- এই যে শুনুন?
- আমাকে বলছেন?
- না তো কাকে বলব? ধারে কাছে কি আর কেউ আছে নাকি?
- (মনে মনেঃ ওরে বাবা কি মুখরা রে বাবা!) তা তো দেখছি না। আসলে এই পার্কে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি। শান্তিতে যে বসে দুটো হা হুতাশ করব, তার উপায় নেই। লোকে একেবারে গায়ের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। অবশ্য লোকের তো আর দোষ নেই, চোখের মাথা খেয়ে রেখেছে সব।
- হুম।
- তা কি বলছিলেন বলুন?
- বলি আপনার শিক্ষা দীক্ষা কবে হবে বলুন তো মশাই?
- না মানে যতদূর মনে আছে, আমি এম এ পাস। মাসটার ডিগ্রী কিন্তু খারাপ না। ইন ফ্যাক্ট, গোল্ড মেডালিস্ট ছিলাম। নেটটা কিছুতেই লাগাতে পারিনি, নইলে পি এইচ ডি তে ঢুকে যেতাম। শেলী বাইরন গড়গড় করে আউড়ে দিতে পারি। রেনেসাঁ টু রাউলিং, সব বিষয়ে কাজ চালানোর জ্ঞান আছে ম্যাডাম। কোন চাকরীর ওপেনিং আছে বুঝি?
- মরণ। এখানে এসেও চাকরী! আরে ধুর, সেই শিক্ষার কথা বলছি না। যাক গে। সেই শিক্ষার দিক দিয়ে ভাবলে আমি আপনার নখের যুগ্যিও নই। মোটে টুয়েলভ পাস।
- তা হলে কি?
- ওরকম ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে?
- ওরকম তাকালে বুঝি আপনি ক্যাবলা হয়ে যান?
- ঘাটের মরা কোথাকার। উফ। সালমাকে ভালবাসলেন বলে আজ আপনার এই দশা। তারপরেও আবার? আমার দিকেও আবার?
- (মনে মনেঃ বাব্বাহ! এর দেখি সব দিকে কান, সবজান্তা) সে সালমার আব্বু হিন্দু ঘরের পাত্র চাননি, তায় আবার বেকার। নদীর ধারে একসাথে দেখতে পেয়ে তাই জন্যই তো ওই কেলেঙ্কারিটা হয়ে গেল। কিন্তু আপনি তো দেখছি হিন্দু ঘরেরই মেয়ে। গলায় লোকনাথ বাবার লকেট। তাহলে? কি সমস্যা? আপনার দিকে তাকালে বুঝি আমায় ভস্ম করে দেবেন? তা একবার তো হলাম, আবার?
- আমি ওরকম narrow minded নই। কিন্তু ধারে কাছে আমার বাবা দাদারা আছে সব। ঠাকুরদাও আছে। দেখে ফেললে আপনাকে ছাড়বে না।
- ওরে বাবা। গোটা গুষ্টি? তা আপনারা কি ফ্যামিলি কম্বো প্যাকেজে এসছেন বুঝি এখানে? মানে, এখানেও কি ওই Thomas Cookএর কোন deal চলে নাকি? অবশ্য ওরা তো মাঝে মাঝেই দেখি out of the world experienceএর বিজ্ঞাপন দেয়, ও হরি। আজ বুঝলাম তার মানে এই!
- ধুর মশাই, তা না।
- তাহলে?
- এক সাথে আসিনি। কিন্তু পরপর এসেছি। আর ব্লাড রিলেটিভ বলে এখানেও একই জায়গায় থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। তাই আমার মায়ের সেই এটা তুই কি করলি মার্কা মরা কান্না আর বাবা দাদাদের চোখ রাঙানি এখনো প্রতি পদে আমায় সহ্য করে চলতে হচ্ছে। শালা মরেও শান্তি নেই।
- তা কি আর করবেন বলুন। জায়গা পত্তরের বড়ই অভাব। এর মধ্যেই মানিয়ে গুছিয়ে চলতে হবে।
- আপনি এত calm and composed কিভাবে থাকেন মশাই? বিরক্ত লাগছে না এখানে এসেও চারিদিকে এত লোক, ক্যাচর ম্যাচর। মা গো।
- বয়সের সাথে সাথে ওসব এসে যায়, বুঝলেন?
