Wednesday, May 23, 2018

That love is probably not eternal..
That it is more often a love for the feeling of being loved..
That love is strong, strong enough to turn an otherwise sunshine day into a torrential rainfall...
That ex lovers make one of the worst friends..



একদিন ভাবতাম তুইই সব, তোকে নিয়েই আমার সবটা।
তুইই আমার জগৎ।
এক কালবৈশাখী ক্ষণিকের ঝড়ে উড়িয়ে দিয়ে গেল এই বিশ্বাস সহসা।
খড়কুটোর মতো আগলে রাখতে চেয়েও পারলাম না আমি।
অনেক খুঁজলাম, এদিক সেদিক। কিন্তু নাহ, ঠিকানা ফেললাম হারিয়ে।
কালের নিয়মে ভুলতে বসলাম।
একদা যা ছিল হৃদয়ের বড় আপন, তা কী করে কে জানে একদিন হলো বারোয়ারি।
ভালোবাসাটুকু বোধহয় আর রইলো না অবশিষ্ট।
দিন যায়, সপ্তাহ কাটে। কেটে যায় মাস।
বছর ঘুরে যায়।
আমি এখন নিজের জীবনে ভীষণভাবে খুশী।
আমার এখন এক কাছের মানুষ আছে।
তার বুকে মুখ গুঁজে যেমন কাঁদতে পারি,
ঠিক তেমনই তার হাতে হাত রেখে বেরিয়ে পড়তে পারি অজানার সন্ধানে।
ভরসা করে।
কিন্তু তবুও অলস দুপুরে ভাতঘুমের আরামে যখন কানে ভেসে আসে
অগ্নীশ্বর থেকে "তবু মনে রেখো",
বা বাঁশির সুরে "সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে",
আমার দুই গাল বেয়ে "উতল ধারা, বাদল ঝরে"।
আর তখন মনে হয়,
"রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে"।।

Image may contain: text

Wednesday, May 16, 2018

না বলা বাণীর নিয়ে আকুলতা

"না বলা বাণীর নিয়ে আকুলতা"

প্রিয়

অনেকদিন পর চিঠি লিখতে বসেছি। হয়তো আমার চিঠিটা পড়তে বসে তুই খুব অবাক হবি। আসলে আমার কাছে অনেক কিছু ছিল, সেগুলির আর সত্যিই কোন প্রয়োজন নেই, বা বলতে পারিস, মূল্য নেই আমার কাছে। তোর কাছে সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু থাকতে পারে, তাই পাঠাচ্ছি। মনে কর, এই চিঠিটা যেন সেগুলিরই একটা কাভার লেটার।

এই এত্ত এত্ত জিনিস, একটা বাক্সে আঁটানো খুব মুস্কিল হয়েছিল জানিস, তাও কোনোমতে করেছি। দেখ ফিতেটা কাট, সাবধানে, কাঁচি ব্যবহার কর। মনে নেই, সেই সেবার তোর জন্মদিনের উপহারের ফিতে কাটতে গিয়ে হাত কেটে রক্তারক্তি কাণ্ড বাধিয়েছিলি? ব্যথা পেয়েও শিখিস না, সত্যি! হুম, কাঁচিটা নে, ফিতে কাট। হ্যাঁ। একটা সেলোফিনে মোড়া দুটো বাসের টিকিট দেখেছিস? ২৩৪ রুটের, চার টাকার। স্টেডিয়াম থেকে থানা। এটা কিন্তু আমাদের প্রথম একসাথে যাওয়ার দিনের না । এটা হল সেই মেঘলা দিনেরটা। আমরা দুজন ক্লাস শেষ করে বাস স্ট্যান্ড অবধি হেঁটে এলাম। সেদিন কেন জানিনা, বারবার খালি আমাদের দুজনের হাত একে অপরের স্পর্শ পাচ্ছিল। তুই চলে যাওয়ার পর, আমি অনেকক্ষণ বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভিজলাম। মায়ের কাছে খুব বকা খেয়েছিলাম জানিস, খাবো নাই বা কেন? আমার তো খুব ঠাণ্ডা লাগার ধাত। সেইবারে জ্বর এসছিলও। তবে কপালের উষ্ণতার মধ্যে যেন বারবার তোর হাতের স্পর্শ অনুভব করছিলাম।

জ্বর প্রসঙ্গে মনে পড়ল। মনে আছে সেই একবার শীতের ছুটিতে আমরা সবাই দেখা করলাম - তুই আমি পিউ দীপু... আমার সেদিনও জ্বর ছিল (ফেসবুকের ছবিগুলোতে কী বাজে লাগছিল আমায়!), তুই সেটা শুনে ক্যালপলের পাতা এনে দিয়েছিলি। এক্সপাইরি ডেট পেরিয়ে গেলেও এই পাতাটা আমি চার বছর ধরে জমিয়ে রেখেছিলাম। ওটাও খুঁজে দেখিস, বাক্সে পেয়ে যাবি।

প্রথম স্টাইপেন্ড পেয়ে তোকে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম মনে আছে রেড প্যান্ডাতে? সেই যে সেই রুফটপ রেস্টুরেন্টটা, জ্যোমাটোতে দারুণ রেটিং ছিল। তখন আমরা অফিশিয়ালি কাপল না হলেও দুজনের প্রতি একটু একটু আকর্ষণটা বুঝতে শিখেছি। সেই বিলটা না এখনো আছে। ওটাও পেয়ে যাবি এই নীল খামে। নীল খামটা পন্ডিচেরি থেকে কিনেছিলাম। তুই ততদিনে ইন্টার্নশিপ করতে শিকাগো চলে গিয়েছিস। প্রতিদিন তোর নামে একটা করে চিঠি লিখতাম। এই নীল খামে ভরতাম। কিন্তু পাঠানো হয়ে ওঠেনি। সব জমিয়ে রেখেছি। ওগুলো কিন্তু খুঁজিস না এই বাক্সে। সেগুলি একান্তই আমার আপন।

ততদিনে তুই নিজের জগত পেয়ে গিয়েছিস। সেই জগতে আমার স্থান আছে কি না, সেই ব্যাপারে তুই তখনও দ্বিধায় (আচ্ছা এখন কি তুই সেই দ্বিধা কাটিয়েছিস?)। তোকে জিজ্ঞেস করলাম, স্কাইপে তোর মুখ চোখ দেখেই বুঝলাম প্রশ্নপত্র ভীষণ কঠিন সাজিয়ে ফেলেছি। তোর সিলেবাসের বাইরে। তুই বাড়তি সময় চাইলি। দিলাম। ওই সময়টা রোজ চিঠিগুলি লিখতাম। ভেবেছিলাম তুই ফিরলে একসাথে সব কটা দেবো। তারপর যখন ফিরলি, দেখলাম তুই তখনও বড্ড ইমোশনালি আনস্টেবল। বুঝলাম এইভাবে চলবে না।

