মেঘলা আকাশ। মৃদুমন্দ বাতাস। আর পাঁচটা আষাঢ়ের সকালের সাথে তেমনভাবে কোন পার্থক্যই নেই। দাদা স্নান করতে যাচ্ছে, বৌদি পিছন পিছন গামছা নিয়ে ছুটছে। মা হড়বড় করতে করতে গ্যাসে তরকারি গরম করছে। বাবা মাঝে মধ্যেই চায়ের জন্য হাঁক দিচ্ছে। টুকুন টলোমলো পায়ে এ ঘর ও ঘর করছে, ওর পিছনে ছায়াদি ঘুরছে, হাতে দুধ রুটির বাটি। বাইরে মিনিবাসের স্ট্যান্ড থেকে মাতব্বর গোছের লোকটার হম্বিতম্বি শোনা যাচ্ছে।
এইসব ব্যস্ততার মাঝে আজ রুমুনেরও ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড উৎসাহ। অগ্নি গতকাল রাত্রে ফিরছে হায়দ্রাবাদ থেকে। গিয়েছিল কলেজ থেকে ইন্টার্নশিপে। আজ দুপুরে দুজনের দেখা করার কথা। কমিটেড হওয়ার পর এই প্রথম। এর আগেও অনেকবার মিউচুয়াল বন্ধদের সাথে একসাথে ঘুরে বেরিয়েছে। কিন্তু এইবারের ব্যাপারটা অন্যরকম। কিছুদিন whatsappএ রাত জেগে গল্প করতে করতে আর তারপর ফোনে আড্ডা। খেলা রাজনীতি সিনেমা লেখাপড়া থেকে শুরু হয়ে কখন যে একে অপরের মনের খুব কাছে এসে গিয়েছিল, নিজেরাই বুঝতে পারেনি। তারপর একদিন কী করে কী হয়ে গেল। অগ্নি হুঠ করে প্রোপোজ করল রুমুনকে। রুমুনও বেশী সময় না নিয়ে হ্যাঁ বলে দিল। এইবারের দেখাটা তাই খুব স্পেশাল।
বুকের ভিতরটা ধুকপুক ধুকপুক করছে। কলেজে ফ্রেশারসদের নিয়ে অনুষ্ঠান আছে, এই গল্প দিয়ে বৌদির থেকে ডোকরার একটা দারুণ সেট নিয়েছে। মায়ের কমলা ঢাকাইয়ের সাথে মানাবে ভালো। আলতো করে কালো কাজল নয়না সাজছে ও। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন টিপ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষাও চলল খানিক। বেশ লাগছে কিন্তু দেখতে। আলমারি খুলে পছন্দসই সুগন্ধী বের করে লাগাতে যাবে, এমন সময় আকাশ ভেঙ্গে নামলো বৃষ্টি। যাহ, গেল তো! এবার এই জল কাদা ঠেঙ্গিয়ে যাওয়া। সাজগোজের একশা হয়ে যাবে। ব্যাজার মুখে রুমুন মায়ের ডাকে সারা দিয়ে খেতে বসল।
"কী রে, মুখ ভেটকে কেন? দারুণ সাজটা হাসির অভাবে ইনকমপ্লিট লাগছে যে।" বৌদি ফুট কাটল।
"এই বৃষ্টিতে এমনিই সাজের বারোটা বেজে গেলো। তাই মন খারাপ।" রুমুন আস্তে করে বলল।
বেশ কয়েকবার এর মধ্যে ফোনে অগ্নির মেসেজ ঢুকেছে। "সাজগোজ করে আসছিস নাকি খুব?" "Can't wait to see you", "কখন আসছিস?আমি কিন্তু রওনা দিয়ে ফেলেছি" গোছের। কানুর বাঁশি বাজায়, রাইয়ের যে মন আর টিকছেনা।
"বোনটি আমার, মন খারাপ করে না। আমি ড্রপ করে দেবো তোকে কলেজে", দাদার কথায় যেন এক রাশ স্বস্তি পায় রুমুন। শেষবারের মতো আয়নায় নিজেকে জরিপ করে সন্তুষ্ট হয়ে রুমুন উঠল দাদার গাড়িতে। রেডিও মিরচি চলছে। পরপর বৃষ্টির গানের টিজার।
"তা, কোথায় নামাবো তোকে? এত সেজে যে কলেজ যাচ্ছিস না, সেটা অন্তত আমায় বলতে হবেনা!" মুচকি হেসে দাদা ওর দিকে তাকালো। রুমুন ব্লাশ করে একশা।
"ওই, এক্সাইডের মোড়ে নামালেই হবে। ওখানেই ও আসছে।"
"বেশ বেশ। বোন আমার বড় হয়ে গেলো। তা, "ও"টির সাথে কবে আলাপ করাবি?"
"করাবো রে। আর কদিন যাক।"
"অল দা বেস্ট!"
রুমুনের মুখে এক রাশ হাসি। ফোনে মেসেজ এলো, "আমি পৌঁছে গিয়েছি। ঝটপট আয়।"
আর রেডিওতে মীরের দরাজ গলায় তখন, "আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর থেকে এক্ষুনি খবর পেলাম। মেঘ কাটতে শুরু করে দিয়েছে। আর খানিকক্ষণের মধ্যেই কলকাতার আকাশে ঝলমল করবে সূর্য। ফিরছি একটা ব্রেকের পর। ব্রেকের ওপারে আপনার জন্য রয়েছে পরপর পাঁচটা গান। মিরচি পাঁচফোড়ন। যার প্রথম গান, বং কানেকশনের সাউন্ডট্র্যাক থেকে শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে।"
No comments:
Post a Comment