- না সকলের আসেনা। সেই জন্যই তো বলছি। আমার বাপ ঠাকুরদা কে তো জানেন না। বামুনের মেয়ের দিকে তাকাচ্ছেন, নিজের জাতের কথা মাথায় না রেখে? আপনি আচ্ছা ইয়ে তো? নেড়া কতবার বেলতলায় যায় হে শুনি?
- আসলে এই পাড়ায়ও যে এমন হবে, বুঝতেই পারিনি, বিশ্বাস করুন।
- শুনুন, আপনি পায়রা উড়িয়ে, জোনাকির আলোয় সভা করতে পারেন। কিন্তু এখনো বেশীরভাগেরই বোধোদয় ঘটেনি। এসব স্থান কালের ধার এরা কোন দিনই ধারেনা। আমি ঠেকে শিখেছি বস।
- কেমন শুনি?
- ওই তো, আপনারই মত এক পাবলিক, সেদিন আমায় এক খানা গোলাপ দিতে এলো, বুঝলেন। ও মা, বলা নেই, কওয়া নেই। কোত্থেকে দেখি আমার দাদারা উড়ে এসে ধাক্কা মেরে ওকে ওই নিমগাছের মগডালে বেঁধে ফেলল। তারপরে এই মারে কি সেই মারে। নেহাত একবার মরেছে, তাই এ যাত্রায় রক্ষে পেল। তবে বেচারা মাঝখান থেকে বাস্তুহারা হয়ে গেল।
- স্যাড, ভেরি স্যাড।
- এমনি এমনি বলছি? নেহাত আপনাকে খুব খারাপ লাগেনি। আর ইয়ে, আমি কিনা বেশ প্রোগ্রেসিভ, জাত পাত মানিনা বাপু। কিন্তু বাপ ঠাকুরদা দাদাদের হাতে বেঘোরে আপনার কিছু হয়ে গেলে ভালো লাগবেনা কিনা, তাই সাবধান করে রাখলাম।
- বাহ। আপনি তো ভারী লক্ষ্মী মেয়ে দেখি। আমার মায়ের আপনাকে খুব পছন্দ হবে। দেখো।
- আপনার মা কি এখানে থাকেন? নাকি শীগগিরই আসছেন?
- এই না না। মায়ের আসতে দেরী আছে। আমি শুধু বলছিলাম যে মা যবে আসবে, আপনাকে দেখলে মায়ের পছন্দ হবে।
- শুনুন, ওসব মা বাবা আসা অবধি কে কোথায় চলে যাবে, তার কোন ইয়ত্তা আছে? আমি তো থাকব না। সামনের মাসে একটা অডিশন আছে। ওখানে আসবেন আমার সাথে? ঠিক যেমন যেমন শিখিয়ে দেবো,তেমন তেমন বলবেন। দেখবেন চান্স পেয়ে যাবেন ।
- কিসের অডিশন? কিসের চান্স?
- আরে আবার ফিরতে হবে না? ওই ধানসিঁড়িটির তীরে? বিরাট waiting list। অডিশনে lucky 10 বাছাই করবে, seniority list ছাড়াও যাদের পাঠানো হবে। মানে ওই যাকে বলে Wild card entry।
- এই তো সবে এলাম, এত তাড়াতাড়ি চান্স পাবো নাকি?
- হ্যাঁ হ্যাঁ পাবেন। ট্যাঁকের জোর থাকলে সব হয়। এমনিও এখানে জায়গার বড়ই অভাব। বেশিদিন ফেলে রাখা যাবেনা। যত তাড়াতাড়ি পারে এরা end of season saleএ ছেড়ে দেবে। আরে রেজাল্টের মরসুম এখন, তায় আবার বর্ষাকাল; অনেক নতুন কেস আসবে। বোঝেন না নাকি?
- কিন্তু আমার তো টাকার জোর নেই। এম এ পাস করে বেকার ছিলাম। ওই এক দুটো টিউশনি করে যা অল্প পেতাম।
- আরে শুনুন। আমার সাথে ওই লাইনম্যানের হেব্বি ইয়ে আছে। সব ম্যানেজ হয়ে যাবে।
- ইয়ে মানে কি? আপনি তো কথায় কথায় খালি ইয়ে ইয়ে করে যাচ্ছেন দেখছি।
- আরে ওই ইয়ে রে বাবা।
- কি ইয়ে?
- উফ। আপনি যেতে চান কি চান না, সেটা বলুন তো। তখন থেকে ইম্মেটিরিয়াল প্রশ্ন করে যাচ্ছেন।
- আচ্ছা যাব। কিন্তু হঠাৎ আমার ওপর আপনি এত সদয় হলেন যে?
- এই মাসে আসলে couple scheme চলছে, বুঝলেন। একমাত্র জোড়ায় গেলে তবে অডিশনে চান্স দেবে। আর শর্ত আছে যে যেই জোড়ে যাবে, সামনের বার সেই জোড়েই গোটাটা কাটাতে হবে। নইলে নেক্সট অডিশনে চান্স কবে যে পাবে, তার ইয়ত্তা নেই।
- বুঝলাম। তাতে?
- তাতে আর কি। দেখলাম যে আপনি নেহাত ইয়ে মন্দ নন। একখান জীবন কাটানোই যায় আপনার সাথে। তাই বললাম আমার সাথে যেতে। আর আপনিও তো মনে হয় অরাজি হবেন না। যা বুঝছি।
- আর আপনার বাপ ঠাকুরদা?
- একটু ভেক ধরতে হবে। তবে ম্যানেজ হয়ে যাবে। আমার ওপর ভরসা রাখুন।
- ভরসা তো ম্যাডাম ডিডি গেঞ্জির ওপরও ছিল, তাও সেদিন সাদা ডিডিটাই লাল...
- রাখুন তো ওই প্যানপ্যানানি। ওসব গেঞ্জি ফেঞ্জিতে হবে না। আমিই আসল ডিডি। দেবদত্তা। যা করার ও পারার, আমিই করব।
- ঠিক আছে। আমি না হয় আসব। কিন্তু দিনক্ষণ জানব কি করে?
- আরে ad দেবে তো কাগজে। কাগজ পড়েন না? এমা! পড়তে হয়, নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়।
- ও তাই বুঝি? আসলে আমি নতুন কিনা। পাড়াপড়শিতেও কেউ বলে দেওয়ার মত নেই। জানতাম না।
- এসব highly competetive, বয়েই গিয়েছে পারা প্রতিবেশীর আপনাকে বলার। চোখ কান খুলে চলতে হয়।
- ও। আচ্ছা পড়ব। কিন্তু ধরুন বাই চান্স যদি মিস করে যাই, বা এমনিও প্ল্যানিং করতে গেলে, কি ভাবে করব? আপনি খুব অসুবিধেয় না পড়লে প্লীজ আপনার ফোনের নম্বরটি দেবেন? আমি মিসড কল মেরে দিচ্ছি।
(মনে মনে উবাচ - শালা মরেও মেয়েদের ফোন নম্বর নেওয়ার হ্যাবিট কাটেনা এদের)
- হ্যাঁ লিখুন। 98xxxxxxxx।
- সেভড।
- যান এবার একটা মেসেজ করে দিন। আমি সময়মত যোগাযোগ করে নেব।
- আচ্ছা তার আগে এমনি একদিন একটু হাওয়া খেতে বেরোবেন?
- এত অধৈর্য কেন? এ কদিন শান্তিতে আছেন, উপভোগ করে নিন। সামনে পড়ে আছে গোটা জীবন, তখন রোজ চা- হাওয়া সব খাবেন। বুঝেছেন?
মনে মনে উবাচ ( এখন থেকেই জরু কা গুলাম বানানোর মতলব। নেহাত সুন্দরী, নইলে...)
- বেশ। তাই হোক।
- আচ্ছা এবার আসতে পারেন।
- নমস্কার।
No comments:
Post a Comment