Tuesday, February 11, 2020
কথা... দিলাম
সচরাচর কোথাও টুকটাক কাছাকাছির মধ্যে যাওয়ার হলে নিজের স্কুটিকেই পছন্দ করে জিনিয়া। কিন্তু আজকে মায়ের কড়া নির্দেশে সেই শাড়ি পরতেই হলো। কাজেই ক্যাফেটা বাড়ির কাছে হলেও স্কুটি নিয়ে বেরোতে প্রথমে সাহস না পেলেও ঠাকুর ঠাকুর করে স্কুটিটা নিয়েই বেরলো। শাড়ি পরতে জিনিয়া ভালোইবাসে। তবুও আজ মোটেই ইচ্ছে ছিল না। আজ প্রথমবার দেবমাল্যর সাথে আলাপ করতে যাচ্ছে। জানে, ফার্স্ট ইম্প্রেশনই লাস্ট ইম্প্রেশন। আর তাই ইচ্ছে করেই শাড়ি পরা লুক নিয়ে যেতে চায়নি জিনিয়া। যেটা ওর দৈনন্দিন জীবনের রুটিন না, সেটাকে যে কেন এমন গ্লোরিফাই করা হবে, মাথায় ঢোকেনা। কিন্তু ওই যে, বাড়িতে সাময়িক শান্তিরক্ষার্থে ওকে শুনতেই হয়েছে। একেই এতদিন বিয়ে নিয়ে ওর যে অ্যালার্জি, তার জেরে বাবা মায়ের সাথে নিত্যনৈমিত্তিক ঝামেলা লেগেই থাকতো। অবস্থা যখন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছে যায়, জিনিয়াকে বাধ্য হয়েই রাজি হতে হয় এই আলাপ পর্বের জন্য। দেবমাল্যর সাথে দেখা করতে। দেবমাল্য সুচাকুরে। বেসরকারি ব্যাঙ্কে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার। দক্ষিণ কলকাতায় নিজেদের বাড়ি, গাড়ি। দেখতে শুনতেও ভালো। একেবারে যাকে বলে পারফেক্ট পাত্র। না করার উপায় আর কিছুতেই খুঁজে পায়নি জিনিয়া। তবে ঠিক করেছে, এই যে দেখা করতে যাচ্ছে, এতে শাপে বর হলেও হতে পারে। হয়তো আলাপচারিতার সময় দেবমাল্যর কোন বদগুণ চোখে পড়লো, আর সেটাই হবে ওর তুরুপের তাস। বর ভাগানোর।
এই অবধি পড়ে হয়তো পাঠক ভাবছেন যে এ কেমন মেয়ে রে বাবা। সব ব্যাপারে এমন সিনিকাল কেন? দেবমাল্যকে দেখলই না, আগেই কেন ওকে নাকচ করার চিন্তা। তাহলে কি জিনিয়া দেবীর হৃদয় অন্যত্র সমর্পিত? কোন বিশেষ কারণে হয়তো বাড়িতে জানাতে পারছে না। উঁহু। তা কিছুতেই না। জিনিয়ার মা বাবা মাসি কাকি সবাই ওকে জিজ্ঞেস করে করে হাল ছেড়ে দিয়েছে। কতবার তাঁরা বলেছেন, "হ্যাঁ রে মা, তোর যদি কাউকে পছন্দ থাকে, আমাদের বলতে পারিস। আমরা অবশ্যই ভেবে দেখবো।" তাহলে কী? আসল কথাটা যে কী করে ও বলবে। এই যে ওর একের পর এক ছেলের সাথে বন্ধুত্ব, ভাব, ভালোবাসা। আর তারপর সব্বাই ওকে টাটা বাই বাই করে অন্যত্র চলে যায়। কেউ কথা রাখে না, এটা যে কী করে ও বোঝাবে? বরং ওর ভয়, এইসব কথা বাড়িতে জানালেই মা প্যানিক করতে শুরু করবে এবং তড়িঘড়ি যাকে পাবে তার সাথেই ওর বিয়েটা দিয়েই ছাড়বে। সবাই ভাবে, বিয়ে বুঝি ওর করতে ইচ্ছে করে না। একদমই না। জিনিয়া অবশ্যই চায় ওর প্রত্যেকটা বন্ধুদের মতো ও ও বিয়ে করে সংসার করবে গুছিয়ে। একটা ভালো বন্ধু পাবে। সাথী পাবে, ওর সব খেয়াল খুশীতে সামিল হওয়ার জন্য। ও নিজেও একজনের জীবনের বিশেষ কেউ হবে। এইসব