"কী রে তখন থেকে অমন হাঁ করে তাকিয়ে আছিস কেন? কী বলবি বল। নয়তো ফোট। এরকম তাকিয়ে থাকলে না অস্বস্তি হয়।" Quora অ্যাপ থেকে মুখ না তুলেই অগ্নি বললো রুমুনকে। "আমি তাকিয়ে আছি বুঝলি কী করে?" ঝাঁঝিয়ে উঠলো রুমুন।
"বুঝতেই পাচ্ছি মেজাজ তোর তিরিক্ষি হয়েছে। কিন্তু তা বলে বুদ্ধিশুদ্ধি যে মা গঙ্গার ভোগে চলে যাবে, এমনটা বুঝিনি রে। ডাইরেক্ট না দেখলেও আড়চোখে দেখা যায় রে হাঁদা।" জিভ দিয়ে একটা চুক চুক শব্দ করে অগ্নি বললো। প্রসঙ্গত এখনো মুখ না তুলেই।
"অগ্নি!! তখন থেকে আমি দাঁড়িয়ে আছি দেখছিস আর তাও ফোন থেকে চোখ সরাচ্ছিসনা। ভালো লাগছেনা কিন্তু আমার।" এবারে বেশ রাগতস্বরেই কথাগুলো বললো রুমুন।
"তোর যা বলার বল না। আমি তো শুনছি।"
"আমি যখন কথা বলবো, আই নিড ফুল অ্যাটেনশন। বুঝেছিস?"
"আরে আমি ফুল অ্যাটেনশনই দিচ্ছি রে। জাস্ট দ্যাট এখানে এলন মাস্ক লাইভ উত্তর দিচ্ছেন লোকজনের। আমি তাই সেগুলি দেখছি। কিন্তু চাপ নিসনা। আমি শুনছিলাম।"
"না। আই ওয়ান্ট আই কন্ট্যাক্ট। আমি অপেক্ষা করছি। তুই শেষ কর যা করছিস। তারপর বলব কথা। আমার এরকম রোবটের সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা।"
"উফ, জ্বালালি। তুই জানিস আমি কীসে গলব। ঠিক সেই ওষুধটাই ব্যবহার করবি। বল।" ফোনটা হাত থেকে নামিয়ে পাশে রাখতে রাখতে কিঞ্চিৎ বিরক্ত মুখ করে অগ্নি বললো।
"শোন, আমার আবার ব্রেকাপ হয়েছে আজ। আমার খুব মন খারাপ।"
"এ আর নতুন কথা কী? তা এবারে জানি কে? রণজয়? না সোহেল?"
"সোমক। উফ। সোহেল ছিল লাস্ট ডিসেম্বরে। আর রণজয় আগের পুজোয়। তুই না!!"
"বাবা রে বাবা। তোর যদি একটার পর একটা রিলেশন হয়, আমি অত ট্র্যাক রাখি কী করে বল তো? সারাক্ষণ কি লেজার মেন্টেন করবো নাকি? লেখাপড়া নেই আমার?"
"ঢং করিসনা তো। নিজে তো আজ অবধি ওই অপর্ণাকে প্রোপোজ করে উঠতে পারলিনা। আবার আমায় খোঁটা দিচ্ছে। হুহ।"
"শোন, অপর্ণা আমার মিউজ। শি ইজ ইন এ রিলেশন উইদ অপূর্ব। আমি এমন রব নে বনা দি জোড়িকে ভেঙে পাপ করি নাকি।"
"নাকি রব নে বনা দি জোড়ি। হু।"
"ওসব তুই বুঝবি না। ট্যাঁস ট্যাঁস খামেল স্কুলে পড়লে বাংলা সিনেমা উপন্যাস আর জানবি কী করে।"
"ও আমার সবজান্তা। শোন আমিও কম পড়িনি বাংলা সাহিত্য। চর্যাপদ টু মঙ্গলকাব্য, রবীন্দ্রনাথ থেকে জীবনানন্দ, সব জানি। "
"জীবনানন্দ জানিস বুঝি?"
"অবশ্যই। নাটোরের বনলতা সেন। বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি।"
"হুম। বুঝলাম। তা বল তো দেখি, ভালোবাসা সবই খায়। শুকনো পাতা। হেমন্তের এঁটো খড়। বাগানের কোণে পড়ে থাকা রুগ্ন শিকড়। সবই খায়। শুধু খায় না আমাকে। এবং প্রতিদিন রোজ হাঁ করে আমারই সম্মুখে বসে থাকে। কার লেখা?"
"জানিনা।"
"শক্তি চট্টোপাধ্যায়।"
"বুঝলাম। তা আমি এসেছি ব্রেকআপের কষ্ট নিয়ে। উনি আমার সুনীল শক্তি জ্ঞান দিচ্ছেন।"
"শোন, আমার মতো জীবনে একটাও প্রেম না করা মানুষ আর কী বলবে তোকে? আমার দৌড় ওই সাহিত্য অবধি। সেখান থেকে টুকটাক যা খুশি বলতে পারি অল্পবিস্তর। প্র্যাকটিক্যাল নলেজ কোথায় পাব?"
"তা বলে আমার মন খারাপের দায়িত্ব নিবি না?"