খুব কষ্ট হয়েছিল। তবুও নিজেকে তোর থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করলাম। বলে না, out of sight, out of mind - হলো উল্টো। "Tis distance that leads to enchantment"। রাতের পর রাত কাঁদতাম। কাঁদতে কাঁদতে ভোর রাত্রে একটু কখন কে জানে দুই চোখের পাতা এক হতো বটে। রোবটের মতো সারাদিন কাজেকর্মে ভুলে থাকতাম। রাত হলেই আবার সেই এক চক্র শুরু। এই করতে করতে হঠাৎ একদিন সকালবেলা বুঝলাম যে ব্যথাটা একটু কমেছে। আর তারপর সেই প্রকোপটা একটু একটু করে আরো কমছে। কমতে কমতে এখন শূন্যে এসে ঠেকেছে।

আবার ব্যথাটা যদি ভুল করে চাগাড় দিয়ে ওঠে, সেই ভয়ে ভাবলাম তোর আমার সব স্মৃতিচিহ্নগুলো ফেরত দিয়ে দিই তোকে। আমার দিদিমার থেকে ছোট থেকে এই সঞ্চয়ের অভ্যেস পাঠিয়েছি। কিচ্ছু ফেলিনা। তাই এই চার বছরের অনেক অনেক স্মৃতি রয়ে গিয়েছে - উপহারের বই, দুল, কাজল থেকে শুরু করে প্রতিটা রেস্টুরেন্টের বিল, পস মেশিনের স্লিপ, কত্ত কিছু। এই পার্থিব জিনিসগুলি বাক্সবন্দী করে দিলাম। মুহূর্তগুলো, ভালোলাগা, ভালোবাসা - এগুলি কীভাবে ফেরত দিই বল তো? জানা নেই। জানাস, তাও ফেরত দিয়ে দেবো। অনেকটা হয়তো এই কন্ট্রোল জেডের মতো।

তোর সাথে কাটানো সময়গুলো বড় ভালো কেটেছে। চাই না আর তিক্ততা বাড়াতে। তাই মনে হল, এই ভালো। তুই থাক নিজের মতো। আর প্রশ্নপত্র নিয়ে ভাবতে হবেনা। পরীক্ষা বাতিল। অপ্রয়োজনীয়। ভালো থাকিস। সুখে থাকিস। আর আমাদের প্রিয় গানটার কথাই ধার করে বলি,

" দুঃখ তোমার কেড়ে নিতে চায় যত...

সুখের দিনে নাই বা পেলে পাশে, খবর দিয়ো হঠাৎ কান্না পেলে।"

ইতি

তোমার "কী জানি কী"


https://www.youtube.com/watch?v=Jc4DyACFVqY

Saturday, May 12, 2018

মাতৃদিবসের শুভেচ্ছা

১।

ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে ভীষণ ভালোবাসে সোমা। বি এড পরীক্ষার রেজাল্ট আসার আগে কয়েক মাস তাই যখন পাড়ার ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পার্ট টাইম চাকরিটা পেলো, তখন যেন হাতে চাঁদ পেল। এল কে জির বাচ্চাগুলোর সাথে চার ঘণ্টা কাটানো যেন ওর গোটাদিনের রসদ জুগিয়ে দেয়। লাস্ট বেঞ্চে বসে এক গোলগাল ফুটফুটে বাচ্চা, কৃত্তিকা। ও প্রতিদিন লাস্ট পিরিয়ডে বেঞ্চে বসে কেঁদেই চলে। কারণ জিজ্ঞেস করলে রোজ একই উত্তর, "বাড়ি যাবো। ক্রেশে যাবো না।" খুব মায়া হয় সোমার। একদিন ক্লাস শুরুর আগে কৃত্তিকাকে নিয়ে ক্লাসরুম লাগোয়া বারান্দায় নিয়ে গিয়ে বলে, "ওই যে দেখতে পেয়েছো ওই নীল বাড়িটা? ওইটায় থাকি আমি। মাকে বলো, তোমার ক্রেশে যেতে ভালো না লাগলে, তুমি আমার সাথে ওই বাড়িতে থাকতে পারবে। ঠিক আছে? আর কেঁদো না প্লীজ?"




২।

"সবিতাদিদি, একটু  এদিকে এসো। মিলিকে টয়লেটে নিয়ে যাও। ও মনে হয় ডায়পার নষ্ট করে ফেলেছে।"

"সবিতা, বাস স্ট্যান্ড থেকে কিন্তু মিলিকে নিতে যেতে ভুলো না। ও একা খেই হারিয়ে যাবে।"

"সবিতা পিসি, আমার খিদে পেয়েছে, ভালো কিছু বানিয়ে দাও।"

"সবিতা পিসি, আমায় আজ রাত জাগতে হবে। কফি করে দাও ফ্লাস্কে প্লীজ।"

"সবিতা পিসি, হোস্টেলে তোমায় খুব মিস করি।"

"সবিতা পিসি, তুমি আমার সাথে ব্যাঙ্গালোর চলো। আমার বাচ্চাকেও তুমিই দেখো প্লীজ। আমায় যেমন মানুষ করলে?"



৩।

"বনু, ইট ইস ওকে। হি ওয়াস জাস্ট নট ওয়ারথ ইয়ু। কষ্ট পাস না।"
" দিদি, আমি খুব ভালবেসেছিলাম ওকে। ও এরকম করতে পারবে, আমি ভাবতেও পারিনি।"
" বনু। এরকম অনেক হবে জীবনে। প্রতিপদে কেউ না কেউ ব্যাক স্ট্যাব করবে।"
"আমি পারছিনা। ভালো লাগছেনা।"
"কান্নাকাটি করে কী হবে?"
"কী করে এরকম করল ও?"
"বিকজ হি ইস অ্যান *#@%&* "
"দিদিইইইইই"
"আয়, আমরা একসাথে আজ শাহরুখ খানের সিনেমা দেখব। মুড ভালো হয়ে যাবে।"




শুধুমাত্র জন্মদাত্রী মা বা লালন পালন করা মাই না। আমাদের জীবনে এমন অনেক অনেক মানুষ আছেন, যারা মায়ের মতোই ভালো। বিভিন্ন সময়ে যারা আমাদের মন খারাপে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন , কাঁধ এগিয়ে দেন কাঁদতে,  আমাদের আগলে আগলে রাখেন, প্রতি মুহূর্তে। শুধুমাত্র সব মেয়ের মধ্যেই মাতৃসত্ত্বা আছে, টা না। এমন অনেক পুরুষও রয়েছেন যারা প্রতি পদে আমাদের যত্ন করেন, আমাদের ভালো চান, নিঃস্বার্থ ভাবে।  এমন সব মায়েদের জন্য  মাতৃদিবসের শুভেচ্ছা। 

বিরস দিন...

