Monday, July 23, 2018

প্রথম বাড়ি ছাড়া অনিকেত

আজ তিন দিন হল চেন্নাই এসেছি। আড়াই মাসের জন্য সামার প্রোজেক্টে। থাকছি একটা পিজি অ্যাকোমোডেশনে। বাবা এসেছিল আমায় পৌঁছোতে, এই কদিন ছিল অপর একটি পিজিতে।  আমি থাকতাম সারাদিন ল্যাবে, বিকেল হতে বাবা ক্যাম্পাসে চলে আসত। আমরা ঘোরাঘুরি করে, অল্প খাওয়া দাওয়া সেরে ফিরে যেতাম নিজের নিজের পিজিতে। মানে, বাবা আমায় পৌঁছে দিয়ে তারপর নিজে ফিরত। আজও তাই হল। তবে একটাই পার্থক্য। আজ রাত্রেই বাবার ট্রেন। ফিরে যাচ্ছে কলকাতা। এরপর দীর্ঘ আড়াই মাস আমি পড়ে থাকব এখানে একা। উফ, ভাবতেই চোখ ফেটে জল এসে যাচ্ছে। একেই বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় মাকে ফেলে রেখে আসার জন্য কী মন খারাপই না করছিল। ভাগ্যিস দুপুরবেলা ছিল। চোখের জল লুকোতে সানগ্লাস পরে নিয়েছিলাম। কারণ আমায় কাঁদতে দেখলে যে মায়েরও মন খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন, সন্ধ্যেবেলা। কী করে চোখের জল লুকোই? দুই চোখের কোণা চিকচিক করছে আমার জলে। বাবারও মুখ চুন। জানি দুজনের মনের ভিতরেই চলছে জোর সংগ্রাম। এই প্রথম যে বাবা আমায় অচেনা জায়গায় একা ফেলে রেখে যাচ্ছে। উফ, কী মারাত্মক রকমের মন খারাপ করা। অনেক কষ্টে না কেঁদে বাবাকে টাটা করে ঘরে এলাম। আর তারপর আলো নিভিয়ে হাপুস নয়নে কেঁদেই চললাম। বাবা ফোন করেছিল খানিক পরে। কথা বলব কী, তখনও যে কেঁদেই চলেছি। এদিকে বাবার সামনে ব্রেভ গার্লের মুখোশটা ঠিক রাখতেই হবে। তাই কোনোমতে হুম হ্যাঁ করে কাটালাম সেই যাত্রা।

দিন কাটে। ক্রমশ একা থাকাটা অভ্যেসে পরিণত হতে থাকে। শিখতে থাকি মা বাবাকে ছেড়ে, প্রিয় কলকাতাকে ছেড়ে থাকা। রোজ নতুন করে বড় হই যখন প্রতি মুহূর্তে নিজের দায়িত্ব নিজে নিই, বিভিন্ন ভুল ভ্রান্তি ভরা জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে চলি একটা চেনা বা কখনো অচেনা ছকে। এখন একাকীত্ব বলতে গেলে প্রায় নেই, টেকনোলজির উন্নতির সুবাদে বাবা মা প্রিয়জনেরা হাতের মুঠোয়। কিন্তু তবুও, প্রথম বাড়ি ছাড়ার দিনগুলো আজও চোখে জল আনে - স্মৃতিমেদুর সে দিনগুলি বড়ই আপন, বড়ই নিজস্ব। 

No comments:

Post a Comment