কিছু মানুষের গল্প
১।
চাকরিটা আজ আমি ছেড়েই দিলাম। প্রথমে একটু দোনামনা করছিলাম বটে। অনেক কষ্ট করে লোন নিয়ে লেখাপড়া কমপ্লিট করে তবে গিয়ে এই এত মাইনের চাকরি পেয়েছিলাম। কিন্তু দিন রাত অফিসের টেনশনটা আর নিতে পারছিলামনা। আমার কঠোর পরিশ্রমে করা কাজগুলোর কৃতিত্ব সব অন্য লোকে নিচ্ছিল। এপ্রেইজালের সময় ভুলভাল রেটিং পাচ্ছিলাম, কেন? না বসের সাথে ট্যুরে গিয়ে আলাদা রুমে থেকেছিলাম বলে। দিন নেই রাত নেই, শনি রবির বালাই নেই, যখন তখন বসের ফোন, "এই কাজটা এক্ষুনি চাই।" "অমুক ফাইলটা এক্ষুনি পাঠাও।" " তমুক ক্লায়েন্টের সাথে এক্ষুনি মিট করো।" হঠাৎ হঠাৎ করে ছুটি ক্যান্সেল্ড। আরে বাবা, ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স নেই না কি? অবশ্য আমার তেমন অসুবিধে হবেনা, মাস গেলে মাইনে না আসলেও, আমার বউ তো আছে রে বাবা। বিরাট উঁচু পোস্টে চাকরি করে। আমি না হয় কিছুদিন ব্রেক নিই, একটু লেখালিখি গানবাজনা করি। তারপর পরের চিন্তা পরে হবেখন।
২।
"হ্যাপি বার্থডে লাভ।" একটা বিশাল লাল গোলাপের তোড়া এক হাতে, আরেক হাতে অজস্র গোলাপী হার্ট শেপের বেলুন নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রোহণ। ওকে যা সুন্দর দেখাচ্ছে না ক্রিম রঙের টিশার্ট আর ব্লু জিন্সে। সদ্য স্নান করেছে, গা দিয়ে শাওয়ার জেলের মাদক সুগন্ধ এখনো ভুরভুর করছে। ফর্সা গালে হাল্কা সবুজ খোঁচা দাড়ি অল্প। নিজেকে থামাতে পারলাম না। বিজ্ঞাপনের মেয়েগুলোর মতো ওকে ঘরে টেনে ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওর ওপর।
কোনমতে জিনিসগুলো পাশে রেখে ঘন হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে হাসতে হাসতে রোহণ বলে উঠল, "সোহম, তোর কীসের এত তাড়া?"
৩।
সাত্বিক আর কিঙ্কিণীর বিয়ের যখন ঠিক আর ছয় মাস বাকি, তখন কেমিক্যাল প্লান্টে একটা ছোট্ট আক্সিডেন্টের ফলে সাত্বিক গুরুতর আহত হয়। এর ফলে হারিয়ে ফেলে নিজের দৃষ্টি। ছাড়া পাওয়ার মাস খানেক পর বাবা মায়ের সাথে একদিন সাত্বিক এলো কিঙ্কিণীর বাড়ি। হবু শ্বশুর শাশুড়ির কাছে হাত জোড় করে বলল, " কাকু কাকিমা, আমায় ক্ষমা করবেন। আমি কিঙ্কিণীকে বিয়ে করে ওর জীবনের বোঝা হয়ে থাকতে চাইনা। এই বিয়ে বন্ধ হোক।" উপস্থিত বাকি সকলেই স্তব্ধ, নির্বাক।
খানিক নিস্তব্ধতার পর ভেসে এলো জানলার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা কিঙ্কিণীর কণ্ঠস্বর। " বাবা, ওকে জিজ্ঞেস করো দৃশ্যপট যদি ঠিক উল্টে যেত, ও কী আমায় বিয়ে করতো না?"
আগামী পরশু ওদের পঞ্চম বিবাহবার্ষিকী। নিমন্ত্রনপত্র পেয়ে মনে পড়ে গেল ঘটনাটা।
****************************************************
এঁরাও কিন্তু প্রত্যেকেই আমার আপনার সকলের মতোই manউষই।
No comments:
Post a Comment