আজকাল শুভার বড় কান্না পায় মাঝে মাঝেই। সবে বছর খানেক হয়েছে বিয়ে হয়ে এসছে ও এই নতুন পরিবেশে, নতুন সংসারে। এখানে মানিয়ে নিতে অল্প হলেও অসুবিধে হচ্ছে। ওর স্বামী অপূর্বর সাথে এখনো সেইভাবে বন্ধুত্ব হয়ে ওঠেনি। সে সারাদিন অফিস আর পাড়ার ক্লাব নিয়ে ব্যস্ত। শাশুড়ি রাশভারি মানুষ, নিজের মতো করে থাকেন, নিজের জগতে। সদা হাস্যময়ী, কলকল করে গল্প করতে অভ্যস্ত শুভা যেন খাঁচার ভিতর আটকে পড়া এক পাখি। অলস দুপুরগুলি কিছুতেই যেন কাটতে চায়না। মন খারাপের রেশ গ্রাস করে মাঝে মাঝে। তখন মুঠোফোন খুলে কন্ট্যাক্ট লিস্ট হাতড়েও কাউকে পায়না কথা বলার জন্য। প্রত্যেকেই নিজের জগত নিয়ে ব্যস্ত। ওর মতো অখণ্ড অবসর বুঝি আর কারুর নেই। যদিও এই বাড়িতে রাতের খাবারটা সকলের একসাথে খাওয়ার নিয়ম, তবুও মাঝেমাঝে মন খারাপ থাকলে, শরীর ভালো নেই অজুহাত দিয়ে যখন খায় না শুভা, তখন কেউ দুবার ওর খোঁজ নেয়না। ভারি অভিমানী মেয়েটি, সারা রাত কাটিয়ে দেয় বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদে, নয়তো পূর্ণিমার আলো ঢালা টানা বারান্দার এক কোণে চুপ করে বসে থেকে। ভোরের দিকে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে ও, সক্কাল সক্কাল পাশের বাড়ি থেকে গলা সাধার আওয়াজে ঠিক আবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ফোলা মুখে শুভা আবার ফেরত চলে যায় রান্নাঘরে, কাজে কর্মে। সবাই যে যার মতো চলে। কেউ ফিরেও তাকায় না ওর দিকে, জিজ্ঞেসও করেনা একবারের জন্যও, ঠিক যেমন মা করতো, "কে বকেছে, কে মেরেছে, কে দিয়েছে গাল? তাই তো খুকু রাগ করেছে, ভাত খায়নি কাল।" 
ছোটবেলাটা বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল, বুঝে উঠবার আগেই। রস নিংড়ে নেওয়ার আগেই।

