মামার অভাবের সংসারে বড় হওয়া মেয়ে শ্যামলী। বাবার মৃত্যুর পর মা মেয়ের ঠাই হয়েছিল এই সংসারে কেবলমাত্র দিদিমার কৃপায়। খুব একটা সুখে তো বড় হয়ইনি শ্যামলী, সাচ্ছ্বল্য কাকে বলে, তা বুঝতেই পারেনি। মা দিন রাত দাদার সংসারে কায়িক পরিশ্রম করে নিজেদের খরচা দিত। শ্যামলীও একদম চুপচাপ থাকত, কোনদিনও কোন সখ আহ্লাদের কথা মুখেও আনেনি। সরকারী স্কুলে কোনোমতে টুয়েলভ পাস করতে না করতেই মামীর তাড়াহুড়োয় বিয়ে হয়ে গেল ওর কৃষ্ণকান্তর সাথে। মা বা মেয়ে কেউই বারণ করতে সাহস পায়নি। কৃষ্ণকান্তও বাপ মা মরা ছেলে। কাকার সংসারে মানুষ। তবে কপাল জোরে লেখাপড়ায় মাথা ছিল ভালো, তাই স্কলারশিপ পেয়ে বি এ পাস করে এখন গ্রামের সরকারী স্কুলের এসিস্টেন্ট টিচার। বয়সে দশ বারো বছরের ছোট মেয়েটিকে যখন বিয়ে করে নিজের ছোট্ট বাড়িতে আনেন, বড় মায়া পড়ে যায় ওর ওপর। নিজের তেমনভাবে সখ আহ্লাদ কোনদিনও মেটেনি বলে শ্যামলীর অবস্থাটাও ভালোই আন্দাজ করতে পারতেন। আর তাই, ফুলসজ্জার দিনেই কথা দেন স্ত্রীকে। সমস্ত সখ আহ্লাদ পূরণ করবেন।
শ্যামলী মুখচোরা মেয়ে। একেই ছোট থেকে চুপচাপ যেটুকু লোকের দয়ায় পায়, তাই দিয়ে কাজ চালিয়ে মানুষ। তার ওপর বয়সের পার্থক্য। স্বামী বহুবার জিজ্ঞেস করলেও কিছুতেই মুখ খোলেনি নিজের চাহিদা বা আবদারের কথা বলতে। রান্নাঘরে বসে তরকারি যখন কড়াইতে ফুটতে থাকে, তখন যে গুনগুন করে গান গায়, ইচ্ছে তো করতোই মামাতো বোন চিনুর মত হারমোনিয়াম বাজিয়ে গাইবে। গলাও ভালো। স্কুলে তো প্রতিবার প্রাইজ পেত শ্যামলী। কিন্তু বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে সেই সব রুদ্ধ। তাই সারাদিন একলা বাড়িতে রেডিয়োতে নতুন পুরনো গান শুনে নিজের মনে গুনগুন করে কাটিয়েই বেশ চলছিল। কোন কোন দিন অবশ্য কৃষ্ণকান্ত বাড়ি এসে চা চাইতে গিয়েছে, সাড়া পায়নি। কী হল, কোথায় গেলো, দেখতে গিয়ে দেখেন রান্নাঘরের দাওয়ায় বসে রেডিয়োর সাথে তাল মিলিয়ে মনের আনন্দে গান গাইছে শ্যামলী। দুই চোখ বন্ধ। কী নিষ্ঠা। ওই তন্ময়ী রূপ দেখে ওকে তখন থামাতে ইচ্ছেই করেনি। গান থামতে "বাহ, ভারী সুন্দর গলা তো তোমার। গান গাও না কেন আরো?" শুনে লজ্জা পেয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে যায় শ্যামলী।
আজ দোসরা ফাল্গুন। বিয়ের সময়ে কুষ্ঠি দেখে কৃষ্ণকান্ত জানতে পারে ওইদিন শ্যামলীর জন্মদিন। রোজের মতোই স্কুলে বেরিয়ে যান কৃষ্ণকান্ত। সবে দুপুরের খাবারের থালা বাসন ধুয়ে রান্নাঘর গুছিয়ে শ্যামলী একটু শুতে যাবে, এমন সময় শুনতে পেল স্বামীর হাঁকডাক। "কই গো, কোথায় গেলে? একবার এসো বাইরে।" শ্যামলী হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এসে দেখে রিকশা থেকে একটা মাঝারি মাপের কাঠের বাক্স নামাচ্ছেন তার স্বামী। "এই নাও, জন্মদিনের উপহার। এই হারমোনিয়াম। আজ থেকে তুমি গলা ছেড়ে গান গাইবে। আর বিধু মাস্টারকে বলে এসছি। এবার থেকে রবিবারগুলো সকালে তুমি ওনার ক্লাসে যাবে। গান শিখবে।"
আনন্দে আপ্লুত অভিভূত শ্যামলী ঢিপ করে স্বামীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল আর বলল, "আমার আরেকটা আবদার আছে। যদি পূরণ হয়। আমায় কলেজে ভর্তি করে দেবে? আমার লেখাপড়া করারও খুব ইচ্ছা।"
" অবশ্যই। এ ভারি ভালো কথা। আমি কালকেই যাব, খোঁজখবর নিতে। শিক্ষার চেয়ে ভালো উপহার আর কিছু হয় না কি?"
Friday, March 30, 2018
Wednesday, March 28, 2018
আমার পাওয়া উপহার
উপহার বুঝি এমন একটা জিনিস যেটা পেতে এবং দিতে, দুইই ভালো লাগে। কাউকে কোন উপলক্ষ্যে বা এমন কী, কারণ ছাড়াই উপহার দিতে ইচ্ছে হলে, অনেক ভেবেচিন্তে দিই, তাঁর কী ভালো লাগতে পারে, কাজে লাগতে পারে, ইত্যাদি ভাবনাচিন্তা করেই। নিজেও তাই যখন পাই, একটা আশা থাকে যে অনেক ভাবনা চিন্তা করেই কেউ আমায়ও দেবে। অনেকেই দেন, আবার অনেকেই সেই একঘেয়ে স্টোনডাস্টের মূর্তি বা পার্কার পেন দিয়ে কাজ সাড়েন। যদিও কেউ হয়তো ওই মূর্তির শিল্পকলা খুবই ভালোবাসেন, আমি অবশ্য চারুকলা বিষয়ে এক্কেবারে আকাট মূর্খ। তাই হাজার চেষ্টা করেও উপহারের মর্যাদা দিতে পারিনা যথাযথ। এই মুহূর্তে বসে আমার সবচেয়ে পছন্দের উপহার বলতে গেলে বলব বই। গোগ্রাসে গিলে ফেলতে পারি। যত পাবো, তত ভালো। আশ মিটবেনা। আমার পাওয়া কিছু উপহারের কথা বলি এই প্রসঙ্গে।
প্রথম মুখ দেখা, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন ইত্যাদি অনুষ্ঠানে ঠাকুমা দিদিমা মাসির কাছ থেকে পেয়েছি কিছু সোনার গয়না। তখন সেগুলোর তেমন কিছু বুঝতাম না। এখনো বুঝিনা বিশেষ। শুধু পুরনো দিনের সোনা আর কিছু সাবেকি ডিজাইন বলে দেখতে ভালো লাগে। থাকে তো সেই লকারেই।
যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, তখন জন্মদিনে মাসি আমায় একটা টাইমেক্সের ঘড়ি দিয়েছিল। ওই প্রথম রিষ্ট ওয়াচ। সেই থেকে,হাতঘড়ির ওপর দুর্বলতা শুরু। ঘড়ি পরে রোজ স্কুলে যেতাম। ওই ঘড়িটা পরে মাধ্যমিক পরীক্ষাও দিই। একটা কালো সিন্থেটিক ব্যান্ডের ওপর কালো গোল ডায়ালের ঘড়ি। ইলেভেনে উঠতে জন্মদিনে বাবা মায়ের থেকে পেলাম তখনকার স্টাইল আইকন, একটি ফাস্ট ট্র্যাক ঘড়ি। সেই ঘড়ি আমি বোধহয় গত বছর অবধি ব্যবহার করেছি। দারুণ টেকসই ছিল।
ক্লাস এইট। ফাইনাল পরীক্ষায় রেজাল্ট আনতে গিয়েছি। বাবা বাইরে অপেক্ষা করছে পেট্রোল পাম্পে। গেট থেকে বেরোলাম হাসিমুখে। বাবা জিজ্ঞেস করল, কেমন হয়েছে। আমি শুধু হাসিমুখে তর্জনী দেখালাম। অর্থাৎ কিনা, প্রথম হয়েছি ক্লাসে। বাবা তখন সদ্য এটিএম কার্ড ব্যবহার শুরু করেছে। পাশেই একটা আইসিয়াইসিয়াই বা এইচডিএফসি কিছুর এটিএম থেকে একশো টাকা তুলে আমায় উপহার দিলো। সে কী আনন্দ আমার!
