Friday, October 27, 2017

Dakshayani



নমস্কার। সাগরিকার এই অনুষ্ঠানে আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাই। গত বছরের মহালয়ার অনুষ্ঠানের পরে এই বছর দাক্ষায়ণী টিমের সকলে আপনাদের সামনে এক ভিন্ন আঙ্গিকের নৃত্য পরিবেশনে প্রয়াসী।

মেঘ রঙে রঙে বোনা, আজ রবির রঙে সোনা।
আজ আলোর রঙ যে বাজল পাখির রবে।
আজ রঙ সাগরে তুফান ওঠে মেতে।

মানবজীবন বর্ণময়। সেই মানবজীবনে আবেগের আতিশয্যই আমাদের আজকের নৃত্যানুষ্ঠানের প্রেরণা। ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুইরকম আবেগেই পরিপূর্ণ এই জীবন। এই বিভিন্ন আবেগ ও অনুভূতির নানান বর্ণচ্ছটায় মানবজীবন হয়ে ওঠে রঞ্জিত। এর প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন অভিব্যক্তির মাধ্যমে। কখনো সে খুশীতে উদ্বেলিত, কখনো ঈর্ষান্বিত, কখনো বা

উচ্ছ্বসিত তো কখনো সে ক্রোধানলে
জর্জরিত। কখনো সে জীবনের শূন্যতায় বিমর্ষ তো কখনো ধ্বংসলীলায় মত্ত। 



১। ক।  যুগ যুগ ধরে সুন্দরী বসুন্ধরার পানে চেয়ে কত মানুষের প্রাণ গেয়ে উঠেছে প্রকাণ্ড উল্লাসভারে। যৌবন দিয়েছে এই সৌন্দর্যকে এক অনন্ত ব্যাপী অনন্যতা, যা দিকে দিকে অরণ্যে ভূধরে নবপল্লবে হিল্লোল তুলেছে। এই প্রাণোচ্ছ্বল যৌবনেরই রঙ সবুজ। অসীম ক্ষমতা তার।

ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা
ওরে সবুজ ওরে অবুঝ
আধ মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।


যৌবন তার প্রাণবন্ত আবেগে সারাবেলা যে আনন্দদোলায় মনকে স্পর্শ করে, সেই নৃত্যই আমাদের প্রথম পরিবেশন।






১/ খ যৌবন ক্ষণস্থায়ী। আর তাই যৌবনের সৌন্দর্যও স্বল্পায়ু। নবপল্লবের কাঁচা রঙ যে কখন মানে পাল্টে কাঁচা পাকা চুলের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে থাকে, তা উপলব্ধি করা কঠিন, মানব মন মানতে পারেনা।

আমাদের পাকবে না চুল গো - মোদের পাকবে না চুল।
আমাদের ঝরবে না ফুল গো - মোদের ঝরবে না ফুল।

অবশিষ্ট যৌবনকে বৃথা আঁকড়ে ধরার বিফল চেষ্টা ও আশেপাশের সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত প্রাণকে দেখে, মানব মন হয়ে ওঠে ঈর্ষান্বিত। না পাওয়ার তৃষ্ণা দগ্ধে দগ্ধে মারে তাকে, ছুটি পায় প্রাণের আরাম। নব যৌবনের সবুজ তখন প্রতীক হয়ে ওঠে ঈর্ষার। আমাদের দ্বিতীয় পরিবেশনা - " ঈর্ষার সবুজ চোখ"।





২/ক।  যা পায়নি, তাকে পাওয়ার জন্য মনের মধ্যে প্রতিনিয়ত চলতে থাকে একটা যুদ্ধ। তারপর আপাত যুদ্ধশেষে কাঙ্খিত বস্তু মিললে মন কিছুটা হলেও পায় সাময়িক স্বস্তি, ।


তোমারি ওই অমৃত পরশে আমার হিয়াখানি
হারাল সীমা বিপুল হরষে, উথলি উঠে বাণী।

এই ঝলমলে আনন্দেরই রঙ কমলা। এই আনন্দ বিশ্বভুবনকে ছন্দে নাচায়, নাড়িয়ে দেয় চিত্তবীণা। এই প্রবল সন্তুষ্টিই ফুটে উঠবে আমাদের পরবর্তী নিবেদনে।






২। খ।  যাহা পাস তাই ভালো
    হাসিটুকু, কথাটুকু
  নয়নের দৃষ্টিটুকু, প্রেমের আভাস।
সমগ্র মানব তুই পেতে চাস,
এ কী দুঃসাহস!
কী আছে বা তোর!