Wednesday, May 9, 2018

তুমি আপন জীবন পূর্ণ করে আপন আলো জ্বেলেছ

শুভ্র রোহিণী আর ওদের মেয়ে মেখলার ছোট্ট সংসার। এই শহরে এসেছে ওরা গত মাসে, শুভ্রর চাক্রিসূত্রে। শুভ্র চাকরি করে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে, রোহিণী লেখালিখি নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে। মেখলার বয়স আট। আর পাঁচটা এই বয়সী বাচ্চার মতই সরল নিষ্পাপ হাসিখুশি। হাউজিং কমপ্লেক্সের বাকি বাচ্চাদের সাথে বিকেলবেলা খেলতে নিয়ে যায় ওর আয়া মাসি, কমলি। ধরাধরি, ছুটোছুটি, দৌড়ঝাঁপ করে খেলেধুলে প্রতিদিন যখন বাড়ি ফেরে পার্ক থেকে, কলকল করে মায়ের কাছে গল্প করে। কোন বন্ধু কী বলল, কটা খেলায় জিতল, কার সাথে আড়ি আর কার সাথে ভাব হলো, এই সব নিয়েই ওর ছোট্ট জগত। রোহিণীও এইসব শুনতে শুনতে পৌঁছে যেত নিজের ছোটবেলায়। তখন ওদের পাড়া কালচার ছিল। সমস্ত কচিকাঁচার দল, একটু বড়দের তত্ত্বাবধানে খেলত, পড়ত। বেশ একটা সাবেকি যৌথ পরিবার গোছের ব্যাপার ছিল। শুধু যে ভালোটুকুই ছিল, তা না। অনেক মনোমালিন্য, মন কষাকষিও লেগেই থাকত। তবুও সবের মধ্যে একটা মিলমিশ ব্যাপার ছিল। একই সাথে শীতকালে পিকনিক থেকে শুরু করে রবীন্দ্র নজরুল সন্ধ্যাপালন, বিজয়া দশমী লেগেই থাকত।
এই কমপ্লেক্সে প্রত্যেকেই ব্যস্ত। তেমনভাবে পাশের ফ্ল্যাটের মানুষজনের সাথেও একে অপরের ভাব নেই, কথাবার্তা নেই। লিফটে দেখা হলেও সকলেরই মাথা নিচু, হাতে মুঠোফোন। তবুও এই বাচ্চাগুলোর সূত্রে অল্পবিস্তর যোগাযোগ হয়। এর তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মায়েদের নেমন্তন্ন হয়, সেই সুবাদে রোহিণী চেনে জনা দশেককে।
মেখলা থ্যালাসেমিয়ার রুগী। যার ফলে ওর জীবনযাপন আর পাঁচটা বাচ্চার মতো পুরোপুরি এক না। বছরে আট নয়বার রক্ত নিতে হয়। খুব বেশী দৌড়ঝাঁপ করতে পারেনা। খাবার খাওয়ায়ও কিছু রেস্ট্রিকশন মেনে চলতে হয়। যখন প্রথম মেখলার অসুখটা ধরা পড়েছিল, রোহিণী আর শুভ্র ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল। তারপর নানান কাউন্সেলিং করে এখন ওরা অনেকটাই স্বাভাবিক। অন্তত চেষ্টা করে একটা স্বাভাবিক জীবনযাপনের। মেখলাকে সব সময় বুঝিয়ে শুনিয়ে আগলে আগলে রাখাটাই ওদের জীবনের একটা বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে। এই কমপ্লেক্সের বাচ্চাগুলো এতটাই ছোট, ওরা এখনই এই রোগের কথা বুঝবেনা। ওদের শুধুই এক কথা, "why is Mekhla not coming to play today", বা "Why Mekhla cannot run much" ইত্যাদি। মায়েরা জানে, তারা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে মেখলার শরীরটা ভালো নেই। ওর বন্ধুরাও ওকে ভালোবাসে বলে যত্ন নেয় ওর, একটা রীতিমতো সাপোর্ট গ্রুপের মতো কাজ করে মেখাল্র বন্ধুরা ও তাদের মায়েরা।
একদিন সন্ধ্যেবেলা মেখলা খেলে ফিরল ফ্ল্যাটে। রোহিণী লক্ষ্য করল মেয়ে চুপচাপ, তেমনভাবে কথা বলছেনা। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতে উত্তর পেলো না। ভাবল, বাবা ট্যুরে গিয়েছে, হয়তো সেই জন্য মন খারাপ। ঘাঁটল না রোহিণী মেখলাকে। মনমরা হয়েই একটু হোমওয়ারক করল রোজের মতো। ওই একটু আঁকিবুঁকি কাটা খাতায়। আর কিছু রঙ করা। পরেরদিন রোহিণী দেখল মেখলার তাও মন খারাপ কমেনি। কিছুতেই খেলতে গেলো না। ওকে নিয়ে মন ভালো করতে কাছের মলে গেল, আইসক্রিম খাওয়ালো। যে মেয়ে আইসক্রিমের বায়না করে অন্যান্য সময়ে অতিষ্ঠ করে ছাড়ে, সে মেয়ে আজ যেন দোকানে গিয়েও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। কোন ফ্লেভারের আইসক্রিম নেবে জিজ্ঞেস করায় স্বভাববিরুদ্ধ "তোমার যা ইচ্ছে" বলে একটা কোণে দাঁড়িয়ে থাকল। রোহিণী একটু অবাক হল। কিছু গণ্ডগোল নাকি? দিনকাল ভালো না। যাক, শুভ্র ফিরছে রাত্রে, নিশ্চয়ই মেয়ের মন ভালো হয়ে যাবে ঠিক, এই ভেবে সরিয়ে দিল কুচিন্তা।
শুভ্র ফিরল রাত করে, মেখলা ততক্ষণে নিজের টেডি আঁকড়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রোহিণী একবার জানালো মেয়ের কথা বাবাকে। "আরে ও এমনি কোন বন্ধুর সাথে দেখো ঝগড়া হয়েছে হয়তো, বা কোন গেমে হেরেছে। তাই মুড অফ। তুমি চিন্তা করো না।" এই বলে শুভ্র অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল। জীবন নিত্যনইমিত্তিকভাবে চলতে লাগল। শুধু পরপর চারদিন হয়ে গেলো, মেখলা কিছুতেই খেলতে যেতে চায়না নীচে। রোহিণী একদিন কাজ ফেলে নিজে ওর সাথে নামবে বলতেও মেয়ে কিছুতেই রাজি হল না। উল্টে জোরাজুরিতে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিল। কী হয়েছে, কেন খেলবে না বারবার জিজ্ঞেস করাতেও কোন উত্তর নেই। শুধুই কান্না। এবারে কিন্তু রোহিণী বেশ চিন্তিত হল। শুভ্রকে মেসেজ করে ব্যাপারটা জানালোও। শুভ্র ফিরল মেয়ের জন্য খেলানাপাতি কিনে, তাতেও মেয়ের কান্নাকাটি থামেনা। মেয়ে বাবার বেশী ন্যাওটা। তাই মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক আদর করে বাবা অবশেষে জানলেন আসল কারণ। কিছুদিন আগে খেলতে গিয়ে কমপ্লেক্সে নতুন মুখ রুনিদাদা নাকি ওকে নিয়ে খুব মস্করা করেছে, কেন মেখলা বেশী দৌড়তে পারেনা, ইচ্ছে করে ওর খেলার সময় বলগুলো দূরে দূরে ছুঁড়ছিল, ও হাঁপিয়ে যাওয়ায় ওকে আর খেলায় নেবেনা বলেছিল। রুনি বাকিদের চেয়ে একটু বড়। সাথে রয়েছে বেশ মজার মজার নানান খেলনা। বাকি বাচ্চারাও স্বভাবতই তাই মেখলাকে ছেড়ে রুনির সাথেই ছিল। এতে মেখলা মনমরা হয়ে গিয়েছে। আর তাই কিছুতেই খেলতে যাবেনা। বলতে বলতে ওইটুকুনি মেয়ের দুই গাল বেয়ে বড় বড় কান্না গড়িয়ে পড়ছিল। রোহিণী নিজেকে সামলাতে না পেরে অঝোরে কান্না শুরু করল। একেই মেয়ের অসুস্থতার জন্য নিজেকে ভীষণভাবে দায়ী মনে করে, আর প্রতি পদে তাই মেয়েকে ভুগতে দেখলে বা কষ্ট পেতে দেখলে সাংঘাতিক অনুশোচনায় ভোগে। সেই সব দিক দিয়ে শুভ্র অনেকটাই শক্ত। কষ্ট খারাপ লাগা সবই আছে ওর, কিন্তু প্রকাশটা খুব কম। আজ মেয়ে আর বউকে এমনভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখে ভারি আনচান করছিল ওর মন। কীভাবে কী সামলাবে ভাবতে গিয়ে দিশেহারা। চুপচাপ দুজনকে বুকে টেনে বসে রইলো খানিকক্ষণ। পরম শান্তি একে অপরের ওমে।
তারপর বলল, "জানিস মেখলা মা, আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন একবার দোল পূর্ণিমার দিন ভোরবেলা পাশের বাড়ির আম গাছ থেকে মুকুল পাড়তে পাঁচিলে উঠেছিলাম। বন্ধুদের কাছে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, ধরা না পড়ে এক ঝুরি মুকুল আনবো। তা হল কী, আমার এমনই কপাল খারাপ, আগের রাত্রে শিশির পড়ে পাঁচিল পুরো স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে ছিল। ওই পিছল পাঁচিল থেকে আমি পা ফস্কে পড়লাম একদম নীচে। হাত ভাঙল। ছয় সপ্তাহ ওই অসহ্য ব্যথা আর প্লাস্টারের কষ্ট। খেলতে যেতে পারি না। একেই এইসব করেছি বলে বাবা মায়ের থেকে বকুনি খেলাম। তারপর আমার সেই বন্ধুরাও দেখি আর আমার খোঁজ নিত না। এক দুজন শুরুর দিকে এসে দেখে যেত। তারপর ওদের আসাও বন্ধ হয়ে গেল। খুব কষ্ট হত। হাতের প্লাস্টার কাটার পর যেদিন খেলতে গেলাম মাঠে, দেখলাম সব্বাই তখন নতুন নতুন বন্ধু পেয়ে খেলায় মত্ত। আমায় তেমন ভাবে পাত্তাই দিলো না কেউ। বাড়ি এলাম মন খারাপ করে। তখন জানিস তোর ঠাম্মা কী বলেছিল আমায়? বলেছিল যে এইটাই পৃথিবীর নিয়ম। কারুর জন্যই কোন কিছু আটকে থাকেনা। জীবনে চলার পথে বিভিন্ন মানুষের আসা যাওয়া চলতে থাকে। কারুর ওপর কখনো নির্ভর হবি না। নিজের মতো করে নিজেরটুকু দিয়ে থাকবি, বাঁচবার রসদ পাবি। জানি, এখন হয়তো অনেক কিছুই বুঝছিস না, কিন্তু আরেকটু বড় হ, তখন বুঝবি। জীবনের সমস্ত যুদ্ধ জয় করার শক্তি আমাদের অন্তরে আছে, কারুর ওপর যেন কক্ষনো নিজের সুখকে নির্ভর করবিনা। কারুর কাছে ঋণী হবিনা। নিজের মতো করে নিজের ক্ষমতায় মাথা উঁচু করে চলবি। দেখবি তাহলে আর এরকম এর তার ব্যবহারে কষ্ট পাবিনা।"
"এত ভারি ভারি কথা মেখু বুঝবে নাকি? তুমিও না! এর চেয়ে মাম্মা, তোকে একটা গান শোনাই। মন্ত্রের মতো করে গানটা শুনবি, গাইবি, বুঝবার চেষ্টা করবি। দেখবি, সব সময় মনে বল পাবি।"
"কী গান মাম্মা?"
" আমি গাই, তুই শোন। তারপর আমি এক লাইন গাইবো, তুই শুনে শুনে গাইবি। ঠিক আছে?"
"ওকে মাম্মা। ফাঙ্কশানের মতো গান শিখব?"
"হুম, এই ফাঙ্কশানটা হবে অনেক বড় স্টেজে। জীবনে।"

