"কীরে, তুই আসবি কখন, স্ক্রিপ্ট শোনাবি বললি। আমি কখন থেকে বসে আছি বল তো?"
অম্বরীশদার মেসেজ ঢুকল ফোনে। কব্জি ঘুরিয়ে দেখলাম সাড়ে বারোটা বাজে। ইশ, বিচ্ছিরি রকমের দেরি হয়ে গিয়েছে। বলেছিলাম সাড়ে এগারোটা থেকে পৌনে বারোটায় পৌঁছে যাব। আসলে উবার শেয়ারটা এত দেরি করল, তার উপর ঘুরে ঘুরে চলছে। দাদার কাছে বকা না খাই। যা কড়া ধাঁচের মানুষ। একটু ভয় ভয় মুখ নিয়েই পৌনে একটা নাগাদ যখন পরিচালক অম্বরীশ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে ঢুকলাম, ঘরে শুনলাম মৃদুস্বরে দেবব্রত বিশ্বাস "আষাঢ় কোথা হতে আজ এলি" গাইছেন। আর সাথে গুনগুন করছে দাদা।
"সরি দাদা, ক্যাব পেতে প্রব্লেম হচ্ছিল। ভেরি সরি।"
হাসিমুখে অম্বরীশদা ডান হাত তুলে আশ্বস্ত করে বসতে বলল, "নো প্রব্লেম। বোস। আসলে তোদের বৌদি একটু বেরিয়েছে। ও ফিরলে আমাদের একসাথে শপিং করতে যাওয়ার কথা। মিমির জন্মদিন সামনের সপ্তাহে। ওর জন্য গিফট কিনতে হবে। তাই আর কী তাড়াহুড়ো করছি।"
"বেশী সময় লাগবেনা দাদা। আমি জাস্ট স্ক্রিপ্ট ডিসকাস করবো। ছোট্ট স্ক্রিপ্ট।"
"হ্যাঁ, বল।"
"দেখো আমি একটা মিনিট দুই তিনের কিছু করতে চাই। টপিক হল "আকস্মিক"। ভাবলাম আকস্মিক মৃত্যুর চেয়ে বেশী তো আকস্মিক কিছু হয় না। তাই ওরকম কিছু করবো ভাবছিলাম। কিন্তু এগোতে পারছিনা।"
"কীরকম ভেবেছিস, বল?"
"ধরো একটা মেয়ে, ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। হাসিখুশি। হঠাৎ পিছন থেকে একটা বাস এসে ধাক্কা মেরে দিয়ে গেলো।"
"এটা তো কলকাতা পুলিশের ক্যাম্পেন হয়ে গেলো। Where is the drama? নাটকীয়তা চাই রে।"
"তাও ঠিক। একটু কিছু সাজেস্ট করো।"
"ব্যাপারটা পুরো ডায়লগবিহীন হবে। শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ওপর চলবে। তাই পাওারফুল কাউকে নিবি।"
"ঠিক আছে। বলো তুমি।"
"ধর, দেখা একটা বছর কুড়ি বাইশের মেয়ে। বেশ সকাল সকাল সাজগোজ করে তৈরি হচ্ছে। কোথাও একটা যাবে বলে। তখন পিছনে ওরকম প্লেজ্যান্ট ম্যুজিক দিবি। তারপর দেখা ওরকমই হাসি মুখে কানে ইয়ারফোন লাগিয়েছে। সাইকেল চেপে কোথাও যাচ্ছে। কানে গানের সাথে সাথে নিজেও মোটামুটি বেসুরো গলায় গাইছে। এইবার বেসুরোটা কীভাবে বোঝাবি, সেটা ভাবতে হবে। ওর গলা শোনাবি, নাকি ব্যাকগ্রাউন্ডটাই ওরকম কিছু করবি। তারপর দেখা খানিকক্ষণ ও সাইকেল চালাচ্ছে। শট নিবি এমন, সামনে লম্বা রাস্তা। সুদৃশ্য। বেশ একটা মোনোটনি আসব আসব করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা বিকট শব্দ। স্ক্রিন ব্ল্যাংক। তারপর ব্ল্যাক অ্যান্ড ওয়াইট। কালো পিচঢালা রাস্তা। সাইকেল উল্টে আছে। মেয়েটা মুখ থুবরে পড়ে। আস্তে আস্তে লাল রক্তের সরু রেখা ক্রমশ মোটা হচ্ছে। ক্যামেরা জুম আউট করবি। ব্যস শেষ।"
"দারুণ! থ্যাঙ্ক ইউ অম্বরীশদা। কী সুন্দর বলে দিলে।"
"তোর কপাল ভালো, তোর বৌদি ফেরার আগেই হয়ে গেলো। নইলে বেরোতে হত আমায় মাঝপথে।"
জলতরঙ্গের মিষ্টি সুরে আমাদের কথা থামল। অম্বরীশদার ল্যান্ডফোনের রিংটোন।
কলার আইডিতে চেনা নম্বর দেখে মুখে খেলে গেলো এক টুকরো হাসি।
"ওই দেখ, তোর বৌদির ফোন। এই এখন বেরোতে হবে।"
অম্বরীশদা ফোনটা হাতে নিয়ে বলল, "হ্যাঁ মিনু, তুমি রেডি? আমি বেরোই?"
ওই দিকে কী যে শুনল, দেখলাম দাদার ভুরু কুঁচকে গেলো।
"কে বলছেন? আপনার কাছে এই ফোন কোথা থেকে এলো?"
খানিক শোনার পর, ধপ করে দাদা সোফায় বসে পড়ল।
"কী হয়েছে দাদা? কার ফোন?"
ফ্যালফ্যাল করে দাদা তখন আমার দিকে তাকিয়ে।
"তোর বৌদি..."
"কী হয়েছে বৌদির?"
দাদা কিছুই বলছেনা। আমি ভয়ে ভয়ে ফোনটা কানে দিলাম। ও প্রান্তে তখন ডায়লিং টোন...
*সমাপ্ত*
No comments:
Post a Comment