Monday, February 17, 2020

দ্য গিফট অফ দ্য মাজাই



মোটে এক ডলার সাতাশি সেন্ট? মোটে? ডেলা এই নিয়ে তিনবার গুণে দেখলো। এইটুকু ওর সম্বল। মোটে এইটুকু। রোজের বাজারহাটের খরচ থেকে তিল তিল করে বাঁচানো মোটে এইটুকু। অথচ কালকেই বড়দিন। বেচারি ডেলা আর কীই বা করে, বিছানায় শুয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদা ছাড়া আর অন্য কোন উপায় নেই। অগত্যা, ডেলা তাইই করছে।


যতক্ষণ ডেলা একটু শান্ত হচ্ছে, আসুন, ততক্ষণে বরং আমরা বাড়িটা ঘুরে দেখি। অবশ্য বাড়ি বলতে যা বোঝায়, এই আট ডলার প্রতি সপ্তাহের ভাড়ায় আদৌ তা আশা করা যে অনুচিত, তা জানা কথা। কাজেই এই বাড়ি নিয়ে বিশেষ কিছু যে বলার নেই, তা বোধহয় আর বলে দিতে হয় না। বাড়ির সামনে হলে একটা অতি ছোট ডাকবাক্স, যাতে যে কোন চিঠিই আঁটবে না। একটা বৈদ্যুতিক ঘণ্টিও আছে। অবশ্য সেই ঘণ্টি বাজে না। এছাড়া দরজার পাশে একটা ফলকে বড় করে লেখা বাড়ির মালিকের নাম, " মিস্টার জেমস ডিলিংহ্যাম ইয়ং"।


যখন ফলকটি ওখানে বসানো হয়েছিল, তখন মিস্টার জেমস ডিলিংহ্যাম ইয়ং সপ্তাহান্তে তিরিশ ডলার করে মাইনে পেতেন। এখন যখন সেটি কমে কুড়ি ডলারে নেমেছে, তখন বোধকরি ওই এত বড় নামটি নেহাতই বড় ও অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। তবে মিস্টার জেমস ডিলিংহ্যাম ইয়ং যখন এই সজ্জিত ঘরে ঢোকেন, ওঁর নাম হয়ে যায় আরো ছোট। মিসেস জেমস ডিলিংহ্যাম ইয়ং সপ্রেম ওঁর গলা জড়িয়ে ওঁকে "জিম" বলে ডাকেন। মিসেস ইয়ংএর সাথে পরিচয় ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে - ডেলা।


ডেলা খানিকক্ষণ পরে কান্না থামিয়ে মুখ চোখ মুছল। জানলার ধারে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো বটে, তবে সেদিকে কোথাও কোন মন নেই ওর। আগামীকাল বড়দিন, এদিকে জিমের জন্য উপহার কেনার জন্য হাতে রয়েছে মোটে এক ডলার ও সাতাশি সেন্ট। বহু মাস ধরে অল্প সল্প এদিক ওদিকের খরচ থেকে বাঁচিয়েও এতদিনে সর্বসাকুল্যে রয়েছে মোটে এইটুকু টাকা। সপ্তাহে কুড়ি ডলার দিয়ে সংসার চালানো চারটিখানি কথা না। সবকিছুরই খরচ অনেক বেশি হয়েছে, ভাবনার বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে হিসেব।


এত কিছুর পর দিনের শেষে হাতে রয়েছে কেবলমাত্র এই এক ডলার সাতাশি সেন্ট। এই দিয়ে ওকে জিমের জন্য উপহার কিনতে হবে ভেবেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে ডেলার। অথচ জিমের যোগ্য উপহারের চিন্তায় কত খেয়াল বেখেয়ালি মুহূর্ত ও কাটিয়েছে। এমন কিছু কিনতে হবে যা জিমের জন্য হবে এক্কেবারে যথাযথ, যা জিম ভীষণভাবে ভালোবাসবে, ঠিক সেরকম কিছুর সন্ধানে ডেলা কত সময় ব্যয় করেছে।


দুটি জানলার মধ্যিখানে রয়েছে একটি আয়না। সেইরকম আয়না হয়তো আপনি আগেও দেখেছেন কোন সস্তার বাড়িতে। অত্যন্ত সরু এক ফালি কাঁচ। যদি মানুষটি খুব রোগা হন এবং দ্রুত পদচালনা করতে পারতে পারেন, তবে হয়তো পূর্ণ অবয়ব দেখতে পেতে পারেন এমন আয়নায়। ডেলা নিতান্তই ছিমছাম, বলা চলে রোগা। কাজেই ও সহজেই এই আয়নায় নিজেকে দেখতে পেয়ে যায় সহজেই।