ওর ইচ্ছে করে। আর এই ইচ্ছে নিয়েই তো পরপর ও রোহণ, সুস্মিত, মেঘনাদ সকলকে বিশ্বাস করে, ভরসা করে নিজের সমস্ত অনুভূতি, ইমোশন ইনভেস্ট করেছিল। কিন্তু রিটার্ন? প্রতিবারই সেই এক। জিরো। বারবার লবডঙ্কা খেতে মোটেই ভালো লাগে না জিনিয়ার। কেউ কথা রাখেনা। প্রত্যেকবার ও নতুন সম্পর্কে জড়ানোর আগে নতুনজনকে সমস্ত বলে, নিজের ভয়, বিশ্বাস-অবিশ্বাস সবটা বলে। তারা কথা দেয়, ছেড়ে যাবে না। কিন্তু ঠিক ডোবায় শেষমেশ। এইসব কারণেই দেবমাল্যর সাথে আলাপ করতে যাওয়া নিয়ে ওর অনীহা। আচ্ছা, যদি দেবমাল্যকে ওর ভালো লাগে। আর তারপর এই ছেলেও যদি সেরকম করে বসে? তাহলে? ও যে আর নিতে পারবে না এই দুঃখ। উঁহু। জিনিয়া ঠিক করে, আজই ওকে এই সম্বন্ধটা কাটানোর জন্য কোন না কোন কারণ খুঁজে বের করতেই হবে।
যথা সময়ে জিনিয়া পৌঁছয় ক্যাফেতে। রিস্ট ওয়াচে সময় দেখে, ৫:২৫। সময় দেওয়া আছে, ৫ঃ৩০। ও ঠিক ৫ঃ৪০ অবধি গ্রেস দেবে, যদি এর মধ্যে দেবমাল্য না এসে পড়ে, ব্যস, তাহলেই কেল্লা ফতে। নাকচ করার কারণ, এক্কেরে হাতে নাতে পেয়ে যাবে জিনিয়া। লেট লতিফদের ও একদম সহ্য করতেই পারে না। হেলমেটটা খুলে স্কুটির মিররে একবার চুলটা ঠিক জিনিয়া দরজা ঠেলে ঢুকল ভিতরে। একটু ইতস্তত করেই এদিক ওদিক তাকাতে গিয়েই চোখে পড়লো পিছনের দিকে কোণার টেবিলে বসে আছে দেবমাল্য। হ্যাঁ, ছবির সাথে মিল আছেই। আর পরেওছে সেই ফর্মাল শার্ট-প্যান্ট আর ব্লেজার। চোখে সরু ফ্রেমের চশমা। ক্লিন শেভড। জিনিয়াকে দেখে উঠে আসছে। যাহ্, প্রথম পয়েন্টেই বাদ পড়লো না তাহলে? জিনিয়া মনে মনে একটু হতাশ হলো বটে। তার ওপর আবার এমন শিভালরাস, উঠে এগিয়ে এলো। হুম। বেশ কঠিন। সৌজন্যমূলক নমস্কার প্রতি-নমস্কার পর্ব চলল। এইবার কিছু অর্ডার করার পালা। এইটাও বেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। সেই যে মুন্নাভাই সিনেমায় দেখিয়েছিল এই টোটকা, ওয়েটারকে কীভাবে ডাকছে, সেই দিয়ে চরিত্র বোঝা যায়। জিনিয়াকে বেশ কোমলস্বরেই দেবমাল্য জিজ্ঞেস করলো, "তাহলে কিছু অর্ডার করা যাক? কী খাবেন? মেনু দেখুন।" জিনিয়া মাথা নেড়ে বলে, "আমার জন্য কোল্ড কফি। আপনি পছন্দসই কিছু দেখুন।" দেবমাল্য এইবার একটু ঘাড় উঁচু করে ওয়েটারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটু জোরে বলল, "এক্সকিউজ মি। অর্ডার করতে চাই।" আহা, অপ্রয়োজনে ইংরেজি বলে না। জিনিয়ার ভালো লাগে। আরো ভালো লাগে যে জিনিয়ার দেখাদেখি নিজের জন্যও একই জিনিস অর্ডার না করে, স্বতন্ত্র পছন্দে টিকে থেকে হট চকলেট বলে। আর অর্ডার দেওয়ার পর ওয়েটারকে থ্যাঙ্ক ইউও বলে।
