Monday, July 31, 2017

Happy birthday Harry


শুভ জন্মদিন হ্যারি পটার

সুচেতনা গুপ্ত

তখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি। গরমের ছুটিতে আমার জেঠি (উনি স্কুলের শিক্ষিকা হওয়ার সুবাদে লাইব্রেরী থেকে অনেক বই এনে দিতেন আমায়। ) আমায় হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম বইটি এনে দেন। Harry Potter and the Philosopher's Stone তখন খুব চলছে। সিনেমার পর্দায় আসার সুবাদে বইটি তখন হই চই ফেলে দেয়, যদিও বইটি বেরিয়েছিল তার কিছু বছর আগে। আমি গোগ্রাসে সেই বই পড়া শুরু করি। এবং এর পরে প্রত্যেকটি পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে থাকতাম। সেই যে হ্যারির সাথে আমার প্রথম পরিচয়, সেই বন্ধুত্ব আজও অটুট। এখনো মন খারাপ লাগলে উল্টে পাল্টে দেখে নিই কিছু কিছু চ্যাপ্টার। আর তৎক্ষণাৎ মন ভালো হয়ে যায়।

প্রিয় কিছু মুহূর্ত বলতে গেলে সবচেয়ে প্রথমে মনে আসে যেটা, সেটি হল যখন প্রথমবার ও হগওয়ারটস থেকে চিঠি পায়। ওই চিঠিই ছিল ওর মাসী মেসোর বাড়ির অত্যাচারের থেকে বেরোনোর পথ। হ্যাগ্রিডের সাথে Diagon Alleyতে গিয়ে স্কুলের জন্য সামগ্রী কিনে তৈরি হওয়া দেখতে দেখতে কখন জানি নিজের নতুন সেশনের কথা মনে পড়িয়ে দেয়। প্রত্যেক বছর নতুন ক্লাসে ওঠার আগে বাবা মায়ের হাত ধরে লিস্ট মিলিয়ে বই কেনা, ইউনিফর্ম কেনা...হ্যারির ক্ষেত্রে বাবা মায়ের বদলে এই কাজে শুরুতে সাহায্য করেছে হ্যাগ্রিড, পরবর্তী গল্প গুলোতে রনের মা, মিসেস উইজলি। অনাথ হলেও হ্যারিকে বাবা মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসায় সর্বক্ষণ ভরিয়ে রেখেছে মিসটার ও মিসেস উইজলি, ডাম্বলডোর, হ্যাগ্রিড, প্রোফেসর ম্যাক গনাগাল, সিরিয়াস, প্রোফেসর লুপিন ও আরো অনেকে।

রন ও হারমাইনির সাথে অটুট বন্ধুত্ব, তথাকথিত "কুল" না যারা, যেমন, নেভিল, লুনা এদের সাথেও সমানভাবে বন্ধুত্ব করা, হেডউইগের সাথে সখ্যতা, ডবির প্রতি আমৃত্যু ভালোবাসা, সর্বদা ন্যায়ের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকার মনোভাব, ছোট বড় নির্বিশেষে সকলকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া, ভদ্রভাবে আচরণ করা, দুষ্টুমি করা, নিয়ম ভাঙ্গা (কিন্তু সব সময়েই প্রায় কোন ভালো বা মহৎ কাজের জন্যই) এইসব মিলিয়ে হ্যারির স্কুলজীবন। একটু একটু করে বড় হতে হতে ডাম্বলডোরের থেকে ও আরো অনেকের থেকেই নিজের ছেলেবেলা, অভিশপ্ত ভবিষ্যতের কথা শুনেও হার না মেনে এগিয়ে চলা, এই স্বভাবগুলির জন্যই বোধহয় পৃথিবী জুড়ে হ্যারির অগুনতি ভক্ত।


এরপর শুরু হল সিনেমাগুলি দেখা। ফিলসফারস স্টোনটি সিনেমায় এলো সরসারারস স্টোন নাম নিয়ে। একটা সিন আমার এখনো খুব মনে টানে (এবং বহু সময় দিয়ে আমার ডেস্কটপের বা ল্যাপটপের ওয়ালপেপার থেকেছে), সেটি হল হগওয়ারটসে কাটানো ওর প্রথম ক্রিসমাস। বাইরে বেরিয়ে নরম বরফের মধ্যে দাঁড়িয়ে, গ্লাভস পরা হাতটা বাড়িয়ে রাখা, রোবের ওপরে হেডউইগ বসে আছে। হ্যারির চোখে মুখে যে একটা অনাবিল আনন্দ, ওই নির্মল হাসিটুকু মন ছুঁয়ে যায়। হ্যারির সাথে সাথে ড্যানিয়েল র‍্যাডক্লিফের ওপর মুগ্ধতার সূচনা হল। হ্যারিকে বোধহয় আরো বেশী করে আমাদের প্রজন্মের আপন লাগে কারণ ছেলেটির সাথে আমরাও যে বড় হয়েছি। ওর সাথে হেসেছি, ওর সাথে অঝোরে কেঁদেছি। ও যখন mirror of erisedএ নিজের মা বাবাকে দেখেছে, ওর সাথে সাথেই আমরা সেই সামনে আছে কিন্তু তাও ধরাছোঁয়ার বাইরের কষ্টটা অনুভব করি। আমি বরাবর বই পড়তে বেশী ভালবাসি সিনেমার তুলনায়। এই সিরিজেও চতুর্থ সিনেমার পরে আমার আর আগ্রহ ছিলনা খুব একটা। বইয়ের অত ডিটেলিং মিসিং লাগত, তাই সিনেমা দেখলেও অতি উদগ্রীব হয়ে থাকতাম না প্রথম চারটি দেখার মত। মনে আছে স্কুল কামাই করে প্রিয়া সিনেমায় তৃতীয়টা দেখতে গিয়েছিলাম আমি আর আমার দিদি। বাসে করে ফেরার সময় বাংলা মিস কে বাসে দেখে প্রায় যায় যায় অবস্থা। যখন শেষ সিনেমাটি বেরোল, বইটা আগেই পড়া হয়ে গেলেও সিনেমাটি দেখার জন্য আগ্রহী ছিলাম। দেখার পরে মনে হল যেন এর সাথে সাথেই আমার এক টুকরো শৈশব শেষ হয়ে গেল।

No comments:

Post a Comment