কাঙ্খিত বস্তুর প্রাপ্তিসুখ ক্ষণস্থায়ী। একটা যুদ্ধ জয় মনকে করে তোলে ক্ষুধার্ত। তার আরো চাই, আরো চাইয়ের মত আগ্রাসী মনোভাব জন দেয় লিপ্সাকে। চিত্তমাঝে এক অজ্ঞাৎ ব্যাথা ভরে ওঠে অচেনা প্রত্যাশায়।  তৃপ্তিহীন এক মহা আশা মনের মধ্যে সঞ্চারণ করে লোভ ও লিপ্সাকে। হলুদ রঙ এই লোভ ও লিপ্সার প্রতীক। এই দীপ্তোজ্জ্বল লিপ্সার অনল পরিবেশিত হতে চলেছে আমাদের পরবর্তী নিবেদনে।










৩/
একটা সময় পর মন এই দ্বন্দ্বেও হয় জয়ী। হিংসা লোভ লিপ্সাকে জয় করার হর্ষ জাগে পৃথিবীতে। জীবনে লাগে এক প্রাপ্তির পরশ, আসে স্থিতিশীলতা। এই
প্রাপ্তি এনে দেয় এক রাজকীয় , যে আভিজাত্য মনের ব্যাপ্তি ঘটায়; নীল সমুদ্রের ম্পতই যা অনন্ত, গভীর ও বিশাল। অসীম এই অভিজাত্যের আপন সুর তাল ছন্দ ও বর্ণের প্রকাশই আমাদের পরবর্তী নিবেদনে।








৪। আভিজাত্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে ব্যক্তিত্ব। আর এই ব্যক্তিত্বময় সত্ত্বার থেকেই সৃষ্টি হয় তীব্র  আবেগ ও অনুভূতির। রাগে অনুরাগে আকর্ষণে আকুল আর্তস্বর ওঠে, যা জাগিয়ে তোলে মানব মনের সুপ্ত অনুভূতিগুলোকে। সে অনুভূতি একদিকে যেমন প্রেমময়, কোমল, তেমনি আবার তার তীব্রতা নটরাজের ক্রোধের সাথে তুলনীয়। তীব্র আবেগের রঙ গোলাপী, ক্রোধের রঙ লাল। রাগ ও অনুরাগের মধ্যে চলতে থাকে এক চিরদ্বন্দ্ব। জগত চরাচর কাঁপিয়ে  এই দুই সত্ত্বার স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে এক প্রচণ্ড কল্লোল। তীব্রতা ও কোমলতার এই নিরন্তর দ্বন্দ্ব ও একে অপরকে অতিক্রম করে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসই ধরা দেবে আমাদের পরবর্তী পরিবেশনায়।







৫। নাই সুর, নাই ছন্দ, অর্থহীন নিরানন্দ
জড়ের নরটন।
সহস্র জীবনে বেঁচে ওই কি এছে নেচে
প্রকাণ্ড মরণ।

যখন প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অনুভূতির সাথে যুদ্ধ করতে করতে মানব মন হয়ে পড়ে রণক্লান্ত, যখন যুদ্ধ জয়ের আনন্দ ফোটাতে পারেনা হাসি, মানবমন এক উদাসমূর্তি বিষাদশান্ত শোভায় আচ্ছন্ন থাকে, তখন চারিদিকে শুধুই কালিমা, শুধুই হাহাকার, শুধুই শূন্যতা। রজনী গভীর হয়, দীপ নিভে আসে। চারিদিকে কেবলই কালো। মনের শূন্যতা,  তাকে করে তোলে অশান্ত ও ধ্বংসাত্মক। বাদ প্রতিবাদের নিনাদ ঘোষণা করে সে লিপ্ত হয় ধ্বংসলীলায়। আমাদের আগামী উপস্থাপনায় মনের সেই অশান্তিই ব্যক্ত হয়ে উঠবে।











৬। আবেগ অনুভূতি চাওয়া পাওয়ার অন্ধকারের শেষে ঊষার পুণ্য লগ্নে গগনে ওঠে নবীন সূর্য। এই নবীন সূর্য আনে নব আশা ও নবজাগরণের বার্তা। পুরাতনকে ভুলে, অতৃপ্ত গোপনমর্মদাহিনী বাসনাকে ট্যাগ করে এগিয়ে নিয়ে চলে চিরপরিচয়মাঝে এক নব পরিচয়ে। এই নবীন সূর্যের শুভ্র রশ্মিতেই ধুয়ে মুছে যায় সমস্ত কালিমা, ঘুচে যায় দুঃখ। সমস্ত অনুভূতির সংমিশ্রণে এক মায়াময় প্রশান্তি সৃষ্টি হয়। সব রঙ মিলে যেমন তৈরী হয়  সাদা, তেমনি জীবনের নানাবিধ আবেগ ও অনুভূতির মিলনেই বহমান জীবনের সার্থকতা। এদের মিলনঘাতের বিচিত্র বেদনা নিত্য রচনা  চলেছে নব বর্ণ গন্ধ গীতি।

আমি বিপুল কিরণে ভুবন করি যে আলো,
তবু শিশিরটুকুরে ধরা দিতে পারি, বাসিতে পারি যে ভালো।

এই মায়াবী শুভ্র আলোর হাসির রেশটুকু থেকে যাক আমাদের প্রত্যেকের জীবনে, প্রতি মুহূর্তে। জীবন পরিপূর্ণ হোক, এই আশা নিয়েই আমাদের সর্বশেষ উপস্থাপনা - "মায়াবী জীবন।" 






No comments:

Post a Comment