Monday, October 29, 2018

অগ্নির জন্য

বেলা দেড়টা। নিউ জার্সির লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে বসে আছি, বোর্ডিঙের অপেক্ষায়। প্লেন ছাড়তে এখনও প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাকি। এক্ষুনি আমার প্লেনেরই সহযাত্রী সম্ভবত, বছর উনিশ কুড়ির দুই বঙ্গ তনয়া এসে আমার সাথে সেলফি তুলে গেল। ইন্সটাগ্রামে দেবে। অটোগ্রাফও দিতে হল।

সপ্তাহ খানেকের জন্য এসেছিলাম ইস্ট কোস্টে। এই প্রথম এই দিকে এলাম। উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বখ্যাত নিউ ইয়র্ক ফেস্টিভালে রেডিও অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে আবারও এই বছর সানডে সাসপেন্সের জন্য পাওয়া গোল্ডেন প্রাইজটি গ্রহণ করা। এই নিয়ে টানা দশ বছর আমরা এই পুরস্কার পাচ্ছি। এই বারে যেহেতু আমার নির্দেশনায় "কৈলাসে কেলেঙ্কারি"র জন্য অ্যাওয়ার্ড, তাই স্বাভাবিকভাবেই আমি এসেছিলাম পুরস্কার নিতে। কাছাকাছি সময়েই নর্থ অ্যামেরিকা বেঙ্গলি কনভেনশনও ছিল। জার্সি সিটিতে হল। গত দুই বছর ধরে আমন্ত্রণ পেয়েও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এইবারে সেই কাজটিও সেরে এলাম। প্রবাসেও যে আমাদের এত ভালোবাসে লোকে, অনুভব করে খুব ভালো লাগল।

নয় নয় করে প্রায় বারো বছর হয়ে গেল মিরচিতে আছি। ক্যাপ্টেন নানান কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আজকাল ওঁর শোটা এখন আমিই করি। প্রথম যখন এই সুযোগটা আসে আমার কাছে, খুব চ্যালেঞ্জিং লেগেছিল। ক্যাপ্টেন শোটাকে যেই উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, সেখানে পৌঁছনো যে কী কঠিন কাজ হবে, আমি হাড়ে হাড়ে জানতাম। আর আজ তাই যখন সেই শোয়ের জন্যই জায়গায় জায়গায় পুরস্কার পাই, শ্রোতাদের ভালোবাসা পাই, অসম্ভব আনন্দ হয়। এই যেমন গত মাসে রেডিও কনেক্স অ্যাওয়ার্ডে ইস্টার্ন জোনের বেস্ট আর জে হলাম। বা গত বছর পেলাম জনপ্রিয় চ্যানেলের সেরা বাঙালি পুরস্কার। যখন মিরচির অডিশন দিতে গিয়েছিলাম, কখনও ভেবেছিলাম একদিন এই জায়গায় পৌঁছতে পারবো?

এত খ্যাতি, তার জন্য এত এদিক ওদিক যাওয়া আসা, লেগেই রয়েছে। তবুও, যতই হিল্লি দিল্লী ঘুরে বেড়াই না কেন, দিনের শেষে কলকাতায় ফেরার তৃপ্তিটাই আলাদা। এই যে সাতদিন পর আবার কাল বাড়ি ফিরছি, ভেবেই রোমাঞ্চ জাগছে। আবার ঠিক সকাল সাতটা বাজলেই মাইক্রোফোনের সামনে বসব। মিস করেছি এই কদিন, খুব। এতগুলো মানুষের সাথে আবার কানেক্ট করব নিজেকে। দারুণ।

জীবনে তেমনভাবে প্ল্যান করে কখনোই চলিনি। তবু হলফ করে বলতে পারি, যেমনভাবে যে পথে যে গতিতে এগিয়ে চলেছি, এই তো, দিব্যি আছি। প্রায় কোন আক্ষেপ নেই বলা চলে। হুম, "প্রায়"। কেন বললাম? আসলে নিজের জন্য কখনও কারুর কাছে তেমনভাবে দাবী করে উঠতে পারিনি।  আবার সময়মতো সঠিক লোককে সঠিক কথাটা বলতে পারিনি। আর তাই, এই যে আমি, এখনও মূর্তিমান "সদা সিঙ্গল" হয়েই রয়ে গেলাম! এটাও অভাবনীয় কিন্তু, শোয়ের ট্যাগলাইন যে এইভাবে ফলে যাবে আমার ব্যক্তিগত জীবনে... যাই হোক, লাইন পড়ছে। উঠি। ষোল ঘণ্টার লম্বা জার্নি। হ্যান্ডব্যাগেই "সেরা সন্দেশ" রাখা আছে। আমার সময় ঠিক কেটে যাবে।  জয় গুরু! 

No comments:

Post a Comment