খাবার আসে। ওরা খেতে শুরু করে। সাথে চলতে থাকে টুকটাক গল্পকথা। কেরিয়ার অ্যাসপিরেশন, চাকরি এইসব নিয়ে কথা শুরু হলেও খুব শিগগিরই কথা ঘুরে যায় বই আর বেড়ানোয়। দুজনেরই কমন গ্রাউন্ড। একে অপরকে পছন্দের বই-লেখক নিয়ে বলে। দেবমাল্য আদ্যোপান্ত বাংলা সাহিত্যের ভক্ত। সমস্ত ক্লাসিক্স প্রায় পড়া। এদিকে জিনিয়া আবার ইংরেজি সাহিত্যেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য। আচ্ছা, তাহলে এই বলে কি একে বাতিল করা যায়? ভাবতে থাকে জিনিয়া। দেখাই যাক না। কথা কেমন এগোয়। এইবার সাহিত্য সরণী হয়ে ওরা পৌঁছে যায় পাহাড়ে, সমুদ্রে, জঙ্গলে। কলেজ জীবনে বিদেশে থাকার সুবাদে দেবমাল্য যে নানান জায়গায় অ্যাডভেঞ্চার করেছে, সেই সব গল্প করে জিনিয়াকে। ছেলেটি কথা বলে ভালো। একদম মোহিত হয়ে শোনে জিনিয়া। একটু একটু কি তবে ভালো লাগছে ওকে? জিনিয়ার একটু অস্বস্তি হয়। পরপর দেখছে, সবই ভালো। তাহলে কাটাবে কী করে? আর এমনই সুন্দর কথা বলছে, জিনিয়ার তো বেশ পছন্দই হচ্ছে ওকে।
দেখতে দেখতে ঘন্টা দেড়েক যে কখন পেরিয়ে যায়, খেয়ালই করে না ওরা। কোল্ড কফি আর হট চকলেটও শেষ। এইবার যে উঠতে হয়। বাড়ি ফিরলেই তো মা জিজ্ঞেস করবে, কী ভারডিক্ট? কী যে বলবে? আজ তো কিছুই খুঁজে পেলো না নাকচের কারণ। হয়তো আর এক দুবার দেখা করলে ঠিক মাইনাস পয়েন্ট বেরিয়েই যাবে। আর জিনিয়া জানে, মাইনাসের ঝুলি কিন্তু বেশ বেশ ভারী হতে হবে। কারণ ইতিমধ্যে, পজিটিভের ঝোলা খুবই শক্তপোক্ত, ভারী। দেবমাল্য বেরনোর সময় দরজা খুলে দেয় ওর জন্য। জিজ্ঞেস করে, ওকে কোথাও ড্রপ করতে হবে কি না। জিনিয়া যে স্কুটি চালিয়ে এসেছে, দেখে ওর চোখ চকচক করে। রীতিমতো শিশুর মতোই উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে, "আমার জানো তো, স্কুটি বাইক এইসব চালানোর শখ খুব। কিন্তু মা বাবা অ্যালাউ করেনি কখনও। আর তারপর তো ফোর উইলারে চলে এলাম। আমায় শেখাবে? আমি কিন্তু সাইকেল চালাতে জানি। ঠিক পারবো।" জিনিয়া অবাক চোখে তাকায় দেবমাল্যর দিকে। আর কখনও দেখা হবে কি না ওদের, তার ঠিক নেই। এদিকে ছেলের আব্দার দেখো? ও সে কথা মজার ছলে বলেও দেবমাল্যকে। মুহূর্তেই দেবমাল্যর মুখের ওপর দিয়ে যেন একটা কালির ছায়া চলে যায়। কিঞ্চিত আহত কন্ঠেই বলে, "এই যাহ্। আমি তাহলে কি এতটাই বোর করলাম তোমায়? ভেরি সরি। আসলে বুঝতে পারি নি।" জিনিয়া কিছু বলে না। এগিয়ে যায় স্কুটির পারকিং লটের দিকে। পিছন থেকে শুনতে পায় দেবমাল্য বলছে, "পৌঁছে একটা মেসেজ করে দিয়ো। দিয়ো কিন্তু। আমি চিন্তায় থাকবো।"
