Monday, November 5, 2018

দীপ্তি

রাত্তির প্রায় আটটা। প্লেনটা গত দশ মিনিট ধরে কলকাতা এয়ারপোর্টের ওপর চক্কর কাটছিল। এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটের উইন্ডো সিট থেকে তিলোত্তমা শহরটিকে দেখে গুঞ্জার মনে হচ্ছিল যেন একটা দামী নেকলেস। ঠিক যেরকম দেখেছিল ও মা, আশাবরীর কর্মস্থলে। কালীপুজোর আগে কয়েকদিন দোকানে খুব ভিড় থাকত, মায়ের ফিরতে অনেক দেরি হত। দিদিমার কাছে বসে স্কুলের পড়া শেষ করে বারান্দায় বসে গল্প শুনত, যতক্ষণ না মা ফিরছে। রূপকথার গল্প শুনতে শুনতে ছোট্ট গুঞ্জা পৌঁছে যেত সব পেয়েছির দেশে। ওর বাস্তবের সাথে দেখানে অনেক অমিল।
আশাবরীর সাথে আবীরের প্রেমজ বিয়ে হয়। মধ্যবিত্ত ঘরের সুশ্রী তন্বী আশার সাথে আবীরের পরিচয় একটি জন্মদিনের পার্টিতে। আবীরের ভাগ্নির জন্মদিন। আশাবরী ছিল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির লোক। আবীরের পরিবার মধ্যবিত্ত ঘরের শ্যামলা মেয়েকে প্রথমে মানতে নারাজ হলেও পরে ছেলের জোরাজুরিতে বাধ্য হয় বিয়েতে মত দিতে। বছর খানেকের পর যখন আশার কোল জুড়ে গুঞ্জা আসে, শ্বশুরবাড়ির লোকজন রীতিমতো ছি ছি করেছিল। একেই মেয়ে, তার ওপর মায়ের মতোই শ্যামলা। এক বস্ত্রে সদ্যোজাত মেয়েকে নিয়ে আশা বেরিয়ে আসে সেদিন। আশ্রয় পায় নিজের মায়ের কাছে।
একা হাতে চাকরি করে সংসার চালাত আশাবরী। কোনদিনও মেয়ের লেখাপড়ায় কোন কমতি করেনি। যথাসাধ্য শখ আহ্লাদ পূর্ণ করেছে। তবে গুঞ্জা বুঝত মায়ের দুঃখ। মায়ের সংগ্রাম। আর তাই ছোট্টবেলা থেকেই গুঞ্জার তেমন আবদার ফরমায়েশ ছিল না।  বছরের পর বছর ধন্তেরসের দিন মা গল্প করত সেদিন দোকানের বিক্রির কথা। সামর্থ্যের মধ্যে হয়তো কোন বছর জুটত রূপোর দুল। কখনও হয়তো এক কুচি সোনার ফুল।
গুঞ্জা এখন সুপারমডেল। একের পর এক মঞ্চ কাঁপিয়ে বেড়ায়। দেশে বিদেশে। বর্তমানে দেশের এক জনপ্রিয় গয়নার দোকানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। শহরের আনাচে কানাচে ওর ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন গয়না পরে, বিভিন্ন পোশাকে, বিভিন্ন ভঙ্গিতে।
আজ ধন্তেরস।  গুঞ্জা আজ মায়ের জন্য ওর বিজ্ঞাপনে পরা সবচেয়ে পছন্দের সেটটি কিনে এনেছে। মায়ের গলায় পরিয়ে তবে শুরু হবে ওর আলোর উৎসব। মায়ের চোখে মুখে যে দীপ্তি দেখবে ও, সেটাই ওর পরম প্রাপ্তি।

No comments:

Post a Comment