Saturday, July 1, 2017

গল্প হলেও সত্যি

****গল্প হলেও সত্যি****

আজ ভেবেছিলাম একটু লেখা থেকে ব্রেক নেব, কিন্তু এমন একখানা কাণ্ড ঘটে গেল, লিখতে বাধ্য হচ্ছি। ঘটনাটি এই রসেবশে গ্রুপ নিয়েই।

মেঘে মেঘে তো বয়সটা নেহাত কম হয়নি, বিয়ে-থা করার চেষ্টা চলছে। সেই সূত্রে আজ এক "প্রস্পেক্টিভ পাত্রের" সাথে ডেটে গিয়েছিলাম। মেনল্যাণ্ড চায়না। চাইনীজ আমার খুবই প্রিয়। মেনু কার্ড দেখে আমি প্রায় হামলে পড়লাম (আসলে হোস্টেলে থাকি, প্রায় অভুক্তই থাকে বলতে পারেন)। স্যুপ, স্টারটার, মেন কোর্স, সাইড ডিশ সব অর্ডার দিয়ে ততক্ষণে উল্টো দিকে যেই ভদ্রলোক বসেছেন, তার সাথে কথা বলতে শুরু করেছি। সেই কথোপকথনের মোটামুটি একটা খসড়া এই রকমঃ

আমিঃ আমি না আপনাকে প্রায় জিজ্ঞেস না করেই সব অর্ডার দিলাম, আশা করি আপনি মাইন্ড করেননি।
সেঃ না না, আপনি দেখলাম বেশ খাদ্যরসিক, খুব সুন্দর সব রকম আইটেম দিব্যি অর্ডার করে দিলেন। আমি না মেনু কার্ড দেখে কিরকম একটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই।
আমিঃ না মানে আমি জোম্যাটো থেকে অল্প বিস্তর দেখে আসি কোথায় কোন খাবার ভাল, সেই অনুযায়ী অর্ডার করি।
সেঃ আপনি যে ভালই খান, আপনার লেখা দেখে বোঝা যায়।
আমিঃ আমার লেখা? আমার লেখা আপনি কোথায় পেলেন? কোন লেখা?
সেঃ ওই যে, এসো বসো আহারে।
আমিঃ ও আপনি বুঝি রসেবশেতে আছেন? ( আসলে এই ভদ্রলোকটি কে তো তখনো ফেসবুকে যোগ করিনি, অন্য কোন সুত্রে লেখাটা পাওয়ার কথা না।)
সেঃ হ্যাঁ, আমি আপনার লেখার বেশ নিয়মিত পাঠক।
আমিঃ ও আচ্ছা। আসলে ওখানে এত মেম্বার, সবার সাথে ঠিক আলাপ পরিচয় নেই, যারা আমার লেখায় লাইক কমেন্ট করেন বা রেগুলারলি লেখেন, তাদের নামে চিনতে পারি। আপনি বোধহয় খুব একটা এক্টিভ না, তাই না?

ইতিমধ্যে লেমন কোরিয়েন্ডার প্রন স্যুপ ও ক্র্যাব কেক এসে গিয়েছে। খাওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।

সেঃ উমম, বেশ সুন্দর তো টেস্ট, বেশ একটা টক টক খেতে। আপনি অর্ডার ভাল করেছেন।
আমিঃ থ্যাঙ্ক ইউ। হ্যাঁ, খুব ট্যাঙ্গি একটা ফ্লেভার। তা যা বলছিলাম, আপনি বেশী এক্টিভ না গ্রুপে, না?
সেঃ না। মানে আমি মোটামুটি সকলের লেখা পড়ি। তবে ওই লাইক কমেন্ট করিনা। সামহাউ ইচ্ছে করেনা।
আমিঃ ও আচ্ছা। আসলে লাইক কমেন্ট বা যে কোন ফিডব্যাক না পেলে আমরা যারা লিখি, তারা বুঝিনা পাঠক কি চাইছেন। তাই পারলে এরপর থেকে মন্তব্য, নিদেনপক্ষে ভাল লাগলে একটা লাইক করবেন।
সেঃ আচ্ছা বেশ। আমার না একটা প্রশ্ন আছে।
আমিঃ হ্যাঁ বলুন, তবে নুডলসটা খান। জব্বর বানিয়েছে। প্যান ফ্রায়েড, বেশ মুচমুচে।
সেঃ ফিশটাও টেস্টি।
আমিঃ হ্যাঁ। কি প্রশ্ন আছে করে ফেলুন।
সেঃ বলছি আপনার জীবনে অর্ক কে?
আমিঃ অর্ক? কোন অর্ক?
সেঃ না মানে ওই এসো বসো আহারেতে সেদিন লিখলেন পায়েল আর অর্কর গল্প। তারপরে সেদিন ওই মোমোর গল্প লিখলেন। ওগুলো তো আপনারই নিজের ঘটনা নিশ্চয়ই?
আমিঃ পাগল? না না। নিছকই গল্প।
সেঃ আর ওই গানে গল্পের ব্রেকাপটা? ইলেক্ট্রনিক সিটিতে কে থাকে?
আমিঃ শুনুন মশাই, ইলেক্ট্রনিক সিটি ফেজ ১ ও ২ মিলিয়ে প্রচুর প্রচুর লোক থাকেন। কিন্তু আমি গোট্টিগেড়েতে থাকিনা। ওটাও নিছকই গল্প। পাতি ব্যাঙ্গালোর টাইমস  খুলে পরপর দুটো ক্লাসিফায়েড বিজ্ঞাপনে এই নামগুলো পেলাম।
সেঃ এ বাবা।
আমিঃ এত ডিসাপয়েন্টেড হলেন যে?
সেঃ না আসলে আপনার লেখা গুলো দেখে খুব কৌতূহল হত, তাই যখন ম্যাট্রি প্রোফাইলে আপনার নাম দেখলাম, ভাবলাম দেখি চেষ্টা করে, যদি সামনাসামনি কথা বলে গল্পগুলির পিছনের সত্যিটা জানা যায়। সেই জন্যই আরো আসা আজ।
আমিঃ ও না না, ওগুলো সবই আমার মজা করে লেখা। ইন ফ্যাক্ট রোহিণীর গল্পটাও বানানোই।
সেঃ বুঝলাম।

স্বাভাবিকই এরপরে বেশী আর কথা এগোয়নি। উনি এতটাই মর্মাহত হলেন (ভেবেছিলেন কি নতুন কোনো স্কুপ পাবেন? রসেবশেতে গল্প লিখবেন? মিউচ্যুয়াল ট্রান্সফারের ব্যাকগ্রাউণ্ডের মত এসো বসো আহারের ব্যাকগ্রাউণ্ড? কে জানে!) যে এরপরে আর আইস্ক্রীমও খাওয়া হলনা, যদিও লিচু আইস্ক্রীম ছিল মেনুতে। দেখে রেখেছিলাম!

********************************************************************************

পুনশ্চঃ রসেবশেতে লেখা এ যাবত সমস্ত গল্পই আমার কল্পনা! বাস্তবের সাথে মিল খুঁজতে যাওয়া সময় নষ্ট।

No comments:

Post a Comment