আজকে বলব আমার এক বন্ধুর কথা। ওর নাম শতায়ু। আমরা একসাথে শিবপুর বেসুতে MSc
পড়তাম। মানে আমি ওখানে মোটে সাতদিন ক্লাস করেছিলাম, তারপরে যাদবপুরে চান্স
পেয়ে চলে যাই। ও ওখানেই কন্টিনিউ করে। এক ক্লাসে পড়লেও সাতদিনে তেমন আলাপ
বন্ধুত্ব্ব হয়নি। শেষদিন যখন আমি ক্লাসের সকলকে goodbye জানিয়ে বেরোচ্ছি,
তখন নিজে যেচে আমার ফোন নম্বর নিয়েছিল আর নিজেরটা দিয়েছিল। সেই থেকে শুরু
আমাদের SMS এ গল্প, আড্ডা মারা।
যাদবপুরে কোর্সে কি পড়লাম নতুন, কারা বন্ধু হল, সিনিয়ররা কে কেমন, কার ওপর ক্রাশ
হল সমস্ত আলোচনা হত। ওর দিক থেকেও খবর পেতাম। তখন ছিল বোধহয় অরকুটের যুগ,
ফেসবুক ততটাও দাপানো শুরু করেনি। মনে আছে ওর অ্যালবামগুলিতে আনতাব্রি
কমেন্ট করতাম, খ্যাপাতাম। মোটামুটি ও ছিল আমার যাকে বলে ভীষণ কাছের বন্ধু।
জীবনের সুখ দুঃখ সমস্ত সময়ে ওকে পাশে পেয়েছি।
২০১২ সালের পুজোতে মনে
আছে দশমীর দিন আসানসোলে কোন কারণে বন্ধ ছিল। আমার পিসি কাকা সবাই ওইদিকে
থাকত। ওদের থেকেই খবর পাওয়া। দর্পণে বিসর্জনের পরে SMS করলাম "শুভ বিজয়া"।
প্রায় ওই দুপুরবেলা নাগাদ, বারোটার আশেপাশে। কোন উত্তর পাইনি। মনে পড়ল, ওর
ঠাকুমার শ্রাদ্ধের কাজ ছিল, বুঝলাম সেই নিয়ে ব্যাস্ত।
মাঝ রাত্রে আমার
বান্ধবী, ও-ও বেসুতেই পড়ত, আমায় মেসেজ করেছিল, শতায়ু আর নেই। ঘুমের মধ্যে
অভ্যেসবশত আমি মেসেজটি ডিলিট করে দিই। সকালবেলা উঠে পরেরদিন কোন আর কারুর
থেকে খবর নেই। ভাবলাম মনের ভুল। আর ব্যাপারটা এমনই অদ্ভুত, ওরকম ডাইরেক্টলি
কাউকে জিজ্ঞেসও করা যায়না। বান্ধবীকে আবার মেসেজ করলাম বিজয়ার শুভেচ্ছা
জানাতে। তখন ও আমায় বলল। আগেরদিন দুপুরে ওর ঠাকুমার কাজের পরে ফুলপাতা
ইত্যাদি ফেলতে দামোদর নদে গিয়েছিল। তখন হঠাৎ বাঁধের জল ছেড়ে দেওয়ায় ওদের
নৌকোটি টাল সামলাতে পারেনি, ও নৌকো থেকে পড়ে ভেসে যায়। অনেক রাত্রে ওর নিথর
মৃতদেহ বহু দূরে পেয়েছিল। ডাক্তার লেখেন "ম্যাসিভ হার্ট এটাক"।
যেইটুকু জেনেছিলাম, যখন ঘটনাটি ঘটে, সময় ওই বারোটার আশেপাশে। যখন কিনা ওকে
আমি SMS করছিলাম। সেইদিন কিন্তু ওই সময়ে আমি আর কাউকে SMS করিনি। আজও
বুঝিনি, কোন টানের বশে ঘটেছিল। লোকে বলে যে প্রিয়জন যখন বিদায় নেয়, দোসরের
সাথে দেখা করে যায়। হয়তো...
https://www.youtube.com/watch?v=AoFgEqjO2kg
No comments:
Post a Comment