রোহিণী সুরেলা কণ্ঠে গেয়ে উঠল,

"তোমার যা আছে তা তোমার আছে, তুমি নও গো ঋণী কারো কাছে।
তোমার অন্তরে যে শক্তি আছে, তারি আদেশ পেলেছ।
তুমি আঁধার বাঁধন ছাড়িয়ে ওঠো, তুমি ছোট হয়ে নও গো ছোট,
জগতে যেথায় যত আলো সবায়, আপন ক'রে ফেলেছ।।"  

এই গানটি মেখলার আগামী দিনগুলিতে, ওর নানান বাধা বিপত্তিভরা জীবনের পথে সান্ত্বনার পরশ নিয়ে আসুক, প্রতি পলে, এইটুকুই সদিচ্ছে রইল রোহিণী আর শুভ্রর।

Tuesday, May 8, 2018

শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো

১।

"মা,ঝটপট ভাতটা বেড়ে দাও প্লীজ। দেরি হয়ে যাবে নইলে।"
"দিয়ে রেখেছি। ফ্যান চালানো আছে। ঠাণ্ডা  করতে। তুই আয়।"
"আসছি মা, দুলটা পরে নিই।"
"বেশী সাজগোজ করতে যাস না। প্র্যাকটিস টিচিং করতে যাচ্ছিস, এখনো স্টুডেন্ট তুই। বেশী সাজলে লোকের চোখ টাটাবে।"
"টাটালে টাটাবে। আমার ইচ্ছে হলে সাজবো, লোকের দেখার হলে দেখবে, না হলে দেখবেনা। মন্তব্য করলে করবে। শালীনতা বজায় রেখে চললে উভয়পক্ষ, কোন তো অসুবিধে হওয়ার কথা না।"
"ওরে এটা তোর লরেটো না মা, এটা সরকারী স্কুল।"
"তাতে কী? শাড়িই তো পরছি। সাথে একটু কাজল। টিপও পরিনি।"
"বাবা রে বাবা। আমার ঘাট হয়েছে। আর বলবনা। যা ইচ্ছে কর। পারসোনাল এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলছিলাম। শোনার হলে শুনবি, না হলে না।"
"একজ্যাক্টলি মা। এইটাই বলতে চেয়েছি। প্রত্যেকের স্বাধীনতা আছে। অন্যকে আঘাত না দিয়ে যতক্ষণ নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করতে পারব, ততক্ষণ কারুর কিছু বলাকওয়ায় আমার অন্তত যায় আসে না। (সুর করে) আমি শুচি আসন টেনে টেনে বেড়াবো না বিধান মেনে!!! বুঝলে হে মা?"
"সবেতেই রবি ঠাকুর কপচাস না তো। ছাড় এবার। খেতে বস।"
"আহ, ঠিক আছে। বাংলা সাহিত্যের স্টুডেন্ট, রবিবাবু ছাড়া কেইই বা আছে আমাদের? যাক গে। বুঝলে, আজ শুক্তোটা যা জম্পেশ হয়েছে। মানদাদিকে বলো।"

বছর বাইশের টুকটুকি আর ওর মায়ের সংসার। ওর বাবা মারা যান যখন ওর বয়স মোটে চার। বাবাকে নিয়ে কোন স্মৃতিই নেই টুকটুকির। মায়ের আদরে আর শাসনেই সে আজ বড় হয়েছে। সরকারী স্কুলের শিক্ষিকা মায়ের আদর্শে বেড়ে ওঠা টুকটুকি আজ বি এ পাস করে বি এড পড়ছে। প্র্যাকটিস টিচিং করতে আজ যাচ্ছে একটি আধা সরকারী স্কুলে, একটু মফঃস্বলের দিকে। সিনিয়রদের থেক শুনেছে যে এখানে নাকি সক্কলে ভীষণভাবে প্রাচীনপন্থী, স্যারেরা ধুতি শার্ট আর ম্যাডামরা শাড়ি ছাড়া পরেন না। ও শহুরে মেয়ে, শাড়িতে খানিক অনভ্যস্ত, ভালো করে রুল্বুক দেখেছে। কোথাও ড্রেসকোড নিয়ে কিছু লেখা নেই। ঠিক করেছে আজ প্রথম দিন বলে শাড়ি পরবে, পরেরদিন থেকে সালওয়ার কামিজ। যে যা বলে, বলুক। খেয়ে উঠে পাঁচ মিনিট বসে তারপর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে টুকটুকি বেরোল স্কুলের উদ্দেশ্যে। ট্রেন আর টোটো চেপে প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের রাস্তা।


২।

"আসুন সুরঙ্গমা। স্কুলে চিনে আসতে কোন অসুবিধে হয়নি তো?"
"একটুও না। ষ্টেশনের বাইরে টোটো স্ট্যান্ডে স্কুলের অনেক ছাত্রদের দেখতে পেলাম। ওদের সাথেই চলে এলাম।"
"বেশ। টা ওরা জ্বালায়নি তো?"
"ওমা, না না। জ্বালাতন করবে কেন?"
"না, তেমন রেপুটেশন কি না।"
"আপনি চিন্তা করবেন না। আমি ম্যানেজ করে নেবো। আপনি বরং আমায় ক্লাস বুঝিয়ে দিন।"
"হ্যাঁ, আসুন।"

