প্রাক-কথা
গত অগস্ট থেকে নভেম্বরের শেষ অবধি ভয়ানক
রকমের ব্যস্ততার মধ্যে কাটিয়েছি। পি এইচ ডি
থিসিসের কাজকর্ম নিয়ে একেবারে যাকে বলে, ল্যাজে গোবরে অবস্থা। তা যাই হোক, ডিসেম্বরের শুরতে
বাড়ি ফিরলাম। কলকাতা। ভিতরের যাযাবর পোকাটি ভালোমতন নাড়া দিয়ে উঠলো। এদিকে বাড়িতে রাজমিস্ত্রির
কাজ হচ্ছে। মেরামত, রঙ, এইসব। কাজেই, বাবা মা বলেই দিলেন, তাঁরা এই মুহূর্তে কোন বড়
বা মাঝারি ট্রিপেও যেতে পারবেন না। এদিকে আমার মাথায় বেরানোর ভূত চেপেই গিয়েছে। যেতে
তো হবেই। কাঁহাতক আর রোজ সন্ধ্যেয় বন্ধুদের সাথে বেরিয়ে চা কফি স্ন্যাক্স খেয়ে কাটানো
যায়? হ্যাঁ, বাড়ির বাইরে যাচ্ছি বটে, অথচ বেড়ানো তো হচ্ছে না। তিন বান্ধবী মিলে ঠিক
করলাম, ঘরের কাছে ডায়মন্ড হারবার, সেখানেই একটা ডে ট্রিপ সেরে ফেলি। সেইমতো হোয়াটসঅ্যাপ
গ্রুপ পর্যন্ত তৈরি হয়ে গেলো। কিন্তু নাহ, বুকিং মিলল না। বুকিং মিলল না টাকিতেও। অগত্যা,
দিন পরিবর্তন। এদিকে সেটি কিনা মস্ত কঠিন প্রশ্ন। প্রায় দেশের নিয়ম নীতি বানানোর মতোই
কঠিন ব্যাপার। তিনজনের সুবিধে মতো একটা তারিখ ঠিক করা। অনেক কষ্ট করেও সেই তারিখ আর
জুটলো না। অগত্যা, সেই আবার কফি খেতে যাওয়া। বেড়ানোর আশা এদিকে ছাড়তেও পারছি না। কী
করা যায়? কোথায় যাওয়া যায়, কোথায় যাওয়া যায়, এইসব ভাবতে ভাবতে নিজের একটা মেন্টালি
বানানো লিস্টের শরণাপন্ন হলাম। লিস্টের প্রথমেই বেনারস। মাসিকে বললাম, চলো যাই। মাসি
কোন সময় নষ্ট না করেই বারণ করে দিলো। দেশের যা অবস্থা, দুই মহিলা মিলে ইউ পি যাওয়া
নাকি মোটেই সেফ না। নেক্সট ইন লিস্ট, দারজিলিং। এদিকে তখন এইসব সি এ এ, এন আর সি নিয়ে
মারমার কাটকাট অবস্থা। ট্রেন প্লেন নাজেহাল অবস্থা। অগত্যা, সেই গুড়েও বালি। তাহলে? তাহলে আর কী? ঠিক এই সময়ে,
এক্কেরে রক্ষাকর্তার ন্যায় এসে হাজির হলো ফেসবুক। এমনিই একদিন ফেসবুক স্ক্রল করতে
করতে স্পন্সরড অ্যাডে এলো, সুন্দরবন ভ্রমণের কথা। একটু খোঁজখবর নিলাম। ইতিমধ্যে
রোজ বেরিয়ে বেরিয়ে এমন অবস্থা, যে বাবা মায়ের কাছে তখন “ভ্যাকেশন”এর কথা বলার ঠিক
সাহস নেই। ভরসা তাহলে মাত্র একজন। দায়িত্ব দিলাম কাকার কাছে। চুপিচুপি
হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে দিলাম সমস্ত লিঙ্ক। বললাম, সুন্দরবন যাবে? আমি জানতাম,
কাকা হ্যাঁ বলবেই। কাকারও যে পায়ের তলায় সর্ষে। একা মানুষ। তার ওপর আবার সদ্য
রিটায়ার করছে। কাজেই উত্তরটা যে হ্যাঁ হবেই, সেই বিষয়ে সন্দেহ ছিল না কোন। বললাম,
একটাই শর্ত। প্ল্যানটা যে গোটাটাই আমার মাস্টারমাইন্ড, সেইটা বাবা মা কে জানানো
যাবে না। কাকা বলা বাহুল্য, রাজি। বিকেলের মধ্যেই মায়ের মোবাইলে মেসেজ ঢুকল তার।
‘সুন্দরবন যাবে?’ মা আমায় ডেকে দেখালো, বললও, যাবি? আমি যেন কত সারপ্রাইজড, সেরকম
ভান টান করে মোটামুটি ঝটপট হ্যাঁ বলে দিলাম। ব্যস, আর কী? বাবাকে রাজি করানো গেলো
খুব সহজেই। ওই একটু আমি হম্বি তম্বি, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল টেল করলাম, ব্যস। তারপর
এই অপারেটর ওই অপারেটর এইসব করতে করতে অবশেষে দ্য টেলিগ্রাফে এক রবিবারের বিজ্ঞাপন
দেখে ইকো ট্যুরিজমকে ঠিক করা হলো। সায়েন্স সিটির সামনে থেকে ওদের বাস ছাড়বে।
ওখানেই পিক-আপ, ওখানেই ড্রপ। কলকাতা টু কলকাতা পার হেড ৪৫০০ টাকা প্লাস জি এস টি।
সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার মতো পড়লো জনপ্রতি। ঝটপট সময় নষ্ট না করে অনলাইনে টাকা
ট্রান্সফার করে আমাদের চারজনের জন্য ২৩, ২৪, ২৫ তারিখের ট্রিপ বুক করা হয়ে গেলো।
এবার শুধুই অপেক্ষা। কবে ২৩শে জানুয়ারি আসবে, কবে বেরবো। জোর কদমে চলল পরিকল্পনা,
আলোচনা। কী কী জামাকাপড় নেওয়া হবে, ঠান্ডা কেমন। জুতোই বা কী নেবো? (হ্যাঁ, জুতো
নিয়ে তো আমার বিশেষ ইয়ে আছে, তাই আর কী) বাড়ি থেকে ওই সক্কাল সক্কাল সায়েন্স সিটি
অবধি ক্যাব পাবো কি না। নানান প্রশ্ন। যাই হোক। সবকিছু উত্তর টুত্তর পেয়ে টেয়ে
আমরা অবশেষে ২৩শের সকাল পেলাম। কাকা ইতিমধ্যেই আগের রাত্রে আমাদের বাড়ি চলে এসেছে,
যাতে একসাথেই চারজনে যেতে পারি।
মালপত্র রেডি। রেডি আমরাও। ওলা বুক
হয়ে গিয়েছে। গাড়িও প্রায় এসেই গেলো। এইবার ঠাকুর ঠাকুর করে বেরিয়ে পড়লেই যাত্রা
শুরু।
প্রথম দিন
যাক গে, হইহই করতে করতে (পড়ুন, ক্যাবের
পর ক্যাব ক্যান্সেল করছে, পাশ থেকে মা জননী চিৎকার করছেন, কেন আমরা রেডি হয়েও বসে বসে
ভ্যারান্ডা ভেজেছি এতক্ষণ, কেন এতক্ষণেও ক্যাব বুক করা শুরু করিনি, ইত্যাদি) শেষমেশ