মনে পড়ে গেল, কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে থাকাকালীন বোস ইন্সটিটিউতে ক্যুইজ কম্পিটিশন হয়েছিল। আমরা সেকেন্ড হয়েছিলাম। আমাদের তখন ডিপারট্মেন্টাল হেড, উডিতা দি, ভীষণ খুশী হয়ে খামে ভরে একশো টাকা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন "যা ইচ্ছে কিনে নিয়ো। আমার পক্ষে তো সম্ভব হয়নি।" দিদি উইলচেয়ারেই যাতায়াত করতেন, চলাফেরায় ছিল অনেক অসুবিধে। তবুও সেই প্রতিবন্ধকতাকে বাঁধা হতে না দিয়ে ঠিক আমাদের জন্য উপহার এনেছিলেন মনে করে, বিরাট প্রাপ্তি। ওই টাকাটি আজও খরচা করিনি। সযত্নে তুলে রেখেছি।
এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেটিরিয়ালিস্টিক উপহার পেয়েছি। কখনো জন্মদিনে, কখনো রেজাল্ট ভালো করলে, ইত্যাদি। ইলেভেনে উঠলে ক্যালকুলেটর লাগবে বলে সেই বছর জন্মদিনে মা সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর দিয়েছিল। সযত্নে রয়েছে। বড় হওয়ার সাথে সাথে যেন উপহারগুলো অনেকটা দরকার, তাই কিনতে হবে, জন্মদিন আসছে, তাহলে জন্মদিনের উপহার হোক, এই ভাবে কেনা। রিসার্চ শুরু করার পর এক্সটারনাল হার্ড ডিস্ক কেনার খুব দরকার থাকায়, জন্মদিনে মা বাবা এক টিবির হার্ড ডিস্ক দিল। সে বছর আমি কিনলাম একটি কিন্ডল। হস্টেলে বই রাখার জায়গা নেই। তাই এই অল্টারনেটিভ ব্যবস্থা।
টাকা উপার্জন করতে শুরু করার পর আমি নিজেও নিজেকে বেশ কিছু পছন্দসই উপহার দিয়েছি। কন্টেন্ট রাইটিং করে টাকা জমিয়ে প্রথম স্মার্ট ফোন কিনি। সেই সাথে কিনি একটি নিকন কুলপিক্স ক্যামেরা। দুটোই পি এইচ ডি এডমিশন পাওয়ার আনন্দে কেনা। সেই বছরই জন্মদিনে আবার নিজেকে একটি টাইটান রাগা উপহার দিই। তখন সায়েন্স কলেজের স্কলারশিপের সামান্য টাকা বাঁচিয়ে ওইটা কিনতে পারার মধ্যে সে কী আনন্দ।
পি এইচ ডির স্টাইপেন্ড পাওয়ার পর থেকে উপহার দেওয়ার বহর বেড়েছে। এখন দরকার অদরকারে মাঝে মাঝেই নিজেকে বিভিন্ন বই উপহার দিই। ব্যাগ কিনি। সুগন্ধী কিনি। গত বছর নিজেকে একটা ডি এস এল আর আর আরেকটা ঘড়ি (আমার প্রিয় রোজ গোল্ড) উপহার দিয়েছি। উপলক্ষয় বানিয়ে নিই ঠিকই।
আচ্ছা, এবারে একটু নন-মেটিরিয়ালিস্টিক কিছু উপহারের কথা বলি?
বাবা মায়ের কথা আসবেই আসবে এই প্রসঙ্গে। সারা জীবন তাদের ভালোবাসা পেয়েছি, সহযোগিতা পেয়েছি প্রতিমুহূর্তে। এর চেয়ে বড় উপহার কী হতে পারে? যে বছর বি এস সি পরীক্ষায় জঘন্য রেজাল্ট করলাম, সাঙ্ঘাতিকভাবে মুষড়ে পড়েছি। বাবা মায়ের আমার ওপর ভরসা ছিল ওই সময়ের শ্রেষ্ঠ উপহার। জানতাম যে কেউ থাকুক না থাকুক, তারা আছেই। আর তাদের জন্যই আমায় ঘুরে দাঁড়াতে হবে। মনোবল পেতাম তাদের ভরসায়। বাবা বেশী করে আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে দিত। সব সময় প্রেরণা পেয়েছি।
যখনই মন খারাপ করে, সেই খারাপ লাগা গুলো শেয়ার করে মন হাল্কা করাটা তো খুব দরকার। সেটা করার জন্য কিছু খুব কাছের মানুষেরা আছে আমার জীবনে। তাদেরই একজনের সাথে গতকাল কথা হচ্ছিল। কিছুদিন আগে হঠাৎ করে বিশ্রী একটা ডিপ্রেশন গ্রাস করেছিল আমায়। তখন রাত জেগে কথা বলে অনেকটা আরাম পাই। আর কাল তার সাথে কথা প্রসঙ্গে একটা ভারি দামী কথা শুনলাম। " এই যে, তোমায় সক্কলে এত ভালোবাসে। আর এদিকে রাত বিরেতে তোমার মন খারাপ হয়। উল্টোপাল্টা চিন্তা করো। এরকম করবে না। জেনে রেখো, আর কেউ কী ভাবল না ভাবল, পৃথিবীর যে প্রান্তেই আমরা থাকি না কেন, সব সময় এই একজন আছেই যে তোমায় সব সময় ভালবাসবে আর তোমার কথা ভাববে।" (একটু প্যারাফ্রেজ করলাম, কিন্তু বক্তব্যটা এটাই।) এর চেয়ে ভালো কিছু কী হয়?
Monday, March 26, 2018
রিম ঝিম ঘন ঘন রে বরষে
হঠাৎ করেই মনে পড়ে যায় কত কথা। শেষ হয়েও যা হয়নি শেষ। হয়তো দরকার ছিল একটা closure।
গভীর রাতে নিদ্রাবিহীন চোখ। দু গাল বেয়ে নেমে আসে নোনতা জলের ধারা। অবিরাম। অনিবার।
তারপর স্বাভাবিকভাবেই এক সময় রাতের আকাশ ফর্সা হয়।
সব ঝেড়ে ফেলে নামতে হয় জীবন সংগ্রামে। একেই বুঝি বড় হওয়া কয়।
Saturday, March 24, 2018
কিছু মানুষের গল্প
কিছু মানুষের গল্প
১।
চাকরিটা আজ আমি ছেড়েই দিলাম। প্রথমে একটু দোনামনা করছিলাম বটে। অনেক কষ্ট করে লোন নিয়ে লেখাপড়া কমপ্লিট করে তবে গিয়ে এই এত মাইনের চাকরি পেয়েছিলাম। কিন্তু দিন রাত অফিসের টেনশনটা আর নিতে পারছিলামনা। আমার কঠোর পরিশ্রমে করা কাজগুলোর কৃতিত্ব সব অন্য লোকে নিচ্ছিল। এপ্রেইজালের সময় ভুলভাল রেটিং পাচ্ছিলাম, কেন? না বসের সাথে ট্যুরে গিয়ে আলাদা রুমে থেকেছিলাম বলে। দিন নেই রাত নেই, শনি রবির বালাই নেই, যখন তখন বসের ফোন, "এই কাজটা এক্ষুনি চাই।" "অমুক ফাইলটা এক্ষুনি পাঠাও।" " তমুক ক্লায়েন্টের সাথে এক্ষুনি মিট করো।" হঠাৎ হঠাৎ করে ছুটি ক্যান্সেল্ড। আরে বাবা, ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স নেই না কি? অবশ্য আমার তেমন অসুবিধে হবেনা, মাস গেলে মাইনে না আসলেও, আমার বউ তো আছে রে বাবা। বিরাট উঁচু পোস্টে চাকরি করে। আমি না হয় কিছুদিন ব্রেক নিই, একটু লেখালিখি গানবাজনা করি। তারপর পরের চিন্তা পরে হবেখন।
২।
"হ্যাপি বার্থডে লাভ।" একটা বিশাল লাল গোলাপের তোড়া এক হাতে, আরেক হাতে অজস্র গোলাপী হার্ট শেপের বেলুন নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রোহণ। ওকে যা সুন্দর দেখাচ্ছে না ক্রিম রঙের টিশার্ট আর ব্লু জিন্সে। সদ্য স্নান করেছে, গা দিয়ে শাওয়ার জেলের মাদক সুগন্ধ এখনো ভুরভুর করছে। ফর্সা গালে হাল্কা সবুজ খোঁচা দাড়ি অল্প। নিজেকে থামাতে পারলাম না। বিজ্ঞাপনের মেয়েগুলোর মতো ওকে ঘরে টেনে ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওর ওপর।
কোনমতে জিনিসগুলো পাশে রেখে ঘন হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে হাসতে হাসতে রোহণ বলে উঠল, "সোহম, তোর কীসের এত তাড়া?"
৩।
সাত্বিক আর কিঙ্কিণীর বিয়ের যখন ঠিক আর ছয় মাস বাকি, তখন কেমিক্যাল প্লান্টে একটা ছোট্ট আক্সিডেন্টের ফলে সাত্বিক গুরুতর আহত হয়। এর ফলে হারিয়ে ফেলে নিজের দৃষ্টি। ছাড়া পাওয়ার মাস খানেক পর বাবা মায়ের সাথে একদিন সাত্বিক এলো কিঙ্কিণীর বাড়ি। হবু শ্বশুর শাশুড়ির কাছে হাত জোড় করে বলল, " কাকু কাকিমা, আমায় ক্ষমা করবেন। আমি কিঙ্কিণীকে বিয়ে করে ওর জীবনের বোঝা হয়ে থাকতে চাইনা। এই বিয়ে বন্ধ হোক।" উপস্থিত বাকি সকলেই স্তব্ধ, নির্বাক।
খানিক নিস্তব্ধতার পর ভেসে এলো জানলার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা কিঙ্কিণীর কণ্ঠস্বর। " বাবা, ওকে জিজ্ঞেস করো দৃশ্যপট যদি ঠিক উল্টে যেত, ও কী আমায় বিয়ে করতো না?"