হেডমাস্টারবাবুর অফিসের পিয়ন হালদারদার সাথে টুকটুকি ওরফে সুরঙ্গমা সেন এলো স্টাফ্রুমে। সেখানে জানলার ধারে একটা খালি চেয়ার টেবিল রাখা, সেখানেই বসবে আগামী পঁচিশ দিন। দশটা নাগাদ প্রথম ক্লাস। ক্লাস ইলেভেন। বাংলার শিক্ষক, অপূর্ববাবুর সাথে ক্লাসে এলো সুরঙ্গমা। দোতলার একটা বিরাট ঘর। আগেকারদিনের বাড়ি, খুব উঁচু সিলিঙ, সিলিঙ থেকে লম্বা লম্বা ডাণ্ডার ফ্যান ঝুলছে চারটে। চেয়ার টেবিল পুরনো আমলের, ঘরে টিউবলাইটের আলো জ্বলছে। জনা তিরিশেক ষোলো-আঠারোর ছেলেপিলে বসে আছে। এই বয়সের ছেলে, ক্লাস ফাঁকা থাকলে তো কেউ শান্ত হয়ে থাকেনা, তাই প্রথম ক্লাসে ঢুকে মাছের বাজারই মনে হচ্ছিল টুকটুকির। অপূর্ববাবুর "ক্লাস, চুপ কর তোরা"তে সব শান্ত হল।
"ইনি সুরঙ্গমা। তোদের নতুন ম্যাডাম। আগামী কয়েক সপ্তাহ তোদের ক্লাস নেবেন। আমি ক্লাসের পিছনে বসে থাকব। একটুও জ্বালাতন করবিনা। সহযোগিতা কাম্য।"
গোটা ক্লাস চুপ। হাঁ করে সবাই তাকিয়ে ওঁদের নতুন দিদিমণির দিকে। টুকটুকি একটু অস্বস্তিবোধ করল বটে, কিন্তু তারপর যেই শুরু করল চর্যাপদ পড়ানো, ওর যেন সব দ্বিধা কেটে গেলো। ছাত্রছাত্রীরাও মুগ্ধ হয়ে ওর পড়ানো শুনতে লাগল। দেখতে দেখতে কখন যে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের ক্লাস শেষ হয়ে গেলো, কেউই যেন টের পায়নি। অপূর্ববাবু স্টাফ্রুমে এসে ওর খুব প্রশংসা করলেন। এরপর দুই পিরিয়ড অফ, তারপরে ক্লাস এইটের একটা ক্লাস নিতে হবে। ব্যস, ছুটি। ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে মাকে একবার জানানোর জন্য বারান্দার কাছে গেলো। ধুর, সমানে বিজি আসছে। কে জানে এই বেলা এগারোটার সময় কার সাথে আবার গল্প জুড়েছে মা। ক্লাস নেই নাকি আজ?  মিনিট দশেক চেষ্টা করেও যখন ফোনে পেল না, তখন আবার স্টাফরুমে ফিরবার উপক্রম করল টুকটুকি। ইংরেজির ছন্দাদি ওকে দেখে হাসলেন আর তারপর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন। "শুনলাম অপূর্বদার কাছে, তুমি খুব ভালো পড়িয়েছ। কাকে ফোন করে বলছ? বয়ফ্রেন্ডকে?" চোখ টিপে হাল্কা হাসলেন। টুকটুকির গেলো রাগ ধরে। কে রে বাবা, চেনা নেই জানা নেই এমন ব্যক্তিগত প্রশ্ন করবেন কেন? অদ্ভুত তো। "না, মা কে।" এই বলে ও ফিরল স্টাফরুম। পাশ দিয়ে তখন ইলেভেনের ছেলেগুলো যাচ্ছিল, কী লজ্জা। নিশ্চয়ই ওরা শুনলো।

ক্লাস এইটের ক্লাসটিও বেশ ভালোই হল। আবার আসব ফিরে  পড়াতে হল, পরাতে গিয়ে জীবনানন্দের মৃত্যু চেতনা নিয়ে বোঝাতে গিয়ে বারবার  নিজের স্কুল জীবনের কথা মনে হচ্ছিল সুরঙ্গমার। শাশ্বতী আনটি কী সুন্দর করে বোঝাতেন, মাথার মধ্যে যেন আজও গেঁথে আছে সব। ও কি কোনদিনও অমন ভালো শিক্ষিকা হতে পারবে? বিরাট চ্যালেঞ্জ।


৩।


"ম্যাডাম, অনেকদিন পরে একটা ভালো ক্লাস উপভোগ করলাম।" স্টেশন প্ল্যাটফর্মে বসে ফোন নিয়ে খুটখুট করছিল টুকটুকি। ট্রেন আসতে ঘন্টাখানেক বাকি। একটুর জন্য একটা মিস করেছে। এই লাইনে প্রতি ঘণ্টায় একটা করে ট্রেন। হঠাৎ এই কথায় একটু চমকে মুখ তুলে দেখল, ওর ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র, সুবীর। ও যখন পড়ায়, প্রতিদিন সুবীর ফার্স্ট বেঞ্চে বসে। হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে পড়া গিলে নেয়। একটু অস্বস্তি হয় বই কি, সারাক্ষণ ওরকম তাকিয়ে থাকায়। তবে ছেলেটির হাব ভাব ব্যবহার মন্দ না। লেখাপড়াতেও ঝোঁক আছে। সিনিয়রদের থেকে বয়েজ স্কুল সম্বন্ধে যেমন একেকটা বিভীষিকার কাহিনী শুনেছিল, মোহনপুর বয়েজ স্কুলে অন্তত তেমন কিছুর সম্মুখীন হতে হয়নি টুকটুকিকে এই এক সপ্তাহে।

"তাই বুঝি? কেন অপূর্ববাবু কেমন পড়ান? ওনার ক্লাস ভালো লাগেনা?"
"হ্যাঁ, উনি সিলেবাসটা খুব ভালো কাভার করেন। ওনার জন্যই তো মাধ্যমিকে লেটার এসছে আমাদের কতজনের, বাংলায়। কিন্তু উনি আপনার মতো না।"
"আমার মতো না বলতে?"
"আপনি কী সুন্দর গভীরভাবে ভাবেন, ভাবান। চর্যাপদ পড়াতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথে চলে গেলেন।"
"সেটা ভালো নাকি? অত টপিক থেকে সরে গেলে সিলেবাস শেষ হবে কেমন করে?"
"ঠিক হবে ম্যাম। কিন্তু এইভাবে পড়লে জিনিসটা অনেক বেশী ভাল বুঝছি, মনের মধ্যে গেঁথে যাচ্ছে।"
"তাহলে ভালো। আমি তো ভাবছিলাম এরকম করে পড়ালে আমি কুড়িদিনে সিলেবাস শেষ করতে পারব না। আজ অপূর্ববাবু বললেন, চারদিন হয়ে গেল, এখনো চর্যাপদে আটকে কেন। এরপর বৈষ্ণব পদাবলীতে ঢোকো"
"ম্যাম, আপনি কুড়িদিন পর চলে যাবেন?"
"হ্যাঁ, আমি তো প্র্যাকটিস টিচিং করতে এসেছি।"
"ও। আসলে এই কদিনে আপনার ফ্যান হয়ে গিয়েছি।"
 "মন দিয়ে লেখাপড়া করো। লাইব্রেরী থেকে বই তুলে পড়ো। রিসোর্সের তো অভাব নেই।"
"হ্যাঁ।"
"তুমি কোথায় থাকো? ট্রেন কখন?"
"আমার বাড়ি হাঁটা পথ ম্যাডাম। ক্লাসের পর ভাবলাম আপনার সাথে গিয়ে কথা বলি। দেখলাম আপনি ততক্ষণে বেরিয়ে পড়েছেন। তাই সাইকেল চেপে এলাম।"
"আচ্ছা।"
"চা খাবেন ম্যাডাম?"
"হ্যাঁ। খাওয়া যায়। এমনিও আমার ট্রেন আসতে দেরি আছে। চলো।"

