Tuesday, June 26, 2018

জুতো উপাখ্যান

জুতো উপাখ্যান
বা
Size matters
পরম করুণাময় ঈশ্বর যখন আমার শারীরিক গঠনের ব্লুপ্রিন্ট সৃষ্টি করেন, তখন অন্যমনস্কতাবশত (কে জানে কী করছিলেন। তখন তো ফুটবল বিশ্বকাপও শুরু হয়নি। তিন মাস বাকি ছিল। হতে পারে পয়লা বৈশাখ হালখাতা এসবের সাইড এফেক্ট চলছিল) আমার পা দুটিকে অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকার বানান। যার ফলে এই তিন দশক পেরিয়ে এসেও আমায় বেশিরভাগ সময়ই কিডস সেকশন থেকে লাল নীল আলো জ্বলা প্যাঁ পো শব্দ করা জুতোর ভিড় থেকে এক কোণে বসে থাকা নিতান্ত শান্ত শিষ্ট সুশীলা লাল কালো বা গোলাপী নীল এক পাটি কিটো কিনতে হয়। আবার এই তথাকথিত (জনশ্রুতি) "মা লক্ষ্মীর মতো পা দুটি" আবার বেশ সেনসিটিভ। সব রকম জুতো চলেনা। হিল পরতে গেলে গেলো গেলো রব ওঠে। আর ফ্ল্যাট পরলেও সব চলেনা। স্পেসিফিক মডেল চাইই। কী জেদ। না পেলে পায়ে কড়া পড়ে একশা কান্ড।
এ হেন মাস্টারপিস পায়ের মাপে মানানসই জুতো কেনা তাই আমার কাছে বিরাট ঝক্কির কথা। সচরাচর আমি অনলাইন শপিং বেশি পছন্দ করলেও জুতোর ব্যাপারে অনেকদিন অবধি সাহস পাইনি। তারপর একদিন কী মনে হতে (আসলে সাংঘাতিক সস্তা অফারের মোহ) প্যুমার একটি স্নিকার কিনলাম। প্রথম দুদিন খুব আনন্দ পেলাম। তৃতীয় দিন থেকে আর মাটিতে পা পড়ে না। সে প্যুমার গর্বে না। সাংঘাতিক plantar fasciitis। বাবা রে, সে কী ব্যথা মা গো মা। ততদিনে কঠিন সংকল্প করে ফেলেছি। না। আর অনলাইনে জুতো কিনবো না। অবশ্য ইতিমধ্যে আরেক পিস বাটার walking shoe এসে গিয়েছে। সেটি কিনেছিলাম এই ভরসায় যে যাক, অন্তত এই এক মডেল পরি, সাইজ জানি। অসুবিধে হবেনা। কপাল খারাপ থাকলে কী আর করা। সে জুতোও পায়ে সইলো না। অজ্ঞাত কারণে।
বহু মাস অনলাইন তাই কিনিনি। যেটুকু দরকার পড়েছে, দোকানে গিয়ে কষ্টে সিষ্টে কিনেছি। মানে ডিজাইন নিয়ে আপোষ করেছি। তা যাই হোক। হালে ফ্যাশন আর স্টাইল নিয়ে বেশ ওয়াকিবহাল হয়েছি। সাজুগুজুতে নজর পড়েছে। ইচ্ছে হলো জুতোর কিছু ব্যবস্থা করি। ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙ্গে। আমি সব কঠোর কঠিন পণ ভেঙে সেই আবার আমাজনে লগিন করলাম। এবং কপাল কপাল। ঠিক সাইজ তিনে সুন্দর কালো ছোটখাটো মিষ্টি দেখতে একটা হিল জুতো পেয়ে গেলাম। দুদিনে ডেলিভারি পেলাম। পায়ে মাপে ঠিক হলো। কিন্তু ডিফেক্টিভ প্রোডাক্ট, রিটার্ন করলাম। ভাবলাম যাহ, আবার সেই অনলাইনের বাধা। নাহ। এবার দোকানেই যাবো। বড় সংকল্প করে স্টোরে গেলাম। এবং স্বাভাবিকভাবেই সাইজে পেলাম না। এদিকে জুতো খুব দরকার। (জুতোর অভাবে কিনা লাউঞ্জ বারের প্ল্যান ক্যানসেল করে দিয়েছিলাম!) অগত্যা আবার বাবা আমাজন ভরসা। যাই হোক, শেষমেশ এটার ডেলিভারি পেলাম। নিজের ওপর বেশ একটা ইয়ে ইয়ে ভাব এলো। ওভার কনফিডেন্স। সাক্সেসফুলি জুতো কেনা চারটিখানি কথা না।
ওভার কনফিডেন্ট হয়ে এবার ফ্ল্যাট জুতো কিনবার বিশেষ শখ হলো। এবং তাও woodland এর। এদিকে ওই ব্র্যান্ডের জুতো সাত জন্মে পরিনি। মাপ জানিনা। অগত্যা আবার অফলাইন ভরসা। তা গেলাম জুতো কিনতে। পথে আগে বাটার দোকান পেলাম। woodland এর চেয়ে সস্তা হবে ভেবে অনেক ঝাড়াই বাছাই করে এক খান নিলাম। আমার সাইজ তিন (হাওয়াই চটি এক সাইজেরও পরি অবশ্য)। তিন নম্বর সাইজের জুতো পায়ে ফিট করলো। তবে একটু চাপ। চার নিলাম। হালকা লুজ। দোকানদার বললো তিন নিতে। নাকি ছেড়ে যাবে। আমিও নাচতে নাচতে কিনে এলাম। বিকেলে পরে হাঁটতে বেরিয়ে পায়ে ফোস্কা পড়ে যা তা অবস্থা। এক সপ্তাহ পর আবার কাল পায়ে দিলাম। সেই এক অবস্থা। জানিনা এটা আদৌ পরা হবে কি না। এদিকে এটির খুব দরকার। হয়তো সেই woodland এই যেতে হবে। মাঝখান থেকে টাকা বাঁচাতে গিয়ে বাড়তি খরচ হলো।
এখন মনে হচ্ছে ঠিকঠাক সাইজ বড্ড জরুরি।
আর হ্যাঁ, সস্তার তিন অবস্থা।
এখন আবার আমার জুতো কেনায় ভীতি ফিরে এসেছে।

No comments:

Post a Comment