আগামী পরশু ওদের পঞ্চম বিবাহবার্ষিকী। নিমন্ত্রনপত্র পেয়ে মনে পড়ে গেল ঘটনাটা।
****************************************************
এঁরাও কিন্তু প্রত্যেকেই আমার আপনার সকলের মতোই manউষই।
Wednesday, March 21, 2018
নতুনের আহ্বান
kajer loker meyer school jawa
mayeder internet e asha
biyer pore harmonium
যবে থেকে বকুলকে নিয়ে কাজের বাড়ি নিয়ে গিয়েছে মীনা, সেইদিন থেকে শুরু হয়েছে ওর জ্বালা। কেন যে মরতে সেদিন মেয়েকে নিতে গেলো, নেহাত শাশুড়ি ছিলনা, একা একা সারাদিন ওই কচি মেয়েটা থাকবে, না জানি কি করে ফেলবে, কোথায় বেরিয়ে হারিয়ে যাবে, সেই ভয়ে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বকুলকে সাথে নিয়ে বেরিয়েছিল। আর ব্যস। শুরু হল বিকেল থেকেই মেয়ের ঘ্যান ঘ্যান। গোটা রাস্তা জুড়ে "মা, আমিও ইস্কুল যাবো, মা আমিও নতুন জামা পরবো। আমি ল্যাখাপড়া শিখব।" ইত্যাদি। মেয়েকে তেমন ভাবে দোষও দেওয়া যায় না। এইটুকু বাচ্চা, যা দেখবে, তাইই সখ হবে। সক্কাল সক্কালই তো চারিদিকে লাল নীল সাদা শার্ট প্যান্ট স্কারট ব্লাউজ পরে বড় বড় বাসে করে স্কুলে যায় ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলো। মায়েরা বাবারা ঘুম ঘুম চোখে ওদের হাত নেড়ে স্কুলে পাঠায় এক নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য। মীনা তখনই দেখেছিল বকুলের চোখে মুখে বিস্ময়।
মীনারও ইচ্ছে কি তা বলে হয় না? নিজে লোকের বাড়ি বাড়ি ঠিকা কাজ করে বলে কি মেয়েকেও সেই একই হতে হবে? কিন্তু টাকা? ইস্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা? নতুন জামা বই? সি ব্লকের পাঁচতলার বৌদি ইংরেজি ইস্কুলে পড়ায়, সাহস করে বলে দেখিইনা, এই ভেবে সে আজ সকাল সকাল কথাটা পেড়েই দিল। " বৌদি, বলছি যে বকুল খুব ইস্কুলে যেতে চায়। কিছু ব্যবস্থা করতে পারো?"
" তা ভালো তো। ওকে স্কুলে দে। পাড়ায় পাড়ায় তো এত সরকারি স্কুল, তোদের বাড়ির দিকেও নিশ্চয়ই আছে। খোঁজ নে। শুরুতে যা টাকাপত্তর লাগবে, আমি না হয় দিয়ে দেবো। মাসে মাসে শোধ করে দিস সুবিধে মতো।"
বকুলের আনন্দ আর ধরে না। মা বিকেলে বাড়ি এসে ওর হাতে যখন একটা প্যাকেট ধরালো, ও প্রথমে "কী আছে এতে মা?" বলায় মা শুধু মুচকি হাসল। প্যাকেট থেকে যখন বেরোল চারটে বই আর দুটো খাতা, দুটো লাল কালো পেন্সিল আর একটা সাদা রবার, বকুলের মুখে বিস্ময় ফুটে উঠেছিল।
"কাল থেকে ইস্কুল যাবি। আমি সব কথা বলে এসছি। এবার খুশি তো?"
সারা সন্ধ্যে বকুল নতুন বই খাতা শুঁকতে শুঁকতেই কাটিয়ে দিল। নেহাত খাবার পড়ে বই নষ্ট হতে পারে, এই বলে বই থেকে আলাদা করা গেল বকুলকে। রাত্রে হাতের কাজ সেরে মীনা ঘরে ঢুকে দেখে মেয়ে বই আঁকড়ে ঘুমোচ্ছে, অচেতনে। পরম শান্তি চোখে মুখে। চুলে বিলি কাটতে কাটতে দেওয়ালে টাঙ্গানো মা কালীর ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে, "মা, মেয়েটাকে দেখো।"
mayeder internet e asha
biyer pore harmonium
যবে থেকে বকুলকে নিয়ে কাজের বাড়ি নিয়ে গিয়েছে মীনা, সেইদিন থেকে শুরু হয়েছে ওর জ্বালা। কেন যে মরতে সেদিন মেয়েকে নিতে গেলো, নেহাত শাশুড়ি ছিলনা, একা একা সারাদিন ওই কচি মেয়েটা থাকবে, না জানি কি করে ফেলবে, কোথায় বেরিয়ে হারিয়ে যাবে, সেই ভয়ে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বকুলকে সাথে নিয়ে বেরিয়েছিল। আর ব্যস। শুরু হল বিকেল থেকেই মেয়ের ঘ্যান ঘ্যান। গোটা রাস্তা জুড়ে "মা, আমিও ইস্কুল যাবো, মা আমিও নতুন জামা পরবো। আমি ল্যাখাপড়া শিখব।" ইত্যাদি। মেয়েকে তেমন ভাবে দোষও দেওয়া যায় না। এইটুকু বাচ্চা, যা দেখবে, তাইই সখ হবে। সক্কাল সক্কালই তো চারিদিকে লাল নীল সাদা শার্ট প্যান্ট স্কারট ব্লাউজ পরে বড় বড় বাসে করে স্কুলে যায় ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলো। মায়েরা বাবারা ঘুম ঘুম চোখে ওদের হাত নেড়ে স্কুলে পাঠায় এক নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য। মীনা তখনই দেখেছিল বকুলের চোখে মুখে বিস্ময়।
মীনারও ইচ্ছে কি তা বলে হয় না? নিজে লোকের বাড়ি বাড়ি ঠিকা কাজ করে বলে কি মেয়েকেও সেই একই হতে হবে? কিন্তু টাকা? ইস্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা? নতুন জামা বই? সি ব্লকের পাঁচতলার বৌদি ইংরেজি ইস্কুলে পড়ায়, সাহস করে বলে দেখিইনা, এই ভেবে সে আজ সকাল সকাল কথাটা পেড়েই দিল। " বৌদি, বলছি যে বকুল খুব ইস্কুলে যেতে চায়। কিছু ব্যবস্থা করতে পারো?"
" তা ভালো তো। ওকে স্কুলে দে। পাড়ায় পাড়ায় তো এত সরকারি স্কুল, তোদের বাড়ির দিকেও নিশ্চয়ই আছে। খোঁজ নে। শুরুতে যা টাকাপত্তর লাগবে, আমি না হয় দিয়ে দেবো। মাসে মাসে শোধ করে দিস সুবিধে মতো।"
বকুলের আনন্দ আর ধরে না। মা বিকেলে বাড়ি এসে ওর হাতে যখন একটা প্যাকেট ধরালো, ও প্রথমে "কী আছে এতে মা?" বলায় মা শুধু মুচকি হাসল। প্যাকেট থেকে যখন বেরোল চারটে বই আর দুটো খাতা, দুটো লাল কালো পেন্সিল আর একটা সাদা রবার, বকুলের মুখে বিস্ময় ফুটে উঠেছিল।
"কাল থেকে ইস্কুল যাবি। আমি সব কথা বলে এসছি। এবার খুশি তো?"
সারা সন্ধ্যে বকুল নতুন বই খাতা শুঁকতে শুঁকতেই কাটিয়ে দিল। নেহাত খাবার পড়ে বই নষ্ট হতে পারে, এই বলে বই থেকে আলাদা করা গেল বকুলকে। রাত্রে হাতের কাজ সেরে মীনা ঘরে ঢুকে দেখে মেয়ে বই আঁকড়ে ঘুমোচ্ছে, অচেতনে। পরম শান্তি চোখে মুখে। চুলে বিলি কাটতে কাটতে দেওয়ালে টাঙ্গানো মা কালীর ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে, "মা, মেয়েটাকে দেখো।"
Tuesday, March 20, 2018
Thirty Days to Thirty
Thirty Days to Thirty
I have this calendar at my desk that gives inspirational quotes each day of the year. Today's one liner says "It's not how long life is but the quality of our life that is important." Funny that it had to come on a day when I am in the retrospective mode. It's exactly thirty more days till I hit the thirties.
Too many setbacks, plans A to Z gone haywire (currently surviving on Plan AZ of PlanLostCountOfTheNumber.xls), countless heartbreaks. Innumerable failures. Wrong decisions worth repenting. Endless tossing and turning in the bed. Dark circles. Weight gain. Stress. Relationships damaged. The last few years have been nothing less than a roller coaster ride.
Yet on the other hand...
Very very very supporting parents, almost always a supportive family (at least not the typical nagging/bugging one), loving friends who are more like family, good grades (it does really matter at times, no matter how much we deny it), some (however negligible it may be) contribution to the scientific community, rewards and recognition, opportunity to cultivate my hobbies.
In the end, I have come out stronger and happier than before.
I may have pictured a very different (and a rosy one) entry into the thirties..so many "Things to do/Places to visit before you turn 30" (including the much wanted Ladakh trip) still unchecked... but this isn't bad either!
Hello thirties.. on my way... (almost there)
Tuesday, March 13, 2018
ট্রুকলার
" হেলো, ইজ ইট মি ইউ আর লুকিং ফর?"
উফ, প্রতিদিন। প্রত্যেকদিন। ঠিক বিকেল তিনটে বাজবে। সবেমাত্র সুপ্রিয় ক্যাফেটেরিয়াতে চা খেতে আসবে, আর তক্ষুনি পকেটে রাখা ফোনটা বেজে উঠবে, অ্যালার্মের মতো। সেই একই নম্বর থেকে ফোন। ট্রুকলারে উঠবে, "স্প্যাম সুস্মিতা"। নেট না থাকলে নাম না উঠলেও এখন প্রতিদিন ওই এক নম্বর দেখে দেখে মুখস্থ হয়ে গিয়েছে ওর।
" নমস্কার স্যার, আমি হেলো বি জে এইচ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে সুস্মিতা কথা বলছি। আপনি কি এই মুহূর্তে কোন ইন্স্যুরেন্স পলিসির কথা ভাবছেন?"
খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, মান্থ এন্ড। এক পাহাড় কাজ, কোনমতে একটু মাথা ছাড়াতে এসেছে, তখন নাকি ইন্স্যুরেন্সের কথা ভাববে। যতসব।
" গুড আফটারনুন স্যার। আমি সুস্মিতা বলছি। আমাদের একটা নতুন হেলথ পলিসি শুরু হয়েছে। সেখানে এগারো মাসের টাকা আপনি দিলে বারো মাসেরটা কোম্পানি দেবে। "
" ও ম্যাডাম, আপনি বোঝেন না কেন? আমি সত্যিই ইন্টারেস্টেড নই। রোজ রোজ কেন ফোন করেন রে বাবা?"
" স্যার আসলে এরকম ভালো একটা স্কিম বেশিদিন থাকবেনা। স্পেশাল অফার চলছে। আপনি কাইন্ডলি শুনুন।"
" ধুত্তেরি, এটা গয়নার দোকান নাকি যে এগারো মাস দিলে বারো মাসেরটা ফ্রি? আপনি রাখুন।"
এরপর হয়তো দুদিন গ্যাপ। শনি আর রবি। তারপর আবার সোমবার। ঘড়ি ধরে ঠিক তিনটে বাজতেই, " স্যার, আমাদের একটা নতুন ক্যান্সার হেলথ পলিসি শুরু হয়েছে। আপনি শুধু একবার টারমসগুলো শুনুন।"
" আপনি ফোন রাখুন। আমি ইন্টারেস্টেড নই। আমার ক্যান্সার হয়নি। চৌদ্দ গুষ্টিতে কারুর ক্যান্সার হয়নি।"
"স্যার, হতে কতক্ষন। তখন কিন্তু এটা কাজে লাগবে। শুনুন, ক্যান্সারের অনেক খরচা।"
" এই যে শুনুন। অনেক হল। সমানে প্রত্যেকদিন আপনাকে বলে চলেছি, আমি এসবে ইন্টারেস্টেড না। ভদ্রভাবে বললে হয় না? আর একবার ফোন করে দেখুন, মজা দেখাচ্ছি।"
এপ্রেইজালের দিন। ম্যানেজারের মুখ থমথমে। কে জানে কী রেটিং দিলো, সেই নিয়ে টেনশন চলছে। তার মধ্যে এই ভ্যান্তারা, বিরক্তিকর। সুপ্রিয় বোঝে, এটা হয়তো ওই মেয়েটা বাধ্য হয়েই করে, কাজ। এমনি এমনি কেই বা যেচে রোজ কারুর মুখঝামটা খেতে যাবে। কিন্তু আজকেরটা বাড়াবাড়ি।
পরপর তিনদিন আর কোন ফোন আসেনি। চা খেতে গিয়ে বন্ধুদের থেকে, "কী রে, তোর মোহনবাঁশি বাজল না যে আজ?" শুনে সুপ্রিয় একটু হাসে। যাক, সেদিনের ডোজটা একটু কড়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাজে দিয়েছে।
শুক্রবার, উইকেন্ড মুড চারিদিকে। সুপ্রিয়র আজ একটু উড়ুউড়ু মন। মায়ের বান্ধবীর নিকটাত্মীয়ার সাথে কফি খেতে যাওয়ার কথা। সন্ধ্যেবেলা। কোথায় আর ঠিক কখন মিট করবে, সেটা মেয়েটি জানাবে। সারাদিন ধরে চাতক পাখির মতো ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে সুপ্রিয়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চেক করছে কোন মেসেজ ঢুকল কি না। পিতজা হাট, কে এফ সি, লাইফস্টাইল আর এইচ ডি এফ সি ক্রেডিট কার্ড ছাড়া আর কিছুই এলোনা। নিয়ম মতোই তিনটে নাগাদ ক্যাফেটেরিয়া যেতেই, অবাক কাণ্ড, ঠিক অ্যালার্মের মতোই আবার বেজে উঠল ফোন। স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ট্রুকলারে "স্প্যাম সুস্মিতা"। মরণ। আজ আর ঝগড়া করে মেজাজ খারাপ করতে ইচ্ছে করল না ওর। একটা রিং হতেই কেটে দিলো। আবার ফোন। আবার কেটে দিল। এরকম তিন চারবার হওয়ার পরও যখন পঞ্চম বার ফোন এলো, নম্বরটা ব্লক লিস্টে ফেলবে কি ফেলবে না ভাবতে ভাবতে ধরেই ফেলল। ধরেই, "কেটে দিচ্ছি মানে কথা বলতে আগ্রহী না, বুঝতে পারেন না? অদ্ভুত তো?" চিৎকার করে উঠল। কাটতে যাবে ফোন, এমন সময় ওদিক থেকে শুনতে পেল,
" এক মিনিট। একটা কথা শুনুন। তারপর ডিসাইড করবেন রাখবেন না ধরবেন। আমি সুস্মিতা। প্রীতি পিসি আমাকে আপনার নম্বর দিয়েছেন। আপনার মা জানেন। আমাদের আজ কফিশপে দেখা করার কথা, সেই নিয়ে কথা বলতেই ফোন করছি। আর আপনি অদ্ভুত মানুষ, সমানে কেটে দিচ্ছেন।"
" ইয়ে, মানে, সরি। আসলে বুঝতে পারিনি। ভেরি সরি। "
" রাখুন আপনার সরি। নেহাত পিসি দুঃখ পাবে, তাই। নইলে আপনার মতো অভদ্র একজনের সাথে কফি খেতে যাওয়ার আমার কোনমতেই ইচ্ছে নেই। "
" আমি আসলে বুঝিনি। বলছি তো, সরি। ভেরি সরি। কী করলে আপনি ক্ষমা করবেন বলুন?"
" লেক রোডের সি সি ডি তে চলে আসবেন ঠিক সাড়ে ছটা নাগাদ। আমাদের কোম্পানির অন্তত তিনটি পলিসি পেপারে আপনি সাইন করবেন। আর আজকের কফি বিলটা আপনি মেটাবেন। তবে ক্ষমা টমার কথা চিন্তা করব।"
" তাই সই।"
পুনশ্চঃ ছয় মাস পর সুপ্রিয়র জীবন এখন বেশ ভালোরকমই সুরক্ষিত। সব দিক দিয়েই।
Saturday, March 10, 2018
চিঙ্গারি কোই ভড়কে
পয়লা ফাল্গুন। তাতান আর তুয়ার প্রথম বিবাহবার্ষিকী। বেশ ধুমধাম করেই পালন হচ্ছে। বিয়ের সময়ে তাতানের ঠাকুমা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তখন নমো নমো করে বিয়েটা হয়েছিল। আর তাই বিবাহবার্ষিকী উদযাপনের ব্যবস্থাপনায় কোন কার্পণ্যই করেনি ওরা কেউই। দুই বাড়ির থেকে প্রচুর আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া প্রতিবেশীর সমাবেশে অনুষ্ঠান বাড়ি জমজমাট। ফিস ফ্রাই আর মাটন কষার সুবাস একদিকে যেমন জিভে জল এনে দিচ্ছে, তেমনই হালফিলের সমস্ত ঢিনচ্যাক গান ডিজে, নাচানাচি, হই হুল্লোড়ে সন্ধ্যেটা মোহময়ী। গোলাপী কাঞ্জিভরমের আঁচল ঠিক করার খসখস, বেল ফুলের মালার সৌরভ, জহর কোটের পকেটে গোলাপ গোঁজা, অভ্যাগত অতিথিদের সাথে হাসি বিনিময়, উপহার প্রাপ্তি, বেশ চলছিল। এরই ফাঁকে মাঝে মাঝে কপোত কপোতীর লুকিয়ে চুরিয়ে একটু আধটু খুনসুটিও বাদ পড়েনি। এদিক ওদিক কিছু গুজুর গুজুর ফিসফাস, হাল্কা ঝারি মারা, সেলফি তোলা, প্রফেশনাল ক্যামেরাম্যানের দামী ক্যামেরার সামনে পোজ দেওয়া, মোটামুটি একটা চেনা ছক, চেনা ছন্দ।
সাজানো চিত্রনাট্যে বিচ্ছেদ ঘটল হঠাৎই। ক্যুরিয়ার সার্ভিসের একটি ছেলের আগমনে। একটা বিশাল বড় লাল গোলাপের তোড়া আর তার গাঁয়ে সেঁটে থাকা শুভেচ্ছা বার্তায়। " আমার প্রিয়াকে, বিশেষ দিনে, ভালোবাসান্তে, বি।" উপস্থিত সক্কলে তাতাইয়ের রোম্যান্টিকটার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। " ওরে তুয়া, এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলছি, প্রথম বছর বলেই এত সব আয়োজন। দেখবি এরপর ঘর কা মুর্গা, ডাল বরাবর কেস হয়ে যাবে", " যতদিন পারিস আঁচলে বেঁধে বেঁধে রাখ, বুঝলি?" ইত্যাদি উপদেশ, শলা পরামর্শে তুয়া নাজেহাল। একটু যে আলাদা করে তাতাইকে ধন্যবাদ জানাবে এমন সুন্দর সারপ্রাইজের জন্য, সুযোগই নেই। থাক, একেবারে রাত্রে, সবাই চলে গেলে, নিজেদের একান্ত সময়ে না হয়...
