Thursday, November 8, 2018

ভাই-জোনড

তন্ময়, শুভ্র, আকাশ, দেবারুণ এক্কেবারে যাকে বলে সেই হাফ প্যান্টের বয়স থেকে বন্ধু। এক স্কুল এক পাড়া। সৌভাগ্যবশত কাজের সূত্রেও চারজনই এখনও কলকাতায় আর তাই নিয়মিত আড্ডা বসে ওদের পাড়ার মোড়ের পান সিগারেটের দোকানে। সেরকমই এক আসর আজও বসেছে। কালীপূজো দেওয়ালি শেষ। পরশু থেকে আবার সব অফিস। সকলেই প্রায় মনমরা। ব্যতিক্রম দেবারুণ। বাকিরা দেখছে দেবা সেই আসা ইস্তক ফুরফুরে মেজাজে আছে। মন মেজাজ দিব্যি ভালো। এতটাই ভালো যে কিপ্টে বলে বদনাম যার, সেই দেবাই আজ বাকিদের লেমন সোডাও খাওয়াল। শুভ্র তন্ময় আর আকাশ একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। বলি হল টা কী ওদের বন্ধুর?
শেষমেশ শুভ্র আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেলল, "দেবা ব্যাপার কী রে? আজ এত উড়ছিস? কী কেস? ঝুম্পা গ্রিন সিগনাল দিল নাকি?" ঝুম্পা দেবারুণের কলিগ। এই সুন্দরী মেয়েটিকে বেশ কিছু মাস ধরেই পটানোর চেষ্টা করছে দেবা। বন্ধুরা নিয়মিত আপডেট পায় অবশ্য। এখনও অবধি তেমন আশার কিছু দেখেনি।
দেবা একটু লাজুক মুখ করে হেসে বলল, " হ্যাঁ মানে মনে তো হচ্ছে তাই।"
"আরেএএএএ ভাই ভাই ভাই..." বাকি তিনজন পিঠ চাপড়ে "কী ব্যাপার, কী হল, কী করে হল"  ইত্যাদি প্রশ্নবাণ হানল দেবারুণের দিকে।
দেবা সেই একইরকম লাজুক লাজুক মুখ করে বলল, "সেদিন আমি ওর টিফিনের মাংস টেস্ট করে এত প্রশংসা করেছিলাম, ও বলেছিল একদিন বাড়িতে নেমন্তন্ন করে খাওয়াবে। তা একটু আগে মেসেজ করলো, বলল কাল ও নাকি অনেক রান্নাবান্না করবে। আমায় যেতে বলল ওর বাড়ি। খাওয়াবে।"
শুভ্র আকাশের দিকে, আকাশ তন্ময়ের দিকে আর তন্ময় শুভ্রর দিকে তাকাল। বেশ সিরিয়াস মুখ করেই। তারপর রীতিমত একই সাথে তিনজনে বলল, "ভাই তুই তো গেলি।"
দেবারুণ অবাক হয়ে বলল, "মানে? কী কেস?"
"ভাই, বুঝছিস না। কাল ভাইফোঁটা রে।"
"তো?"
"আরে এত রেঁধে বেড়ে তোকে ভাইফোঁটার দিনে বাড়িতে ডাকছে। বুঝছিস না? ভাই, তুই তো গেলি..."বলতে বলতে প্রবল অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়ল ওরা তিনজন। আর দেবারুণ? ওর মুখটা যেন ঠিক চুপসানো ফানুস একটা। 

No comments:

Post a Comment