Thursday, March 8, 2018

নারী দিবস

নারী দিবস

আজ সকাল থেকেই নারীদিবসের শুভেচ্ছায় ফোন ভরে গিয়েছে। সর্বত্রই এক বার্তা। "Happy women's day", ব্যাপারটা ভাবাতে লাগল আমায়। এটা কি নারী দিবসের শুভেচ্ছা? নাকি আজ শুধুমাত্রই "happy" নারীদের দিন? কীসের উদযাপন আজ?
কারা বলুন তো এই "হ্যাপি উইমেন"? চলুন তো এমন কয়েকজনের কথা শুনি।

১।
ডিসেম্বর ১৬২৯। দক্ষিণ জার্মানির ব্যাম্বারগ শহর। ডরোথিয়া ফ্লক শহরের কাউন্সিলরের দ্বিতীয় স্ত্রী। কিছু মাস আগে গ্রেপ্তার হন ব্যভিচারের দায়ে। পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু এইবারে গ্রেপ্তার হন ডাইনি সন্দেহে। তিনি এখন অন্তঃসত্ত্বা। কারাগারে চলছে অকথ্য অত্যাচার। সর্বক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকা। এরই মধ্যে স্বামী ও পরিবারের অন্যদের সাহায্যে অবশেষে ছাড়া পেলেন। জন্ম দিলেন একটু সুস্থ শিশুর।

২।
সালটা ১৬৩১ কিংবা ৩২। শাহ জাহান তখন আগ্রাতে মোগল সাম্রাজ্যের অধিপতি। বাংলায় কিছু বিদ্রোহী সবে মাথা তুলতে শুরু করেছে। সম্রাটের নির্দেশ গেলো বাংলাতে সাম্রাজ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠার। রক্তারক্তি, মারামারি, লুণ্ঠন সব চলল। সমস্ত বিদ্রোহী পুরুষকে হত্যা করল রাজ সৈন্য। এরপর সব পরাজিত নারী ও শিশুদের দোল বেধে নিয়ে আসা হল আগ্রায়। সসম্মানে তাঁদের এক নতুন জীবন দিতে।

৩।
১৮১২। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে এক ছোট্ট গ্রাম পলাশপুর। কুলীন ব্রাহ্মণ ঘরে বিয়ে হয়ে এলো নয় বছরের কেতকী। স্বামীটি এর আগে আরো তিন চারটি বিয়ে করেছেন। সেই স্ত্রীরা অবশ্য প্রত্যেকেই বার্ধক্য ও রোগভোগের পর মারা গিয়েছেন। স্বামীটিও বিশেষ সুস্থ নন। বয়স ষাটের ওপর। একদিন হঠাৎ জ্বরে কাবু হলেন। সাতদিন ভুগে তিনিও ইহলোকের মায়া ত্যাগ করলেন। গ্রামের মাথারা সবাই ঠিক করতে বসলেন কেতকীর ভবিষ্যৎ। ওর বাবাকে ডেকে মেয়েকে নিজের কাছে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ এলো। সাথে এও বলা হল, ওকে যেন এখন বিশ্বম্ভর পন্ডিতের টোলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। মেয়েটা লেখাপড়া শিখুক, বাঁচুক।

৪।
বরোদা শহরের পনেরো বছরের ইনসিয়ার কথা তো জানেন? কেন? সিক্রেট সুপারস্টারে দেখলেন যে ওকে? কত সুন্দর গান করে। গিটার বাজিয়ে। প্রথম প্রথম তো ওর মা নাজমা লুকিয়ে ল্যাপটপ কিনে দিয়েছিলেন ওকে। তারপর ও ইউটিউবে গানের চ্যানেল করেছিল নিজের। মায়ের উৎসাহ ছিল সারাক্ষণ। কিন্তু একদিন যেই আব্বু জানলেন মেয়ের এমন প্রতিভার কথা, গর্বে বুক ফুলে গেল। মুখ ঢেকে আর ক্যামেরার সামনে আসতে হবেনা ইনসিয়াকে। আর তাই ইনসিয়ার আর সিক্রেট সুপারস্টার চ্যানেলটা নেই। সেই জায়গায় এখন ওর নতুন চ্যানেল। "বরোদা সিঙ্গিং স্টার"। আব্বু প্রতিটা ভিডিয়ো ক্যামেরাবন্দী করেন।

অবাক হচ্ছেন? এরকম যে অনেক অনেক এমন "happy women" আছে আমাদের দেশে।

বিঃ দ্রঃ ওপরে লেখা প্রতিটি লেখার আসল শেষগুলো জানতে চান? শুনবেন?

১। পরিবারের অসীম প্রচেষ্টায় অবশ্যই ডরোথিয়ার মুক্তির নির্দেশ আসে। কিন্তু সেই বার্তাবাহকের এসে পৌঁছনোর ঠিক আধ ঘণ্টা আগে মেরে ফেলা হয় ওঁকে। হাজার হাজার "ডাইনি"র মত।

২। সেই সমস্ত নারী ও শিশুদের বিলিয়ে দেওয়া হয় সম্রাটের আমীরদের মধ্যে। নিজেদের হারেমে রাখার জন্য। বা ক্রীতদাসীর মত। কীভাবে "ব্যবহার" করবেন সম্রাটের এই "উপহার", সম্পূর্ণ তাঁদের মর্জি।

৩। কেতকীর হাত পা বেঁধে মাদক সেবন করিয়ে স্বামীর লেলিহান চিতায় ফেলে দেওয়া হয়। পাশে বাজতে থাকে কাঁসর। ঢাক। ঢোল। বাঁচার জন্য মেয়েটির আকুল কাকুতি মিনতি চীৎকার, কেউ শুনতেই পেলোনা।

৪। সিনেমায় তো দেখেইছেন। আর কী বলি নতুন করে?

No comments:

Post a Comment