তাতাই অর্থাৎ বিক্রম মুখোপাধ্যায় কিছুতেই মনেই করতে পারল না এমন উপহার অর্ডার করার ব্যাপারে। না, তনিশক থেকে গোলাপের পেন্ডেন্ট কিনেছে বটে কারণ তুয়ার প্রিয় ফুলই গোলাপ, দিয়েও দিয়েছে সেটি সকালেই ওকে। কিন্তু এই এতগুলো আসল গোলাপ... হিসেব মিলছে না যে। তাহলে কি অন্য কেউ? "ভালোবাসান্তে", "প্রিয়া"... মনটা খচখচ করছে। তুয়ার দূর থেকে ছুঁড়ে দেওয়া মিষ্টি হাসির উত্তরে দায়সারা একটা মাথা নাড়ানো ছাড়া আর কিছুই দিতে পারল না তাতান।
সবার অলক্ষ্যে গেটের বাইরে থেকে চলে গেল একটা কালো কাচ তোলা গাড়ি। পাঁচ বছর আগের ঠকানোর প্রতিশোধটা... রিভেঞ্জ লিস্টে দাগ কাটতে পারার উল্লাসে তখন আরোহী উন্মত্ত।
সাজানো চিত্রনাট্যে বিচ্ছেদ ঘটল হঠাৎই। ক্যুরিয়ার সার্ভিসের একটি ছেলের আগমনে। একটা বিশাল বড় লাল গোলাপের তোড়া আর তার গাঁয়ে সেঁটে থাকা শুভেচ্ছা বার্তায়। " আমার প্রিয়াকে, বিশেষ দিনে, ভালোবাসান্তে, বি।" উপস্থিত সক্কলে তাতাইয়ের রোম্যান্টিকটার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। " ওরে তুয়া, এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলছি, প্রথম বছর বলেই এত সব আয়োজন। দেখবি এরপর ঘর কা মুর্গা, ডাল বরাবর কেস হয়ে যাবে", " যতদিন পারিস আঁচলে বেঁধে বেঁধে রাখ, বুঝলি?" ইত্যাদি উপদেশ, শলা পরামর্শে তুয়া নাজেহাল। একটু যে আলাদা করে তাতাইকে ধন্যবাদ জানাবে এমন সুন্দর সারপ্রাইজের জন্য, সুযোগই নেই। থাক, একেবারে রাত্রে, সবাই চলে গেলে, নিজেদের একান্ত সময়ে না হয়...
তাতাই অর্থাৎ বিক্রম মুখোপাধ্যায় কিছুতেই মনেই করতে পারল না এমন উপহার অর্ডার করার ব্যাপারে। না, তনিশক থেকে গোলাপের পেন্ডেন্ট কিনেছে বটে কারণ তুয়ার প্রিয় ফুলই গোলাপ, দিয়েও দিয়েছে সেটি সকালেই ওকে। কিন্তু এই এতগুলো আসল গোলাপ... হিসেব মিলছে না যে। তাহলে কি অন্য কেউ? "ভালোবাসান্তে", "প্রিয়া"... মনটা খচখচ করছে। তুয়ার দূর থেকে ছুঁড়ে দেওয়া মিষ্টি হাসির উত্তরে দায়সারা একটা মাথা নাড়ানো ছাড়া আর কিছুই দিতে পারল না তাতান।
সবার অলক্ষ্যে গেটের বাইরে থেকে চলে গেল একটা কালো কাচ তোলা গাড়ি। পাঁচ বছর আগের ঠকানোর প্রতিশোধটা... রিভেঞ্জ লিস্টে দাগ কাটতে পারার উল্লাসে তখন আরোহী উন্মত্ত।
Thursday, March 8, 2018
নারী দিবস
নারী দিবস
আজ সকাল থেকেই নারীদিবসের শুভেচ্ছায় ফোন ভরে গিয়েছে। সর্বত্রই এক বার্তা। "Happy women's day", ব্যাপারটা ভাবাতে লাগল আমায়। এটা কি নারী দিবসের শুভেচ্ছা? নাকি আজ শুধুমাত্রই "happy" নারীদের দিন? কীসের উদযাপন আজ?
কারা বলুন তো এই "হ্যাপি উইমেন"? চলুন তো এমন কয়েকজনের কথা শুনি।
১।
ডিসেম্বর ১৬২৯। দক্ষিণ জার্মানির ব্যাম্বারগ শহর। ডরোথিয়া ফ্লক শহরের কাউন্সিলরের দ্বিতীয় স্ত্রী। কিছু মাস আগে গ্রেপ্তার হন ব্যভিচারের দায়ে। পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু এইবারে গ্রেপ্তার হন ডাইনি সন্দেহে। তিনি এখন অন্তঃসত্ত্বা। কারাগারে চলছে অকথ্য অত্যাচার। সর্বক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকা। এরই মধ্যে স্বামী ও পরিবারের অন্যদের সাহায্যে অবশেষে ছাড়া পেলেন। জন্ম দিলেন একটু সুস্থ শিশুর।
২।
সালটা ১৬৩১ কিংবা ৩২। শাহ জাহান তখন আগ্রাতে মোগল সাম্রাজ্যের অধিপতি। বাংলায় কিছু বিদ্রোহী সবে মাথা তুলতে শুরু করেছে। সম্রাটের নির্দেশ গেলো বাংলাতে সাম্রাজ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠার। রক্তারক্তি, মারামারি, লুণ্ঠন সব চলল। সমস্ত বিদ্রোহী পুরুষকে হত্যা করল রাজ সৈন্য। এরপর সব পরাজিত নারী ও শিশুদের দোল বেধে নিয়ে আসা হল আগ্রায়। সসম্মানে তাঁদের এক নতুন জীবন দিতে।
৩।
১৮১২। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে এক ছোট্ট গ্রাম পলাশপুর। কুলীন ব্রাহ্মণ ঘরে বিয়ে হয়ে এলো নয় বছরের কেতকী। স্বামীটি এর আগে আরো তিন চারটি বিয়ে করেছেন। সেই স্ত্রীরা অবশ্য প্রত্যেকেই বার্ধক্য ও রোগভোগের পর মারা গিয়েছেন। স্বামীটিও বিশেষ সুস্থ নন। বয়স ষাটের ওপর। একদিন হঠাৎ জ্বরে কাবু হলেন। সাতদিন ভুগে তিনিও ইহলোকের মায়া ত্যাগ করলেন। গ্রামের মাথারা সবাই ঠিক করতে বসলেন কেতকীর ভবিষ্যৎ। ওর বাবাকে ডেকে মেয়েকে নিজের কাছে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ এলো। সাথে এও বলা হল, ওকে যেন এখন বিশ্বম্ভর পন্ডিতের টোলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। মেয়েটা লেখাপড়া শিখুক, বাঁচুক।
৪।
বরোদা শহরের পনেরো বছরের ইনসিয়ার কথা তো জানেন? কেন? সিক্রেট সুপারস্টারে দেখলেন যে ওকে? কত সুন্দর গান করে। গিটার বাজিয়ে। প্রথম প্রথম তো ওর মা নাজমা লুকিয়ে ল্যাপটপ কিনে দিয়েছিলেন ওকে। তারপর ও ইউটিউবে গানের চ্যানেল করেছিল নিজের। মায়ের উৎসাহ ছিল সারাক্ষণ। কিন্তু একদিন যেই আব্বু জানলেন মেয়ের এমন প্রতিভার কথা, গর্বে বুক ফুলে গেল।
মুখ ঢেকে আর ক্যামেরার সামনে আসতে হবেনা ইনসিয়াকে। আর তাই ইনসিয়ার আর সিক্রেট সুপারস্টার চ্যানেলটা নেই। সেই জায়গায় এখন ওর নতুন চ্যানেল। "বরোদা সিঙ্গিং স্টার"। আব্বু প্রতিটা ভিডিয়ো ক্যামেরাবন্দী করেন।
অবাক হচ্ছেন? এরকম যে অনেক অনেক এমন "happy women" আছে আমাদের দেশে।
বিঃ দ্রঃ ওপরে লেখা প্রতিটি লেখার আসল শেষগুলো জানতে চান? শুনবেন?
১। পরিবারের অসীম প্রচেষ্টায় অবশ্যই ডরোথিয়ার মুক্তির নির্দেশ আসে। কিন্তু সেই বার্তাবাহকের এসে পৌঁছনোর ঠিক আধ ঘণ্টা আগে মেরে ফেলা হয় ওঁকে। হাজার হাজার "ডাইনি"র মত।
২। সেই সমস্ত নারী ও শিশুদের বিলিয়ে দেওয়া হয় সম্রাটের আমীরদের মধ্যে। নিজেদের হারেমে রাখার জন্য। বা ক্রীতদাসীর মত। কীভাবে "ব্যবহার" করবেন সম্রাটের এই "উপহার", সম্পূর্ণ তাঁদের মর্জি।
৩। কেতকীর হাত পা বেঁধে মাদক সেবন করিয়ে স্বামীর লেলিহান চিতায় ফেলে দেওয়া হয়। পাশে বাজতে থাকে কাঁসর। ঢাক। ঢোল। বাঁচার জন্য মেয়েটির আকুল কাকুতি মিনতি চীৎকার, কেউ শুনতেই পেলোনা।
৪। সিনেমায় তো দেখেইছেন। আর কী বলি নতুন করে?