ক্যাবটি এলেন। আমরাও গুটিগুটি পায়ে ডিকিতে অল্প যা লাগেজ ছিল, তুলে দিয়ে গাড়ির ভিতর
বসে পড়লাম। (ইতিমধ্যে আমার খান দুইয়েক সেলফি তোলা হয়ে গিয়েছে, ফেসবুকের জন্য।) ট্যুর
ম্যানেজার রিন্টুর ফোন ঢুকেছে এর মধ্যেই, কাকার মোবাইলে। আমরা কতক্ষণে পৌঁছচ্ছি, জানতে
চেয়ে। বাস নাকি অলরেডি পৌঁছে গিয়েছে। বেশিরভাগ লোকজনও পৌঁছে গিয়েছেন। বাবাহ, বাঙালির
এমন সময়জ্ঞান ভালো, জেনে অবাক। যেহেতু বাসের সিট নির্দিষ্ট ছিল না, আগে এসে আগে বসো
গোছের ভাব, ধরেই নিলাম, পিছনের সিটই আমাদের কপালে নাচছে। এবং হলোও তাই। শেষের ঠিক আগের
রোতে টু-সিটারে আমি আর মা, আর থ্রিসিটারে বাবা আর কাকা এবং আমাদের অল্প লাগেজ বসলো।
বাসের ছাড়ার কথা ছিল (কাগজ অনুযায়ী) সাড়ে সাতটায়। ছাড়ল ঠিক ৮:২৯ এ। আহা। এক ঘন্টাও
তো লেট করেনি। বাঙালি স্ট্যান্ডার্ড টাইম অনুযায়ী, ঠিকই আছে।
বাস ছাড়তে ছাড়তেই দেখি “আকাশ মেঘলা,
বৃষ্টি এখনও হয়নি”। কে আসবে বলে, কে জানে? সায়েন্স
সিটি থেকেই বাঁ দিকে ঘুরে গেলো বাস। চলতে লাগলো কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সের রাস্তাঘাট
দিয়ে। টুকটাক ঝিল, একটু কম উন্নত বাড়িঘর এইসব নিয়েই যাত্রাপথ। রাস্তার ধারের দোকানগুলির
সাইনবোর্ড দেখতে দেখতে যাচ্ছি। কী নাম জায়গাগুলির। চেনা নাম বলতে, দেখলাম ওই একমাত্র
ভাঙ্গর। আমার এক পিসি ওখানের কলেজে পড়ান। তাই নামটা জানি। ঝিল পুকুর ভাঙা রাস্তা সাইকেল
অটো ভ্যান মানুষজন ছাগল গরু কুকুর বিড়াল সব দেখেত দেখতে বাস চলতে লাগলো। ইতিমধ্যেই
বাস ছাড়তেই হাতে ধরিয়ে দিয়েছে সুগার অ্যান্ড স্পাইসের বাক্সে ব্রেকফাস্ট। একটা ভেজ
বার্গার, একটা পনীর প্যাটি, একটা কাপ কেক আর একটা শুকনো মিষ্টি। হাঙরের মতো খিদে পেয়ে
গিয়েছিল বাস জার্নির সৌজন্যে। তাই কেক বাদে বাকিগুলি খেয়েই নিলাম। বাস রাস্তা মোটামুটি স্ম্যুদ, তাই
ঝাঁকুনি খুব একটা খাইনি, পিছনের সিটে বসেও। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, বাসটা খুব একটা
পছন্দ হয়নি। জানলার কাঁচ ভালো বন্ধ হচ্ছিলো না। এদিকে যা কনকনে হাওয়া দিচ্ছিল...
ভলভো লেখা থাকলেও এ অরডিনারিই বাস। মোটেই ভলভো নয়। যাই হোক, মাঝে কোন এক জায়গায় পনেরো মিনিটের চা
খাওয়ার ব্রেক দিয়ে টিয়ে বাস পৌঁছল গদখালি। তখন প্রায় বারোটা বাজে। মাঝে বাসন্তী
নামের জায়গার ওপর দিয়ে যাচ্ছিলাম যখন, বাসের লোকজন জোক ক্র্যাক করলো। ভীরু নামের
কেউ বোধহয় ওঁদের দলে ছিলেন, তাই তাকে বাসন্তী নিয়ে খ্যাপানো হলো। যাক গে। গদখালি
থেকে আমাদের লঞ্চের জার্নি শুরু হবে। ঘন্টা দেড়-দুইয়ের ব্যাপার। বাসের পারকিং থেকে
লঞ্চঘাট ওই হাঁটাপথে মিনিত তিনেক মতো। গদখালি জায়গাটি অত্যন্ত ভিড়-হট্টগোলের।
একগাদা টাটা ম্যাজিক, অটো দাঁড়িয়ে লোক তুলছে, নামাচ্ছে। ক্যানিং, সোনাখালি এইসব
জায়গার প্যাসেঞ্জার। সেই ভিড়, কাদা পিচ্ছিল রাস্তা পেরিয়ে লঞ্চঘাটে এলাম। সামনে এই
এত বড় আমাদের লঞ্চ দাঁড়িয়ে। নাম তার ‘স্বর্ণময়ী”। আমরা সব মিলিয়ে ছিলাম ৪৫ জন, আর
সাথে রিন্টু। সব্বাই মিলে একে একে গিয়ে উঠলাম লঞ্চে। সিঁড়ির কাছটা বেশ ভালোমতন
পিচ্ছিল ছিল, তাই একটু ভয় করছিল বটে, তবে আমাদের হাত ধরেই প্রায় লঞ্চে উঠিয়ে দিলেন
লঞ্চকর্মীরা। কোন অসুবিধে হয়নি। লঞ্চের নীচের তলায় (একবারও ঢুকিনি, ঢোকা উচিত ছিল)
ওঁরা আমাদের সবার লাগেজ নিয়ে রেখে দিলেন। আমরা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উঠে পড়লাম। ডেক
বরাবর সারি দিয়ে দিয়ে চেয়ার পেতে রাখা। আমরা চারজনে, বাকিদের সাথেই ওই চেয়ারে যে
যার মতো বসে পড়লাম। আমি নিয়েছিলাম ধারের চেয়ার। লঞ্চ ছেড়ে দিলো অল্পক্ষণেই। দেড়
ঘন্টা মতো চলবে। এ এক অন্যরকমের অভিজ্ঞতা আমার জন্য। আগেও কেরলের ব্যাকওয়াটারে
ঘুরেছি, বেরিয়েছি এমন লঞ্চে। বিভিন্ন জায়গায় রিভার বা সি-ক্র্যুজও করেছি। কিন্তু
এরকম দুই ধারে জঙ্গল, এত চওড়া নদী, এর মধ্যে দিয়ে এই প্রথম। বেশ লাগছিল। হাল্কা
দুলুনি পর্যন্ত ছিলো না। বেশ ধীরস্থির জার্নি।
এর মধ্যেই ট্যুরের লোক এসে চা আর
বিস্কিট দিয়ে গেলেন। দু পাশে ঘন সবুজ জঙ্গল দেখতে দেখতে আমরা চললাম। মেঘলা ভাব
ছিলো, তাই কনকনে স্যাঁতস্যাঁতে দুইই বোধ করছিলাম। ভালো করে টুপি চাদর জড়িয়ে বসলাম।
আমার কাকা বসে ভিডিও তোলা শুরু করে দিলো। আমিও ক্যামেরা বের করে টুকটাক ছবি তুলছি।
বাবা ঝিমোচ্ছে। মা সহযাত্রীদের সাথে এর মধ্যেই বন্ধুত্ব পাতিয়ে গপ্প জুড়ে ফেলেছে। কেউ
