বৃষ্টির জমা জলে যে কত সাপখোপ, বিছে ইত্যাদি থাকছে, ভাবলেইগা শিরশির করে উঠছে। এমন অবস্থায় এমারজেন্সি পাওয়ার দিয়ে হঠাৎ পুরো "Let there be light" বলে যেন আলো এলো, সেই আলো দেখে প্রচণ্ড কলরব শুরু হল। যে যার নিজের নিজের ঘরে তখন ছোটো, ফোনে চার্জ দাও, অথচ চার্জ দিয়ে বা কি হবে, টাওয়ার বাবাজীর দেখা আসতে আরো দিন দুইএক লেগেছিল। ক্রমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল,তারপরে ইন্টারনেট আসতে খবরের মাধ্যমে দেখলাম, সত্যি, এমন সব ভিস্যুয়ালস, বাড়ির লোক ভয় পাবে না কেন!
এই বন্যার সময়েই চেন্নাই বেঙ্গলী ফেসবুক গ্রুপের অন্যতম মেম্বার, পুন্ডরিকদা একটা whatsapp গ্রুপ বানিয়েছিল, উদ্দেশ্য ছিল ম্যাক্সিমাম লোককে একসাথে রাখা, সকলের খবর যাতে পাওয়া যায়। প্রত্যেকে তখন একে অপরকে যতটা পেরেছে সাহায্যও করেছে, কোথায় জল নেমেছে, কার বাড়িতে খুব জল, তাই অন্যের বাড়ি এসে থাকার আমন্ত্রণ, এটিএমে টাকা কোথায় আছে, আরও কত কিছু।
২০১৬ ডিসেম্বরে এলো সাইক্লোন Vardah, জনজীবনের সেইভাবে ক্ষতি করতে পারেনি খুব বেশী, আসলে বন্যার পর সকলেই মোটামুটি প্রস্তুত ছিল। কিন্তু আমার সাধের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছে। ঝড়ে এত গাছ পড়েছিল, জায়গায় জায়গায় ন্যাড়া দেখলে এখনো মন খারাপ হয়। নভেম্বর ডিসেম্বর আসলে North East Monsoon বা Retreating Monsoonএর সময়, তাই এই কটা মাস চেন্নাইবাসী বেশ তটস্থ থাকি আমরা। এই যেমন গত কয়েকদিন তুমুল বৃষ্টি হল, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চেন্নাই বেঙ্গলী ফেসবুক পেজ সক্রিয় হয়ে গেল। যে যেখান থেকে পারছে (মোটামুটি) জেনুইন তথ্য সরবরাহ করতে থাকে, মুহূর্তে মুহূর্তে। আমরা আসলে ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পাই, আকাশ একটু কালো হতেই শুকনো খাবার স্টক করি, এখনো ফোন প্রায় সর্বক্ষণ চার্জে বসিয়ে রাখি।
এই চেন্নাই বেঙ্গলী (সিবি বলেই বেশী পরিচিত) গ্রুপ হল একটা অন্যতম ব্যাপার যার জন্য আমার চেন্নাইতে থাকাটা খুবই সুখকর হয়েছে এ যাবৎ। ২০১৩ সালে তেমনভাবে কাউকেই চিনতাম না, তাই আমি সেইবারে পুজোয় খুব মনমরা ছিলাম। রিম্পা অর্ক (ওদের কথা একেবারে শুরুতে বলেছিলাম, মনে আছে? বাবা রে, ওদের বিয়েটা হয়েছিল একদম বন্যার পরেপরে। ওরা কত এডভেঞ্চার করে চেন্নাই থেকে ব্যাঙ্গালোর হয়ে তারপরে হায়দ্রাবাদ থেকে ফ্লাইট পেয়ে কলকাতা গিয়েছিল বিয়ে করতে!!) সুজাতা অরিজিতা কস্তূরী এদের সাথে এঞ্জয় করলেও সেই কলকাতার ফিলটা আসেনি। তাই সেইবারে পণ করেছিলাম, দাঁতে দাঁত চিপে সারা বছর ছুটি না নিয়ে পুজোয় বাড়ি যাবো। তবে এবার ছুটি নিইনি পুজোয়, কিন্তু এই বছর এই চেন্নাই বেঙ্গলীর সূত্রে এত বন্ধু পেলাম, সকলে মিলে প্রচণ্ড আনন্দ করে পুজো কাটিয়েছি, মানে আমি নিজে ভাবতেই পারিনি যে পুজোটা চেন্নাইতে বসেও এত ভালো করে উপভোগ করা যায়। প্রায় ১৪-১৫টা পুজো হয়, অবশ্যই সব কটা বিশাল কিছু না। বড় বড়গুলোর মধ্যে ওই হাতে গোনা কয়েকটা, বেসন্ত নগরে একটা, টি নগর বেঙ্গল এসোসিয়েশনের একটা। এছাড়া নাভালুরেও