Tuesday, October 2, 2018

উঠছে জেগে সকালগুলো

"অনিইইই, উঠে পড় বাবা।" সক্কাল সক্কাল মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল অনিরুদ্ধর। চোখ মেলে ফোন হাতে নিয়ে দেখল সবে সাড়ে সাতটা। গত কয়েকটাদিন অনেক রাত জেগে অফিসের বেশ কিছু ডেডলাইন সামলে আজ গান্ধী জয়ন্তীর ছুটিতে একটু আয়েশ করে ঘুমোবে বলে অ্যালার্ম বন্ধ রেখেছিল মোবাইলে। কিন্তু ওই যে, কপালে যা থাকে। আজকের দিনেও এই সকাল সকাল বিছানা ছাড়তে ইচ্ছেই করছিল না, তবুও বাধ্য ছেলের মতোই উঠেই পড়ল অনি। ইতিমধ্যে মা ঘরে চলে এসেছেন, হাতে চায়ের কাপ।
"ওঠ ওঠ বাবু। তাড়াতাড়ি ওঠ। অনেক বেলা হয়ে গেল। মেলা কাজ পড়ে আছে। উঠে পড়। নে চা-টা খেয়ে নে" এই বলে ধূমায়িত চায়ের কাপ অনিরুদ্ধর দিকে বাড়িয়ে মণিমালা এগিয়ে গেলেন জানলার দিকে। পর্দা সরাতেই সূর্যের আলোয় ঘর আলোকিত। বাইরে ছুটির দিনের শহর। শান্ত। ভিড় কম। মাঝে মধ্যে রিকশার টুংটাং।
"ও মা, একটা ছুটির দিন পেলাম কতদিন পরে বলো তো। একটু ঘুমোতেও দেবে না আজকে? তুমি না..." কণ্ঠে হাল্কা অনুযোগ নিয়েই কথাগুলি বলে অনি।
"সোনা বাবা আমার। এই একটাই মোটে ছুটির দিন এলো কতদিন পর। পুজোর বাজার করতে হবে না? আর তো কটা মোটে দিন। এসেই তো গেল পুজো। কিচ্ছু কেনাকাটি হয়নি। তুই না নিয়ে গেলে কার সাথে যাবো বল তো? আর সময় কই?"

মায়ের কথাগুলি শুনে অনিরুদ্ধ আর কিচ্ছু বলতে পারে না। এই পুজোটা যে ও মায়ের সাথে কাটাতে পারবে, ভেবেছিল অনি? গত বছর মনে আছে, মহালয়ার দিন সকালেই বিচ্ছিরি বাইক অ্যাকসিডেন্টে গুরুতর জখম হয় ও। তারপর হাসপাতাল, ডাক্তার, পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই কেটে যায় কতগুলো মাস। পুজোর দিনগুলো প্রায় যমে মানুষে টানাটানি চলেছিল। হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে খালি কাঁদত ও। হতাশা, নিরাশায় দিনগুলি যে কীভাবে কেটেছে, ভাবলে ভয় করে এখনো। এমন কী অনিরুদ্ধ তো ভাবতেই পারেনি  যে আরেকটা পুজো ও দেখতে পাবে বলে।

তখনও পাশে ছিল শুধুই মা। ওঁর অসীম সেবা শুশ্রূষা ও সর্বোপরি মায়ের থেকেই লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করে আজ অনিরুদ্ধ আবার একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছে। এই নতুন জীবনের জন্য ও সবকিছু করতে রাজি, ছুটির দিনের ঘুম স্যাক্রিফাইস তো তার কাছে কিছুই না।

"চলো। কখন বেরোবে বলো, ক্যাব ডেকে নেবো।"



No comments:

Post a Comment