কেউ নদিয়া জেলা থেকে এসেছেন, দশজন একসাথে। ওঁদের লিডার জিনি, তিনি কিছুদিন আগে
ঘুরে গিয়েছেন, তাই মোটামুটি সমস্তটাই জানেন। তিনিই আমাদের বলছিলেন, কতক্ষণ লাগবে।
কাল কোথায় যাবো। আজ কোথায় যাব। আদৌ বাঘ দেখতে পাবো কি না। এইসব। এই করতে করতে দয়াপুরে পউছলাম, প্রায় দুটো নাগাদ।
দয়াপুর হলো ওই অঞ্চলের সবচেয়ে দক্ষিণে অবস্থিত লোকালয়। এখানেই অনেক রিসোর্ট রয়েছে।
আমাদের সুন্দরবন ভিউ পয়েন্ট রিসোর্টটিও এখানেই। লঞ্চকে ঘাটে বেঁধে দিলো। আমরা একে
একে নামলাম। মালপত্র সাথে নিয়ে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে কয়েক পা হেঁটেই আমাদের
রিসোর্ট। ঢুকেই চোখ জুড়িয়ে গেলো। বেশ সবুজ। জলাশয়ও রয়েছে। দোতলা বাড়ি। চেক-ইন
রেজিস্টারে সই করে ঘরে গেলাম। পাশাপাশি দুটো ঘর আমাদের, একতলায়। ১০৫ আর ১০৬। একটু
ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে বেরোতে হবে।
দুপুরের খাবারটা বেশ ভালোই ছিল। যদিও
অন্যান্য ট্যুর পার্টিদের মেনুতে যেমন ভ্যারাইটি আইটেম লেখা থাকে , মানে ওই চাউমিন
চিলি চিকেন, (ও এখন তো আবার সৃজিত মুখুজ্জের সিনেমার জেরে, চিকেন চাউমিন চিলি ফিস বেশি
পপুলার) বা বিরিয়ানি মাংস ছিল না। তবে টায়ার্ড হয়ে এসে একটু গরম গরম ভাত ডাল কফির তরকারি
পাঁপড় ভাজা কাতলা মাছ চিকেন কারি আর পেঁপের চাটনি খেয়েও মনপ্রাণ তৃপ্ত হলো বইকি। রিন্টু
এর মধ্যেই এসে বলে দিয়েছে, চারটের দিকে সবাই মিলে বেরনো হবে, লঞ্চে চেপে। সবাই যেন
রেডি থাকি। আমরা খেয়ে উঠতে উঠতে প্রায় তিনটে বেজেই গিয়েছিল। ভাবলাম আধ ঘণ্টা একটু পিঠটান
করি। আমি ফোন বাবাজীকে চার্জে বসিয়ে একটু রেস্ট নেবো, এমনটা ভেবে ব্যাগ হাতড়াচ্ছি।
চারজার কই? ও মা, খেয়াল হলো, বাবা মা এবং আমি, তিনজনেই ভেবেছি যে অন্যজন নিয়েছে সেটি।
আর ব্যস, কেউ নিইনি। যদিও সাথে পাওয়ার ব্যাঙ্ক ছিল, তবুও। আমার হার্ট বিট বেড়ে গেলো।
যাহ্, ফোনের চার্জ কখনো ৮০% এর নীচে নামলেই কেমন একটা ধুকপুকানি হয়। তবে যাই হোক,
এ যাত্রায় রক্ষা করলো কাকা। দখল নিলাম চারজারের। বাবা ঘুম দিলো। কাকা একটু ফোনে এর
তার খোঁজখবর করতে লাগলো। আমি শুলাম বটে, কিন্তু ওই শুয়ে শুয়ে ফেসবুক খুলবার বৃথা চেষ্টা।
নেটওয়ার্ক এতই খারাপ, কিছুই হলো না। বাইরে আওয়াজ পাচ্ছি, মা কোন একটা বাচ্চার সাথে
গল্প জুড়েছে। বেরিয়ে এসে দেখি, রিকো। আমাদেরই সহযাত্রী। ভারী মিষ্টি এই বাচ্চাটি। বছর
তিনেক বয়স, গোলগাল, হাসিখুশি, মিশুকে। রিসোর্টের সামনে ঢালাই করা রাস্তায় কুকুরের পায়ের
ছাপ রয়েছে কয়েকটা। ও সব্বাইকে ডেকে ডেকে দেখিয়ে বলছে, “এই দেখো, বাঘের পায়ের ছাপ।“
সরল শিশু মন। ওর সাথেই খানিক গল্প করতে করতে দেখি চারটে বেজে গেলো। একে একে সবাই যে
যার ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছেন। বিকেলের সাইট সিয়িং করার জন্য। আজ যেখানে যাবো, সেখানে
বাঘ টাঘ দেখার কোন গল্প নেই। শুধুই কিছু মাইগ্রেটরি পাখি দেখা। আর সূর্যাস্ত।
সুন্দরবনে পৌঁছনো ইস্তক দেখছি, কেমন
জানি কুয়াশার পাতলা একটা আস্তরন জেন লেপ্টে আছে। আকাশের মুখ ভার না হলেও, বিশেষ প্রসন্ন
নয়। যতক্ষণে আমরা স্বর্ণময়ীতে গিয়ে উঠলাম, সূর্য ঢেকে গিয়েছে মেঘের আড়ালে। এক্কেরে
বিফোর টাইম সূর্যাস্ত। মন খারাপ হলো আমাদের। তবুও আশায় আশায় রওনা দিলাম, যদি…। বোট
বা লঞ্চ, যাই বলি না কেন, সেখানে প্রতিবার চলার সময় আমাদের সারেঙ মশাই বলে দিয়েছিলেন,
দুইদিকের ব্যালেন্স যেন সব সময় বজায় থাকে। নইলে যে কোন সময়ে লঞ্চ উল্টে ভালোরকম বিপদের
সমূহ সম্ভাবনা। তাই লঞ্চ ডেকের দুদিকেই সমানভাবে চেয়ার যেমন পাতা, তেমন করেই আমাদের
বসার নির্দেশ ছিল। কোন জন্তু টন্তু দেখা গেলে উনি যে এমন ব্যবস্থা করবেন যাতে সক্কলে
দেখতে পাই, এমনটাই বলে আশ্বস্ত করলেন। আমাদের তখন মনে একটাই চিন্তা। আর যাই হোক না
কেন, বাঘ যেন মিস না করি।
এইসব করতে করতে আমাদের লঞ্চ চলতে লাগল।
সেই একই চওড়া নদী। নদীর নাম জানি কি, ঠিক খেয়াল পড়ছে না। আসলে ওঁরাও খুব একটা সেই বিষয়ে
বলেননি। আমাদের ভরসা ছিল গুগল ম্যাপ। নদীর দেখি বিভিন্ন চ্যানেল। খাঁড়ির মতো এদিক ওদিক
জলের ধারা ঢুকে যাচ্ছে। জোয়ারের সময় তাতে জল ভরে যায়। পাড়ের গাছপালাগুলো অনেকটাই ডুবেও
থাকে। আমরা যখন গিয়েছি, তখন ভাটার সময়। তাই পাড়ে দেখলাম ভীষণ কাদা। দুপাশ থেকে গাছেরা
নুয়ে পড়ছে জলে। প্রায় আধ ঘন্টা, কি আর একটু বেশি চলার পর দেখি একটা জায়গায় অনেকগুলো
