Sunday, July 22, 2018

প্রথম স্কুল: কিশলয়

রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে বেডরুমে এলো অপর্ণা। বিছানায় ততক্ষনে অঘোরে ঘুমোচ্ছে টুকুস। পাশে শুয়ে অভিজিৎ ল্যাপটপ খুলে টুকটাক অফিসের কাজ সারছে। অপর্ণাকে দেখে মুখ তুলে আবার কাজে মন দিলো। আয়নার সামনে বসে সারাদিনের সাজগোজ তুলে তারপর হাতে মুখে ক্রিম মেখে চুল বেঁধে বিছানায় আসতে আসতে অন্তত আরো আধ ঘন্টার ধাক্কা। এই সময়টুকু অভিজিৎ আর অপর্ণার সারাদিনের যাবতীয় সাংসারিক আলোচনার সময়।
বিনুনি বাঁধতে বাঁধতে অপর্ণা বললো, "কাল কটার অ্যালার্ম দেব বলো তো?"
ল্যাপটপ থেকে মুখ না তুলেই অভিজিতের উত্তর এলো, "দেখো পৌঁছতে পৌঁছতে ওই ভোরবেলা বড়জোর কুড়ি মিনিট লাগবে গাড়িতে। কিন্তু কাল প্রথম দিন। তৈরি হতে একটু বেশি সময়ই লাগার কথা। ধরো এক দেড় ঘন্টা। মনে ওই তাহলে সোয়া পাঁচটার দিলেই হবে।"
"সেফ সাইড, পাঁচটা দিই। টুকুসের ঘুম ভাঙ্গে কখন দেখা যাক। মনে তো হয়না একবারে উঠবে বলে।"
"অনেকক্ষণ হলো ঘুমিয়ে পড়েছে। অসুবিধে হওয়ার না। তুমিও শুয়ে পড়ো। কাল থেকে নতুন যুদ্ধ শুরু।"
"যা বলেছ, যুদ্ধই বটে। কুড়ি বছর নিজের যুদ্ধ করে আবার কাল থেকে সেই একই গল্প। ইউনিট টেস্ট, গ্রেড, এসাইনমেন্ট উফ। এই শোনো, তুমি একবার লিস্ট মিলিয়ে দেখে নেবে প্লিজ সব ঠিকঠাক ব্যাগে গুছিয়েছি কি না। আমি চট করে রান্নাঘর থেকে আসছি। কালকের রান্নার কিছু বাকি রয়ে গেল কি দেখি।"
"ধ্যাৎ অপর্ণা, এত নার্ভাস কেন। সব ঠিক করেই তো এলে। আবার কেন?"
"না না। আরেকবার দেখে শিওর হতে ক্ষতি কী?"
ইতিমধ্যে ঘরে প্রবেশ ঘটলো সুকুমারী দেবীর। ও নাতবৌ, টুকুসবাবুর জামা প্যান্ট গুছিয়ে রেখেছো তো?"
"হ্যাঁ ঠামি, সব ঠিক রয়েছে। তুমি এত রাতে জেগে কেন? যাও যাও, শোও গিয়ে। বাবা দেখলে না কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। চলো ঘরে চলো।"
"তা তোমার শাশুড়ি থাকলে এইসব সেই করতো। সে নেই। কিন্তু দায়িত্বগুলো যে থেকে যায় মা। টুকুস বাবু স্কুল যাবে প্রথম, একটু সাজ সাজ রব পড়বে না হয়? ও তো খোকাও যখন প্রথম গেল স্কুল, কী হইহই কান্ড। তার ঠাকুরদা তো সেদিন কোর্টেই গেল না। নাতির স্কুলের বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো, পাছে নাতির কিছু দরকার লাগে। তোমার শাশুড়িরও কী হাপুস নয়নে কান্না সেদিন। বাবা রে। তুমি আবার কান্নাকাটি করো না যেন। ছেলেপুলে ঠিক মানুষ হবে।"
"আরে না না। আমি কাঁদবো না। চলো এবার ঘরে চলে। অনেকটা রাত হয়েছে। কাল ভোর ভোর উঠবে তো।"

ঘরের আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়েছে অভিজিৎ আর অপর্ণা, বেশ কিছুক্ষণ হলো। তবে অন্যান্য দিনের মতো দুজনের কেউই নাক ডাকছেনা এখনো। চোখ মেলে কখনো সিলিংয়ের দিকে কখনো একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে বারবার। ওদের ছোট্ট সোনার কাল থেকে প্রথম স্কুলে যাওয়া। শুরু হবে জীবনভরের লম্বা সফর। সে পথ না জানি কেমন হবে। কোন বাঁকে তার কী থাকে, কে জানে। আর এ সব কিছুর মধ্যে এক্কেবারে কিচ্ছু তোয়াক্কা না করে, মুখে এক অনাবিল হাসি মেখে টুকুস বাবু আরামের ঘুম ঘুমোচ্ছে। এক হাত মায়ের হাতে আরেক হাত  বাবার হাতে রেখে।

No comments:

Post a Comment