"তুই সোমকের সাথে যখন ডেটে গিয়ে হুল্লোড় করলি, এন্তার মজা করলি, আর আমি বাড়ি বসে তখন জ্বরে কাঁপছি, তখন তুই কি এসে আমার দায়িত্ব নিয়েছিলি? নিসনি তো? তাহলে তুই কার না করে সাথে গিয়ে ব্রেকাপ করবি। তার দায় আমি নেব কেন?"
"তুই এরকম বলতে পারলি তো অগ্নি?" গলা কেঁপে গেল রুমুনের। এই না কেঁদে ফেলে। দিনটাই খারাপ। একে ব্রেকাপ। তারপর প্রিয়বন্ধুর এমন নিস্পৃহ হাবভাব।
"হ্যাঁ পারলাম।"
"সেই। বলবি তো। আমায় তো আর ভালোবাসিসনা। অপর্ণা থাকলে আমার জায়গায় কী করতিস, আমি সব জানি।"
"বাহ। এই তো। আমার সবজান্তা ম্যাডাম।"
"তুই চুপ কর। আমার বয়ফ্রেন্ডগুলো একটার পর একটা আমার সাথে ব্রেকাপ করে দেয়। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তুইও আমার কথা ভাবিসনা। আমায় কেউ ভালোবাসেনা। হুহ। "
"নাটক করা থামলে বলিস। আমি ততক্ষণ এলন মাস্ক কী বলছে পড়ি।"
"হ্যাঁ তাই তো করবি। কোথায় আমায় সান্ত্বনা দিবি, তা না। উনি এলন মাস্ক ফলো করছেন। ফেলে দেব টান মেরে ফোনটা এই বলে দিলাম। তাকা আমার দিকে।"
"উফ আবার কী?"
"বল, আমি খুব আনলাভেবল, না?"
"এই দেখ, কাঁদছিস কেন? এই যে মেয়েদের কথা নেই বার্তা নেই, কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়। কী মুস্কিল!"
"বল না তুই। আমার কেন কেউ ভালোবাসে না? এই নিয়ে চার চারটে ব্রেকাপ হয়ে গেল গত তিন বছরে। দোষটা নিশ্চয়ই আমার। কই আর তো কারুর এরকম হয়না।"
"আরে ধুর। ওই সবকটা ছেলে ভুলভাল। তাই টেকেনি। তুই ভালো মেয়ে। তোকে কেন কেউ ভালোবাসবে না? ভালো যোগ্য ছেলেরা নিশ্চয়ই তোকে মাথায় করে রাখবে।"
"নমুনা দেখে তো উল্টে যাচ্ছি।"
"আরে হ্যাপেন্স। ওগুলো সব রং ডিসিশনস। তুই কদিন চুপচাপ শান্ত হয়ে থাক তো। এত ঝপাং ঝপাং করে রিলেশনে যাস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ, একটা কথা। নিজেকে নিয়ে ভুলভাল ভাববি না। তুই এতটাই ভালো মেয়ে যে যে কেউ বর্তে যাবে তোকে পেলে। যারা তোকে পেয়েও হারায় নিজেদের দোষে, তারা সব একেকটি ড্যাশ।"
"শিয়র যে কেউ পেলে বর্তে যাবে?"
"অবশ্যই।"
"তুইও?"
"এখানে আমি কোত্থেকে এলাম আবার?"
"যা জিজ্ঞেস করছি, উত্তর দে।"
"হুম। মানে ইয়ে।"
"কী ইয়ে? হবি কি হবি না বল?"
"মানে হবো। কিন্তু ... "
"গাধা তো এতদিন মুখ ফুটে বলতে কী হয়েছিল? ছাগল একটা।"
"কী বলব?
"বলবি যে ভালোবাসিস।"
"সিঙ্গল ছিলি কতদিন?"
"কম করে হলেও ছয় মাস মিলিয়ে মিশিয়ে।"
"তা ছাড়া আমি চাইনি ওইসব করে বন্ধুত্বটা নষ্ট করতে।"
"ইডিয়ট। এই নাকি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড? এইটুকুও বুঝলিনা বুদ্ধু যে এতে আমাদের বন্ধুত্ব স্ট্রং হতো।"
"আর বাই চান্স ঘেঁটে গেলে?"
"প্রেম যেত। বন্ধুত্ব কখনোই না।"
"ওরম মনে হয়।"
"বড় এসেছে আমার সবজান্তা সর্বজ্ঞানী।"
"তা হলে?"
"প্রোপোজ কর বিফোর আই সে ইয়েস টু এনিবডি এলস। লম্বা লাইন আছে।"
"আমি প্রিভিলেজড? বাবা। এই দেখ এই বললাম হুটহাট প্রেমে পড়িস না। তাও আবার প্রোপোজ করাচ্ছিস। পারিসও বটে তুই।"
"১ থেকে ১০ গুনবো। বলার হলে বল। নইলে যা পালা। ১ ২ ৩ ৪..."
"হয়েছে হয়েছে। চন্দ্রবিন্দুকে কোট করি দেবী। তোমাকে করবো আদর আত্মি যত্নম। চক্ষে এস অন্ধ হোক, কক্ষে এস নিন্দে হোক। বক্ষে এস গীতগোবিন্দ ভুলিয়া।"
"ত্বমাসি মম জীবনম?"
গীতগোবিন্দ ভুলে ততক্ষণে দুই নব্য কপোত কপোতী গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ। আরে বকবকানিও থামাতে হবে, নাকি?
No comments:
Post a Comment