কী মনে হতে, হঠাৎ ডেলা জানলা থেকে সরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। কিছু একটা বুদ্ধি এসেছে মাথায়, আর সেই উত্তেজনায় ডেলার দুই চোখ উজ্জ্বল। তবে মুখখানি বিবর্ণ। তাড়াতাড়ি চুলের খোঁপা খুলে ওর এক ঢাল লম্বা ঘন চুল এলিয়ে দিলো কাঁধ পিঠ বরাবর।


ডিলিংহ্যাম ইয়ং পরিবার তাদের দুই মূল্যবান ঐশ্বর্য নিয়ে অত্যন্ত গর্ব করতেন। প্রথমটা, জিমের সোনার ঘড়ি। এই ঘড়িটি একদা জিমের বাবার সম্পত্তি ছিলো। তারও আগে এটি ছিল ওঁর বাবার সম্পত্তি। বংশানুক্রমে এখন জিমের। দ্বিতীয়ত, ডেলার অপরূপ সুন্দর চুল।


যদি ওদের বাড়ির সামনে কোন সাতমহলা প্রাসাদে কোন রানী বাস করতেন, তবে ডেলা নিয়মিত রানীকে দেখিয়ে দেখিয়ে চুল ধুতো, তারপর সযত্নে কেশবিন্যাস করতো। ডেলা নিশ্চিত, ওর চুল যে কোন সময়ী যে কোন রাজরানীর ঐশ্বর্য ও ধনের চেয়ে বেশি দামী, বেশি গর্বের।


আর যদি কোন মহারাজ থাকতেন, তবে জিম অবশ্যই প্রতিবার দেখা হলেই বারবার নিজের ঘড়িখানি বের করে সময় দেখতো। এমনই ঐশ্বর্য সেই ঘড়িতে। জিম জানে, অমন মূল্যবান সম্পদ কোন রাজার কাছেও নেই।


এখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ডেলার লম্বা খয়েরি রেশমি চুল এক ঢাল ঝর্নার জলের মতো পিঠ বরাবর ঢেউ খেলছে। চুল লম্বায় ওর হাঁটু ছাড়িয়ে যায়, ঠিক যেন ওর কোন পোশাক।


ডেলা ক্ষণিকের ইতস্ততা কাটিয়ে ঝটপট নিজের চুল সাজিয়ে ফেললো খোঁপায়। মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ালো, গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা চোখের জল।


এরপর নিজের খয়েরি কোট গায়ে জড়িয়ে, মাথায় জীর্ণ খয়েরি টুপিটা মাথায় পরে বেরিয়ে পড়লো। দু চোখে এখনও লেগে আছে সেই ঔজ্জ্বল্য। ডেলা দ্রুত পায়ে চলতে চলতে এসে পৌঁছল একটি দোকানের সামনে।


দোকানের সামনে রয়েছে একটি ফলক, লেখা, "মিসেস সফ্রোনি। এখানে সব রকম চুলের সরঞ্জামের কারবার হয়।" ডেলা এরপর হড়বড় করে দোতলায় এসে পৌঁছল। হাঁপাচ্ছে। একটু থেমে শ্বাস ঠিক করে দেখলো সামনে দাঁড়িয়ে মিসেস সফ্রোনি। এক বিশালাকার ফ্যাকাশে মুখো মহিলা। ডেলা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, "আমার চুল কিনবেন?"


মিসেস সফ্রোনি একটু তাকালেন ডেলার দিকে। তারপর মেপে মেপে উত্তর দিলেন, "আমি চুল কিনি। দেখি, টুপিটা খোলো, দেখি তোমার চুল কেমন।"


ডেলা খোঁপা খুলে দেখালো। লম্বা খয়েরি রেশমের ন্যায় ওর চুল দেখে মিসেস সফ্রোনি বললেন, "কুড়ি ডলার। হুম, কুড়ি ডলার দিতে পারি।"


ডেলা ব্যস্ত হয়ে বললো, "নিন। আমার চুল নিন। পরিবর্তে আমায় এখুনি কুড়ি ডলার দিন। দয়া করে।"


এরপরের দুঘণ্টা যেন কোথায় উড়ে গেলো। এ দোকান সে দোকান করতে থাকল ডেলা। কিছুতেই যেন কোথাও আর জিমের জন্য পছন্দের কোন উপহার চোখেই পড়ে না ওর।