Tuesday, March 6, 2018
মায়েরা সব বোঝে
#অণুগল্প
#মায়েরা_সব_বোঝে
শ্রুতির ঘর থেকে অ্যালার্মের শব্দ ভেসে আসছে অনেকক্ষণ ধরে। করেটা কী মেয়েটা? "অ্যালার্ম লাগাস আর উঠতে পারিস না?" দুধের প্যাকেটটা গেট থেকে নিয়ে গজগজ করতে করতে রুণা ঢুকলেন মেয়ের ঘরে। এসে তো থ। মেয়ে আজ সক্কাল সক্কাল নিজেই উঠে পড়েছে। বাথরুম বন্ধ, কল থেকে জল পড়ার আওয়াজ আসছে।
" ব্যাপার কী? অ্যালার্মের আগে উঠে এক্কেবারে স্নান? কোথাও বেরোবি নাকি?"
" ও মা, প্লীজ অ্যালার্মটা অফ করে দাও। ভুলে গিয়েছি কাটতে। সোনা মা। "
" সে দিচ্ছি। "
" থ্যাঙ্ক ইউ মা! লাভ ইউ! "
" হয়েছে। এবার তাড়াতাড়ি স্নান করে বেরো। এই সাতসকালে স্নান করছিস, ঠাণ্ডা লেগে যাবে। বেরিয়ে বল, কোন শাড়িটা চাই আজ।"
" কী করে বুঝে যাও? "
" মা টা কে শুনি? আমি না তুই?"
স্নান সেরে বেরিয়ে আলমারি থেকে মায়ের শাড়ির স্টক ঘেঁটে শেষমেশ একটা ময়ূরকণ্ঠী নীল রঙের পাটোলা বাছল শ্রুতি।
" মা, তোমার ওই পার্ল সেটটা প্লীজ দেবে? ভালোই মানাবে।"
" দিচ্ছি।"
"দাঁড়া, খোঁপাটা ঠিক করে দিই। কী কাকের বাসার মত করে রেখেছিস বল তো চুলটা?"
" ছাড়ো না, এটা একটা স্টাইল। দেরি হয়ে যাবে। সবাই ওয়েট করছে।"
" সবাই অপেক্ষা করবে। দু মিনিট। "
" ওয়াও, ভালো সেট করলে তো?"
" তাহলে?? দেখিস অভ্রর ভালো লাগবে। অ তো একটু সাবেকী খেয়ালের।"
" কী হল? হাঁ করে কী দেখছিস? কী করে বুঝলাম? আরে বাবা, আমি বললাম তো। আমি মা না? যা, বেশী দেরি করিস না। ফোন করিস।"
Sunday, March 4, 2018
আমার রবিবার
আমার রবিবার
রবিবার মানেই মনে পড়ে যায় অনেক ছোটবেলায় মায়ের হাত ধরে রিক্সা চেপে গীতালি আন্টির নাচের স্কুলে যাওয়া। কী জঘন্যই না লাগত বাবা রে। ওই সক্কাল সক্কাল কত্থকের বোলের তালে তালে নাচা। একদম ভালো লাগত না।
এরপরে নাচের ব্যাপারে আমার চরম অনীহা টের পেয়ে মা বাবা ভাবলেন মেয়েকে তাহলে নাচ থেকে মুক্তি দেওয়াই যায়। আমি ভাবলাম বুঝি যাক বাঁচা গেলো। রবিবার, আনন্দে কাটবে। টিভিতে মহাভারত, স্কুল ডেজ দেখা যাবে। ও মা, সে কপালে নেই। বাঙালি মধ্যবিত্ত বাড়ি। তাঁরা ঠিক করলেন, আঁকার স্কুলে ভর্তি করবেন। ব্যস, শুরু হল বাড়ির কাছেই, বকুল আর্ট স্কুলে প্রত্যেক রবিবার আঁকার ক্লাস। সেও যেতে ভালো লাগত না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতাম। রিক্সা করে যদি পিউ যেত, তাহলে আমি যেতাম। নইলে ডুব! কিছু মাসের মধ্যে অবশ্য সেখান থেকেও মুক্তি পেয়েছিলাম। তবে রবিবারে মানেই কিছু না কিছুর টিউশান লেগেই থাকতো।
সেই টিউশান ক্লাস শুরু হয়েছিল ক্লাস নাইন থেকে। চলল টুয়েলভ অবধি। লাইফ সায়েন্স ক্লাস। শুরু হতো সকাল নটায়, চলতো একটা দেড়টা অবধি। যদিও ক্লাস করতে খুবই ভালো লাগত, তবুও সকাল সকাল ব্রেকফাস্টে কয়েকটা লুচি দিয়ে ছোলার ডাল খেয়ে এসে সাড়ে বারোটার পর থেকে পেট চুঁইচুঁই করতে লাগত। তার ওপর মাথার মধ্যে ঘুরত, বাড়ি গিয়ে মাংসের ঝোল ভাত রয়েছে। সেই সব মাথায় নিয়ে কী আর ফটোসিন্থেসিস, রেস্পিরেশন, গ্রোথ, এসব মাথায় ঢোকে?
রবিবার মানেই ভালো খাবার। ব্রেকফাস্টে অন্যদিন যখন পাউরুটি মাখন আর সাথে অম্লেট নয়তো সন্দেশ, তখন রবিবার স্পেশাল। মায়ের সাথে হাতে হাতে লুচি বেলা আর ভাজা। মনে আছে, আমার একটা নিজস্ব ছোট্ট বাটি ছিল, ওটাতেই আমার জন্য ছোলার ডাল বা ঘুগনি যাই হতো না কেন, সেটাতে পরিবেশন করা হত। এখনো বাড়ি গেলে তাতেই হয়। দুপুরবেলা মাংসের ঝোল ভাত যেন ম্যান্ডেটরি। প্রেশার কুকারে মা বানাতেন, আলু আর কাঁচা পেঁপে দিয়ে পাতলা ঝোল। প্রেশারের ঢাকনা খুললেই একটা বিটকেল গন্ধ বেরোত, ঠাকুমা বলতেন "বাথ্রুমের গন্ধ"। বিকেল হলে বাবাকে রাজি করিয়ে পাড়ার রোলের দোকান (সে দোকান কখনো আবার খাবো, কখনো তাঞ্জোর, কখনো জায়ন জেস্ট) থেকে ঝাল ঝাল প্রচুর কাঁচা পিঁয়াজ দেওয়া আর অনেকটা টমেটো আর চিলি সস দেওয়া এগ রোল খাওয়া। সন্ধ্যেবেলা সেসব খেয়ে অবধারিতভাবেই রাত্রে কম খিদে। আর তাই অল্প করে একটু ভাত আর সাথে সকালের বানানো মাংসের এক টুকরো আর ঝোল। কখনো কখনো আবার রবিবার বিকেলগুলো যেতাম পিউদের বাড়ি। ওর সাথে খেলতাম। ওর ঠাকুমার ঘরে, খাটের পাশে বসে, বারান্দায় চলতো আমাদের লুকোচুরি খেলা, রান্নাবাটিও। ওদের তখন কেবিল টিভি। কখনো বসে টিভিও দেখতাম। জানিনা কেন, তবুও খালি মনে আছে, রাজু চাচা সিনেমাটা দেখেছিলাম খানিকটা। ওর বাবা চিকেন পকোড়া আনতেন আমাদের জন্য, সে স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।
ইলেভেন টুয়েলভে উঠে টিউশানের বহর বাড়ল। সকালের লাইফ সায়েন্স টিউশান তো ছিলই। তার সাথে যোগ হল বিকেলবেলা করে পাথফাইন্ডারে গিয়ে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রিপারেশন নেওয়া। সেই সব দিন, ওরে বাবা। ভাবলেই ভয় লাগে। প্রত্যেক রবিবার গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া। তার সাথে সাথে আগেরদিনের পরীক্ষার নম্বর পাওয়া। সেই ঝুলিতে বেশিরভাগ দিনই মাইনাসে নম্বর। সেই সব খাতা লুকিয়ে রাখা। গ্রেড শিট ব্যাগের কোণে ফেলে রাখা। রবিবার মানে যেন তখন লুকোচুপি।
ভাগ্যিস তারপর রবিবারগুলো আর টিউশন থাকত না। তখন সারা দুপুর লম্বা ভাতঘুম দিয়ে বিকেল চারটে বাজলে ডি ডি বাংলা চালিয়ে সাদা কালোতে উত্তম সুচিত্রা দেখার পালা। সুপারহিট মুকাব্লা দেখতাম। দেখতাম স্কুল ডেজ, কেন জানিনা শক্তিমান দেখার তেমনভাবে কখনোই ইচ্ছে হতনা। পরবর্তীকালে বাড়িতে যখন কেবিল এলো (আমার বি এস সি তে ভর্তির পর), তখন সারা দিন সাব টিভিতে তারক মেহতা কা উলটা চশমা দেখা। সে নেশা এখনো আছে। কলকাতায় থাকাকালীন এরপর রবিবারগুলো মোটামুটি একঘেয়েই কাটত। পরেরদিনের কোন হোমওয়ারক থাকে সেগুল শেষ করা, কলেজে মান্ডে টেস্ট থাকলে তার পড়া তৈরি করা।
