Monday, January 29, 2018

প্রাক বিয়েবাড়ি কথোপকথন

- কী রে এখনো রেডি হতে পারলি না? কখন বেরবো?
- আরে দাঁড়া না। সবে তো ছটা বাজে। এত তাড়া কিসের?
- ও মা, তাড়া দেবো না? রেডিয়োতে শুনলি না? কত জ্যাম গড়িয়াহাট ফ্লাইওভারে?
- অফিস টাইম। মঙ্গলবার। জ্যাম হবে না তো কী হবে?
- হ্যাঁ সেই জন্যই তো তাড়াতাড়ি বেরোনো উচিত।
- চিল তাতান! তাড়াহুড়ো করে এখন বেরিয়েও সেই সাড়ে আটটার আগে পৌঁছবি না। তার চেয়ে একটু রয়ে সয়ে সাড়ে সাতটার পর বেরোই। ঠিক নটায় পৌঁছে যাব।খামোখা রাস্তায় আটকে থেকে কী হবে বল তো?
- তুই বুঝছিস না দীপু। আধ ঘণ্টা। আধ ঘণ্টায় কতগুলো পকোড়া আর কত বোল স্যুপ খেতে পারতাম। নটায় সময় গেলে আবার দশটার মধ্যে বেরোনোর তাড়া থাকবে, আয়েস করে খেতে পারবো না। স্টারটার মিস হবে।
- আরে ওই পকোডা তুই মেন কোর্সের জায়গায় পেয়ে যাবি। জাস্ট অন্য নামে।
- বললেই হল?
- অফ কোর্স! কাবাবের নামে ওই ওগুলোকেই হাল্কা মডিফাই করে ছাড়ে।
- আর স্যুপ?
- ওই পানসে জলীয় পদার্থটা না খেলেই নয়?
- তো তোর মতে বিয়েবাড়িতে গিয়ে খাবো কী? স্যুপ পানসে, পকোড়া আর মেইন কোর্সের কাবাব সমগোত্রীয়, এরপর বলবি বিরিয়ানি না ভাত ভাজা।
- কেন? গরম গরম রসগোল্লা খাবি। শোন, শীতের বিয়ে। আই এম শিয়োর নলেন গুঁড়ের আইটেম থাকবেই।
- তাও তো একটার বেশী দুটো মুখে দিতে দিবি না!
- অবশ্যই! আয়নায় একবার নিজের ভুঁড়িখানা দেখেছিস তাতান?
- আয়নার সামনে দাঁড়ানোর ফুরসৎ আছে নাকি? আদৌ আয়নাটা ফাঁকা থাকে কখনো? সারাক্ষণ তো তুই একটার পর একটা ড্রেস বের করে পোজ দিয়ে নিজেই নিজেকে চেক আউট করিস।
- আহ, বিয়েবাড়িতে গিয়ে ভালো ভালো ছবি উঠবে। গ্রুপফি, সেলফি, গ্রুপ ফটো। ফেসবুকে ডিপি পালটাবো। একটু প্র্যাকটিস করবো না? Shouldn't I look my very best?
- সে তো তুই গামছা প্রিন্টের স্কারট পরলেও দারুণ লাগিস!
- গামছা??
- কেন ওই যে লাস্ট উইক তুই মন্দিরাদিদের গৃহপ্রবেশে পরলি?
- ও মাই গড, ওটা গামছা প্রিন্ট???  That was a freaking designer saree.. a one of a kind exclusive product..
- Whatever...তাহলেই বোঝ দীপু। সেদিনও এত সময় লাগালি, আমি মোচার চপটা মিস করলাম। এত সেজে কী হল? আমিই বুঝলাম না তোর সাজ।
- হুহ! তুই বুঝবি বলে যেন সাজি?
- তা না?
- অবশ্যই না! শোনো মিস্টার, মেয়েরা সাজে অন্য মেয়েদের দেখাতে। বুঝলে হে?
- হে ভগবান। যাক গে শোন, এই বকবক করতে করতে অনেকক্ষণ গেল। আধ ঘণ্টা ধরে তুই আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে আছিস, এখনো ড্রেস ঠিক করতে পারলি না?
- যেটাই ভাবছি পরি আজ, মনে পড়ছে অন্য কোন পার্টিতে পরেছি। সো চেনাজানা লোকেরা দেখে নিয়েছে, রিপিট হবে।
- তুই না। উফ। ওই হলুদ সিল্কটা পর।
- কোনটা?
- ওই যে। ওই ওপরের তাকে যেটা দেখা যাচ্ছে। ওই যে রে, নীলের নীচে।
- উফ তাতান, ওটা দুপাট্টা।
- আমি কি করে বুঝব? ওই অত লম্বা জিনিস।
- তাহলে যা বুঝিস না তা নিয়ে কেন তখন থেকে হেজিয়ে যাচ্ছিস? আমায় একটু শান্তিতে ডিসাইড করতে দে না রে বাবা। ধুর।
- কারণ আমি চাই তুই তাড়াতাড়ি কর। যাতে আমরা ঝটপট বেরোতে পারি। আমি গিয়ে অন্তত তিন রাউন্ড স্টারটার আর দু বাটি স্যুপ খাবোই খাবো।
- সুস্থ মানুষে ওই স্যুপ খায় নাকি রে? তুই এত স্যুপ স্যুপ করিস না তো।
- আবার শুরুতে ফিরে গেলি তো?
- তুইই তো ড্র্যাগ করছিস।
- ঘাঁট হয়েছে আমার। উফ। তুই যতক্ষণ ধরে ইচ্ছে রেডি হও। আমি মন্টুর দোকান থেকে চিকেন চপ খেয়ে আসি। নটার আগে পৌঁছব না বুঝে গিয়েছি। আর বৃথা আশা রেখে লাভ নেই।
- সেই ভালো। আর হ্যাঁ শোন। আমার জন্য এগ রোল আনবি যখন, আগেরবারের মতো ঝাল দিতে বারণ করবি। জাস্ট লেবুর রস। নো সস। ওকে?
- যো আজ্ঞা মেরে আকা!

No comments:

Post a Comment