Tuesday, March 13, 2018

ট্রুকলার



" হেলো, ইজ ইট মি ইউ আর লুকিং ফর?"

উফ, প্রতিদিন। প্রত্যেকদিন। ঠিক বিকেল তিনটে বাজবে। সবেমাত্র সুপ্রিয় ক্যাফেটেরিয়াতে চা খেতে আসবে, আর তক্ষুনি পকেটে রাখা ফোনটা বেজে উঠবে, অ্যালার্মের মতো। সেই একই নম্বর থেকে ফোন। ট্রুকলারে উঠবে, "স্প্যাম সুস্মিতা"। নেট না থাকলে নাম না উঠলেও এখন প্রতিদিন ওই এক নম্বর দেখে দেখে মুখস্থ হয়ে গিয়েছে ওর।

" নমস্কার স্যার, আমি হেলো বি জে এইচ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে সুস্মিতা কথা বলছি। আপনি কি এই মুহূর্তে কোন ইন্স্যুরেন্স পলিসির কথা ভাবছেন?"

খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, মান্থ এন্ড। এক পাহাড় কাজ, কোনমতে একটু মাথা ছাড়াতে এসেছে, তখন নাকি ইন্স্যুরেন্সের কথা ভাববে। যতসব।

" গুড আফটারনুন স্যার। আমি সুস্মিতা বলছি। আমাদের একটা নতুন হেলথ পলিসি শুরু হয়েছে। সেখানে এগারো মাসের টাকা আপনি দিলে বারো মাসেরটা কোম্পানি দেবে। "

" ও ম্যাডাম, আপনি বোঝেন না কেন? আমি সত্যিই ইন্টারেস্টেড নই। রোজ রোজ কেন ফোন করেন রে বাবা?"

" স্যার আসলে এরকম ভালো একটা স্কিম বেশিদিন থাকবেনা। স্পেশাল অফার চলছে। আপনি কাইন্ডলি শুনুন।"

" ধুত্তেরি, এটা গয়নার দোকান নাকি যে এগারো মাস দিলে বারো মাসেরটা ফ্রি? আপনি রাখুন।"

এরপর হয়তো দুদিন গ্যাপ। শনি আর রবি। তারপর আবার সোমবার। ঘড়ি ধরে ঠিক তিনটে বাজতেই, " স্যার, আমাদের একটা নতুন ক্যান্সার হেলথ পলিসি শুরু হয়েছে। আপনি শুধু একবার টারমসগুলো শুনুন।"

" আপনি ফোন রাখুন। আমি ইন্টারেস্টেড নই। আমার ক্যান্সার হয়নি। চৌদ্দ গুষ্টিতে কারুর ক্যান্সার হয়নি।"

"স্যার, হতে কতক্ষন। তখন কিন্তু এটা কাজে লাগবে। শুনুন, ক্যান্সারের অনেক খরচা।"

" এই যে শুনুন। অনেক হল। সমানে প্রত্যেকদিন আপনাকে বলে চলেছি, আমি এসবে ইন্টারেস্টেড না। ভদ্রভাবে বললে হয় না? আর একবার ফোন করে দেখুন, মজা দেখাচ্ছি।"

এপ্রেইজালের দিন। ম্যানেজারের মুখ থমথমে। কে জানে কী রেটিং দিলো, সেই নিয়ে টেনশন চলছে। তার মধ্যে এই ভ্যান্তারা, বিরক্তিকর। সুপ্রিয় বোঝে, এটা হয়তো ওই মেয়েটা বাধ্য হয়েই করে, কাজ। এমনি এমনি কেই বা যেচে রোজ কারুর মুখঝামটা খেতে যাবে। কিন্তু আজকেরটা বাড়াবাড়ি।

পরপর তিনদিন আর কোন ফোন আসেনি। চা খেতে গিয়ে বন্ধুদের থেকে, "কী রে, তোর মোহনবাঁশি বাজল না যে আজ?" শুনে সুপ্রিয় একটু হাসে। যাক, সেদিনের ডোজটা একটু কড়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাজে দিয়েছে।

শুক্রবার, উইকেন্ড মুড চারিদিকে। সুপ্রিয়র আজ একটু উড়ুউড়ু মন। মায়ের বান্ধবীর নিকটাত্মীয়ার সাথে কফি খেতে যাওয়ার কথা। সন্ধ্যেবেলা। কোথায় আর ঠিক কখন মিট করবে, সেটা মেয়েটি জানাবে। সারাদিন ধরে চাতক পাখির মতো ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে সুপ্রিয়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চেক করছে কোন মেসেজ ঢুকল কি না। পিতজা হাট, কে এফ সি, লাইফস্টাইল আর এইচ ডি এফ সি ক্রেডিট কার্ড ছাড়া আর কিছুই এলোনা। নিয়ম মতোই তিনটে নাগাদ ক্যাফেটেরিয়া যেতেই, অবাক কাণ্ড, ঠিক অ্যালার্মের মতোই আবার বেজে উঠল ফোন। স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ট্রুকলারে "স্প্যাম সুস্মিতা"। মরণ। আজ আর ঝগড়া করে মেজাজ খারাপ করতে ইচ্ছে করল না ওর। একটা রিং হতেই কেটে দিলো। আবার ফোন। আবার কেটে দিল। এরকম তিন চারবার হওয়ার পরও যখন পঞ্চম বার ফোন এলো, নম্বরটা ব্লক লিস্টে ফেলবে কি ফেলবে না ভাবতে ভাবতে ধরেই ফেলল। ধরেই, "কেটে দিচ্ছি মানে কথা বলতে আগ্রহী না, বুঝতে পারেন না? অদ্ভুত তো?" চিৎকার করে উঠল। কাটতে যাবে ফোন, এমন সময় ওদিক থেকে শুনতে পেল,

" এক মিনিট। একটা কথা শুনুন। তারপর ডিসাইড করবেন রাখবেন না ধরবেন। আমি সুস্মিতা। প্রীতি পিসি আমাকে আপনার নম্বর দিয়েছেন। আপনার মা জানেন। আমাদের আজ কফিশপে দেখা করার কথা, সেই নিয়ে কথা বলতেই ফোন করছি। আর আপনি অদ্ভুত মানুষ, সমানে কেটে দিচ্ছেন।"

" ইয়ে, মানে, সরি। আসলে বুঝতে পারিনি। ভেরি সরি। "

" রাখুন আপনার সরি। নেহাত পিসি দুঃখ পাবে, তাই। নইলে আপনার মতো অভদ্র একজনের সাথে কফি খেতে যাওয়ার আমার কোনমতেই ইচ্ছে নেই। "

" আমি আসলে বুঝিনি। বলছি তো, সরি। ভেরি সরি। কী করলে আপনি ক্ষমা করবেন বলুন?"

" লেক রোডের সি সি ডি তে চলে আসবেন ঠিক সাড়ে ছটা নাগাদ। আমাদের কোম্পানির অন্তত তিনটি পলিসি পেপারে আপনি সাইন করবেন। আর আজকের কফি বিলটা আপনি মেটাবেন। তবে ক্ষমা টমার কথা চিন্তা করব।"

" তাই সই।"


পুনশ্চঃ ছয় মাস পর সুপ্রিয়র জীবন এখন বেশ ভালোরকমই সুরক্ষিত। সব দিক দিয়েই।

No comments:

Post a Comment