শহরের সমস্ত দোকান প্রায় চষে বেরানোর পর অবশেষে মিলল সেই বহু কাঙ্খিত উপহারটি। যথার্থই এটি জিমের জন্যই বুঝি বানানো। একেবারে সেরার সেরা।


সোনার এই ঘড়ির বন্ধনীটি অমূল্য। নকশায় বিশেষ কারুকাজ না থাকলেও, ধাতুর বিশুদ্ধতার জন্য এই ঘড়ির বন্ধনীটি এত মহার্ঘ্য। এত দামী। এতই সাধারণ দেখতে, অথচ অসাধারণ সুন্দর। দেখলেই বোঝা যায় এর দাম, এমনই সে সৌন্দর্য।


যাক, এতদিনে জিমের সেই ঘড়িটার জন্য এক্কেবারে যথাযথ বন্ধনী তবে পাওয়া গেলো।


বন্ধনীটি দেখেই ডেলার মনে হলো, জিমের ঘড়ির সাথে এমন মানানসই বন্ধনীরই বুঝি অপেক্ষা ছিল এতদিন। জিমের সাথে দিব্যি মানাবে এটিকে। একদম ওরই মতোন, শান্ত, স্নিগ্ধ। জিমের মতোই মূল্যবান এটি। ও একুশ ডলার দাম দিয়ে কিনে ফেললো। ঘড়ির বন্ধনী ও সাতাশি সেন্ট হাতে নিয়ে ডেলা ফিরে এলো নিজের আট ডলারের সংসারে।


এতদিন বন্ধনীর অভাবে জিম ঘড়িটি লোকসমাজে ব্যবহার করতেই পারতো না। যদিও ঘড়ি হিসেবে ওটি অত্যন্ত সুন্দর, তবুও বন্ধনীর অভাবে লুকিয়ে জামার খোপ থেকে বের করে সময় দেখতে হতো এতদিন। এইবার জিম নিশ্চিন্তে সকলের সামনে যখন ইচ্ছে ঘড়িতে সময় দেখতে পাবে। এইবার ডেলা খুশি, খুব খুশি।


বাড়ি ফিরে ডেলা এইবারে শান্ত হয়ে বসলো। এখন অনেক ভাবনা চিন্তার সময়। এই যে কীর্তিটি ও করলো, এটাকে তো লুকোতে হবে। এই দুঃখী ক্ষতচিহ্নকে যে মুছতে হবে, ঢাকতে হবে। ভালোবাসা ও উদার হৃদয়, দুইয়ে মিলে যে অনেক ক্ষতস্থান সৃষ্টি করে বন্ধু। অবশ্য সেই ক্ষত সহজে জুরোবার নয়।


চল্লিশ মিনিট ধরে ডেলা নিজের অবশিষ্ট চুল নিয়ে নানান কারুকাজ করতে লাগলো, একেক সময় একেক কেশবিন্যাস। কখন কোনটায় ওকে মানিয়ে যায়। এইরকম চেষ্টা করতে করতে অবশেষে যখন ওর মনে হলো নিজেকে একটু ভদ্রস্থ দেখাচ্ছে, আদপে তখন ডেলাকে লাগছিল ঠিক এক দুষ্টু ইশকুল ছাত্রের মতো। বেশ অনেকটা সময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো ডেলা। ও নিশ্চিত, জিম বাড়ি ফিরে ওকে এরকম সাজে দেখলে নির্ঘাত মেরেই ফেলবে। আর যদি নাও বা মারে, দ্বিতীয়বার চেয়ে দেখার আগে অবশ্যই বলবে যে ওকে দেখতে লাগছে ঠিক সেইসব মেয়েগুলোর মতো, যারা নেচে আর গান গেয়ে টাকা উপার্জন করে। কিন্তু ডেলা কীই বা করবে নইলে? ওর যে হাতে ছিল মোটে ওই এক ডলার সাতাশি সেন্ট। এই দিয়ে কি আর জিমের জন্য পছন্দসই উপহার কেনা যায়?


সন্ধ্যে সাতটায় জিমের নৈশভোজ তৈরি করে ডেলা অপেক্ষা করতে লাগলো। জিম কোনদিনও এতটুকুও বিলম্ব করে না বাড়ি ফেরায়। সদ্য কেনা ঘড়ির বন্ধনীটা হাতে নিয়ে ডেলা বসে অপেক্ষা করতে লাগলো


দরজার ধারে। সদর দরজা। যেখান দিয়ে জিম রোজ ওদের বাড়ি ঢোকে। মুহূর্তেই ডেলা বাইরে হলে জিমের পায়ের শব্দ পেলো। ভয়ে, চিন্তায় ওর সুন্দর মুখখানি ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। ডেলার একটা স্বভাব আছে, ছোট বড় সবকিছু নিয়েই যখন তখন ও ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে। এখনও তার ব্যতিক্রম ঘটলো না। ও চুপিচুপি ইশ্বরকে ডেকে বলল, "হে ইশ্বর, দয়া করো, দয়া করে যেন জিম আমায় এখনও সুন্দরী ভাবে।"


যথাসময়ে দরজা খুলে জিম বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, রোগা চেহারা। বেচারা, এই বাইশ বছর বয়সে সংসারের বোঝা টানা, চারটিখানি কথা না। একটা কোট আর এক জোড়া গ্লাভসের খুব প্রয়োজন। দেখেই মায়া হয়।


শিকারি যেমন শিকারের সামনে এসে স্থির হয়ে খানিক থমকে দাঁড়ায়, জিমের অবস্থাও এখন সেরকম। বাড়ি ঢুকে হাঁ করে ডেলার দিকে চেয়ে রইলো। কোন কথা নেই মুখে। এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে ডেলাকে দেখেছে ও। সেই অভিব্যক্তি এতটাই অচেনা ডেলার কাছে, ডেলা বুঝছে না। ও কি ভয় পাবে? জিম কি রেগে গেলো? নাকি চমকে গেলো? বুঝতে পারে না ও।


ডেলা এগিয়ে যায় জিমের দিকে, বলে, "জিম, পায়ে পড়ি, ওরকম ভাবে আমার দিকে তাকিয়ো না। আমি চুল কেটে তা বিক্রি করেছি। দেখো, কাল বড়দিন। তোমার জন্য উপহার না কিনে কী করে থাকতাম আমি বলো? সেই জন্যই এই কাজ করতে হলো। শোনো, আমার চুল খুব তাড়াতাড়ি লম্বা হয়। তুমি চিন্তা করো না। লক্ষ্মীটি জিম, কাল বড়দিন। এসো, আমরা আনন্দ করি। জানো, তোমার জন্য কী দারুণ সুন্দর একটা উপহার আমি কিনেছি।"


জিম এবার বেশ কষ্ট করে, ধীরে জিজ্ঞেস করে, "চুল কেটে ফেলেছ?" যেন ঘটনাটি বুঝেও বিশ্বাস করতে মন চাইছে না। মুখে সেই কষ্ট স্পষ্ট।


ডেলা ব্যস্ত হয়ে উত্তর দিলো, "হ্যাঁ জিম। চুল কেটে তারপর বিক্রি করে ফেলেছি। দেখো জিম, আমি কিন্তু মানুষটা সেই একই আছি। তোমার ডেলা। দেখো জিম। আমায় ভালো লাগছে না? বলো?"


জিম অবিশ্বাসের সাথে চারিদিকে তাকিয়ে আবারও বলে, "চুল কেটে ফেলেছ?"


ডেলা আস্তে আস্তে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ জিম। তুমি এদিক ওদিক খুঁজো না। পাবে না। আমি চুল কেটে বিক্রি করে দিয়েছি। দেখো জিম, এটা ছাড়া আমার কাছে আর দ্বিতীয় উপায় ছিল না। কাল বড়দিন। তোমার জন্য উপহার কিনতেই হতো। নাও, এবার মন খারাপ করা বন্ধ করো জিম। দেখো, তোমার জন্য পছন্দসই উপহার কিনেছি। শোনো জিম, আমার চুলের আয়ু সীমিত, ও চুল আবার গজাবে, বাড়বে। কিন্তু তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা, সে তো নিখাদ। এসো, আমরা খেয়ে নিই এবার।"


জিম উত্তরে ডেলাকে জড়িয়ে ধরলো। আসুন, এই অল্পক্ষণ, আমরা একটু অন্যদিকে তাকাই। আচ্ছা, সপ্তাহে আট ডলার আর বছরে লক্ষাধিক ডলার। কত পার্থক্য? বুদ্ধিমানেরা এর এক উত্তর দেবেন। তবে, তা মোটেই সঠিক না। ম্যাজাই যারা ছিলেন, তারা বহু দামী উপহার এনেছিলেন। তবে এদের উপহার আলাদা। কীভাবে? শিগগিরই বোঝাবো আমি।


