Thursday, June 29, 2017

তুঝসে নারাজ নহি জিন্দগি

- কি গো, রিপোর্টটা পেয়েছ?
- একটা ফোন করবে না পেয়ে?
- জানানোর মত কিছু হলে নিশ্চয়ই জানাতাম।

(খানিকের নীরবতা)

- এবারও নেগেটিভ তাহলে? ডঃ মিত্রর সাথে কবে দেখা করব তাহলে, পারলে কথা বলে এসো।
- বাড়ী গিয়ে কথা বলব। এখন রাখছি।
- ঠিক আছে। কখন ফিরবে?
- জানিনা। দেরী হবে।



রাত এগারোটার পরে আধা মদ্যপ অবস্থায় মুকুলের প্রবেশ বাড়ীতে।

- হাত মুখ ধুয়ে এসো, আমি খাবার বাড়ছি।
- খেয়ে এসেছি। তুমি ঘরে এসো। কথা আছে।
- আমি খাইনি এখনো, চট করে খেয়ে আসছি।
- হুম।



- শোনো সুমি, অনেক তো হল। আর কেন ফালতু লোক হাসাতে বারবার আমায় প্যাথোলজি সেনটারে পাঠাবে বলোতো?
- কি বলছ মুকুল? লোক হাসানো কেন বলছ একে?
- নয়তো কি? তুমি কেন একসেপ্ট করছ না সত্যিটা?
- দেখো এত সহজেই হাল ছাড়লে চলবে নাকি? ডঃ মিত্র তো বলেছেন, সময় লাগবে।
- সেটা উনি তিন বছর আগে বলেছিলেন।
- আশা তো ছাড়েননি।
- বাজে কথা বলো না। ফালতু ফালতু ডাক্তারের পিছনে টাকার শ্রাদ্ধ করে যাচ্ছি। যা হবার না, তা নিয়ে কেন পড়ে আছ?
- তাহলে চল দত্তক নিই? প্লীজ মুকুল, না করো না।
- আবার শুরু হল ওই। মা আর আমি অনেকবার বলেছি তো। কোথাকার কোন পাপীর রক্ত, বেজন্মা আমাদের বংশে আসবে না।
- মুকুল আমারও তো মা হতে ইচ্ছে হয়।
- আমারও বাবা হতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু নিজের সন্তানের। এরকম আস্তাকুড়ের ভাগাড়ের থেকে তুলে আনা না।
- তুমি আমার সাথে একদিন চল অরফানেজে, দেখবে...
- আর একটা কথা হবেনা এই নিয়ে। মা ঠিকই বলে। অনেক আগেই তোমার মত বাঁজা মেয়েকে ডিভোর্স করে আরেকটা  বিয়ে করা উচিত ছিল। Good for nothing, তাও যদি অন্যভাবেও সুখে রাখতে আমায়। জীবনটা হেল করে ছাড়লে।


(কিছু মাস পরে, কলকাতা থেকে প্রায় আশি কিলোমিটার দূরে, কুসুম কানন অনাথ আশ্রম।)


- মামণি আমি তোমায় ছেড়ে যাবনা। তুমি সিস্টারকে বলে দাও।

- আরে সোনা, তুই নতুন মাম্মাম পাপা পাবি।

- না আমি তোমাদের, তোমাকে ছেড়ে যাব না কোথাও।

- মামাই জেদ করেনা। ওই নতুন মাম্মাম তোকে কত ভালবাসবে, কতো বড় বাড়িতে থাকবি। টিভিতে ডোরার যেমন বাড়ি দেখিস, সেই রকম সাজানো বাড়ি হবে তোর। কি আনন্দ বল তো।
- না সেখানে তুমি থাকবে না মামনি।
- লক্ষ্মী মা আমার, আমি যাব তো মাঝে মাঝে দেখা করতে। আমরা সবাই যাব। দিয়া দিদির বাড়ি সবাই যাই না বল?
- প্রমিস?
- গড প্রমিস। নে চল, ব্যাগ গুছিয়ে দিই। মাম্মাম পাপা এসে গিয়েছেন।


পাঁচ বছরের রিনিকে তার নতুন বাবা মায়ের কাছে সঁপে দিতে গিয়ে মনে হল যেন নিজের হৃদয়ের একটা টুকরো খসে গেল। তবে এটা ভেবে একটা অদ্ভুত ভালোলাগা হয় যে অন্তত আরেকটা পরিবার সন্তান পেল, বেঁচে থাকার মানেটা পেল। এই কয়েক মাসেই অনাথ আশ্রমের বাচ্চাগুলো কতটা আপন হয়ে গিয়েছে সুমির। এখন ওর একটা নয়, দুটো নয়, চল্লিশ জন সন্তান। প্রতিদিন ভোরবেলা ওদের ঘুমন্ত চেহারায় নরম সূর্যের আলোর রশ্মি দেখতে দেখতে সুমি বোঝে, একেই বুঝি বলে স্বর্গ সুখ।





No comments:

Post a Comment