৪।

ট্রেনের জানলার ধারে সিটে বসে সুবীরের সাথে গল্পগাছার কথাগুলো বারবার মনে পড়ছিল। ছেলেটার সাথে কথা বলে খুব প্রমিতের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। প্রমিত ওর সাথে আই সির টিউশনে বাংলা পড়ত, সেন্ট লরেন্সের স্টুডেন্ট। খুব ভাব ছিল ওদের মধ্যে তখন। নানান বিষয়ে অসীম কৌতূহল, অপরিসীম জ্ঞান। কথা বলতে গেলে কোনদিনও টপিকের কমতি হত না। সুবীরও মনে হয় তেমনই। হয়তো ওও তারপর প্রমিতের মতই টুয়েলভের পর ইঞ্জিনিয়ারিঙে চলে যাবে। এইসব সাহিত্য থেকে শত হস্ত দূরে।  ছেলেটা এখন প্রায় রোজই ওর সাথে ষ্টেশনে আসে। টিফিনের সময়টা ওর সাথে গল্প করে আবার ক্লাসে ফেরত যায়। বেশ ভালো লাগে ওর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে। আজকাল আবার গল্পের বিষয় শুধুই সাহিত্য না। নানান সময়েই জীবনদর্শন, দৈনন্দিন ঘটনা, গান, ইত্যাদি নিয়েও জমাটি আড্ডা হয়। দু সপ্তাহেই বেশ একটা আলাদা রকমের বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে ওদের দুজনের। অসম বন্ধুত্ব বলা যায় না। কতই বা বয়সের ব্যবধান? বছর ছয় সাতের? সুবীরের মধ্যে বেশ একটা পরিণত ভাব আছে, যার ফলে বয়সের এইটুকু ফারাকটাও মনে পড়ে না। ওদের এই গল্প করাটা খানিকটা যেন অভ্যেসেই দাঁড়িয়ে গিয়েছে। মাঝে দুদিন সুবীর স্কুলে আসেনি, বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল টুকটুকির। রবিবারও কেমন আনচান আনচান ভাবে কাটল। টুকটুকি ঠিক কোন নাম দিতে পারেনা এই বন্ধুত্বের, এই সম্পর্কের। হয়তো সব সম্পর্কের নামকরণ প্রয়োজন নেই, অযথা জটিলতা এসে পড়ে।


৫।

আজ শেষবারের মতো ক্লাস নিলো সুরঙ্গমা। এখন ষ্টেশনে পাশাপাশি বসে টুকটুকি আর সুবীর। দুজনেই চুপচাপ। কোন কথা হচ্ছেনা। ক্লাসে আজ ছেলেরা ছোট্ট করে সুরঙ্গমা ম্যাডামকে ফেয়ারওয়েল দিয়েছে। বিভিন্নজন নানান গান আবৃত্তি করেছে। ক্লাস যখন শেষ হতে আর পাঁচ মিনিট বাকি, তখন বন্ধুদের ধাক্কাধাক্কিতে বাধ্য হয়ে সুবীর এলো সামনে। তারপর ওর ভরাট গলায় ধরল, "আমি তোমার প্রেমে হবো সবার কলঙ্কভাগী।" মুগ্ধ হয়ে গোটা ক্লাস ওর গান শুনলো। এত দরদ, এত অপূর্ব অভিব্যক্তি। সুরঙ্গমার দু চোখ চিকচিক করে উঠেছিল।
ট্রেন ঢুকছে ষ্টেশনে। টুকটুকি নিজের হাতটা ছাড়াল সুবীরের হাত থেকে।
"ভালো থাকিস। অনেক বড় হ" বলে এগিয়ে যাচ্ছিল দরজার দিকে, এমন সময়ে পিছন থেকে শুনল, "প্লীজ পরের ট্রেনটায় যাও। আরো কিছুক্ষণ বসি?"



" এলো আঁধার ঘিরে
 পাখি এলো নীড়ে           তরী এলো তীরে
শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো

ওগো দুঃখ জাগানিয়া... "


https://soundcloud.com/suchetana-gupta-620409473/ami-tomar-preme-hobo-shobar-kolonkobhagi-short



Friday, May 4, 2018

হাতে হাত

"কী গো, তোমার হলো?"

"আসছি আসছি। একটু দাঁড়াও।"

"শিগগির করো, ক্যাব এসে যাবে। ফাইভ মিনিটস দেখাচ্ছে।"

"আরে বাবা আসছি তো। অত তাড়াহুড়ো পারিনা বাপু। একাদশী না আজ? পায়ের ব্যথাটা বেড়েছে।"



"সাবধানে! পড়ে যেও না। হাতটা ধরো শক্ত করে।"

"ছাড়লাম কই? সেই যে পঞ্চাশ বছর আগে হাতটা বাড়িয়েছিলে, খপ করে তো তখনই ধরে নিয়েছিলাম। একবারের জন্যও ছেড়েছি কি?"


পঁচাত্তর বছরের জগবন্ধু মিত্র ও তার স্ত্রী অনুরাধা দেবী। আগামীকাল ওঁদের বিয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হবে। অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে পরিবারের সাথে নানান অমিল উপেক্ষা করে এতগুলো বছর আগের এক বৈশাখী সন্ধ্যায় রেজিস্ট্রারের ছোট্ট অফিসে একে অপরের হাত ধরে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তারই উদযাপন করতে ওঁরা চলেছেন সিমলা। বেড়াতে ওঁরা পছন্দ করেন। জগবন্ধু জঙ্গল আর অনুরাধা পাহাড়। নিঃসন্তান এই দম্পতি এ যাবত অনেক জায়গায় বেড়াতে গিয়েছেন, কিন্তু বিয়ের পর পর আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় ওদের মধুচন্দ্রিমাটি হয়ে ওঠেনি। সেই আক্ষেপ দূর করতেই ওঁরা চলেছে আজ।


কটেজের বারান্দায় একে ওপরের হাতে হাত রেখে সূর্যোদয় দেখা যে এই চিরনবীন প্রেমিক প্রেমিকার বড় আকাঙ্ক্ষিত, বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্ন।


