Thursday, November 22, 2018

সিরিয়ালঃ সিরিয়াসলি নেবেন না ২

২।

শহরের কোন ব্যস্ত রাস্তা। বৃষ্টি পড়ছে অঝোরে। বেশ দামী একটা গাড়ি চালাচ্ছে বছর সাতাশ আঠাশের এক সুপুরুষ যুবা। পরনে দামী সুট। টিপটাপ, ফিটফাট। বোঝাই যাচ্ছে এবশ ভালোই উপভোগ করছে ড্রাইভটা। মুখে চোখে এতটুকুও বিরক্তি নেই। বরং মাঝে মাঝেই মুখ হাসি হাসি হচ্ছে। গাড়িতে রেডিওতে চলছে কিছু পপুলার বাংলা রোমান্টিক গান। (মাঝে মাঝে এক মোহময়ী নারী কণ্ঠের আরজের গলা শোনা যাচ্ছে। keywords শোনা যাচ্ছে "প্রেম", "বৃষ্টি", "ট্রাফিক জ্যাম" ইত্যাদি।) গুনগুন করে গলা মেলাতেও দেখা যাচ্ছে ছেলেটিকে। পাশে বসে এক যুবতী। পরনে সাধারণ সিন্থেটিক শাড়ি। কোন গয়নার দোকান বা আধুনিক বেসরকারি হসপিটালের ইউনিফর্মের মতো। চেহারা (ওই মেক আপ আর কী) দেখেই বোঝা যায় মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। হাতে একটা ঢাউস খয়েরি ব্যাগ। অনেকক্ষণ ধরেই গাড়ির জানলার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে। এমন সময়ে একটা সিগনালে গাড়িটা এসে থমকালো।
"কী ভালো weather, না?" সহযাত্রীর দিকে তাকিয়ে যুবকটি বলল।
যুবতী মুখ ফেরালো। স্মিত হাসি হাসল। আবার মুখ ঘুরিয়ে বলল, "আপনাদের যাদের লাক্সারি করার সুযোগ আছে, ঝড় বৃষ্টির মধ্যে কাদা জল জমার মধ্যে দিয়ে হেঁটে দিনের পর দিন চলাফেরা করে বা ভিড় বাসে চিঁরে চ্যাপ্টা হয়ে কাজে  যাওয়া আসা করতে হয় না, তাঁদের জন্য তো এমন ওয়েদার খুব ভালো। কী সুন্দর কাব্য করতে পারেন, গান গাইতে পারেন। কফি কাপ হাতে জানালর ধারে বসে ব্যাঙের ডাক শুনতে পারেন..."
যুবকটি কিছু একটা বলতে গিয়েও খানিক থেমে গেল। মাথাটা একটা "বড্ড স্টিরিওটাইপ করো" গোছের মুখ করে বলল, " আপনি এত সিনিকাল কেন বলুন তো?"
যুবতী এবার যুবকের চোখে চোখ রেখে বলল, "আপনি বুঝবেন না। অভিজ্ঞতা নেই তো, তাই। তবে আপনার দোষ নেই। যে যেমন কপাল নিয়ে জন্মায়।"
যুবকঃ তা যা বলেছেন। সবই ফেট, সবই ডেস্টিনি।
যুবতীঃ হ্যাঁ। একদিন এমন বর্ষার মধ্যে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে গোটা দিন যাতায়াত করুন, বুঝে যাবেন আমরা যারা মিডল ক্লাস, কীভাবে দিন যাপন করি। রোজদিন বা সকলের তো এমন সৌভাগ্য হয় না যে আপানর কাছ থেকে লিফট পাবে।"
যুবক বলতে লাগল, "মে বি... আসলে দশ বছর পর আমি ইন্ডিয়ায় ফিরেছি এই কিছু সপ্তাহ আগে। (ছেলেটির ইংরেজি, বিশেষ করে উচ্চারণ অত্যন্ত ঝরঝরে হওয়া উচিত। প্রয়োজনে অ্যাক্সেন্ট থাকা উচিত। অথচ অভিনেতার ইংরেজিতে পরিষ্কার বাংলার টান বোঝা যাবে আহা,কী মাটির মানুষ!!) তার আগেস্কুল ট্যুশন যাতায়াত গাড়িতেই করেছি। সো মে বি।। এনিওয়ে...