হয়, তবে সেটা এত বেশী দূর বলে সুজয় দার (সুজয় দার সাথেও পরিচয় এই চেন্নাই বেঙ্গলী গ্রুপেরই সূত্রে, সজ্জন মানুষ, দাদাসুলভ ) বহু নিমন্ত্রণ সত্ত্বেও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। মনে আছে পুজোয় বাড়ি যাচ্ছিনা বলে যখন খুব মন খারাপ, তখন তৃণাদি আশ্বাস দিয়েছিল, সবাই মিলে দারুণ কাটবে,আর সত্যিই হলোও তাই! সুজয় দা, রূপম দা, তৃণা দি, বিভেন্দু দা, ধ্রুব দা, রজত, ঈপ্সিতা, কাকীমা (মানে তৃনাদির মা), প্রিয়াঙ্কা  সকলে মিলে খুব খুব আনন্দ করেছি। চারটে গাড়ি করে পুজো পরিক্রমা, প্যান্ডেলে আড্ডা, খাওয়া।
 পুজোর কিছুদিন আগে হয়েছিল সিবি গ্রুপের এন্যুয়াল ফাংশান, সাগরিকা। গত বছর দর্শক হলেও এবারে মূলত তৃণাদির উদ্যোগেই আমিও একটু আধটু অংশ নিলাম। রিহার্সালের দিনগুলো ভারী আনন্দে কাটত, সত্যি বলছি, সারাদিন সারা সপ্তাহ এই রিসার্চের চক্করে পড়ে এইসবই একটু নিঃশ্বাস ফেলার রসদ যোগায়। নতুন করে কত বন্ধু পেলাম, তৈরি হল স্মৃতি।
 এই তো, এই করেই চার চারটে বছর কাটিয়ে দিলাম এখানে। প্রথম এসেছিলাম যখন, শহরটা ছিল দুই চোখের বিষ। খালি কলকাতা ভালো, ব্যাঙ্গালোর ভালো এই করে যেতাম। এখন যেন মনে হয়, এ শহর আমার দ্বিতীয় বাড়ি, আমার ঠিকানা। বন্ধু বান্ধব হই হুল্লোড় ঘুরে বেড়ানো (প্রচুর জায়গা আছে এখান থেকে বেড়ানোর, অন্যতম হল শহরের মধ্যে কয়েকটা বিচ, যেমন বিশ্ববিখ্যাত মেরিনা বিচ; এছাড়া তো ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট মহাবলিপুরম, কাঞ্চীপুরম, পন্ডিচেরি,  টাডা ফলস, তিরুপতি, হরস্লে হিলস, ইয়ারকাড, ইয়েলাগিরি, কোল্লি হিলস; একটু দূরে গেলে ওইয়ানাড, মুন্নার, ব্যাঙ্গালোর, মাইসোর, উটি, কোদাইকানাল) সিনেমা দেখা (বাংলা সিনেমা পর্যন্ত চারটে এখানে স্ক্রিন হয়েছে, যার মধ্যে একটি, প্রাক্তন , আনানোর দলে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলাম এই আমি আর ইয়েতি অভিযান দেখেছিলাম গোটা হলে শুধুমাত্র দুইজন দর্শক আমরা, বিচিত্র অভিজ্ঞতা বটে।), দুর্গা পুজো, ইলিশ (হ্যাঁ সিজনে সেটাও ভালো মতই পাওয়া যায়, দাম অবশ্যই বেশী, কিন্তু পাওয়া যায়) সব মিলিয়ে চেন্নাই সত্যি সত্যি হয়ে উঠেছে "নাম্মা চেন্নাই", অর্থাৎ, আমার চেন্নাই। এই শহরকে বন্যা সাইক্লোনের সময়ে দেখেছি কীভাবে একজোট হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে বিপর্যয়ের মুখে, তেমনি প্রিয় আম্মার মৃত্যুতে কেঁদেও ভাসিয়েছে এই শহর, এই শহরের মধ্যে যেমন আছে বহু প্রাচীন মন্দিরের ঐতিহ্য, তেমনি রয়েছে ফিনিক্স মলের মতো আধুনিকতা, মার্সিডিজ বি এম ডাব্লিউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলে ঠ্যালাগাড়ি নিয়ে "তাতা" (দাদু) ফুল বিক্রি করতে করতে, সন্ধ্যে হলে মন্দির থেকে ভেসে আসে পবিত্র ধূপের গন্ধ, আবার অন্যদিকে সমুদ্রের মিষ্টি হাওয়া জুড়িয়ে দেয় প্রাণকে।

এই শহর দিয়েছে অনেক কিছু, নিয়েছেও কিছু, তবে পাওয়ার ঝুলিটাই কানায় কানায় ভরে আছে। আর তাই, গর্ব করে বলতে পারি, আমি এই শহরে থেকেছি, আমি চেন্নাইবাসী।

No comments:

Post a Comment