জিম কোটের পকেট থেকে একটি রঙিন কাগজে মোড়া কোন বস্তু বের করে হেলায় খাটে রেখে দিলো। তারপর ডেলাকে বলল, "দেখো ডেলা, তুমি যেমনই দেখতে হও না কেন, যেভাবেই চুল কাটো কি বড় করো, যা ইচ্ছে করো, জেনে রেখো, আমি তোমায় চিরকাল ভালোবাসবো। একই ভাবে ভালোবাসবো। তবে ওই যে, ওই মোড়কটি খুলে দেখলেই বুঝবে আমি এমন হতভম্বের মতো কেন তাকিয়েছিলাম তোমার দিকে।"


ডেলা ওর ভয়ে দুঃখে ফ্যাকাশে হয়ে আসা আঙ্গুল দিয়ে সযত্নে মোড়াটি খুলল। এবং খুলেই আনন্দের উচ্ছ্বাস। মুহূর্তেই অবশ্য তা বদলে গেলো চোখের জলে। কেন? কারণ ওর সামনে রয়েছে সেই চিরুনি। সেইইই চিরুনি, যা একদিন দোকানে দেখে খুব পছন্দ হলেও, মূল্য দেখে আর কেনা হয়নি। সাধ্যের বাইরেই ছিল ওর শখ। অপূর্ব সুন্দর এই চিরুনি, মণিমুক্তো খচিত। একদম ডেলার মনোরম চুলের সাথে মানানসই। একদা যা শখের ছিল, আজও আছে, আজ সাধ্যেও রয়েছে, এদিকে সেই চুল আর নেই।


বুকে আগলে রেখে খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইলো ডেলা। তারপর বলল," জিম, আমার চুল খুব শিগগিরই লম্বা হয়। তুমি চিন্তা করো না।"


মুহূর্তেই যেন কী মনে পড়ে গেলো ওর। জিমের জন্য আনা উপহারটি বের করে আনলো ও জিমের সামনে। সোনার বন্ধনীটি যেন সোহাগের আদরে আরো নরম, আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। জিমকে ওটা দেখাতে দেখাতে ডেলা উচ্ছ্বসিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, "এটা কী দারুণ না জিম? একদম মানানসই হয়েছে তোমার ঘড়ির সাথে জানো, আমি সারা শহর ঘুরে তবে এটা পেয়েছি। দেখি দেখি তোমার ঘড়িখানি দাও দেখি। দেখো তো কেমন দারুণ মানিয়েছে দুটিকে। কই? দাও?'


জিম উত্তর দেয় না। হাসে। তারপর থপ করে বসে পড়ে খাটে। তারপর ডেলাকে ধীরে ধীরে বলে, "ডেলা, এসো, আমরা খেয়ে নিই। আমাদের একে ওপরের জন্য আনা উপহারগুলি বরং এখন তোলা থাক। এখন ব্যবহার করা যাবে না। ওগুলি বড্ড বেশিই সুন্দর। আমি আমার ঘড়িটা বিক্রি করে দিয়েছি তোমার চুলের চিরুনির জন্য। এসো, আমরা খেয়ে নিই।"


ম্যাজাইরা ছিলেন বুদ্ধিমান লোক। শিশু যীশুর জন্মের পর তাঁরা দূর দূরান্ত থেকে এসে উপহার দিয়েছিলেন যীশুকে। সম্ভবত ওইগুলিই প্রথম বড়দিনের উপহার। তাঁরা ছিলেন বুদ্ধিমান, অগত্যা, ওঁদের আনা উপহারও ছিলো দামী, মূল্যবান ও কার্যকরী। আর আজ যাদের কথা বললাম, তারা বোকা। তাদের উপহারেরও কোন আর মানেই রইলো না। তবে তারা, প্রেমে পাগল হয়ে বোকা। একে অপরকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসে বোকা। নিজেদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পত্তি বিক্রি করে অন্যের জন্য উপহার কেনার মতো বোকা। কিন্তু না, আমি বলি কী, যতজন আজ অবধি উপহার দিয়েছে, এই দুজনের মতো বুদ্ধি কারুর নেই। এরাই যথার্থ ম্যাজাই। এরাই আসল বুদ্ধিমান। ভালোবাসামাখা উপহার এরাই দিয়েছে।

No comments:

Post a Comment