Saturday, March 10, 2018

চিঙ্গারি কোই ভড়কে

পয়লা ফাল্গুন। তাতান আর তুয়ার প্রথম বিবাহবার্ষিকী। বেশ ধুমধাম করেই পালন হচ্ছে। বিয়ের সময়ে তাতানের ঠাকুমা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তখন নমো নমো করে বিয়েটা হয়েছিল। আর তাই বিবাহবার্ষিকী উদযাপনের ব্যবস্থাপনায় কোন কার্পণ্যই করেনি ওরা কেউই। দুই বাড়ির থেকে প্রচুর আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া প্রতিবেশীর সমাবেশে অনুষ্ঠান বাড়ি জমজমাট। ফিস ফ্রাই আর মাটন কষার সুবাস একদিকে যেমন জিভে জল এনে দিচ্ছে, তেমনই হালফিলের সমস্ত ঢিনচ্যাক গান ডিজে, নাচানাচি, হই হুল্লোড়ে সন্ধ্যেটা মোহময়ী। গোলাপী কাঞ্জিভরমের আঁচল ঠিক করার খসখস, বেল ফুলের মালার সৌরভ, জহর কোটের পকেটে গোলাপ গোঁজা, অভ্যাগত অতিথিদের সাথে হাসি বিনিময়, উপহার প্রাপ্তি, বেশ চলছিল। এরই ফাঁকে মাঝে মাঝে কপোত কপোতীর লুকিয়ে চুরিয়ে একটু আধটু খুনসুটিও বাদ পড়েনি। এদিক ওদিক কিছু গুজুর গুজুর ফিসফাস, হাল্কা ঝারি মারা, সেলফি তোলা, প্রফেশনাল ক্যামেরাম্যানের দামী ক্যামেরার সামনে পোজ দেওয়া, মোটামুটি একটা চেনা ছক, চেনা ছন্দ।
সাজানো চিত্রনাট্যে বিচ্ছেদ ঘটল হঠাৎই। ক্যুরিয়ার সার্ভিসের একটি ছেলের আগমনে। একটা বিশাল বড় লাল গোলাপের তোড়া আর তার গাঁয়ে সেঁটে থাকা শুভেচ্ছা বার্তায়। " আমার প্রিয়াকে, বিশেষ দিনে, ভালোবাসান্তে, বি।" উপস্থিত সক্কলে তাতাইয়ের রোম্যান্টিকটার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। " ওরে তুয়া, এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলছি, প্রথম বছর বলেই এত সব আয়োজন। দেখবি এরপর ঘর কা মুর্গা, ডাল বরাবর কেস হয়ে যাবে", " যতদিন পারিস আঁচলে বেঁধে বেঁধে রাখ, বুঝলি?" ইত্যাদি উপদেশ, শলা পরামর্শে তুয়া নাজেহাল। একটু যে আলাদা করে তাতাইকে ধন্যবাদ জানাবে এমন সুন্দর সারপ্রাইজের জন্য, সুযোগই নেই। থাক, একেবারে রাত্রে, সবাই চলে গেলে, নিজেদের একান্ত সময়ে না হয়...
তাতাই অর্থাৎ বিক্রম মুখোপাধ্যায় কিছুতেই মনেই করতে পারল না এমন উপহার অর্ডার করার ব্যাপারে। না, তনিশক থেকে গোলাপের পেন্ডেন্ট কিনেছে বটে কারণ তুয়ার প্রিয় ফুলই গোলাপ, দিয়েও দিয়েছে সেটি সকালেই ওকে। কিন্তু এই এতগুলো আসল গোলাপ... হিসেব মিলছে না যে। তাহলে কি অন্য কেউ? "ভালোবাসান্তে", "প্রিয়া"... মনটা খচখচ করছে। তুয়ার দূর থেকে ছুঁড়ে দেওয়া মিষ্টি হাসির উত্তরে দায়সারা একটা মাথা নাড়ানো ছাড়া আর কিছুই দিতে পারল না তাতান।
সবার অলক্ষ্যে গেটের বাইরে থেকে চলে গেল একটা কালো কাচ তোলা গাড়ি। পাঁচ বছর আগের ঠকানোর প্রতিশোধটা... রিভেঞ্জ লিস্টে দাগ কাটতে পারার উল্লাসে তখন আরোহী উন্মত্ত।

No comments:

Post a Comment