চেন্নাই আসার পর, এই একটিমাত্র দিন যেদিন ছুটি। যখন ইচ্ছে ঘুম থেকে ওঠো, হোস্টেল জীবন। কেউ কিছু বলার নেই। আর তাই শনিবার অনেক রাত অবধি জেগে জেগে হয় গল্পের বই পড়তাম, নয় সিনেমা দেখতাম। তারপর কোনমতে নটায় ঘুম থেকে উঠে নীচে নেমে ব্রেকফাস্ট সেরে আবার আরেক প্রস্থ ঘুম। এখন তো তাও করিনা। যখন ঘুম ভাঙ্গার, ভাঙ্গে। ঘরে খুচখাচ খাবার রাখি। মেসেও যাইনা আদ্ধেক রবিবার। এখন রবিবার সকালগুলো কাটে বন্ধুদের সাথে স্কাইপ, বাড়িতে দু তিনবার ফোন আর এমনিই ল্যাধ খেয়ে।খুব কম দিন কাজের চাপ থাকলে খানিকক্ষণ ল্যাবেও যেতে হয়। নইলে সারাদিন এত ঝিমোই, গল্পের বইয়ের হয়তো চল্লিশ পাতাও পড়া হয়না। খুব পছন্দের কোন সিনেমা রিলিজ করলে সকাল সকাল সিনেমা হলে চলে যাই, দেখে আসি। নইলে কখনো বা ল্যাপটপে কোন প্রিয় সিরিজ (যেমন ফ্রেন্ডস) দেখি। বই পড়ি বা ফেসবুকে লোকজনের লেখালিখি যখন পড়ি, ব্যাকগ্রাউন্ডে রবীন্দ্রসঙ্গীত চলতেই থাকে। আসলে তাতে একটা বেশ বাড়ি বাড়ি ভাব আসে। খুব ইচ্ছে হলে দুপুরে কোথাও খেতে যাই। বিকেল হলেই কেমন একটা মন কেমনিয়া ভাব এসে যায়। সেটা কাটাতে মাঝে মাঝে হাঁটাহাঁটি করি। আমাদের ক্যাম্পাসটা খুব সুন্দর তো, বেশ লাগে। খুব কম বার, কিন্তু কিছু রবিবার কাছে পিঠে ঘুরতেও গিয়েছি।
এই তো এমনভাবেই রবিবারগুলো কেটে যায়। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন জায়গায় রবিবার কাটানোর সরঞ্জাম পালটায় বটে। তবে কিছু মূল জিনিস এক থেকে যায়। ঘুম। আরাম। খাওয়াদাওয়া। কখনো কখনো কোন পেন্ডিং কাজ থাকলে সেগুলো সেরে ফেলা। সোশ্যালাইজ করা। তারপর আর কী, আবার পরের রবিবারের জন্য পথ চেয়ে বসে থাকা।
Saturday, March 3, 2018
ভালোবাসাবাসি ২
"আমি না তোকে খুব ভালোবাসি। তুইও কী বাসিস?" এক্সেল শিটে টাকাপয়সার হিসেব করতে বসে দোয়েলের প্রশ্নে একটু অবাকই হয়েছিল নীল। এ আবার কেমন প্রশ্ন, নীল আর দোয়েল তো সেই কোন ছোট্টবেলার বন্ধু, গলায় গলায় ভাব, "পারটনারস ইন ক্রাইম" গোছের। দোয়েল বরাবরই একটু গেছো ধরণের, অনেকটা কুছ কুছ হোতা হ্যায়তে প্রথমার্ধে কাজলের চরিত্রের মত। তার কাছ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে, তাও হঠাৎই কলেজ ফেস্টের মিটিং করতে গিয়ে, একদম ভাবতেই পারেনি। একটু থতমত খেয়ে নীল বলেছিল, "এ আবার কী প্রশ্ন? বেস্ট ফ্রেন্ড না তুই আমার? তোকে তো ভালবাসবোই।" দোয়েল কিচ্ছু বলেনি, হাল্কা হেসে কোনরকমে সেদিনের মত কাজ শেষ করে চলে গিয়েছিল। এরপর ফেস্টের নানান কাজের ব্যস্ততার অছিলায় আর পরে ফাইনাল পরীক্ষা, কোচিং ক্লাস সব মিলিয়ে নীল আর দোয়েলের একসাথে তেমন ভাবে আর কিছুই করা হয়ে ওঠেনি। ক্যাটে ভালো রেজাল্ট করে দুজনেই এম বি এ পড়তে চলে গেল এদিক সেদিক, একজন শিলং, আরেকজন রাঁচি। যোগাযোগটা রয়ে গিয়েছিল কেবলমাত্র ফেসবুকেই।
পড়া শেষ, তারপর শুরু হল চাকরিজীবন। কপাল জোরে দুজনেই পোস্টিং পেলো চেন্নাইতে। মাঝে ঝিমিয়ে যাওয়া বন্ধুত্বটাও পেলো নতুন অক্সিজেন। সপ্তাহান্তে দেখাসাক্ষাৎ, সিনেমা, রেস্টুরেন্ট। কখনো বা লঙ উইকেন্ডে পন্ডিচেরি বা ইয়ারকাড। দিব্যি চলছিল। তবুও কোথায় যেনসব আগের মত হয়েও যেন ঠিক তা না। দোয়েল এখন অনেক হিসেবি। হাসলে চোখের কোণে ভাঁজ পড়েনা, হাসতে হাসতে পেটে ব্যথাই করেনা। খুনসুটি তো ভুলেই গিয়েছে! নীলও ঘাঁটায় না। বন্ধুত্বের মধ্যে একটা ব্যর্থ প্রেমের প্রচেষ্টা এসে গেলে যেন কেমন তাল কাটা, বেসুরো হয়ে যায় গোটা ব্যাপারটাই। আগের মত সেই প্রাণখোলা ভাবটাই যে কোথায় হারিয়ে গিয়েছে।
কর্পোরেট জীবনে নিঃশ্বাস ফেলার জো নেই, দুজনের যোগাযোগও একটু কমেছে। প্রায় মাস খানেকের ওপর কথাবার্তা হয়নি দুজনের। হঠাৎ দোয়েলের ফোনে একটা ছোট্ট মেসেজ ঢুকল, "কেমন আছিস রে? আমি তো গত সাত দিন ধরে গৃহবন্দী। জ্বর।" দোয়েল অনেকদিন পর একটু ফুরসৎ পেয়ে ওর রঙের সরঞ্জাম নিয়ে সবে বসেছিল, বহু সপ্তাহ আগে এঁকে রাখা একটা ছবিতে রঙ বাকি। নীলের মেসেজ পেয়ে সব ফেলে কোনক্রমে চুলে চিরুনি চালিয়ে, হ্যান্ডব্যাগ আর ফোন সাথে নিয়ে দৌড়ে নীচে নেমে অটো ধরল। "আন্না, পেরাঙ্গুডি।"
ট্রাফিক জ্যাম পেরিয়ে যখন রাত্তির দশটা নাগাদ দোয়েল পৌঁছল নীলের বাড়ি, ভয়ে চিন্তায় ও তখন ঠকঠক করে কাঁপছে। দুবার বেল বাজানোর পর দরজার ওপারে দেখল নীলকে। অবিন্যস্ত চুল, মুখে কদিনের না কাটা দাড়ি। কপালে হাত দিয়ে জোর ছ্যাঁকা খেয়ে "আগে জানাতে পারিসনি হতভাগা?" বলে নীলের বুকের ওপর মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠল দোয়েল।
"আচ্ছা, হয়েছে। ঠিক আছি আমি। তুই থাম এবার।"
"জ্বরে গা একেবারে পুড়ে যাচ্ছে। ওষুধ খেয়েছিস?"
"হুম, সবে। সময় লাগবে। ডাক্তার বলেছেন, চিন্তার কারন নেই। ভাইরাল।"
পরম যত্ন সহকারে এরপর দোয়েল নীলের কপালে জলপট্টি দিয়ে ওর জ্বরটা নামাল। আরাম পেয়ে নীলের দু চোখ জুড়ে এলো রাজ্যের ঘুম। ঘুমন্ত নীলের মুখে এক অপার শান্তির হাসি, পরম পরিতৃপ্তি। দোয়েল নীলের খাটের পাশেই বসে রাতটা কাটাবে ঠিক করল। কোন এক সময়ে ওর দু চোখেও নেমে এসেছিল ঘুম। ভোরের আলো ফুটতে চোখ মেলে উঠতে গিয়ে দোয়েল খেয়াল করল, নীল শক্ত করে ওর হাতটা নিজের মুঠোর ভিতর রেখেছে। ছাড়াতে গেলে টের পেল, পারছেনা। নীলের দিকে তাকাতে দেখল, ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মুখে সেই আগের মত দুষ্টু হাসি।
"কী রে, ছাড় হাতটা। উঠতে দে।"
"দেবো, আগে একটা কথার উত্তর দে?"
"কী?"
"তুই কী এখনো আমায় ভালোবাসিস?"
দোয়েলের মুখে নেমে আসে বিশাদের ছাপ। কিচু বলেনা উত্তরে।
"বল না প্লীজ?"
"নীল, অনেকগুলো বছর পার হয়ে গিয়েছে। এখনো?"
"আমি তো সেটাই জানতে চাইছি দোয়েল, এখনো?"
"যদি বলি না?"
"তাহলে ইমিডিয়েটলি বই লেখা শুরু করবো। দ্য বিগেস্ট রিগ্রেট ইন মাই লাইফ নাম দিয়ে।"
"আর যদি বলি হ্যাঁ?"
"বলেই দেখ না!"
"বেশ, এবারের মত বই লেখা থেকে নিস্তার।"
"আমি একটা মস্ত বড় ইডিয়ট। গাধার মত চোখের সামনে থাকা হীরে ফেলে আমি নুড়ি পাথর কুড়োচ্ছিলাম এতদিন। অনেক হয়েছে, আর ছেড়ে যাস না আমায়। প্লীজ? থাকবি তো? আর হ্যাঁ, ক্ষমা করিস এ কবছরের জন্য। আমি একটা মর্কট।"
"হ্যাঁ, সে আর বলতে!"
"কী? আমি মর্কট?"
"ও মা তুই নিজেই তো এক্ষুনি বললি!"
..................
