Thursday, July 19, 2018

বোলে রে পাপিহারা...

আগামীকাল রুমুনের বিয়ে। সারা বাড়ি আলোয় ঝলমল করছে। আত্মীয় পরিজন, বন্ধু বান্ধবের ভিড়। হই হল্লা, গল্প, আড্ডা, নাচ গান, গুলতানি চলছে। একেক ঘরে একেক রকম। রুমুনের ঘরে ওর সমস্ত পিসতুতো মাসতুতো মামাতো খুড়তুতো জেঠতুতো ভাই বোন দাদা বৌদি দিদি জামাইবাবুদের ভিড়। আড্ডার বিষয় মূলত আসন্ন দাম্পত্য জীবনের টিপস অ্যান্ড ট্রিক্স। সাথে মাঝে মাঝে মা মাসিদের প্রবেশ, এই গয়না, ওই শাড়ি নিয়ে এসে মতামত নেওয়া ও দেওয়া। মধ্যে মধ্যে ঘরে ঘরে হাজির হচ্ছে গরম গরম ফিস ফ্রাই পেস্ট্রি কফি কোল্ড ড্রিঙ্ক। ছাদের এক কোণে কাকা দাদাদের একটা জটলা, সেখানে চলছে বিয়ার উইস্কি সহযোগে "ডি-ডে"র জন্য শেষ মুহূর্তের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। সাউন্ড বক্সে একের পর এক বেজে চলেছে অরিজিত সিং, আতিফ আসলাম, বাদশা, মিকা সিং ইত্যাদি। বাচ্চাগুলো তালে তালে নেচে বেড়াচ্ছে। সব মিলিয়ে একেবারে যাকে বলে বিয়েবাড়ি জমজমাট।
সন্ধ্যে সাতটার দিকে মামাতো বোন মাম্পি নীচ থেকে একটু হাঁফাতে হাঁফাতে এলো রুমুনের ঘরে।
"দিদিয়া, তোর জন্য একটা চিঠি এসেছে।" মাম্পির হাত থেকে গোলাপি খামটা নিলো রুমুন। ওর নাম জ্বল জ্বল করছে ওপরে। কিন্তু প্রেরকের কোন নাম নেই।
"কে দিল রে?" অবাক হয়েই রুমুন জিজ্ঞেস করল।
"ক্যুরিয়ারের একটা ছেলে এসে দিয়ে গেল তো।"
একটু অবাক আর বেশ অনেকটাই কৌতূহলী হয়ে রুমুন খামটা সযত্নে ছিঁড়ল। ভিতর থেকে বেরোল The Zen Ladakh হোটেলের তিন দিন দুই রাত্রির ভাউচার। সাথে একটা ছোট্ট চিরকুট। বহু বছরের পরিচিত হাতের লেখায় লেখা, "তোর হানিমুনে লাদাখ যাওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ হোক। ভালোবাসা সহ..."।
গোটা সন্ধ্যেটা ছটফট করতে করতে রাত্রের দিকে ঘর ফাঁকা পেয়ে রুমুন মোবাইলে ডায়াল করল প্রিয় বন্ধু অগ্নিকে। অপর প্রান্তে , "পেয়েছিস তাহলে?"
"তোর মনে আছে?"
"ক্লাস টেন ফেয়ারওয়েল। সায়নদের ছাদে। স্ল্যাম বুক। নীল জেল পেন দিয়ে লিখেছিলি। সযত্নে রয়েছে।"


হঠাৎ কেন কে জানে, বুকের ভিতরটায় একটা হাল্কা মোচড় দিয়ে উঠল রুমুনের।
রাত জাগা পাখিটি তখনও একটানা গেয়ে চলেছে।


"बोले रे पपीहरा
नित मन तरसे, नित मन प्यासा
नित मन तरसे, नित मन प्यासा
बोले रे पपीहरा..."

   

No comments:

Post a Comment