Friday, February 14, 2020

রেডিও
সুচেতনা

(১)
ধুর ধুর, স্কুলের সব বন্ধুরা কী সুন্দর পুজোর ছুটি, গরমের ছুটি পড়লেই বেড়াতে বেরোয়। আর এদিকে পুপুর সেই সুযোগই নেই। বাবা মায়ের যে কী এমন অদ্ভুত চাকরি। বছরে ওই একবারই যা ওরা কোথাও যায়, শীতকালে। বাকি ছুটিগুলো বড্ড মন খারাপের মধ্যেই কাটে। শনি রবিবারগুলোও তো কখনো সখনো ওদের অফিস থাকে। এবার ছুটিতে ঠাম্মা এসেছে ওদের বাড়ি। বেচারি ঠাম্মা, টিভি সিরিয়াল ছাড়া চলেই না। এদিকে বাবা মায়ের কড়া আদেশ। পুপু যতদিন না আরেকটু বড় হচ্ছে, বাড়িতে কেবিল টিভি আসবেই না। অগত্যা, ঠাম্মার জন্য তড়িঘড়ি লফ্ট থেকে নেমে এলো এই কালো বাক্সটা। ব্যাটারি পাল্টিয়ে খুট করে সুইচ অন করতেই ম্যাজিক। পুপু অবাক। মুগ্ধ। দারুণ ব্যাপার তো। কী দারুণ অনুষ্ঠান সারাদিন ধরে। কত চ্যানেল। নানান প্রোগ্রাম। একটায় আবার বেলায় ইংলিশ ক্লাসিক্স, দুপুরে নাটক, বিকেলে হিন্দি গান। কোনো চ্যানেলে আবার সারাদিনই হিন্দি বাংলা বকবক আর গান। মজার মজার সে বকরবকর। দিব্যি ভালো তো! যাক, ছুটিগুলো বোধহয় আর বোরিং কাটবে না পুপুর।

(২)
চাকরির এপয়েন্টমেন্ট লেটারটা হাতে পেয়ে অর্ক মোটেই খুশি হয়নি। যদিও অফিস পোস্টিং দিয়েছে কলকাতাতেই, তবুও, সেটা বড্ড দূর বাড়ি থেকে। রোজ রোজ যাতায়াত করতে হবে ভাবলেই গায়ে জ্বর এসে যাচ্ছে। এমনিতেই ট্র্যাফিকের যা অবস্থা শহরে, তার ওপর আবার টালা ব্রিজ বন্ধ। তারপর রোজই কোনো না কোনো মিছিল মিটিং। মা বাবাকে একবার বলেই দেখলো প্রস্তাবটা, অফিসের কাছাকাছি কোথাও একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকবে। সুবিধে।
ছেলের মুখে এই প্রস্তাব শুনে মায়ের তো প্রায় মূর্ছা যাওয়ার জোগাড়। চার বছর বাড়ির বাইরে, হোস্টেলে থেকে ছেলে সবে কলকাতা ফিরেছে। আবার এই কদিনেই যদি আবার বাড়ির বাইরে চলে যেতে হয়, তা হলে তো মুশকিল। চার বছরে ছেলেটা ঠিকঠাক যত্ন পায়নি। উঁহু। আর একে হাতের বাইরে মোটেই ছাড়া যাবে না। অর্কর প্ল্যান মা একাই ভেস্তে দিলো। অবশ্য সমাধান দিয়েছে বটে। ছেলে একটু সকাল সকাল উঠে পড়বে। বাস জার্নি করেই যাবে। জার্নিটা লম্বা ঠিকই। কিন্তু কানে গোঁজা থাকবে এফ এম রেডিও।
আজকাল অর্ক বাসেই যাতায়াত করছে। আর জে ও হিন্দি বাংলা গানের কল্যাণে দেড় ঘন্টা যে কীভাবে পেরিয়ে যায়, খেয়ালই পড়ে না আর!

(৩)
মন দিয়ে টেস্ট পেপার থেকে ভেক্টরের অঙ্ক সমাধান করছিল মিথি। আর কদিন বাদেই হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা। ভেক্টর নিয়ে বেশ জেরবার। গোটা ফিজিক্স নিয়েই জেরবার। টিউশন ক্লাসও শেষ। তবে ওর রিভিশন এখনো চলছে। কয়েকটা অঙ্ক আটকেওছে। টেনশন হচ্ছে। কী যে করে। কে জানে, অংশু এগুলো সলভ করেছে কি না। ও কে জিজ্ঞেস করে লাভ আছে? অন্তত ও না পারলে, ওর দাদাকে ও জিজ্ঞেস করে জানাবে না হয়। দাদাভাই তো ফিজিক্সেরই ছাত্র।
মোবাইল হাতে নিয়ে মিথি মেসেজ করে অংশুকে। "এবারের টেস্ট পেপারের পেজ ২৪১ এর কোয়েশ্চেন ২এ টা মাথায় ঢুকছে না। একটু সলভ করে হোয়াটসআপ করে দে তো।" মুহূর্তেই ব্লু টিক। মেসেজ পড়েই অংশুর উত্তর, ওকে। তুই ততক্ষণ রেডিও শোন। ১০৯.৩ মেগাহার্টজ এ। ভালো গান দিচ্ছে পরপর। আমি ততক্ষণ কোয়েশ্চেনটা দেখছি।"
মিথি রেডিও চালায়। সত্যি তো, বেশ ভালো গান। পরপর দুটো হলো। দুটোই ওর ফেভারিট। অনুরোধের আসর গোছের হচ্ছে। লোকজন মেসেজ করে জানাচ্ছে প্রিয় মানুষদের প্রতি ডেডিকেশন। একেকজন বেশ মজার মজার কথা লিখে পাঠাচ্ছে। মন দিয়েই শুনছিলো মিথি। আর ঠিক তখনই আর জে বললো, "আচ্ছা, আজ কিন্তু কিস ডে। জানেন তো? আর সেই উপলক্ষেই পরের মেসেজ। বেশ ইন্টারেস্টিং। লিখেছে অংশু। মেসেজটা পাঠিয়েছে মিথির জন্য। বলছে, সামনেই আমাদের এইচ এস। আজ দেখাসাক্ষাৎ তো হচ্ছে না। তাই পরের গানটা বিশেষ করে ওর জন্য।
"আজ, ঠোঁটের কোলাজ থামালো কাজ
মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম..." বাঃ, দারুণ তো। তাহলে এই রইলো বিশেষ দিনে, বিশেষ গান। শুনতে থাকো। এনজয়।"
মিথির মুখ সলজ্জ হাসিতে রাঙা হয়।

(আজ বিশ্ব রেডিও দিবস। সেই উপলক্ষে এই পুঁচকি নিবেদন। রেডিও আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। সাথে নিয়ে অনেক মিষ্টি মধুর স্মৃতি। সে মহালয়ার ভোর হোক, বা অনুরোধের আসর। রেডিও আর আমাদের সম্পর্ক আজকের কথা নয়!)




No comments:

Post a Comment