সিকিউরিটি চেক-ইন এর পরে গেটের সামনেই চলে এলাম। হাতে এখনো ঘণ্টা খানেকের ওপর বাকি বোর্ডিঙের। জানলার ধারে খালি জায়গাটা দেখে তো লাফিয়ে লাফিয়ে এসে বসা গেল, কিন্তু এতক্ষণ কি করণীয়? সঙ্গে পাওয়ার ব্যাঙ্কটিও নেই যে একটু মোবাইলে গান শুনবে; এত ঝটপট আজকাল চার্জ শেষ হয়ে যায়। অগত্যা, লোক দেখা যাক! লোকজন দেখতে মন্দ লাগেনা আমার। বেশ একটা চেহারা দেখে বা আশে পাশের লোকেদের কথাবার্তার টুকরো যেইটুকু কানে ভেসে আসে, তার থেকে তাদের বিষয়ে নিজের মত করে গল্প বানিয়ে ফেলতে খুব মজা লাগে।
এই করতে করতে দিব্যি কাটছিল সময়। মাঝে মাঝে ডিসপ্লেবোর্ডটির দিকে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলাম। বোর্ডিং আরম্ভ হল কিনা দেখতে। এই ফাঁকে কখন দেখি আমার পাশের সীটটি তে এক অতি সুপুরুষ ব্যাক্তি এসে বসেছেন। সামনে তার ল্যাপটপে টার্মিনাল খোলা। নিজে লিনাক্স ব্যাবহার করি বলে উবুন্টুর চেনা ইন্টারফেস দেখে কীরকম একটা এক্সট্রা ভালোলাগা তৈরী হয়ে গেল। পরনে হাল্কা নীলের ওপর ভীষণ সরু সাদা স্ট্রাইপ ফুল হাটা শার্ট, চোখে রিমলেস চশমা। ফর্সা গালে একদিনের হাল্কা একটু সব্জেটে দাড়ির আভা। আমি তো পুরো ফ্ল্যাট! সমানে চান্স খুঁজছি দেখার যে উনি কোন ফ্লাইটে। আসলে ওই একই টাইমে (মিনিট কুড়ির ব্যাবধানে) পাশাপাশি গেট থেকে একটা চেন্নাই আর একটা বেঙ্গালুরুর প্লেন ছিল। আমার হাতে ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার চেন্নাই যাওয়ার বিমানের বোর্ডিং পাস। কপাল খুলল মিনিট দশেক পরে। দেখলাম ভাগ্যদেবী প্রসন্ন তখনো আমার ওপরে। ভদ্রলোকেরও একই বিমান, এমনকি কপাল ভাবুন আমার, আমার পাশেরই সীট।
যাক! দুই ঘণ্টার জার্নি আর যাই হোক, অন্তত ঝারি মেরে কাটানো যাবে। বাড়ি ছেড়ে আসার দুঃখও মুহূর্তের মধ্যে উড়ে গেল। বেশ একটা ফুরফুরে মন নিয়ে প্লেনে তো গিয়ে উঠলাম। "তিনি" আসতেই আমার আইল সীট থেকে বেরিয়ে তাঁকে ভিতরে বসতে দিলাম। সৌজন্যমূলক একটু হাসিও হাসলাম দুজনেই। ততক্ষণে তো বোধহয় মনে মনে প্রায় হানিমুনে কোথায় যাব দূরে থাক, fifth anniversaryটা সুইজারল্যান্ড না কাশ্মীর (আমার আসলে পাহাড় খুব প্রিয় কিনা!) কোথায় কাটাবো (ডিপেন্ড করছে ততদিনে আমি PhDটা সেরে কি করছি, তার ওপর) ভাবছি, এদিকে ওনার সামনে এক্কেবারে নির্লিপ্ত থাকার ভেক ধরে বসে আছি। পূর্ব experience থেকে বলতে পারি, ছেলেদের chase করে আজ অবধি successful হইনি, কাজেই একদম চুপচাপ থাকাটাই শ্রেয় মনে করলাম। তা টেক-অফ ও বেশ ঘটনাবিহীন ভাবেই হল। খাবারের ট্রের থেকে দই বড়াতে চামচ বসাতে যাব কি পাশ থেকে তার গলার আওয়াজ।
- কী যে ছাইপাঁশ খেতে দেয় এরা, সরকারী বিমান বলেই এরকম যা ইচ্ছে তাই।
ব্যাস! গেল আমার মাথাটি গরম হয়ে। দই বড়াকে খারাপ বলা আর তার ওপর সরকারী বিমান বলে খোঁটা দেওয়া... এ তো মেনে নেওয়া যায় না। সরকারী চাকুরে মা বাবার মেয়ে হয়ে এ হেন বদনাম নেব না। দিলাম চারটি কথা শুনিয়ে।
- কেন? এটা খারাপ কী? অন্তত পেট ভরার মত খাবার দেয়। কয়েক মাস আগে বম্বে গেলাম, এমনি অল্প ব্রেকফাস্ট দিল জেটে, পেটই ভরেনি আমার! আর সরকারী কিছু হলেই খারাপ? জানেন এয়ার ইন্ডিয়া আছে বলেই দেশের কত remote locations এখন connected by air?
তিনিও দমবার পাত্র নন।
- সে তো BSNLও claim করে নাকি কীসব "Connecting India" , তা চাইলেও ফোনর সিগনাল পান সবসময়, বলুন? নাকি আপনি ভরসা করে ওটির কানেকশন রাখেন?
ব্যাস। হল final nail in the coffin।
- শুনুন মশাই, এই BSNLএর connectionটি ছিল বলেই আমি ঘরে বসে web check-in করেছি। আপনার তো দেখছি kiosk checkin। প্রাইভেট কোম্পানির internet বুঝি service দেয়নি? আপনার জন্য খুব খারাপ লাগছে। বেচারা। কত কষ্ট করে টাকা খরচা করে আপনি আপনার অপছন্দের airlines এর টিকিট কেটে চললেন। যাই হোক।
বাকি সময়টুকু Kindleএ মন দিয়েই কাটালাম।
ঠিক এইভাবেই আমি আরেকটিও হতেও পারত প্রেমকাহিনীকে কেঁচিয়ে দিলাম।
No comments:
Post a Comment