বিঃ দ্রঃ এই গানটি না শুনে থাকলে অবশ্যই শুনে নিন। লিঙ্ক দিয়ে দিচ্ছি।
https://www.youtube.com/watch?v=HOP4UU_8yqc&t=336s

একসাথে কুঁচকনো হাতে হাত রেখে জীবন সায়াহ্নে পথ চলতে পারার ভরসার নামই তো ভালোবাসা। 

Image may contain: one or more people and text

Wednesday, May 2, 2018

প্রাত্যহিকী

পার্ট থ্রি পরীক্ষা শেষ হয়েছে এক সপ্তাহ হল। ভাইয়ের এখন জয়েন্ট এন্ট্র্যান্স বাকি, তাই এক্ষুনি বেড়াতে যাওয়াও হচ্ছেনা কোথাও। মা সারাক্ষণ ভাইয়ের পিছনে টিকটিক করে যাচ্ছে। বাবার অফিসে এখন ভগবান জানে কেন এত কাজের চাপ। বাড়িতে যে কতটুকু সময় থাকে, কে জানে। বন্ধুরা সব এদিক ওদিক ঘুরতে চলে গিয়েছে। অখণ্ড অবসর, অথচ আমি কাঠ বেকার। আমি শাল্মলী, বয়স এই গত মাসে একুশ পূর্ণ হল। বেথুন কলেজে কেমিস্ট্রি নিয়ে বি এস সি পড়লাম। গান গাইতে ভীষণ ভালবাসি। নাচও ভালোই পারি। আঁকাটা তেমনভাবে আসেনা, তবে কাজ চালিয়ে দিতে পারি। বন্ধুদের হাতে মেহেন্দি করতে হলে আমিই হলাম সেই ""go-to person"। খুচখাচ লেখালিখিও যে করিনা, তা বলব না। সে লেখা কেমন হয় আসলে, সত্যি বলতে কী, আমি নিজে জানিনা। নিজের লেখা তো নিজের ভালো লাগেই, সন্তানসম। এত কিছু পারি, করি অন্য সময়ে, বা সময়ের অভাবে করতে পারিনা। অথচ এখন এই এত্ত সময়, এদিকে আমার কিচ্ছু করতে ভালোই লাগছেনা। পরীক্ষার আগে স্ট্যাট মেকের ফরমুলার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মাথায় গিজগিজ করতো লেখালিখির প্লট, গানবাজনার আসরের পরিকল্পনা। অথচ এখন ডায়েরিটা নিয়ে বসি, একটা আঁচড়ও কাটতে পারিনা। কী মুস্কিল যে হল।

কিছু লিখতে বসলেই খালি ওর বলা কথাগুলো মাথার মধ্যে কিলবিল করতে থাকে। ন্যাকা ন্যাকা প্রেমে মাখোমাখো কিছু লিখতে ইচ্ছে করে। অথচ সেটাও পারিনা। একবার চেষ্টা করেছিলাম আজ সকালে, তাও হলো না। যে কটা লাইন লিখলাম, কেউ যদি প্লেজিয়ারিস্ম সফটওয়ারে ফেলে, বুঝবে পুরো আমাদের whatsapp চ্যাটটা কপি পেস্ট করেছি। লোকে বলে মানুষ প্রেমে পড়লে নাকি ক্রিয়েটিভ হয়ে যায়। কই, আমি তো কিছুই করতে পারছিনা। কোন নান্দনিকতা নেই, কোন সৃষ্টি নেই, সৃজনশীলতা কবেই টাটা বাই বাই করে যেন চলে গিয়েছে। রসায়ন নিয়ে পড়েও জীবনে রসের অভাব। এদিকে প্রেমটাও ঠিক জমিয়ে করতে পারছি কই? সর্বক্ষণ একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে চলছি। কী যে করি, কী যে করি। কেমন অসংলগ্ন লাগছে সবকিছু। ভুলভাল লিখে যাচ্ছি ডায়েরি খুলে এই যে।
এইসব সময়ে একটাই নিরাময়। আমার প্রাণের আরাম, মনের শান্তি। আমার গীতবিতান।


মা ভাইকে নিয়ে টিউটোরিয়ালে গিয়েছে। ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে যাবে। আমি কোনোমতে টেবিলে চাপা দিয়ে রাখা ভাত মাছের ঝোল খেয়ে সেই যে দেড়টা নাগাদ গীতবিতানটা খুলে বসেছি...তিন ঘণ্টা হয়ে গেল। একটার পর একটা গান গেয়ে চলেছি, মনের আনন্দে। ইউটিউবে তানপুরাটা ল্যুপে ফেলে রেখেছি।

"বড়ো বিস্ময় লাগে হেরি তোমারে।
কোথা হতে এলে তুমি হৃদিমাঝারে॥"

"খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি, আমার মনের ভিতরে
কত রাত তাই তো জেগেছি, বলবো কী তোরে।"

"কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া
তোমার চরণে দিবো হৃদয় খুলিয়া।"

আহা, কী বাণী। প্রতিটা যেন একদম মনের কথাগুলো আমার হয়ে বলে দিচ্ছে, আমার হৃদয়ের একান্ত গভীর গহ্বর থেকে নিঃসৃত করছে বাসনার গান, শব্দরাজি মেলেছে অসীম আকাশে রঙিন পাখনা। আহা, কী সুখ। কী আনন্দ।

আমি যখন গান গাই, চোখ বুজে থাকি। একটা গান শেষ করে চোখ মেলেছি, দেখি সামনে মা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আমার দিকে।
"কী রে, থামলি কেন? গা না। কতদিন পর শুনছি বলতো? ভালো লাগছে খুব। গেয়ে যা।"
"আর ভাই? ও ডিস্টার্বড হবে তো। কখন এলে, ডাকতে হয় তো।"
" না না, ও একটু রেস্ট নেবে এখন। অসুবিধে নেই। ভাগ্যিস চাবিটা নিয়ে বেরিয়েছিলাম। নইলে এমন স্বতঃস্ফূর্ত গান কি শুনতে পেতাম না কি?"
" কী যে বলো না মা!"
" ঢং করিস না। উফ।"

কিছু কিছু দিন এমন হয় না, যাই করি, খুব ভালো লাগে? সব কিছুতেই মানে পাই? আজকের দিনটাও ঠিক তেমনই হল। সন্ধ্যে জুড়ে বিছানার ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশের ওপর সঞ্চয়িতা রেখে কাটিয়ে দিলাম বেশ অনেকটা সময়। রাত্রে অনেকদিন পর দেখলাম, লিখতে বসে শব্দ খুঁজে পাচ্ছি। নাহ, সেই ন্যাকা ন্যাকা বোকা বোকা প্রেম না। বরং অনেক পরিণত সম্পর্কের কথা।

 ঠাকুর আছেন, এই বিশ্বাসটুকুই তো সম্বল।