৩।
কলিং বেল শুনে বিট্টু দৌড়ে গেল দরজা খুলতে।
"কে এলো রে? গেস্ট লিস্ট থেকে তো আর কারুর বাকি নেই আসার?" একটু অবাক হয়েই ইনিয়ে বিনিয়ে সুপর্ণা মেয়েকে জিজ্ঞেস করলো। রাত্তির দশটা বাজে। ড্রয়িং রুমের ঘড়িতে বেশ একটা অ্যান্টিক গ্র্যান্ডফাদার ক্লকে ক্যামেরা ফোকাস করবে, ঢং ঢং করে আওয়াজ হবে।
"নির্ঘাত ক্যাটারিং এর ছেলেটা। দাঁড়াও না, ফোন করলে রিসিভ করবে না, বড্ড বেশি বাড় বেড়েছে এদের। আমায় চটিয়ে পার পেয়ে যাওয়া সহজ না। ওর ব্যবসা বন্ধ করে দেবো আমি। Just wait and watch... (বেশ চিবিয়ে চিবিয়ে পজ দিতে দিতে এরই মধ্যে পঞ্চাশ বার আঁচল ঠিক করতে করতে বিট্টু বলবে)।
"বিট্টু মাথা গরম করিস না মাম্মা, এত নিমন্ত্রিত লোকজন বাড়িতে, এখনই একটা সিন ক্রিয়েট না করলেই নয়? প্লিজ সোনা..." সুপর্ণা মেয়ের কাঁধে হাত রেখে মেয়ের মেজাজ ঠাণ্ডা করতে চেয়ে বলে।
বিট্টু দরজার দিকে এগোয়। যাওয়ার পথে usual party scene cross করে। অনেক মহিলারা ওর দিকে তাকিয়ে হাসলও (অবশ্যই ঈর্ষান্বিত হাসি)। এই এরাই আগামী কিছুদিনের মধ্যেই কিটি পার্টিতে বিট্টুর সাহসী পোশাকের ব্যাপারে মুখরোচক গল্প করবে।
বেল বাজল দ্বিতীয়বার।
খুব বিরক্ত মুখ করে বিট্টু এগিয়ে চলবে।
"আরে আসছি।" চিৎকার করে বলবে ও।
দরজা খুলেই আবার চিৎকার। "নিজেরা এত্ত লেট করে আসার বেলায় কিছু না, আর এখন এরকম অসভ্যদের মতো বারবার বেল বাজাচ্ছেন যে?"
দরজার ওপারে দেখা যাবে রণিতকে। বেশ একটা হকচকিয়ে গিয়েছে। ওর পিছনে ডেলিভারি বয় গোছের কেউ। রোগা পটকা, চুল উসকো খুস্কো, হাতে পায়ে কাদা মাখামাখি প্রায়। জামাতেও ওরকমই কিছু। দুজএন্র হাত ভর্তি বড় বড় প্যাকেট/বাসন...
রণিতঃ ম্যাডাম আপনি যা ভাবছেন তা না।
বিট্টুঃ চুপ করুন। একদম মুখে মুখে তর্ক করতে আসবেন না (আঙ্গুল তুলে, বেশ চোখ টোখ পাকিয়ে)। রাত্তির দশটা বেজে গিয়েছে। অর্ডার ডেলিভারির সময় কটা ছিল, খেয়াল আছে?
রণিতঃও ম্যাডাম, শুনুন না। বলছি যে...
বিট্টূঃ চুপ। একদম চুপ। (বেশ জমকালো কান ঝালাপালা করা মিউজিক চাই) আপনার সুপারভাইজারের সাথে কথা বলে নেবো আমি। আপনার মতো দু পয়সার এমপ্লয়ীর সাথে কথা বলা না, আমার ইমেজের সাথে যায় না। বুঝেছেন? যতসব ইনএফিশিয়েন্ট ইউজলেস ডেলিভারি বয় পাঠায়।
ইতিমধ্যে "কে রে মা? কী হয়েছে?" বলতে বলতে আদিত্য বাবু চলে আসেন। বিট্টূ ন্যাকা/রাগী মুখ করে প্রচুর চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, "বাবা দেখো না, কেটারিং এর লোকগুলো দেরি করে এসেছে। এদিকে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন কী না কী।"
আদিত্যঃ কই দেখি?
রণিতঃ আঙ্কল, অ্যাকচুয়ালি আমি কেটারিং এর স্টাফ নই। সেটা ও। (পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে দেখায় আঙ্গুল দিয়ে)
আদিত্যঃ তুমি কেটারিং এর না?
রণিতঃ না।
আদিত্যঃ তাহলে তোমার হাতে এই এত্ত এত্ত প্যাকেট কীসের?