লঞ্চ দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ভাবলাম, কী ব্যাপার? কী দেখছে ওঁরা? বাঘ দেখা গেলো নাকি? মাথার
মধ্যে তো শুধু ওই একটাই চিন্তা। বাঘ মামার দর্শন কি পাবো? নাহ। সে গুঁড়ে বালি ঢেলে
জানলাম, এই জায়গার নাম “জটিরামপুর”। এখানেই আমরা পাখী দেখবো। ওই কাদা কাদা নদীর পাড়ে
তাকিয়ে রইলাম সবাই হাঁ করে। কই? কোন পাখীর দেখা নেই। জানতে পারলাম, পাখিদের আসা এখন
অনেক কমে গেছে। কে জানে? ওরাও হয়তো একই জায়গায় আর প্রত্যেক বছর না এসে বিভিন্ন জায়গায়
জায়গায় ট্যুর করছে। সত্যিই তো, কাঁহাতক আর একই জায়গায় প্রতি বছর ঘুরতে আসা হালো লাগে?
তাই না? যাই হোক, ওই দু তিনটে সাদা বক (পরে অবশ্য দেখে জেনেছি, ওদেরও কিছু গাল ভরা
নাম আছে বই কি) আর একটা দুটো মাছরাঙা। এই ছিলো দেখার ঝুলিতে। মিনিট পনেরো ওখানে অপেক্ষা
করে এবার ফেরার পালা। সূর্যাস্ত দেখা হবে না। মেঘের আড়ালে সূর্যদেব। তাই একদম রিসোর্টে
ফেরা। জন্তু জানোয়ার কিছু তেমন দেখি ছাই না দেখি, লঞ্চে চেপে এই জলভ্রমণ, তাও দু পাশে
ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, এই অভিজ্ঞতাটা কিন্তু বেশ লাগছিল।
ফিরলাম ওই আধ ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের
জার্নির পর। রিন্টু বলল, আজ কালচারাল প্রোগ্রাম আছে। স্থানীয় কোন দল এসে নাচ গান পরিবেশন
করবে। সেই দেখতে দেখতেই চা-পকোড়া সহযোগে সন্ধ্যেটা ভালোই কাটল। ওঁদের স্থানীয় গানে
প্রতি লাইনে যেন সুন্দরবনের জীবনযাত্রার কথা, সুখ দুঃখের গল্প, প্রাত্যহিক লড়াইয়ের
গল্প ফুটে উঠছিল। আমরাও দর্শকাসন থেকে একবার গিয়ে নাচের তালে পা মেলালাম। ছবি টবিও
উঠলো। এইসব শেষ হতে হতে প্রায় সাড়ে আটটা। সক্কলেই আমরা ভীষণ ক্লান্ত। নটার দিকে ডিনার
পরিবেশন করলো। ভাত রুটি ডাল তরকারি পাঁঠার মাংস আর চাটনি। খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম। পরেরদিন
সকাল সকাল বেড টি দেবে। আর সাথে দেবে গরম জল। সেই যে, জয় বাবা ফেলুনাথ সিনেমার সংলাপের
মতো, “রানিং হট ওয়াটার”। কাল সারাদিনের লম্বা জার্নি। ভালো করে একটা এইবারে ঘুম দরকার।
দ্বিতীয় দিন
সক্কাল সক্কাল ওই ছটা সোয়া ছটার দিকে
বেড টি আর সাথে বিস্কিট দিয়ে আমাদের ঘরে ঘরে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়ে গেলো। তারপর সাথে সাথেই
শুরু হলো গরম জল দেওয়া। ওই বালতি করে করে দিয়ে যাচ্ছিল হোটেলের ছেলেরাই। একটা সেন্ট্রাল
জাউগায় বিশাল হাঁড়িতে কাঠের আগুন জ্বালিয়ে জল ফুটছিলো। জানিনা সেই জলের সোর্স কী, পাশেই
বয়ে চলা নালা না কি? জলের রঙ কিন্তু বেশ ঘোলাটে। যাই হোক, কীই বা করা। যা পাচ্ছি, তাই
দিয়েই কাজ চালাই। খুব যে ইলাবোরেট করে স্নান করবো, সেই উপায় নেই। কারণ ঠান্ডা মন্দ
না। যাই হোক, সাতটার মধ্যে সকলে তৈরি হয়ে নিলাম বটে। তাও ওই বোট ছাড়তে ছাড়তে সেই আটটাই
বেজে গেলো কারণ ওই এক দুজনের লেট লতিফ আচরণ।
আজকে অনেকগুলো জায়গায় যাওয়ার কথা, বেশ
লম্বা জার্নি। আর কপালে যদি বাঘ দেখা যায়, তো সে আজকেই হবে। আমাদের দয়াপুর আইল্যান্ডের
থেকে বলা যায় প্রায় ওই মিনিট দশেকের জার্নিতেই (লঞ্চে অবশ্যই) পৌঁছে যাওয়া যায় সজনেখালি।
সজনেখালি হলো সুন্দরবন অঞ্চলের মূল দ্বীপ বা সেন্টার। সরকারি কাজকর্ম, ট্যুর গাইড ইত্যাদি
সব এখান থেকেই পাওয়া যায়। আমাদের লঞ্চ সজনেখালির ঘাটে দাঁড়ালো, তবে আমরা নামলাম না।
বরং সরকার স্বীকৃত একজন ট্যুর গাইড আমাদের লঞ্চে উঠলেন। নামটা ঠিক খেয়াল পড়ছে না। ধরে
নিলাম, মাধব বাবু। উনি উঠেই আমাদের সুন্দরবনে স্বাগত জানালেন। নিজের পরিচয় দিলেন। এবং
জানালেন যে আমরা যতক্ষণ এই রিজার্ভ ফরেস্টের ভিতর দিয়ে চলবো, ততক্ষণ গাইডের সাথে থাকাটা
বাধ্যতামূলক। উনিই প্রতিপদে আমাদের সাথে থাকবেন। জঙ্গলের নিয়মকানুন সমস্ত কিছু বলবেন।
জানাবেন এখানকার মানুষজনের কথা।
সুন্দরবন অঞ্চলের টোটাল এরিয়া কত,
তার কত শতাংশ ভারতে (একজ্যাক্ট সংখ্যা মনে নেই) আর কতটা বাংলাদেশে (ওখানেই বেশি
এরিয়া ভারতের তুলনায়) সমস্ত বিষয়ে জানালেন। এও জানালেন যে এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট
ইউনেস্কো স্বীকৃত হেরিটেজ সাইট। ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৈশিষ্ট্য আমরা ছোটবেলায়
স্কুলের বইতে পড়েছি। এই লম্বা মোটা কান্ড, ওপর দিকে পাতার “ক্যানোপি”। শিকড় বেশ
শক্তপোক্ত, মাটি আঁকড়ে থাকে। হতেই হবে, নইলে প্রতিনিয়ত এই যে নদীর পাড় ভাঙছে, তার থেকে বাঁচবে কী করে?
