Monday, December 16, 2019

চুরমুর

বেশ একটা ফুরফুরে মন নিয়েই রুমুন বেরিয়েছিল বিকেলে। উদ্দেশ্য একটাই, একটু সেন্ট্রাল পার্কে কয়েক চক্কর কেটে তারপর ফুচকাওয়ালার সামনে ভিড় ঠেলে কুড়ি টাকার চুরমুর কিনে বাড়ি ফেরা। বাড়িতে সদ্য লাইব্রেরি থেকে আনা শঙ্কু সমগ্র পড়তে পড়তে জমিয়ে চা সহযোগে সান্ধ্য আহার হয়ে যাবে। ভাবতেই জিভে জল এসে যায় রুমুনের।
গেট থেকে বেরোতেই এক প্রৌঢ় ব্যক্তি ও সাথে খুব সম্ভবত তাঁর স্ত্রীর মুখোমুখি। ভদ্রলোকের পরনে অতি সাধারণ ফতুয়া পাজামা, গায়ে ওই মলিন খয়েরিই বোধহয়, চাদর। চুল একটু কোঁকড়া, উস্কোখুস্কো না হলেও, যত্নের ছাপ স্পষ্ট। সাথে ভদ্রমহিলার পরনে ডুরে শাড়ি, গায়ে তেমনই এক জীর্ণ চাদর। ক্ষণিকের ইতস্ততা কাতিয়ে মলিন হাসিমুখে রুমুনের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, "মা, আপনি কি এই এখানেই থাকেন?" রুমুন ভাবল, হয়তো কোন বাড়ির নির্দেশিকা খুঁজছেন। ও ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলল। ভদ্রমহিলা এবার একটু সাহস করেই এগিয়ে এসে বললেন, "একটু ওষুধ দিয়ে সাহায্য করবেন মা?" রুমুন এবারে অবাক হয়েই ওঁকে জরিপ করে। কোনো চোট আঘাত নাকি? হয়তো ব্যান্ড এড ডেটল জাতীয় কিছু চাইবেন। ও বলে, "বলুন।" ভদ্রলোক এবার এগিয়ে এসে বললেন, "আসলে গত ছয় মাস ধরে আমার চাকরি নেই। আমার স্ত্রী, সাইকিয়াট্রিক পেশেন্ট। তাই..." ভদ্রমহিলা বললেন কাতর কন্ঠে, "একশোটা টাকা দিলেও হবে। একটু সাহায্য করলে... আমার ওষুধ... আপনি কাছেই থাকেন কি? তাহলে যদি এনে দেন।"
রুমুন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। না বলতে পারে না। আবার যা দিনকাল, কাকে কতটা কী বিশ্বাস করবে, বুঝে ওঠে না। ওয়ালেটে কড়কড়ে তিনটে পাঁচশো আর বেশ কয়েকটা একশোর নোট থাকলেও বের করতে দ্বিধা হয়। মাথা নিচু করে এগিয়ে যায়। ওঁরা পিছন থেকে কিছু বলতে থাকেন, আশায়... রুমুন হয়তো মত বদলাবে। রুমুন এগিয়ে যায়। ও জানে, এইসব পরিস্থিতে পিছনে ফিরে তাকাতে নেই। ক্ষণিকের জন্য হলেও হাতের টিফিন বাক্সটা একটু ভারী লাগে। তবুও এগিয়ে যায় ও।
ফুচকাওয়ালার সামনে আলু সিদ্ধ, পিঁয়াজ লঙ্কা কুঁচি, তেঁতুল জলের আলাদা সুগন্ধ। সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব কেটে যায় ও। "দিন তো, কুড়িটা টাকার চুরমুর" বলে এগিয়ে দেয় টিফিন বাক্স। চুরমুর তৈরি হয়। রুমুন বাড়ি ফেরে। প্রফেসর শঙ্কুর অ্যাডভেঞ্চার অপেক্ষা করে আছে। ভালোই কাটবে সন্ধ্যেটা। একটাই আফশোস, পার্কে কয়েক রাউন্ড হাঁটা হলো না।
রুমুন আজ যথার্থই নাগরিক।

No comments:

Post a Comment