Wednesday, November 21, 2018

#সিরিয়ালঃসিরিয়াসলি_নেবেন_না

#সিরিয়ালঃসিরিয়াসলি_নেবেন_না

পর্ব ১

স্থানঃ একটু রুচিশীল সুসজ্জিত ফ্ল্যাটের বসবার ঘর। আবছা হলুদ আলো জ্বলছে টিউবলাইটের পরিবর্তে (প্রমাণ যে এটি এক ধনী পরিবারের বাড়ি)।

কোন এক কারণে জনসমাবেশ হয়েছে এই ঘরে (এই মুহূর্তে ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা)। প্রত্যেকেই বেশ দামী পোশাকে। পুরুষদের পরনে হয় পাজামা পাঞ্জাবী নয় সুট (শুধু শার্ট প্যান্ট বা টিশার্ট না), মহিলারা দামী দামী সিল্কের শাড়ি পরে, গায়ে এত গয়না, মনে হবে যেন গয়নার দোকানের মডেল। চড়া মেক আপ। কারুর কারুর মাথায় দামী অর্কিড, রজনীগন্ধা খবরদার না। টু মিডল ক্লাস। টেবিলে রাশি রাশি খাবারের আয়োজন। পানীয়ও রয়েছে। হার্ড সফট দুইই। গল্প টল্প চলছে। হাসির রোল উঠছে মাঝে মাঝে। (স্ক্রিনে উঠবে লেখা "মদ্যপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক"।)

বছর পঞ্চাশ পঞ্চান্নর এক প্রৌঢ়, পরনে সিল্কের সাদা পাঞ্জাবী (গলায় মোটা সোনার চেন এবং পোশাকে সোনার বোতাম লাগানো), কাঁধে কাশ্মীরী চাদর, হঠাৎ সোনালী পানীয়ের গ্লাস হাতে উঠে দাঁড়ালেন আর বললেন, "বুঝলে গিন্নি, দেখতে দেখতে কেমন পঁচিশটা বছর কাটিয়ে ফেললাম বলো? কোন আফসোস নেই আমার। তোমার আছে?" (অতি নাটকীয় ভাবে, টেনে টেনে বলতে হবে কথা। ব্যাকগ্রাউন্ডে হাল্কা কোন মিউজিক বাজবে।)


আটচল্লিশ (দেখে মনে হবে আরো কম) বছরের এক "যুবতী", পরনে রানী কালারের সিল্কের শাড়ী (প্রচুর জরি দেওয়া। মনে হয় কাঞ্জিভরম।), মাথার চুল (আসলে উইগ) ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বেশ কায়দা করে খোঁপা করা, খোঁপায় ম্যাচিং রঙের অর্কিড লাগানো, ঠোঁটে উজ্জ্বল গোলাপি লিপস্টিক, মুখ ভর্তি মেক আপ, গা ভর্তি সোনার ভারী গয়না, একটু ন্যাকা ন্যাকা মুখ করে ভদ্রলোকের দিকে তাকাবে। সলজ্জ হাসি হাসবে। তারপর বলবে, "আমি তো সব সময় সকলকে বলি। গত জন্মে নিশ্চয়ই কোন পুণ্য করেছিলাম, নইলে তোমার মতো এমন এক জীবনসঙ্গী পাই?"

উপস্থিত সকলে আহা উহু বাহ বাহ ইত্যাদি করবে। ক্যামেরা জ্যুম করবে অনেকেরই মুখে। তাদের কারুর মুখে আলাদা করে কোন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাবেন না। মোটামুটি সব ক্লোন বলেই ধরতে পারেন।

"আরে আদিত্যদা, একটা গান ধরো দিদির জন্য?" প্রায় গায়ে ঢলে পড়ে এক ওই অতি সুসজ্জিতা ভদ্রমহিলা এই ভদ্রলোকটিকে বলবে।

(যাক, নাম জানা গেল। আদিত্য। পুরো নাম আদিত্য শঙ্কর মুখোপাধ্যায়। স্ত্রীর নামটা বলেই দিই। সুপর্ণা মুখোপাধ্যায়)

"বলছ?" আদিত্য একই রকম ন্যাকামি করে শালির দিকে তাকিয়ে বলবে।

শালিও ন্যাকামিতে কোনরকম কমতি না করেই বলবে "হ্যাঁ দাদা প্লিজ ধরো না।"

আদিত্য (এক্সট্রা ন্যাকামি ঢলানি ইত্যাদি সহকারে) : ধরতে বলছ যখন, ধরিই। জানি না আজ ভালো লাগবে কি না সুপর্ণার। তবে বিট্টু বুবাইয়ের ছোটবেলা অবধি কত গান শুনিয়েছি।