ওদের খুনসুটি, হাসি, পিলো ফাইটের তুলো সব মিলিয়ে তখন আকাশ বাতাস মুখরিত।
পড়া শেষ, তারপর শুরু হল চাকরিজীবন। কপাল জোরে দুজনেই পোস্টিং পেলো চেন্নাইতে। মাঝে ঝিমিয়ে যাওয়া বন্ধুত্বটাও পেলো নতুন অক্সিজেন। সপ্তাহান্তে দেখাসাক্ষাৎ, সিনেমা, রেস্টুরেন্ট। কখনো বা লঙ উইকেন্ডে পন্ডিচেরি বা ইয়ারকাড। দিব্যি চলছিল। তবুও কোথায় যেনসব আগের মত হয়েও যেন ঠিক তা না। দোয়েল এখন অনেক হিসেবি। হাসলে চোখের কোণে ভাঁজ পড়েনা, হাসতে হাসতে পেটে ব্যথাই করেনা। খুনসুটি তো ভুলেই গিয়েছে! নীলও ঘাঁটায় না। বন্ধুত্বের মধ্যে একটা ব্যর্থ প্রেমের প্রচেষ্টা এসে গেলে যেন কেমন তাল কাটা, বেসুরো হয়ে যায় গোটা ব্যাপারটাই। আগের মত সেই প্রাণখোলা ভাবটাই যে কোথায় হারিয়ে গিয়েছে।
কর্পোরেট জীবনে নিঃশ্বাস ফেলার জো নেই, দুজনের যোগাযোগও একটু কমেছে। প্রায় মাস খানেকের ওপর কথাবার্তা হয়নি দুজনের। হঠাৎ দোয়েলের ফোনে একটা ছোট্ট মেসেজ ঢুকল, "কেমন আছিস রে? আমি তো গত সাত দিন ধরে গৃহবন্দী। জ্বর।" দোয়েল অনেকদিন পর একটু ফুরসৎ পেয়ে ওর রঙের সরঞ্জাম নিয়ে সবে বসেছিল, বহু সপ্তাহ আগে এঁকে রাখা একটা ছবিতে রঙ বাকি। নীলের মেসেজ পেয়ে সব ফেলে কোনক্রমে চুলে চিরুনি চালিয়ে, হ্যান্ডব্যাগ আর ফোন সাথে নিয়ে দৌড়ে নীচে নেমে অটো ধরল। "আন্না, পেরাঙ্গুডি।"
ট্রাফিক জ্যাম পেরিয়ে যখন রাত্তির দশটা নাগাদ দোয়েল পৌঁছল নীলের বাড়ি, ভয়ে চিন্তায় ও তখন ঠকঠক করে কাঁপছে। দুবার বেল বাজানোর পর দরজার ওপারে দেখল নীলকে। অবিন্যস্ত চুল, মুখে কদিনের না কাটা দাড়ি। কপালে হাত দিয়ে জোর ছ্যাঁকা খেয়ে "আগে জানাতে পারিসনি হতভাগা?" বলে নীলের বুকের ওপর মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠল দোয়েল।
"আচ্ছা, হয়েছে। ঠিক আছি আমি। তুই থাম এবার।"
"জ্বরে গা একেবারে পুড়ে যাচ্ছে। ওষুধ খেয়েছিস?"
"হুম, সবে। সময় লাগবে। ডাক্তার বলেছেন, চিন্তার কারন নেই। ভাইরাল।"
পরম যত্ন সহকারে এরপর দোয়েল নীলের কপালে জলপট্টি দিয়ে ওর জ্বরটা নামাল। আরাম পেয়ে নীলের দু চোখ জুড়ে এলো রাজ্যের ঘুম। ঘুমন্ত নীলের মুখে এক অপার শান্তির হাসি, পরম পরিতৃপ্তি। দোয়েল নীলের খাটের পাশেই বসে রাতটা কাটাবে ঠিক করল। কোন এক সময়ে ওর দু চোখেও নেমে এসেছিল ঘুম। ভোরের আলো ফুটতে চোখ মেলে উঠতে গিয়ে দোয়েল খেয়াল করল, নীল শক্ত করে ওর হাতটা নিজের মুঠোর ভিতর রেখেছে। ছাড়াতে গেলে টের পেল, পারছেনা। নীলের দিকে তাকাতে দেখল, ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মুখে সেই আগের মত দুষ্টু হাসি।
"কী রে, ছাড় হাতটা। উঠতে দে।"
"দেবো, আগে একটা কথার উত্তর দে?"
"কী?"
"তুই কী এখনো আমায় ভালোবাসিস?"
দোয়েলের মুখে নেমে আসে বিশাদের ছাপ। কিচু বলেনা উত্তরে।
"বল না প্লীজ?"
"নীল, অনেকগুলো বছর পার হয়ে গিয়েছে। এখনো?"
"আমি তো সেটাই জানতে চাইছি দোয়েল, এখনো?"
"যদি বলি না?"
"তাহলে ইমিডিয়েটলি বই লেখা শুরু করবো। দ্য বিগেস্ট রিগ্রেট ইন মাই লাইফ নাম দিয়ে।"
"আর যদি বলি হ্যাঁ?"
"বলেই দেখ না!"
"বেশ, এবারের মত বই লেখা থেকে নিস্তার।"
"আমি একটা মস্ত বড় ইডিয়ট। গাধার মত চোখের সামনে থাকা হীরে ফেলে আমি নুড়ি পাথর কুড়োচ্ছিলাম এতদিন। অনেক হয়েছে, আর ছেড়ে যাস না আমায়। প্লীজ? থাকবি তো? আর হ্যাঁ, ক্ষমা করিস এ কবছরের জন্য। আমি একটা মর্কট।"
"হ্যাঁ, সে আর বলতে!"
"কী? আমি মর্কট?"
"ও মা তুই নিজেই তো এক্ষুনি বললি!"
..................
ওদের খুনসুটি, হাসি, পিলো ফাইটের তুলো সব মিলিয়ে তখন আকাশ বাতাস মুখরিত।
Thursday, March 1, 2018
শুভ দোলযাত্রা
"গুড মর্নিং মাম্মাম।" সাত বছরের মিঠাইয়ের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তিতলির। হলো কী আজ? যে মেয়েকে কিনা রোজ অন্তত আধ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিছানা ছাড়াতে হয়, সে আজ এত সকাল সকাল নিজেই উঠে পড়েছে।
"হ্যাঁ রে মিঠা, আজ এত সক্কাল সক্কাল উঠলি যে? আমি তো সোয়া পাঁচটার অ্যালার্ম দিয়েছিলাম। তুই তারও আগে উঠে পড়েছিস?" তিতলি একটু অবাক হয়েই মেয়েকে জিজ্ঞেস করল।
"মাম্মাম, তাড়াতাড়ি না উঠলে রেডি হবো কীভাবে? টাইম লাগবে তো। আমি ফুলের মালাটা ফ্রিজ থেকে বের করে নিয়েছি। আনটি কিন্তু বলে দিয়েছেন, দেরি করলে খুব বকবেন।"
ও, এই ব্যাপার। মেয়ের মধ্যে এই উৎসাহ দেখে এক ছুট্টে বছর তিরিশ আগে পৌঁছে গেল তিতলি। কোন এক দোলের ভোরে, ওও তো সাত সকালে উঠে মায়ের কাছে লাল পাড় হলুদ শাড়ি পরে, মাথায় রাঙা পলাশ লাগিয়ে নাচতে বেরিয়েছিল, "ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল।" সুদূর ব্যাঙ্গালোরে বসে, মেয়েকে নাচের স্কুলের অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করতে গিয়ে আজ বারবার তিতলির মনে চলে যাচ্ছিল ওদের সেন্ট্রাল পার্কের বসন্তোৎসবে। কত গান, কত প্রভাতফেরী। কত আবির। কত আনন্দ।
আর সব শেষে সকলে মিলে "আজ খেলা ভাঙার খেলা"র তালে তালে নাচ। আজ হাফ ডে নিয়েছে তিতলি। মেয়ের মধ্যে দিয়েই দোলের আনন্দটুকু লুটেপুটে নিতে হবে যে।
"হ্যাঁ রে মিঠা, আজ এত সক্কাল সক্কাল উঠলি যে? আমি তো সোয়া পাঁচটার অ্যালার্ম দিয়েছিলাম। তুই তারও আগে উঠে পড়েছিস?" তিতলি একটু অবাক হয়েই মেয়েকে জিজ্ঞেস করল।
"মাম্মাম, তাড়াতাড়ি না উঠলে রেডি হবো কীভাবে? টাইম লাগবে তো। আমি ফুলের মালাটা ফ্রিজ থেকে বের করে নিয়েছি। আনটি কিন্তু বলে দিয়েছেন, দেরি করলে খুব বকবেন।"
ও, এই ব্যাপার। মেয়ের মধ্যে এই উৎসাহ দেখে এক ছুট্টে বছর তিরিশ আগে পৌঁছে গেল তিতলি। কোন এক দোলের ভোরে, ওও তো সাত সকালে উঠে মায়ের কাছে লাল পাড় হলুদ শাড়ি পরে, মাথায় রাঙা পলাশ লাগিয়ে নাচতে বেরিয়েছিল, "ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল।" সুদূর ব্যাঙ্গালোরে বসে, মেয়েকে নাচের স্কুলের অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করতে গিয়ে আজ বারবার তিতলির মনে চলে যাচ্ছিল ওদের সেন্ট্রাল পার্কের বসন্তোৎসবে। কত গান, কত প্রভাতফেরী। কত আবির। কত আনন্দ।
আর সব শেষে সকলে মিলে "আজ খেলা ভাঙার খেলা"র তালে তালে নাচ। আজ হাফ ডে নিয়েছে তিতলি। মেয়ের মধ্যে দিয়েই দোলের আনন্দটুকু লুটেপুটে নিতে হবে যে।
Subscribe to:
Posts (Atom)