"ওই সামনের মোড়ে আমায় নামিয়ে দেবেন প্লিজ। পরের সিগনালটার আগে..." যুবতী কথা থামিয়ে দিয়ে বলল।
যুবকটি একটু অবাক মুখ করে বলল, "সে কী? রাগ করলেন নাকি?"
"আরে না না। ও মা, সে কী কথা। আমার বাড়ি ওইদিকে। একটু টুকটাক বাজার করে ঢুকব। বাবার জ্বর হয়েছে। ভাইয়ের ফিরতে দেরিয়া ছে। আমি এখন বাজার না করে এলে মা রাঁধতে পারবে না। তাই..." বলল যুবতী।
যুবকটি একটা অদ্ভুত ভ্যাবাচ্যাকা গোছের মুখ করে বলল, "বেশ"।
গাড়িটা চলছে। পাশ দিয়ে অন্য গাড়ি বাইক ইত্যাদি সব চলছে। রেডিওতে গান বেজেই চলেছে। আলাদা করে আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দরকার নেই। খানিক দূর যাওয়ার পর গাড়িটাকে রাস্তার বাঁ দিক করে থামাল যুবক।
যুবতী সিট বেল্ট খুলতে খুলতে বলল, "আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ জানাবো? আমার অনেক উপকার করলেন। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে বাস অটো কিচ্ছু পাচ্ছিলাম না। বড্ড মুস্কিলে পড়ে গিয়েছিলাম।"
যুবকঃ দ্যাটস ওকে।
যুবতী (হেসে): আসি।
যুবকঃ ভালো থাকবেন। নমস্কার।
যুবতী গাড়ি থেকে নেমে গেল। দরজা বন্ধ করছিল, যুবকটি একটু ইতস্তত করে বলেই ফেলল, " ও বাই দি ওয়ে, আমার নাম রণিত। রণিত গাঙ্গুলি।"
যুবতী হাসল। হাসলে খুব সুন্দর টোল পড়ে বাঁ গালে। তারপর পিছন ফিরে চলে গেল। রণিত একটু বোকা বোকা হাসি হেসে মাথার চুল ঠিক করতে যাচ্ছিল, এমন সময়ে মোবাইল ফোন বেজে উঠল (খেয়াল রাখতে হবে, স্পেসিফিকালি, আইফোনের রিং টোন)।  স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে, "Mom calling"। হাসি হাসি মুখেই মাথাটা একটু সবজান্তা বেড়ে পাকা অথচ ক্যাবলা মার্কা মাথা নেড়ে ফোন রিসিভ করেই বলল, "ইয়েস মম, অন মাই ওয়ে, আসছি। পার্টি জমে গিয়েছে তো?"
ওপর প্রান্ত থেকে একটা চাপা গলার স্বর শোনা যাবে। কোন তরুণীর। "হু মম? রণিত, দিস ইজ দিভ্যা (খেয়াল রাখবেন উচ্চারণে। দি-vi-য়া)। আমি নেহাত auntyর থেকে ফোনটা নিয়ে কল করলাম। আমার ফোনের চার্জ শেষ। তুই কতদূর রণিত? কাম সুন।"
রণিতঃ আসছি দিভ্যা, ভেরি সুন...অলমোস্ট দেয়ের।

ফোন ডিসকানেক্ট করে রণিত গাড়ি চালানোয় মন দেয়। ফাঁকা রাস্তা। হু হু করে স্পীড তোলে। বৃষ্টি পড়েই চলেছে। রাস্তা পিছল। হঠাৎ ক্যাচ করে ব্রেক মারার শব্দ। তিন চারবার এই শব্দ শোনা যাবে। ততক্ষণে তিন চারটে অ্যাঙ্গেল দিয়ে রণিতের মুখে ফোকাস হবে ক্যামেরা। স্পষ্টতই ভীত মুখ। সামনে দেখা যাবে একটা বাইক উল্টে পড়ে আছে। পাশে উপুড় হয়ে পড়েছে হেলমেট পরা একটি ছেলে। বেশ আবার ধুম তানা নানা মিউজিক চলছে। ক্যামেরা আস্তে আস্তে বারবার ছেলেটি ও রণিতের মুখে ফোকাস করতে করতে রণিতের মুখে সেটল করে ফ্রিজ করে যাবে।

(আবার কাল)

No comments:

Post a Comment