ইয়া লম্বা লম্বা সে শিকড়, এক্কেবারে পাড় অবধি এসে পৌঁছে গিয়েছে। আন্তরজাল সৃষ্টি
করে প্রায়। আবার কিছু কিছু গাছে শ্বাসমূল থাকে, যাকে ইংরেজিতে আমরা বলি,
“নিউম্যাটোফোর”। এই নিউম্যাটোফোরের বৈশিষ্ট্য এদিন সারাদিন অনেক চেষ্টা করেও লঞ্চ
থেকে আমি বুঝিনি, তবে ভালো করে পরেরদিন দেখেছিলাম। কাজেই সেই নিয়ে কথা পরে হবে।
ছবি অবশ্য আগেই আপনাদের দেখিয়েছি।
আমাদের প্রথম ডেস্টিনেশন,
সুধন্যখালি। পৌঁছে গেলাম অল্পক্ষণেই। সুধন্যখালিতে দেখার বলতে ওয়াচ টাওয়ার। লঞ্চ
ঘাটে এসে ভিড়লো। আমাদের নামার আগে মাধব বাবু বলে দিলেন, সকলে যেন ওনার সাথে সাথেই
থাকি, হারিয়ে যেন না যাই। আমরা এক ঘাটে নামবো, উঠবো অন্য ঘাট থেকে। তাই এই
সাবধানতা। কাদা পিচ্ছিল ঘাটে আমরা সবাই নামলাম এক এক করে। বড় করে গেট, লেখা
সুধন্যখালি ওয়াচ টাওয়ার। ভিতরে ঢুকেই একটা অফিস মতো। রিন্টু সেখানে গিয়ে পারমিটের
ব্যবস্থা করলো। তারপর আমরা সবাই চলতে লাগলাম। অল্প কিছুটা জায়গা জুড়ে ওই
সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানীয় গাছ, যেমন গরান, গেঁয়ো, হেতাল, সুন্দরী আলাদা করে
রাখা, জালের আড়ালে। এ ছাড়াও আরো বিভিন্ন গাছপালা রয়েছে। চেনা অচেনা। সেইসব দেখতে
দেখতেই পৌঁছে গেলাম ওয়াচ টাওয়ারে। তিনতলা উঁচু। সিঁড়ি বেয়ে উঠলাম। খোলা জায়গা বেশ
অনেকখানি দেখা যায় ওখান থেকে। কাদা মাটি মতো খোলা জায়গা। আসলে জন্তুর দেখা পাওয়া
যায় বলে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটু রাস্তা করে দেওয়া, যাতে অনেকটা দূর অবধি দেখা
যায়। যদিও জাল দিয়ে রাখা (বাঘের জন্য), তবুও, জানা কথা, এখানে বাঘ আসে না। দেখতে
পেলে ম্যাক্সিমাম ওই হরিণ। তা, তাই বা মন্দ কী? আই আই টিতে থাকাকালীন হরিণের মাথায়
হাত বুলিয়ে আদর করেছি, নিজের হাতে ওদের খাইয়েছি। সে আলাদা অভিজ্ঞতা। কিন্তু এই
জঙ্গলের পরিবেশে ওদের দেখাও কম আনন্দের নয়। তাই ওই হরিণ দেখতে পাবো ভেবেই একটু মনে
উৎসাহ। আর তারই মধ্যে রব উঠলো। ওই তো হরীন। ওই যে, আরে ওই তো। সোওওওজা তাকালেই, ওই
যে, কাদার মধ্যে মিশে গেছে রঙ। দলের একটি ছেলে আমার ক্যামেরার জ্যুম লেন্স তাক করে
সেটিকেই বেশ দূরবীন বানিয়ে দেখে টেখে আমায় দেখতে দিলো বটে। তবে পোড়া কপাল, কিছুই
বুঝলাম না। শুধু ওই ওয়াচ টাওয়ারের ব্যাকড্রপে ছবি তুল্লাম গোটাকয়েক। নীচে নেমে
এলাম। সেখানে দেখি সিমেন্টের বসার জায়গা পাতা,কাকা বসে জিরোচ্ছে। পাশেই জাল দেওয়া।
জালে বেশ কয়েকটা বাঁদর হুটোপুটি করছে। শুনলাম, ওখান থেকে হরিণ ভালো দেখা যাচ্ছে।
লেখাপড়ায় যতটা মনোনিবেশ করলে আজ আমি নোবেল পেয়ে যেতাম, তার চেয়েও বেশি মন দিয়ে
তাকিয়ে রইলাম। অবশেষে, হ্যাঁ অবশেষে, দেখা মিলল। হরিণের। স্পটেড ডিয়ার। তিন চারজন
ছিলো। রোদ পোহাচ্ছিল। ওদের দেখার জন্য আমাদের হুড়োহুড়ি দেখে ওরাও বোধহয় আমোদ পেয়ে
দুবার উঠে একটু হাঁটা চলা করলো। তাতে আমাদেরই লাভ হলো। একটা মুভমেন্ট দেখতে পেয়ে
সঠিক লোকেশনটা অনেকেই বুঝলাম। তারপর ক্যামেরার লেন্স তাক করেই খচাৎ। বেশি খচাত
দেখতে দেখতে পাশের বাঁদরগুলো খিচখিচ শুরু করে দিতেই দে ছুট। ইতিমধ্যেই রিন্টু আর
মাধব বাবুও আমাদের তাড়া দিতে এসে গিয়েছেন। সদলবলে সব ভালো ছেলেপুলের মতো আমরা অন্য
ঘাটে বাঁধা লঞ্চে এসে উঠে পড়লাম।
লঞ্চ চলতে লাগলো। লুচি ছোলার ডাল
আর ডিম সিদ্ধ প্লাস্টিকের প্লেটে সাজিয়ে আমাদের ব্রেকফাস্ট দেওয়া হলো। লঞ্চে আপাতত
দুলুনি নেই। কাজেই খেতে অসুবিধে নেই। এরপরের গন্তব্য, পঞ্চমুখ। অনেকটা রাস্তা।
প্রায় দেড় ঘন্টা তো বটেই। গোটা রাস্তা মাধব বাবু নানান গল্প নিয়ে চললেন আমাদের
সাথে। যাত্রাপথটিও বেশ ইন্টারেস্টিং।
মাধব বাবুর কাছে আমাদের সকলেরই এক প্রশ্ন।
বাঘের দেখা কি মিলবে? শুধু মাধব বাবুই না, বরং রিন্টু সহ রিসোর্টের বাদ বাকি প্রায়
যাকেই দেখছি তাকেই জিজ্ঞেস করছি। এক কথা। আপনি বাঘ দেখেছেন? লাস্ট কবে দেখেছেন? আর
আমরা কি দেখতে পাবো? প্রতি ট্যুরিস্ট দল এই এক প্রশ্ন করেই চলে এঁদের কাছে। মাধব বাবু
শেষ পর্যন্ত আর ধৈর্য ধরতে না পেরে বলেই দিলেন, “আপনারা যে এই বছরে একদিন দুদিনের জন্য
