Monday, August 14, 2017

মেঘদূত ৪



আজ ২৯শে শ্রাবণ। বসু মল্লিক বাড়িতে সকাল থেকে উৎসব। বাড়ির ছোট মেয়ের আজ বিয়ে। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবে এত বড় বাড়ি আজ লোকে লোকারণ্য। ছাদে ম্যাড়াপ বেঁধে রান্না খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। আকাশের অবস্থা ভালো না। ঘন কালো মেঘে ঢাকা, থেকে থেকে ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে। মানসী দেবীর চিন্তিত মুখ দেখে রজতাভ বাবু বললেন, "আরে মানু, বৃষ্টি দেখে চিন্তা করছ কেন? আমাদের পারু যেদিন জন্মেছিল, মনে নেই কি অসম্ভব বৃষ্টি হয়েছিল? তাও অকালের বৃষ্টি। নইলে ওই জানুয়ারি মাসে ওরকম তুমুল বৃষ্টি কল্পনা করা যায়? আজ ওর বিয়েতে বৃষ্টি যে হবেই, এ তো জানা কথাই।" তবুও যেন মানসী দেবীর কপালের ভাঁজ কমে না। "হ্যাঁ সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু চিন্তা হচ্ছে যে অতিথিরা কি করে আসবেন। বরযাত্রীরাই বা আসবেন কি করে। কত দূর থেকে আসা।"

"আহা তুমি চিন্তা করো না। দুর্গাপুর এমন কিছু দূর না। তোমায় বিয়ে করতে সেই মালদা গিয়েছিলাম। আজকাল সবই শর্টকাট। যাই হোক, ওদিকের কি অবস্থা? গায়ে হলুদ পর্ব মিটেছে? আমি একবার মণ্ডপ থেকে ঘুরে আসি। মাঠে জল জমল কি না দেখি। দরকার হলে বালির বস্তা পাততে হবে। তুমি খামোখা চিন্তা করো না। জামাইরা আছে। ঠিক সব ভালোয় ভালোয় মিটে যাবে।"

সন্ধ্যেবেলা রাজরানী রূপে পারুকে দেখে সকলের চোখ আর সরে না। তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে আসতে আসতে নিমন্ত্রিতরা একে একে এসেছে। প্রথম ব্যাচ খাওয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে। অথচ বরযাত্রীদের বাস আর বরের গাড়ীর তখনও দেখা নেই। অতিথিদের সামনে হাসি মুখ থাকলেও মনের ভিতরে একটা চিন্তা থেকেই যাচ্ছে কনের ও তার মা বাবার। ফটোগ্রাফারের আলোর ঝলকানিতে মেকি একটা হাসি দিতে হচ্ছেই, কিন্তু বুকের ভিতরে দুরুদুরু ভাব কমছেনা। একটা নতুন জীবন শুরু করতে চলেছে, বরাবরই বৃষ্টি বাদলা ভালো লাগেনা পারুর। কিরকম জানি নিজের বিয়েতে এরকম আবহাওয়া দেখে মুষড়ে পড়েছে তাই ও। দিদিদের সাথে বৌদিদের সাথে সেলফিতেও তাই কিরকম পানসে মুখের ছবি উঠেছে। দাদা তো দেখে একবার বকেও গেল। আটটা বাজতে যায়, এমন সময় হঠাৎ পারুর ফোনে whatsappএ একটা মেসেজ ঢুকল। " এই যে, আশা করছি আজকের এই দিনটা আর আসবে না। মানে, বিয়েটা মনে হয় একবারই করবে। তাই প্লীজ একটু হাসি মুখে থাকো। নইলে যে ভালো ডিপি পাবে না। সেলফিটা দিদিভাই পাঠাল, কি বাংলার পাঁচের মত করে আছ। আর হ্যাঁ, চিন্তা করো না, কোনদিনও লেট করিনা, আজ এই বৃষ্টিতে রাস্তায় খুব জ্যাম, আটকে আছি। তবে দেশপ্রিয় পৌঁছে গিয়েছি, এবার সোজা ফ্লাইওভার ধরে এক্ষুণি হাজির হচ্ছি। এবার তো হাসো।"

বিসমিল্লার শানাইয়ে আর ফিস ফ্রাইয়ের গন্ধে তখন বিয়ে বাড়ি জমজমাট।



No comments:

Post a Comment