kajer loker meyer school jawa
mayeder internet e asha
biyer pore harmonium
যবে থেকে বকুলকে নিয়ে কাজের বাড়ি নিয়ে গিয়েছে মীনা, সেইদিন থেকে শুরু হয়েছে ওর জ্বালা। কেন যে মরতে সেদিন মেয়েকে নিতে গেলো, নেহাত শাশুড়ি ছিলনা, একা একা সারাদিন ওই কচি মেয়েটা থাকবে, না জানি কি করে ফেলবে, কোথায় বেরিয়ে হারিয়ে যাবে, সেই ভয়ে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বকুলকে সাথে নিয়ে বেরিয়েছিল। আর ব্যস। শুরু হল বিকেল থেকেই মেয়ের ঘ্যান ঘ্যান। গোটা রাস্তা জুড়ে "মা, আমিও ইস্কুল যাবো, মা আমিও নতুন জামা পরবো। আমি ল্যাখাপড়া শিখব।" ইত্যাদি। মেয়েকে তেমন ভাবে দোষও দেওয়া যায় না। এইটুকু বাচ্চা, যা দেখবে, তাইই সখ হবে। সক্কাল সক্কালই তো চারিদিকে লাল নীল সাদা শার্ট প্যান্ট স্কারট ব্লাউজ পরে বড় বড় বাসে করে স্কুলে যায় ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলো। মায়েরা বাবারা ঘুম ঘুম চোখে ওদের হাত নেড়ে স্কুলে পাঠায় এক নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য। মীনা তখনই দেখেছিল বকুলের চোখে মুখে বিস্ময়।
মীনারও ইচ্ছে কি তা বলে হয় না? নিজে লোকের বাড়ি বাড়ি ঠিকা কাজ করে বলে কি মেয়েকেও সেই একই হতে হবে? কিন্তু টাকা? ইস্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা? নতুন জামা বই? সি ব্লকের পাঁচতলার বৌদি ইংরেজি ইস্কুলে পড়ায়, সাহস করে বলে দেখিইনা, এই ভেবে সে আজ সকাল সকাল কথাটা পেড়েই দিল। " বৌদি, বলছি যে বকুল খুব ইস্কুলে যেতে চায়। কিছু ব্যবস্থা করতে পারো?"
" তা ভালো তো। ওকে স্কুলে দে। পাড়ায় পাড়ায় তো এত সরকারি স্কুল, তোদের বাড়ির দিকেও নিশ্চয়ই আছে। খোঁজ নে। শুরুতে যা টাকাপত্তর লাগবে, আমি না হয় দিয়ে দেবো। মাসে মাসে শোধ করে দিস সুবিধে মতো।"
বকুলের আনন্দ আর ধরে না। মা বিকেলে বাড়ি এসে ওর হাতে যখন একটা প্যাকেট ধরালো, ও প্রথমে "কী আছে এতে মা?" বলায় মা শুধু মুচকি হাসল। প্যাকেট থেকে যখন বেরোল চারটে বই আর দুটো খাতা, দুটো লাল কালো পেন্সিল আর একটা সাদা রবার, বকুলের মুখে বিস্ময় ফুটে উঠেছিল।
"কাল থেকে ইস্কুল যাবি। আমি সব কথা বলে এসছি। এবার খুশি তো?"
সারা সন্ধ্যে বকুল নতুন বই খাতা শুঁকতে শুঁকতেই কাটিয়ে দিল। নেহাত খাবার পড়ে বই নষ্ট হতে পারে, এই বলে বই থেকে আলাদা করা গেল বকুলকে। রাত্রে হাতের কাজ সেরে মীনা ঘরে ঢুকে দেখে মেয়ে বই আঁকড়ে ঘুমোচ্ছে, অচেতনে। পরম শান্তি চোখে মুখে। চুলে বিলি কাটতে কাটতে দেওয়ালে টাঙ্গানো মা কালীর ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে, "মা, মেয়েটাকে দেখো।"
No comments:
Post a Comment