আসেন। এসেই বাঘ বাঘ করেন? অত কি সোজা? তাছাড়া এই বাঘ দেখতে আপনারা হয়তো খুব উৎসাহী,
খুশিও হবেন। কিন্তু জানেন কি, এই বাঘের জন্য এখানকার সাধারণ লোকের জীবনযাত্রা কতটা
কঠিন?” আমরা এইবারে সকলেই চুপ। হতভম্ব। উনি আরো বলতে লাগলেন, এই সব অঞ্চলে শুধুই যে
বাঘের থেকে ভয়, তা না। কুমীরের ভয়ও সাঙ্ঘাতিক। একদম ওই যাকে বলে জলে কুমীর, ডাঙ্গায়
বাঘ। ওই রকম। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন সুন্দরবন অঞ্চলে কাঁকড়া ধরা পড়ে খুব। জোয়ারের সময় এই
বিভিন্ন খালের ভিতর যখন জলের তোড় আসে, কাঁকড়াগুলো সব ভেসে ওঠে। তখনই ওদের ধরতে
বেরোয় কাঁকড়া চাষিরা। এবার মন দিয়ে তাঁরা কাঁকড়া ধরছেন, জালে টান পড়লো কি না,স
এইসবেই বেশি মনোযোগ, আশেপাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে, কিচ্ছু খেয়াল নেই। এই সুযোগেই কী
হয়, পাড়ের ধার দিয়ে হেঁটেচলে বেড়ানো বাঘ এক লাফে নৌকোয় এসে একজনকে ধরে, টুঁটি চিপে
নিয়ে চলে যায়। বাঘ অতি সজাগ, সচেতন। এবং চতুর। শিকারের টার্গেট মিস হবে না জেনেই
তখনই ও নামে। আর কী করে ও এতটা শিয়োর হয়? বাঘ যেটা করে, ও কয়েকদিন ধরে আড়াল থেকে
লক্ষ্য রাখে। কখন কোথায় লোকগুলো যাচ্ছে, কী করছে। কখন সজাগ, কখন অমনোযোগী। পুরো
কেস হিস্ট্রির মতো ব্যাপারটাকে ও নোট করে। তারপর কয়েকদিন সমস্ত অব্জারভ করে একদম
সুযোগ বুঝে কোপ মারে। এবং শতকরা একশো বারই ঠিক করে। আমাদের ঘুরতে যাওয়ার ঠিক
সপ্তাহ খানেক আগেই এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। স্বামী স্ত্রী নৌকো করে এইসব কাঁকড়া ধরতে
গিয়েছেন। বাঘ এসে হামলা করেছে। লোকটিকে ধরে ফেলেছে। টেনে নিয়ে যাচ্ছে। স্ত্রীর
এতটাই “প্রেজেন্স অফ মাইন্ড”, ওই অবস্থায় উনি টেনে হিঁচড়ে বাঘের সাথে লড়াই করে
স্বামীর বডি বাঁচিয়েছেন। বাঘ শেষ পর্যন্ত লোকটিকে ছেড়ে চলে যায় বটে। কিন্তু ততক্ষণে
তিনি মৃত। এবার যেহেতু এরা বেআইনি ভাবে মাছ না কাঁকড়া কী বেশ ধরতে গিয়েছিল,
পারমিসিবল জোনের বাইরে, অগত্যা, বন দপ্তর জানতে পারলে নির্ঘাত জেল। তাই ওই অবস্থায়
স্ত্রী স্বামীর দেহটিকে নৌকোর ভিতরের ঘরে কোনমতে চাপাচুপি দিয়ে রেখে ছেলেকে ফোন
করে জানায় ব্যাপারটা। ছেলে পঞ্চায়েত হ্যানা ত্যানা নানারকমের চেষ্টা করে টরে
অবশেষে মিটিয়ে ফেলে ব্যাপারটা। সাজা হয় না। মাধব বাবু কথাগুলো বলছেন, আর আমরা অবাক
হয়ে শুনছি। বিহ্বল হয়ে। সত্যিই, কী কঠিন জীবন এদের। মধু জোগাড় করতে যায় যারা,
তাদেরও জঙ্গলের মধ্যে সমূহ বিপদ। বাঁচার জন্য মানুষের মুখোশ মাথার পিছনে পরে যায়,
যাতে বাঘ বুঝতে না পারে যে লোকগুলো আসলে কোনদিকে তাকিয়ে। ডাঙ্গার ধারে বসে জেলে
নৌকো থেকে নেমে কাপড় কাচতে গিয়ে কতজনকে কুমীরে টেনে নিয়ে গিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। বাঘ
দেখবো বাঘ দেখবো বলে আমরা লাফাই বটে, কিন্তু আসলে বাঘ এলে সাধারণের যে কতটা অসুবিধে,
জানার পর থেকে সত্যিই খারাপ লাগছিল। সবাই প্রায় চুপ করে থেকেই এবার লঞ্চের বাইরে
তাকিয়ে দেখছিলাম। ইতিমধ্যে দুই পাড়ে বেশ কিছু মাছরাঙা, বক জাতীয় পাখি দেখেছি। দেখা
মিলেছে অনেক বাঁদরের। একটা জায়গায় দু তিনটে স্পটেড ডিয়ারও দেখেছি। দেখেছি বুনো
শুয়োর। ধারের জঙ্গলে মোটামুটি কম বেশি জাল দেওয়া। বাঘের জন্যই। নাইলনের জাল হলেও,
জাল ব্যাপারটা নাকি বাঘেদের ক্ষেত্রে সাইকোলজিকাল এফেক্ট প্লে করে।
এর মধ্যেই বেলা বাড়তে লাগলো। যদিও
রোদের তেজ ছিলো ভালোই, তবুও হাওয়া দিচ্ছিলো বেশ কনকনে। তারই মধ্যে আমরা এগোলাম
পঞ্চমুখের দিকে। এখানে পাঁচটি নদী এসে মিশেছে। পাঁচটি নদীর নাম আমি মনে করে এখন
বলতে পারবো না। মাধব বাবুও খুব কনফিডেন্টলি বলেননি। পাঁচ নদীর মিলনের ফলে অনেকটা
জায়গা জুড়ে সে কী প্রবল ঢেউ ও দুলুনি। লঞ্চে আমরা ভালো করে শক্ত করে বসেছিলাম।
জায়গাটা দেখে সমুদ্র বলেও ভুল হতে পারে, এতটাই চওড়া আর এতটা ঢেউ। তার ওপর বুঝি
জোয়ারের সময়। সব মিলিয়ে ভয় ভয় করছিলোই। নদীর জলে আরো কিছু কিছু লঞ্চ দেখতে
পাচ্ছিলাম। বেশিরভাগই টুরিস্ট নিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু কিছু লঞ্চ আসছে হলদিয়া পোর্ট
থেকে, ফ্লাই অ্যাশ নিয়ে। যাবে বাংলাদেশ।
পঞ্চমুখ থেকে এবার চলতে লাগলাম
দোবাকি। দোবাকিও ওই সজনেখালি সুধন্যখালির মতোই।ওয়াচ টাওয়ার আছে। ওখানে এক ঘাটে
নামা, অন্য ঘাটে ওঠা। অগত্যা, সতর্কবার্তা ছিলোই। সব সময় এক সাথে থাকতে হবে। পরপর
চলতে হবে। দোবাকিতে ঢোকার ঠিক আগে দেখতে পেলাম রোদ পোহাচ্ছে একটি কুমীর, দূরের এক
পাড়ে। হইহই করে ছবি ওঠানো হলো। দোবাকি
গিয়ে দেখলাম সেই একই ওয়াচ টাওয়ার যেখান থেকে কিছুই দেখতে পাওয়া যায়নি। শুধু ওখানে
একটা বেশ বড় ক্যানোপি ওয়াক ছিল, ওটা খুব এঞ্জয় করেছি। উঁচু দিয়ে অনেকটা রাস্তা,
দুদিক জাল দিয়ে ঘেরা। দেখে মনে হবে যেন খাঁচার ভিতর দিয়ে হাঁটছি। আর পাশে খোলা
ভূমি, যেখানে নাকি বন্যপ্রাণীদের চরাচরের জায়গা। টুকটাক গাছের ছবি আর নিদের ছবি
ছাড়া দোবাকিতে ঠিক কিছুই ছবি তোলা গেলো না। ফিরলাম আবার লঞ্চে। লঞ্চে উঠে সমস্ত
যাত্রীরা মিলে অনুরোধ করলাম সারেঙকে, যদি ঝড়খালি নিয়ে যান। ওই ঘন্টা দুয়েক বাড়তি
সময় লাগবে। যা বাড়তি টাকা লাগবে, সবাই মিলে দিয়ে দেবো। ঝড়খালিতে আসলে রেস্কিউ করা
দুটো বাঘ রয়েছে। সেই দেখতাম না হয়। কিন্তু সারেঙ রাজি হলেন না। হয়তো পারমিশনের
ব্যাপার। ফেরার পথে ততক্ষণে সকলেই বেশ ক্লান্ত। চুপচাপ যে যার চেয়ারে বসে পড়েছি।
পঞ্চমুখে এসে আবারও সেই দুলুনি। তারপর আরো ঘন্টা দেড়েকের জার্নির পর আমরা ফিরলাম
দয়াপুর। প্রায় আড়াইটে বাজে। হাত মুখ ধুয়ে সঙ্গে সঙ্গে লাঞ্চ। গরম ভাত, ডাল, পাঁপড়
ভাজা, মিক্সড সব্জি, ভেটকি মাছের ঝাল আর কাতলা মাছ। সাথে আমসত্ত্ব খেজুরের চাটনি।
খেয়েদেয়ে একটু ঘুমের পালা, অন্তত আধ ঘন্টার পাওয়ার ন্যাপ। বিকেলে সোয়া চারটের দিকে
গ্রাম দেখতে বেরনোর কথা।
চারটের একটু আগেই মা বাবা আর আমি বেরোলাম।
সকলে তখনও রেডি হয়নি। কাজেই গ্রাম দেখতে যাওয়া একটু দেরি আছে। আমরা সামনেটা এদিক ওদিক
হেঁটে চলে বেড়ালাম খানিক। রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে একটু এগিয়ে গেলেই একটা মুরগির
পোলট্রি। সেখানে ভর্তি মুরগি রয়েছে। তারই উল্টোদিকে বাচ্চা মুরগিগুলোর জন্য আলাদা
ঘর। বাল্বের আলোয় তাদের গরম রাখা হয়। তাপ পায়। একটু বড় হলে বুঝি “সিনিয়র স্কুলে”
প্রবেশ হবে। নদীর ধার দিয়ে উঁচু পাড়ের মতো রাস্তা। মেঠো পথ। হেঁটে যেতে মজা।
কুকুর, ছাগল সব ঘুরছে। ছানা সহ। তাদের সাথেও খানিক আদর আহ্লাদ করলাম। একটু এগিয়ে
দেখলাম এক ভদ্রলোক গরুদের খেতে দিচ্ছেন। জল নিচ্ছেন কল থেকে, কাপড় দিয়ে ছেঁকে।
ওঁকে জিজ্ঞেস করা হলো কারণ, উনি কিছু বললেন না। নির্ঘাত ব্যস্ততার মধ্যে শহুরে
মানুষের এসব বাড়তি প্রশ্ন পছন্দ নয়। কয়েকটি বাচ্চা খেলছিল পাশে, ওরা জানালো। জল খুবই ঘোলা
পায়। কাজেই কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিতেই হয়। তারপরেও ফুটিয়ে নিয়ে তবেই এই জল পানীয়যোগ্য হয়।
সূর্যের তেজ যখন কমে এসেছে, তখন আস্তে আস্তে রিসোর্ট থেকে অনেকেই এলো। সাথে রিন্টু।
আমরা গ্রামের ভিতরের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চললাম। বাড়িগুলোতে বেশিরভাগেই সুন্দর নিজেদের
খাওয়ার মতো পরিমাণে অন্তত সব্জি চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুকুর আছে। হাঁস মুরগিও রয়েছে।
শীতের বাহারি ফুল ফুটে আলাদাই সৌন্দর্য। বাড়ি, স্কুল, মাঠ, দোকানপাট পেরিয়ে আমরা হাঁটতে
লাগলাম। পৌঁছলাম জেটিতে। সেখানে তখন নতুন জেটির কাজ চলছে। ব্যস, এইটুকুই গ্রামের মধ্যে
দেখার। আগেরদিন হাট বসেছিল। তাই আজ বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ। খোলা থাকলেও, দোকানী বন্ধুবান্ধব
নিয়ে বসে তাস খেলছেন। সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরলাম। থুড়ি,
রিসোর্টে। আবার এক রুটিন। চা পকোড়া। ইতিমধ্যে সকলেই সারাদিনের ঘোরাঘুরির পর ক্লান্ত।
আর তাই কোন এক্টিভিটি নেই। যে যার ঘরে ফিরে জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়ার পালা। তারপর রাত
নটা সাড়ে নটার দিকে ডিনার সেরে ঘুম। আবার পরেরদিন সকাল ছটার দিকে বেড টি ও রানিং হট
ওয়াটার দিয়ে ঘুম ভাঙানো।
আজকেই ফেরা। তবে তার আগে সজনেখালি ওয়াচ
টাওয়ার থেকে ঘুরে আসা। ব্রেকফাস্ট করেই বেরোনো হবে। ঘুরে বেরিয়ে আসতে আসতে সাড়ে দশটা এগারোটা। এসেই