জনৈকা অতিথিঃ এই সুপর্ণা, আদিত্যদাকে গান গাইতে বল না। আমরাও শুনি। বেশ মেহফিল জমে যাবে।

সুপর্ণা (একটু মেকি বিরক্তি মুখ করে) বলবে, "আমি বারণ করেছি নাকি। গাক না। এই তো শ্রীপর্ণা বলল। গাইবে নিশ্চয়ই। (আচ্ছা বোঝা গেল শালি আপন শালি। নইলে এমন সুপর্ণা শ্রীপর্ণা ম্যাচ করে নাম হয়? কে জানে) "

আদিত্য (হাত থেকে উইস্কির গ্লাস নামিয়ে): বেশ, সকলের অনুরোধ যখন এত, নিশ্চয়ই গাইব। এই গানটা আজকের দিনে আমি ডেডিকেট করছি আমার সুপুকে। সুপু, দীঘায় যেবার প্রথম গিয়েছিলাম বিয়ের পরে পরে, মনে আছে, বীচের ধার দিয়ে এই গানটা গাইতে গাইতে আমরা হাঁটতাম (দীঘায় হানিমুন? হুম। তার মানে নিশ্চয়ই কোন স্ট্রাগল স্টোরি আছে।)। তুমিও গুনগুন করতে।

সুপর্ণাকে দেখা যাবে লাজে একেবারে নতুন বউয়ের মতো ব্লাশ করছে।

উপস্থিত অতিথিবৃন্দ একটু উসখুস করবে। বিট্টূ আর বুবাই (বিট্টু মেয়ে, বুবাই ছেলে) কে দেখা যাবে একে অপরের দিকে তাকিয়ে একটা "উফ এরা পারেও বটে" গছের লুক দেবে। বিট্টু বুবাইকে বলবে, "শোন বুবাই, মা আর বাবার এই রোম্যান্স চলছে চলুক। আমি একবার কেটারিং এর লোকগুলোকে ফোন করি। শুধু স্টারটার পাঠালো। তাও রিফিল করার কথা। দেয়নি। মেন কোর্সই বা কোথায়? সাড়ে নটা বাজে। ডিনার করবে তো লোকে। ওদের ওপর না চেঁচালে হবে না। সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে না, আঙ্গুল বেঁকাতে হয়। বুঝলি?" স্পষ্টতই বিট্টু বড়লোক বাপ মায়ের আদরে বাঁদর হওয়া মেয়ে। পরনে বেশ সাহসী ব্যাকলেস কেতাদুরস্ত মেরুন ব্লাউজের সাথে ম্যাচিং মেরুন সিল্কের শাড়ি, (আঁচল মাঝে মাঝেই সরে যাবে, আর ও ঠিক করবে)সরু জরি বর্ডার। গয়না হীরের। বুবাইয়ের পরনে সিল্কের পাঞ্জাবী। জিন্স। হাতে দামী ঘড়ি। মাথার চুল একটু বড়োর দিকে। নির্ঘাত ব্যান্ডে গান বাজনা কিছু করে। কানে হীরের স্টাড।


সুপর্ণার কণ্ঠস্বর শোনা যাবে, "বুবাই, গিটারটা নিয়ে আয়। তোর বাবা গান গাইবে।"

বিরক্ত মুখ করে বুবাই ঘর থেকে গিটার নিয়ে আসবে। ভগবান জানে কী না কী কর্ড ধরে টুং টাং করবে। এদিকে ব্যাকগ্রাউন্ডে ফুল ক্যারিওকে বাজতে থাকবে। কোন সারেগামাপা বা ওই ধরণের কম্পিটিশনের প্রথম দশের শেষের দিকের বা তারপরের কোন শিল্পী গান শুরু করবে।

"এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো?"

আদিত্য আর সুপর্ণা লিপ দেবে। গোটা গান চলাকালীন র্যান্ডম লোকজনের ক্লোজ আপ শট নেবে। এমন অপূর্ব গান। কেউ কেউ চোখ বন্ধ করে শুনবে। কেউ কেউ নিজের বর/বউ/পরকীয়া পারটনার/প্রেমিক/প্রেমিকার দিকে সলজ্জভাবে তাকাবে। কেউ তাল দেবে হাতে।

গান প্রায় শেষের দিকে। কলিং বেল বাজবে। সব্বাই পিন ড্রপ সাইলেন্ট হয়ে যাবে।

অনেকজনের (র্যান্ডম) ক্লোজ আপ নেওয়া হবে। সবাই অবাক। কে এলো। এখন কে আসতে পারে। কী ঘটতে চলেছে? পার্টির ছন্দপতন ঘটবে? ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রচুর ধুম তানা নানা বাজনা। তারপর আদিত্যর মুখে ক্যামেরা জুম করে ফ্রিজ হয়ে যাবে।


No comments:

Post a Comment