রণিতঃ সেটাই তো তখন তো বলতে চাইছই। ম্যাডাম কথাটা কমপ্লিট করতে দিলে তো?
বিট্টূঃ বাবা why are you wasting your time on him?
আদিত্যঃ আরে দাঁড়া না, বুঝতে ডে আমায় ব্যাপারটা। পুরোটা শুনতে ডে। হ্যাঁ তা বাবা, বলো তো কী বলছিলে? (রণিতের দিকে তাকিয়ে)
বিট্টূ বেশ বিরক্ত মুখ করে "যতসব ন্যাকামি" বলে চলে গেল একটু দূরে।
রণিতঃ আঙ্কল, আমার নাম রণিত। রণিত গাঙ্গুলি। আমি একজন অন্ত্রেপ্রেনিউর। কিছু মাস হল ইউ এস থেকে ইন্ডিয়া ফিরেছি (ইতিমধ্যে আশে পাশে শ্রীপর্ণা সুপর্ণা দুজনেই হাজির। ইউ ফেরত শুনে দুজনেরই চোখ চকচক করছে। দুজনেরই যে বিবাহযোগ্যা কন্যা আছে) আমি এক জায়গায় যাচ্ছিলাম ড্রাইভ করে। তখন এই ছেলেটির সাথে দেখা হল। রাদার, ওর বাইক স্কিড করে এক্কেবারে আমার গাড়ির সামনে এসে পড়ল। he was panicking, and yeah, so was I (বেশ নার্ভাস হাসি হেসে বলল)... ও বলল ওর কোথায় খাবার পৌঁছনর কথা। দেরি হয়ে যাওয়ায় স্পিডে বাইক চালাতে গিয়েই এই বিপত্তি। আমি ওকে আস্তে আস্তে টেনে তুললাম। বাইকটা চালানোর মতো কন্ডিশনে ছিল না। সাইড করে ওকে গাড়িতে নিয়ে আমি ফার্স্ট এড দিইয়ে তারপর এখানে এলাম।
আদিত্যঃ ওহো। এই রে। খুব খারাপ খুব খারাপ। (ছেলেটির দিকে তাকিয়ে) বাবা তোমার তো বেশ ইনজুরি দেখছি। শোনো, (ওয়ালেট বের করে, সেখান থেকে এক তাড়া নোট বের করে) এই টাকাটা ধরো। চিকিৎসা করিয়ো। ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি যেয়ো।
আদিত্য বাবু ভিতর দিকে মুখ ঘুরিয়ে চেঁচিয়ে বললঃ এই বুবাই? বিট্টূ? এদিকে এসে খাবার গুলও নিয়ে যা প্লিজ।
রণিতের দিকে মুখ ঘুরিয়ে এবার বললেন, "বাবা রণিত, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।তোমার সাথে আলাপ করতে হবে গুছিয়ে। এসো না। we are having a aprty tonight, to celebrate my anniversary. Why don't you join us for dinner?"
রণিতঃ It's okay uncle. Happy anniversary uncle aunty.. But some other time..আমি একটা অন্য পার্টিতে যাচ্ছিলাম। ওখানে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সো...
আদিত্যঃ তা হয় নাকি?
রণিতঃ না আঙ্কল, আমি সত্যিই পারবো না আজ।
বিট্টূ পাশ থেকে এসে বিরক্ত মুখ করে তাকাবে রণিতের দিকে। যদিও এমন সুপুরুষের প্রতি একটু কৌতূহলও হবে। কে এ?
আদিত্যঃ বেশ। কাল তাহলে আমাদের সাথে লাঞ্চ করো? ফ্রি আছো?
রণিতঃ সামনের সপ্তাহে কোন এক দিন হোক?
আদিত্যঃ শিয়োর।
রণিতের পিঠ চাপড়ে আদিত্য ওকে বিদায় জানালেন। রণিতের মুখে হাসি। বিট্টু অবাক।
শ্রীপর্ণা আর সুপর্ণা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
"কে রে দিদি? কী হ্যান্ডসাম... (মনে মনে ভাবছে, "আমার মুনিয়ার সাথে দারুণ মানাবে।")
সুপর্ণাঃ হুম। খোঁজ নিতে হবে (মনে মনে ভাববে, "দারুণ শাঁসালো মনে হচ্ছে। বিট্টুর সাথে তো এমন জন কেই মানায়।")
(অদ্ভুত ভ্যাম্প মিউকিজ বাজবে ব্যাকগ্রাউন্ডে। আস্তে আস্তে জুম আউট করবে ক্যামেরা। লাইটস বোকে এফেক্ট হবে। তারপর স্ক্রিন ফ্রিজ)
No comments:
Post a Comment