লাঞ্চ সেড়ে বেরিয়ে পরা। গদখালির উদ্দেশ্যে। সেই মতো সবাই স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট
করে লঞ্চে উঠে পড়লাম। সজনেখালি তো প্রথম দিনেই বলেছিলাম, দয়াপুর থেকে ওই মিনিত
দশেকের জলপথ। পৌঁছে ঘাটে নামলাম। আজ আর মাধব বাবু নেই। রিন্টু আর রিসোরট থেকে একজন
আমাদের গাইড হয়ে চললেন। ওখানে ঢুকেই পারমিট করাতে গেলো রিন্টু। পাশেই মধু বিক্রির
কাউন্টার ছিলো। দলের অনেকেই মধু কিনে নিলেন। তারপর এগোনো হলো। সামনেই একটা বড়
পুকুর মতো। সেখানে বুঝি টারটেল আছে। তা তিনি বাবাজী আমাদের দর্শন দিলেন না। জলে
ডুবেই থাকলেন। কেবলমাত্র তার কালো পিঠ দেখতে পেলাম। তারপর এগোলাম ওয়াচ টাওয়ারে।
তিন তলা। সবাই যারা নামছিলো, তাদের জিজ্ঞেস করে জেনে নেওয়া হল যে কিছুই দেখা
যাচ্ছে না। কাকার হাঁটুতে খুব ব্যথা, তাই ওপরে গেলো না। মা বাবা আমি গেলাম। দোতলায়
একটা বেশ সুন্দর দেখতে মৌচাক দেখলাম। ব্যস। ওপর থেকে কোন আলাদা ভিউ নেই। শুধুই ওই
সুইট ওয়াটার পন্ড। সুন্দরবন অঞ্চলে এমনিতেই এত নোনা জল ও মাটি যে আলাদা করে পশুদের জন্য সল্ট লিক এর ব্যবস্থা করতে হয়
না অন্যান্য ফরেস্টের মতো। উল্টে এই মিষ্টি জলের ব্যবস্থা রাখা। এখানেই জন্তুরা জল
খেতে আসবে। আর টুরিস্ট ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখবে তাদের। এই প্ল্যান। কিন্তু ওই আর
কী, কিচ্ছুটি চোখে পড়লো না।
সেখান থেকে নেমে এবারের গন্তব্য
মিজিয়াম। সুন্দরবন অঞ্চলের ওপর সমস্ত রকম তথ্য ছবি ও মডেল সহ সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা।
দেখলাম। বিল্ডিং এর ঠিক বাইরেই একটা সুন্দরী গাছ রয়েছে। আর উল্টোদিকে চিলড্রেন্স
পার্ক। সেই পার্কে সাজানো বাঘ হরিণ দেখেই এবারের মতো চোখ জুরালাম। আর একটু এগিয়ে
গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন বিভাগের বাংলো। কাঠের। দোতলা। ঘন সবুজ। সামনেই পুকুর। আর
সারি দিয়ে সুন্দরী গাছ। এইবারে তাদের শ্বাসমূল দেখলাম ভালো করে। মিলিয়ে নিলাম
পাঠ্যবইয়ের সাথে। ব্যস। সজনেখালিতে আর দেখার কিচ্ছু নেই। আবার যে যার মতো লঞ্চে
উঠে রিসোর্টে ফেরত। ফিরেই লাঞ্চ। খিদে নেই, সবে ব্রেকফাস্ট করা। তাই অল্প একটু
মুখে দেওয়া হলো। এবার আবার সেই দেড় ঘন্টার জার্নি। দয়াপুর আর এই রিসোর্টকে টাটা
বাই বাই করে লঞ্চে ফিরলাম। আজ অবশ্য সকাল থেকে “স্বর্ণময়ী” নেই। সে গেছে পরের
পার্টিকে গদখালি থেকে আনতে। আজ তাই দুটো ছোট লঞ্চে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। সবার
বাড়ি ফেরার চিন্তা, তারই মধ্যে গল্পগুজব। এই করতে করতে গোসাবা পৌঁছলাম, দেড়টার
দিকে। গোসাবাতে দর্শনীয় বলতে বেকন বাংলো ও হ্যামিল্টন বাংলো। ঘাট থেকে হেঁটে
গেলাম। রবিবার। হাটবার। খুব ভিড়। আমাদের বারবার সাবধান করে দিয়েছিলেন, যেন হারিয়ে
না যাই।
একটা খোলা মাঠ। তার ভিতরে একটা
লজঝড়ে চেহারার কাঠের বাংলো। রক্ষণাবেক্ষণের বালাই নেই। ভেঙ্গে গিয়েছে যেখানে
সেখানে। এটাই নাকি রবিন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজরিত বাংলো। সামনে ওঁর একটি বড়
স্ট্যাচু। ব্যস। সেখানে দাঁড়িয়ে সবাই ছবি তুলছে। কাঠফাটা গরম, রোদ। তার মধ্যে
এগিয়ে যাওয়া হলো হ্যামিল্টন বাংলোতে। হ্যামিল্টন সাহেব সুন্দরবন অঞ্চলের উন্নতির
জন্য অনেক কাজ করেছেন। উনি যেই বাংলোটিতে থাকতেন, সেটিই দর্শনীয়। বাইরে থেকেই
দেখতে হলো, কারণ ভিতরে তালা দেওয়া। সবুজ রঙের একটা বাড়ি। দেখে টেখে এবার ফেরার
পালা। আবার লঞ্চ। নদীর ও পাড়েই গদখালি। মালপত্র নিয়ে নেমে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছলাম
সবাই। আমাদের বাস দাঁড়িয়ে। তবে বাকিরা বাসে চলে গেলেও, আমরা ফিরবো ক্যানিং থেকে
ট্রেনে। সময় কম লাগবে, আর যাদবপুর কাছে হবে বলে। একটা রুটের টাটা ম্যাজিকের ভিতরের
আটটি সিট রিজারভ করলাম, ৪০০ টাকা দিয়ে। দেড় ঘন্টার পথে পৌঁছলাম ক্যানিং। সেখান
থেকে মিনিট সাতেক হেঁটে ক্যানিং স্টেশন। তারপর?
তারপর আর কী? ট্রেন এলো। উঠলাম।
ট্রেন ছাড়ল। যাদবপুর পৌঁছলাম। অখান থেকে রিকশা করে বাড়ি।
আমার গল্পটি এইবার ফুরলো।
No comments:
Post a Comment