এয়ারপোর্টে বসে আছি। সর্বক্ষণের অভ্যেসমতোই হাতে রয়েছে একটি বই। খুব বেশি মনোযোগ সহকারে পড়ছিনা যদিও। মাঝে মধ্যেই এদিক ওদিক চোখ চলে যাচ্ছে। পাশে বসে এক মা তার পুত্রটিকে মাফিন খাইয়ে ব্রেকফাস্ট করানোর চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ ইতিউতি ধূমায়িত কফির কাপ নিয়ে ঘুরছেন। সেলফিও উঠে চলেছে খচাখচ। ছুটির মরসুমে ভোরের এয়ারপোর্ট। হাজার ব্যস্ততা। পরপর অনেকগুলো কলকাতার ফ্লাইট। তাই স্বাভাবিকভাবেই চারিদিকে বাংলার ছড়াছড়ি। আমি খুব একটা কোনদিকে পাত্তা দিচ্ছি না বিশেষভাবে। হঠাৎ কানে এলো এক বাংলাদেশী (accent শুনে বুঝলাম) ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বর। ফোনে কাউকে বলছেন, " হ্যাঁ, এই আট বিশের ফ্লাইট। কলকাতা পৌঁছব সাড়ে দশটায়। দমদম স্টেশন থেকে শিয়ালদা গিয়ে ওখান থেকে ট্রেনে বনগাঁ। অটো ধরে তারপর পেট্রপোল। বর্ডার পেরোলেই গাড়ি থাকবে। ঠিকঠাক মতো লঞ্চ পেয়ে গেলে সাড়ে পাঁচটা ছটার মধ্যে বরিশাল পৌঁছে যাব।" আরো অনেক কথাই বলছিলেন উনি। আর কানে ঢোকেনি কিছু। ঠিক ওই একটা শব্দ। "বরিশাল"। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। কোন মানে নেই কিন্তু। কোনদিনও সেখানে যাইনি। এমনকি বাবা জ্যাঠাও যাননি। শুধু জানি পূর্বপুরুষের বাস বরিশালে। গল্পও সেরকম শুনিনি। শোনার মধ্যে ওই পুকুর নদী আর তা থেকে মাছ ধরে রান্নার গল্প (কী করব, বরাবরের খাদ্যরসিক আমি)। ঠাকুরদার বাবা পুলিশে ছিলেন, আগেভাগেই খবর পেতেন। তাই দেশভাগের ওই দুঃখজনক ঘটনা ঘটার আগেই তাঁরা সপরিবারে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে আসেন এই দেশে। ভিটে মাটি বিক্রি করে দিয়ে। (সেই বাড়ির ছবিটুকু দেখেছি মোটে।) কোনরকম ভয়াবহ অভিজ্ঞতাও নেই। ওপর ওপর দেখলে কোন শোকের অবকাশও নেই। স্বেচ্ছায় চলে এসেছেন তাঁরা।
তবুও, নিজের পূর্বপুরুষের দেশ, বাড়ি সব ছেড়ে এক সম্পূর্ণ অচেনা অজানা জায়গায় নতুন করে জীবন শুরু করা... একটুও কি কষ্ট হয়নি তাঁদের? হয়তো ওঁদের সেই শিকড়ের প্রতি টান, সেইটাই আমি বংশানুক্রমে পেয়েছি। আর তাই কলকাতা, বরিশাল এইসব জায়গা থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসেও ওই একটি শব্দে একটা অদ্ভুত আত্মিক টান অনুভব
করেছি। সেই শিকড়ের টানটুকু প্রতিফলিত হয়েছে এমন অভূতপূর্ব অনুভূতিতে।
করেছি। সেই শিকড়ের টানটুকু প্রতিফলিত হয়েছে এমন অভূতপূর্ব অনুভূতিতে।
আর তাই গতকাল যখন ফ্লাইটে সহযাত্রী দেখলাম দুজনই বাংলাদেশের, যে আমি কিনা সচরাচর অচেনা অজানা লোকের সাথে কথা বলিনা, নিজে যেচে ওঁদের সাথে কথা বলেছি। এবং শেষে ফিরবার সময়ে ওই ভাইটির থেকে "বাংলাদেশে অবশ্যই আসবেন আপু, নিমন্ত্রণ রইল। ও যে আপনারও দেশ..." শুনে মনটা ভরে গেল।
ছবিটি আমাদের বরিশালের বাড়িটির। ফ্যামিলি গ্রুপ থেকে পাওয়া whatsappএ।
No comments:
Post a Comment