কে জানে কী হলো এই মিটিঙে আজ, জিনিয়া একটু ফুরফুরে মেজাজেই স্কুটি চালিয়ে বাড়ি ফেরে। বাড়ির দরজার মুখেই অবশ্য সেই পুরনো ভয় আবার ফিরে আসে। কী বলবে ও বাড়িতে? হ্যাঁ? নাকি না? ঠাকুর ঠাকুর করে বেল বাজায়। মা দরজা খোলে। মায়ের চোখে মুখে উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করে জিনিয়া। কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা চলে যায় বেডরুমে। দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। রেডিওটা চালায়। ইভনিং শো চলছে। পরপর সেই ঢিঞ্চ্যাক রিমিক্স গান। ফোনটা হাতে নেয়। দেবমাল্যর নম্বরে চ্যাটবক্সটা খোলে। কী লিখবে? ভেবে পায় না। শুধু ছোট করে একটা "রিচড" লিখে ছেড়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে দেবমাল্য অনলাইন। মেসেজ ব্লু টিক। তারপর "টাইপিং"। "টাইপিং"। "টাইপিং"। বাবা, এত কী লিখছে? তখন থেকেই "টাইপিং"। মিনিট পাঁচেক পর উত্তর এলো, "বেশ। আমিও।" রাগ হয় জিনিয়ার। এইটুকু লিখতে পাঁচ মিনিট? পরমুহূর্তেই মনে হয়, আচ্ছা, এইটুকু মেসেজ দেখে রাগ হলো কেন ওর? তাহলে কি ও অন্য কিছু আশা করছিল? কে জানে? নিজের মনকে নিজেই বুঝে ওঠে না জিনিয়া। দোনামনা করতে করতে নিজেই আবার মেসেজ পাঠায়, "এইটা লিখতে পাঁচ মিনিট?" সটান উত্তর আসে, "উঁহু। অনেক কিছু লিখেছিলাম। সব ব্যাক্সপেসের আড়ালে চলে গিয়েছে। অভয় দাও তো বলি?" জিনিয়া লেখে, "বলো।" এরপর আবার সেই "টাইপিং" এর অপেক্ষা। মিনিট পাঁচেক পর এইবারে লম্বা মেসেজ। "জিনিয়া, জানি না তোমার আমাকে কেমন লেগেছে। কিন্তু আমার তোমায় খুব পছন্দ হয়েছে। মনে হলো যেন অনেকদিন পর সেই স্কুল কলেজের বন্ধুদের মতো জমিয়ে একটা প্রাণখোলা আড্ডা দিয়েছি। আমাদের মিলের চেয়ে বেশি অমিল। তবুও তার মধ্যেই দিব্যি মানিয়ে গুছিয়ে গল্প তো করলাম। আমাদের বিয়ের কথা এগোবে কি না, জানি না। তোমার ওপরই না হয় ছেড়ে দিলাম। আমার দিক থেকে তো হ্যাঁ। কিন্তু একটা অনুরোধ করি? অন্তত বন্ধু হয়ে থেকো। প্লিজ? আর হ্যাঁ, কথা দিলাম। তোমার বন্ধুত্বকে সব সময় সম্মান করবো। বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়া এই বয়সে এসে, একটু কঠিন। তবে কী জানো, কঠিন কঠিন প্রব্লেম সল্ভ করি তো সারাদিন অফিসে, তাই এইসবের ব্যাপারে আমি কনফিডেন্ট। তুমি প্রশ্রয় দিলেই পারবো। শুধু কথা দিয়ো, আমায় সুযোগ দেবে। আমি প্রমিস করছি, ঠকাবো না। আর কখনো আক্ষেপের জায়গা রাখবো না। এবার, তুমি সুযোগ দেবে কি না, দেখো?"
বেশ কয়েকবার মেসেজটা পড়ে জিনিয়া। বিহ্বল। কী বলবে? কী লিখবে এর উত্তরে?
রেডিওতে হঠাৎ বাজতে থাকে
" I feel love when I look into your eyes
I believe if you move out from my side
I'll be losin'; I'll be losin' grip on you
Grip on you
देखो क़रीब से, मिले हैं नसीब से
आएगा पल ये फिर कहाँ
आज अचानक तुमसे मिले हम
ये तो नहीं है बेवजह
पूछो ज़रा इस दिल से, हम हैं मिले मुश्किल से
कल फिर ना हों हम जो यहाँ
ग़ज़ब का है दिन, सोचो ज़रा
ये दीवानापन देखो ज़रा
तुम हो अकेले, हम भी अकेले
मज़ा आ रहा है, क़सम से, क़सम से"
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment