Friday, August 18, 2017
ইচ্ছেডানা
টুবাইরা খুব বেড়াতে যায়। বছরে দুবার যাবেই যাবে। একবার ওই সেশান ব্রেকের সময়ে, মার্চ এপ্রিলে। ওটা ছোট ট্রিপ, দিন সাতেক ম্যাক্সিমাম। কাছে পিঠে কোথাও যাওয়া হয়। দ্বিতীয়টা হয় ডিসেম্বরে। শীতের ছুটিতে। একটু দূরে। কেদার বদ্রী দেরাদুন মুসৌরি হরিদ্বার গঙ্গোত্রী সিমলা কুলু মানালি থেকে শুরু করে দক্ষিণে মাদ্রাস কন্যাকুমারী ত্রিবান্দ্রম সব ঘোরে এই শীতের ছুটিতে। চার বছরে একবার বাবা অফিস থেকে এল টি সি পান, তাই সেই বেড়ানোগুলো আরো একটু বিলাসবহুল হয়। তেমনি, এইবারে ওরা যাবে আন্দামান। কলকাতা থেকে হয় প্লেনে নয় জাহাজে যেতে হয়। সাধারণত চেনা পরিচিতদের মধ্যে টুবাই শুনেছে যে এক পিঠ প্লেনে আর এক পিঠ জাহাজে চললে নাকি বেশী আনন্দ। অবশ্য টুবাইয়ের কপালে তা নেই। মায়ের সাথে হাওড়ায় মাসির বাড়ি যেতে গিয়ে একবার লঞ্চে উঠে যা কেলেঙ্কারি কাণ্ড ঘটিয়েছিল, ওই ১৫ মিনিটের জার্নিতেই যা গা গুলনো অবস্থা, মা বাবা আর সেই রিস্ক নিতেই পারল না। তাই দুই পিঠই প্লেনের ব্যবস্থা। খরচা বেশী হবে, বাবার পকেট থেকে একটু বেশী বেরোবে, তাও সুস্থভাবে থাকতে পারবে। স্কুল ছুটির দিন ক্লাসমেটদের সাথে যখন আসন্ন ট্রিপের গল্প করছিল টুবাই, সে কি আনন্দ আর উত্তেজনা। প্রথম প্লেনে চড়বে। মেঘের মধ্যে দিয়ে ভেসে যাবে প্লেন। ঠিক যেমন টিভিতে দেখায়। কি মজাই না লাগছে ওর। প্লেনে উঠলেই এত এত লজেন্স আর চকলেট পাবে। মুঠো ভরে নিয়ে আসবে বন্ধুদের জন্য, মিতুলের জন্য; যেমনটা সই ঠাম্মা এনে দেয় যখনই ইউ এস এ থেকে আসে।
অবশেষে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। বোর্ডিং পাস হাতে নিয়ে প্লেনের ভিতরে ঢুকতেই একটা ছোট্ট করে লাফ দিল টুবাই। কাঁটায় কাঁটায় দশটায় ককপিট থেকে ভেসে এলো পাইলটের কণ্ঠস্বর। "Ladies and gentlemen, welcome to Air India. This is your captain speaking. Today we shall be flying non stop from Calcutta to Port Blair...."
আজ বারো বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু টুবাই এর মনের মধ্যে আজও সেই একই প্রথম উড়ানের উত্তেজনা। সেই একই এয়ার ইন্ডিয়া। সিকিউরিটি চেক পর্ব মিটিয়ে প্লেনে উঠল। তারপর কাঁটায় কাঁটায় দশটায় ককপিট থেকে ভেসে এলো টুবাই, ওরফে প্রিয়দর্শিনী মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠ। "Ladies and gentlemen. This is your captain Priyadarshini Mukherjee welcoming you to Air India flight AI 21 from Kolkata to New Delhi..."
দুই ঘণ্টা পরে নিজের প্রথম প্লেন চালানো ভালোয় ভালোয় উতরে সেই ছোটবেলার মতই একটা লাফ দিয়ে ককপিট থেকে বেরোল টুবাই। চোখে মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। দূরে দেখতে পেল আনন্দীকে, জীবনের প্রথম প্লেন চড়ার আনন্দে তখনও মশগুল।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment