আজকাল শুভার বড় কান্না পায় মাঝে মাঝেই। সবে বছর খানেক হয়েছে বিয়ে হয়ে এসছে ও এই নতুন পরিবেশে, নতুন সংসারে। এখানে মানিয়ে নিতে অল্প হলেও অসুবিধে হচ্ছে। ওর স্বামী অপূর্বর সাথে এখনো সেইভাবে বন্ধুত্ব হয়ে ওঠেনি। সে সারাদিন অফিস আর পাড়ার ক্লাব নিয়ে ব্যস্ত। শাশুড়ি রাশভারি মানুষ, নিজের মতো করে থাকেন, নিজের জগতে। সদা হাস্যময়ী, কলকল করে গল্প করতে অভ্যস্ত শুভা যেন খাঁচার ভিতর আটকে পড়া এক পাখি। অলস দুপুরগুলি কিছুতেই যেন কাটতে চায়না। মন খারাপের রেশ গ্রাস করে মাঝে মাঝে। তখন মুঠোফোন খুলে কন্ট্যাক্ট লিস্ট হাতড়েও কাউকে পায়না কথা বলার জন্য। প্রত্যেকেই নিজের জগত নিয়ে ব্যস্ত। ওর মতো অখণ্ড অবসর বুঝি আর কারুর নেই। যদিও এই বাড়িতে রাতের খাবারটা সকলের একসাথে খাওয়ার নিয়ম, তবুও মাঝেমাঝে মন খারাপ থাকলে, শরীর ভালো নেই অজুহাত দিয়ে যখন খায় না শুভা, তখন কেউ দুবার ওর খোঁজ নেয়না। ভারি অভিমানী মেয়েটি, সারা রাত কাটিয়ে দেয় বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদে, নয়তো পূর্ণিমার আলো ঢালা টানা বারান্দার এক কোণে চুপ করে বসে থেকে। ভোরের দিকে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে ও, সক্কাল সক্কাল পাশের বাড়ি থেকে গলা সাধার আওয়াজে ঠিক আবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ফোলা মুখে শুভা আবার ফেরত চলে যায় রান্নাঘরে, কাজে কর্মে। সবাই যে যার মতো চলে। কেউ ফিরেও তাকায় না ওর দিকে, জিজ্ঞেসও করেনা একবারের জন্যও, ঠিক যেমন মা করতো, "কে বকেছে, কে মেরেছে, কে দিয়েছে গাল? তাই তো খুকু রাগ করেছে, ভাত খায়নি কাল।"
ছোটবেলাটা বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল, বুঝে উঠবার আগেই। রস নিংড়ে নেওয়ার আগেই।
No comments:
Post a Comment